খুব সম্ভবত ঈশ্বরের পরেই তাদের অবস্থান...ঈশ্বর উর্ধ্বাকাশ থেকে যমদূতকে মৃত্যুর পরোয়ানা দিয়ে পাঠান আর তারা এই ভূপৃষ্ঠে যমদূতকে তাড়িয়ে বেড়ান...হিসেবটা এমন হলে তাদের শরীর ও মনে কিঞ্চিৎ মেদ জমাটা দোষের কিছু না...কারন দিনশেষে রোগেশোকে প্রার্থনালয় থেকে বেরিয়ে তাদের সামনেই তো আমাদের দুহাত পেতে দাঁড়াতে হয়...আর এই কারণেই তাদের ভুলত্রুটি নিয়ে আমরা দু-এক সময় উচ্চবাচ্য করলেই তারা রুষ্ট হন...ঘোষনা দেন আমরা আর দয়া দেখাবো না...অনেকাটা ভিখারীর জন্য বাড়ির দুয়ার বন্ধের মতন অবস্থা...তারা রুষ্ট হলেই পটাপট পটল তুলতে শুরু করি আমরা...ব্যস আর যায় কোথা, শেষ অবধি আমাদেরই নাকে খত...ভূপৃষ্ঠের দেবতারা নিজ গদিতে পুনরায় আসীন...
এই দেখুল না রাজশাহীতে ভুল চিকিৎসার অভিযোগে চিকিৎসককে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে রাজশাহীর সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রগুলোতে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। আর এই ধর্মঘটের কারনে রোগী নামক প্রাণীগুলোর যে কী অবস্থা তা বোধহয় নতুন করে বলতে হবে না...খবরে পড়লাম ইতোমধ্যেই দুইজন রোগী পরপারে...বাদবাকীরা আপাতত প্রহর গুনছেন...
বিশ্বাস করেন বা নাই করেন এই দেশে চিকিৎসা পেশায় রয়েছেন তাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়, নিতান্তই তাদের দয়া দাক্ষিণ্যের উপরই বেঁচে রয়েছে এ দেশের আপমর জনসাধারণ...একজন তো সেদিন বলেই ফেললেন, মানুষ নাকি তাদের ভগবান তুল্য করেন...এতো খুবই গর্বের কথা...মানুষ আপনাকে তার পূজোর আসনে বসাচ্ছে...তো আপনারা ভগবানরা সেই আসনে বসে কি করেন???
এই প্রশ্ন তুললেই তাদের মাথার গরম হয়ে যায়...সব শ্রেনী পেশাতেই ভালমন্দের মিশেল রয়েছে...কিন্তু এই বিষয়টি খুব সম্ভবত বাংলাদেশের অধিকাংশ চিকিৎসক ও ভবিষ্যত চিকিৎসকরা মেনে নিতে নারাজ...এ কারনেই তাদের দিকে অভিােযগের আঙ্গুল তুললেই তারা একাট্টা...সব একজোট...অামাদের চরম অশিক্ষিত গার্মেন্টস কর্মীরা রাস্তায় নামেন, ধর্মঘট ডাকেন তাদের প্রাপ্য মুজুরি আর ন্যায্য অধিকার অাদায়ের আশায়...আফসোস আমাদের পরম পূজনীয় উচ্চ শিক্ষিত চিকিৎিসকরা ধর্মঘট ডাকেন তাদের ভুলভ্রান্তিকে হালাল করবার দাবিতে...
চিকিৎসা সেবার বেহাল অবস্থার কথা বলতে গেলেই তারা কাঁপা কাঁপা গলায় বলেন, চিকিৎসা খাতে এ দেশের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর দুর্নীতির কথা। যার সঙ্গে নাকি চিকিৎসকদের খুব সামান্যই যোগসাজশ রয়েছে।
তাদের কথা যদি সত্যি হয় তবে জেনে রাখুন নির্ধারিত সময়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা না দিয়ে যারা প্রতিদিন প্রাইভেট ক্লিনিক আর চেম্বারে বসে যারা রাজ্যের টাকা গুনেন তারা চিকিৎিসক নন তারাও প্রশাসনের লোক। ডায়াগনস্টিক সেন্টার আর ওষুধের মোটা অঙ্কের পাসেন্র্টেজ যারা গুনেন তারাও ওই দুর্নীতিবাজ প্রশাসনের লোক।
প্রয়োজন নয় তবুও অহেতুক সার্জারির টেবিলে ফেলে রোগীকে কাঁটাছেঁড়া করে মোটা অঙ্কের বিল যারা বাগিয়ে নেন তারাও সেই প্রশাসনেরই....কিছুতেই মফস্বলের হাসপাতালগুলোতে পোস্টিং নিতে চাননা যারা তারাও চিকিৎসক নন ওই শালার নষ্ট প্রশাসন।
ভুলভ্রান্তি মানুষের হয়, তবে চিকিৎসকদের নয়। এ কারণেই ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠলেই চিকিৎসক সমাজ একত্রিত হয়ে ধর্মঘটের ডাক দেন, আন্দোলন করেন। আর হাসপাতাল থেকে ফেরত যান মৃত্যু পথযাত্রীরা। তবে এই ভুল চিকিৎসার হাত থেকে রেহাই পেতে, চিকিৎসা সংক্রান্ত হয়রানির থেকে রেহাই পেতে প্রতিদিন কি পরিমান রোগী শুধু পাশের দেশে ভারতে যান সেই পরিসংখ্যান বোধহয় আমাদের চিকিৎসকদের জানা নেই।
যখন মুম্বাই বা দিল্লীর কোন ট্যাক্সি ড্রাইভার হিন্দিীতে প্রশ্ন করে, ‘স্যার আপনাদের দেশে কি হাসপাতাল নেই? কেনো আপনাদের এতো পেশেন্ট প্রতিদিন এখানে ট্রিটমেন্টের জন্য আসে?‘ তখন তাকে আওভাও বুঝালেও নিজের মনে কিন্তু কাঁটা খচখচ করে...
চিকিৎসকরা উচ্চশিক্ষিত একারণে বোধহয় তাদের পেশা নিয়ে স্পর্শকাতরতাও তীব্র...যদিও এটা উল্টো হওয়ার কথা...কারন প্রকৃত শিক্ষা মানুষকে বিনয়ী করে...পেশা নিয়ে স্পর্শকাতরতা সবচেয়ে কম এই তালিকায় এক নম্বরে আছেন পুলিশ ভাইয়েরা । যতো গালি দেন, মামলা দেন, মারেন ,পিটান, ডকুমেন্টারি বানান কোন রা করবে না...চোখমুখ বুজে নুন্যতম হলেও পেশাগত দায়িত্ব পালন করবেই...তাই কইছিলাম কি গালির তালিকা থেকে পুলিশের নামটা কাইটা দিয়া নতুন কোন নাম ঢুুকানোর আইডিয়াটা কি খুব খারাপ হয়???
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।