আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাকাব্যের পটভূমি । আল মাহমুদ

সঠিক পথ খোজে বেড়াই আমি একজন সামান্য মানুষ। কবিতা লিখে নিজের ভাষার নিজের গতির মধ্যে স্বপ্ন, কল্পনা এবং বাক্যের সারত্সার অর্থাত্ রস নিংড়ানো আমার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আমি যখনি নিজের জীবনের কথা ভাবি, নিজেই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে নিজের ঘরে শূন্যে চোখ মেলে তাকিয়ে থাকি। আমি মূলত তখন কিছুই দেখি না। যদিও আমার চোখের সামনে নড়েচড়ে বেড়ায় আমার স্বজন।

কলরব করে, উত্সব করে, আনন্দ করে, কখনও বা হেসে কেঁদে আনন্দ প্রকাশ করে। শুধু হাসাটাই ভাব প্রকাশের একমাত্র অবলম্বন নয়। কখনও মানুষের বিলাপধ্বনিও আনন্দাশ্রু হিসেবে বিবেচিত হয়। হাসাটাই সব নয়। ভালোবাসাটাই সবার ওপরে।

আমি জগতের ওপর দিয়ে একজন কবি হিসেবে হেঁটে চলে এসেছি। অতিধীরে কিংবা দ্রুত ধীরগমনে আমি আমার সামান্য পায়ের ছাপ পেছনে রেখে হেঁটে চলেছি। কোথায় চলেছি সেটা আমার ভবিতব্যই নির্ধারণ করবে। মোটকথা হলো আমি থামিনি। ঘেমেছি।

ঘর্মাক্ত শরীরে আশ্রয়ের মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজেছি। কখনও সৌভাগ্যক্রমে আমার আশ্রয় মিলেছে। কখনও নিরাশ্রয়, নিরতিশয় দুঃখে দুর্দশায় কালাতিপাত করতে বাধ্য হয়েছি। শুধু একটি কাজ আমি কখনও কোনো অবস্থাতে পরিত্যাগ করিনি। সেটা হলো লেখা, রচনা, সৃজনের কম্পন।

অবিশ্রাম আমার মধ্যে শিহরণের, শারীরিক অনুভূতিতে আমাকে সজাগ, সত্যান্বেষী এবং দূরগামী এক কবিতে পরিণত করেছে। আমি কবি, এর বেশি আমি কখনও কিছু চাইনি। কবিই তো হতে চেয়েছিলাম। আর আজ আমার দেশের মানুষ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমার পরিচিত পরিবেশ আমাকে কবি বলেই সম্বোধন করে থাকে। আমি পরিতৃপ্তির মধ্যেই জীবনযাপন করে এসেছি।

এখনও যতটুকু অভিজ্ঞতার মধ্যে এসে আমাকে প্ররোচিত করে আমি সেই বিবরণ কাব্যে, গদ্যে লিখে যেতে চেষ্টা করি। আমি অতীতের দিকে ফিরে তাকাতে না চাইলেও আমার ভেতরকার অভিজ্ঞতাই আমাকে মাঝে মাঝে ইতিহাসের বিস্মৃত অধ্যায়ে মুখ ঘুরিয়ে দেখে নিতে প্ররোচিত করে। আমি সবসময় মনে হয় একজন পরিব্রাজকের মতো চলার উদ্যমে কম্পমান ব্যক্তিসত্তা। আমি আমার জীবন বলতে বুঝি হেঁটে পার হয়ে চলে আসার কাহিনী মাত্র। অথচ আমি জীর্ণ, শীর্ণ, কৃষকায় একজন দুর্বল মানুষ মাত্র।

এই ধরনের লোকেরা সাধারণত কল্পনাশক্তির অধিকারী হয়। সম্ভবত একারণেই আমার মধ্যে কাব্যচিন্তার স্ফূরণ হয়েছে। মাঝে মাঝে আমারও ইচ্ছা হয় আমি কোনো মহাকাব্যের রচয়িতা হব। কিন্তু মহাকাব্যের ব্যাপারে আমার পূর্বসূরি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন অর্থাত্ কেন তিনি মহাকাব্য রচনায় অগ্রসর হননি। আমি ওই কৈফিয়তটি—‘আমি নাব্য/ মহাকাব্য/ সংরচনে/ ছিল মনে/ হঠাত্ কখন তোমার কাঁকন কিঙ্কনিতে/ কল্পনাটি গেল ফাটি হাজার গীতে/ মহাকাব্য/ সেই অভাব্য দুর্ঘটনার/ পায়ের কাছে ছড়িয়ে আছে কণায় কণায়’ গ্রাহ্য করি না।

প্রকৃতপক্ষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাকাব্য লেখার মহাশক্তির পরিচয় দিতে পারেননি। এই সত্য মেনে নিতে হবে বৈকি। তিনি যে কৈফিয়ত দিয়েছেন আমার মন এই কৈফিয়তে পরিতৃপ্তি বোধ করে না। কারণ এই কৈফিয়তের পর বাংলা ভাষার যে ক্ষতি হলো সেটা হলো এরপর আর কেউ, কোনো কবি মহাকাব্য লেখায় প্রয়াসী হলেন না। এটা পরাজয়, যুক্তিহীনভাবে অক্ষমতার কাছে আত্মসমর্পণ মাত্র।

মহাকাব্য লেখার যুগ ফুরিয়ে যায়নি। আমি মনে করি সেই কবিত্বশক্তির আবির্ভাব অসম্ভব নয়—যিনি মহাকাব্য লিখতে অগ্রসর হবেন এবং সার্থকতা, সফলতার জয়মাল্য তার কণ্ঠে সবাই একযোগে পরিয়ে দিয়ে হেসে উঠবে—এই তো কবি-মহাকবি। আসলে কবিতার নানাবিধ প্রয়াস, প্রশংসা, সফলতা কোনো কবির জন্যই কম্পমান থাকে। কবি আবির্ভূত হন অকস্মাত্, অকল্পনীয়ভাবে একেকটি ভাষার তরঙ্গায়িত উচ্ছ্বাস উদ্দীপনার মধ্যে। মানুষের ভাষার যেমন কোনো পরিসীমা কিংবা সীমান্ত চিহ্নিত করা হয় না, তেমনি কবিকেও কোনো অবস্থাতেই কোনো জ্যোতিচিহ্নে আবদ্ধ করা যায় না।

তিনি তরঙ্গায়িত ভাষায় উচ্ছ্বাস উদ্দীপনার মধ্যে সহসা এসে আবির্ভূত হন এবং মৃদু হেসে বলেন, আমি হে দেশ হে আমার জাতি একজন কবিমাত্র। আর কিছু নই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.