জীবনের নতুন বাঁক। অলক স্যার যেদিন ক্লাসে বললেন, ‘আজ তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ ক্লাস’— সেদিনই বুকের ভেতর কেমন যেন হুহু করে উঠেছিল। তখনই বুঝেছিলাম বিদায়ের রাগিণী বেজে উঠেছে। কিছুদিন আগে যখন বিভাগ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় দেওয়া হলো; তখন বুঝলাম প্রিয় জারুলতলা, ঝুপড়ি, কাটা পাহাড়, শাটল ট্রেন সবই স্মৃতি হতে চলেছে।
এই তো সেদিন এক বুক স্বপ্ন নিয়ে পড়তে এসেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
গ্রীষ্মের কোনো এক তীব্র দহনবেলায় ভর্তি হয়েছিলাম ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগে। আর এরই মধ্যে ছয়-ছয়টা বছর পার হয়ে গেল! সময়ের হিসাবে প্রায় অর্ধযুগ। নেহাত কম সময় নয়। তবুও সময়গুলো পার হয়ে গেল যেন সুপারসনিক গতিতে! প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিয় ভূগোল বিভাগের জন্য আজ বুকটা কেন যেন ভীষণ মোচড়াতে থাকে।
বিদায়ের দিন এক ছোট ভাই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করার অনুভূতি জিজ্ঞেস করছিল।
তাকে বলেছিলাম, ‘আজ এক মহাকাব্যের সমাপ্তি হলো। হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, সফলতা-ব্যর্থতা, ক্লাইমেক্স-অ্যান্টিক্লাইমেক্স, ট্র্যাজেডি—কী ছিল না এ মহাকাব্যে!’ দু-এক কথায় এ মহাকাব্যিক জীবনের কথা ছোট ভাইকে বোঝাতে পারি না। তবে ছোট ভাই চোখের কোণে চিকচিক করতে থাকা জল দেখে ঠিকই বুঝে নেয় আমার অনুভূতি।
বিদায় অনুষ্ঠান শেষে (অনুষ্ঠান হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে) রাতে প্রীতিলতা হলের সামনে দিয়ে ফেরার সময় হঠাৎ হূৎকমলে জোরে একটা টান পড়ে। কানের কাছে তখন বেজে ওঠে রবিঠাকুরের কবিতা—
রাত্রি যবে হবে অন্ধকার
বাতায়নে বসিয়ো তোমার।
সব ছেড়ে যাব, প্রিয়ে
সমুখের পথ দিয়ে,
ফিরে দেখা হবে না তো আর।
(শেষ বসন্ত)
আর কখনো কোনো লেখায় নামের শেষে লেখা হবে না ‘...শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ’ কখনো পড়িমড়ি করে ওঠা হবে না প্রিয় শাটল ট্রেনে। ঝুপড়িতে গলা ফাটিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে মেলানো হবে না কোনো কোরাস। কিংবা অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে না শামসুন্নাহার হলের ঝুপড়িতে।
প্রিয় ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে হবে, ছয় বছরের সম্পর্কে যতি টানতে হবে— ভাবতেই কেন যেন চোখটা বারবার ভিজে ওঠে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।