আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিজামী গঞ্জোভীঃআজারবাইজানের মহাকবি ও লাইলি-মজনু মহাকাব্যের রচয়িতা।



নিজামী ছিল এ মহাকবির ছদ্বনাম,তিনি নিজে এ নামে পরিচিত হতেন। আর প্রকৃত নামটি বড়ই জমকালো,পারস্য সাহিত্যের এই মহাকবির পুরো নাম ছিল নিজাম আদ দীন আবু মুহম্মদ ইলিয়াস ইবনে ইউসুফ ইবনে জাকী। তথাপি কবি বড়ই নিরঅহংকার ও সরল ছিলেন। তিনি জন্মেছেন আজারবাইজানের গাঞ্জেচাই নদীর তীরে ঐতিহাসিক গাঞ্জে নগরীতে ১১৪১খ্রিঃ এবং মৃত্যুবরন করেন একই নগরীতে ১২০৯খ্রিঃ। যদিও জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন দক্ষিন ককেসাসে।

তার মা ছিলো কুর্দী,নাম রাইসা আর বাবার নাম ছিলো ইউসুফ,আর দাদার নাম ছিল জাকী। ধারনা করা হয় তার পুর্বপুরুষ ইরানের কোম নগরী থেকে আগত। পারসিক মহাকাব্যে তার কবির লড়াই বা কথোপকথনের কবিতার লড়াই ও বাস্তবধর্মী কবিতাগুলো আজারবাইজান,ইরান,আফগানিস্তান থেকে তাজিকিস্তান পর্যন্ত বিদগ্ধ লোকদের মুখে মুখে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ছোট থাকতেই পিতৃহারা নিজামী মামার তথ্বাবধানে বড় হয়ে উঠেন,তার মামা তাকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেন। তিনি শুধু ফার্সিতেই নন আরবীতেও সমান দক্ষ ছিলেন।

এছাড়া তার মেধায় উত্তরাধিকার সুত্রে তার বাবা ও দাদার জ্ঞানের বহিপ্রকাশ ঘটেছিলো। তাই তার কাব্যে গনিত,জৌতিবিদ্যা,রসায়ন,উদ্ভিত তথ্যের সন্মিলন দেখা যায়। বড় অস্থির এক যুগে তার আগমন,রক্তান্ধ রাজারা তখন দেশের পর দেশ ধবংশ করছিলো। কিন্তু তারপরো কবিকে বিলাশিতার লোভ দেখিয়ে কেনা সম্ভব হয় নি। গালিচার বদলে ছেড়া কাথায় বসে থেকেছেন,রত্নরাজির বদলে তার ছিলো অগুনতি বই।

এরপর কত রাজার গালিচা পোকায় কেটেছে,রাজপ্রাসাদ ভেঙ্গে পড়েছে কিন্তু তার কাব্য ছিলো অমর ও অজেয়। কবি জানতেন যে দুনিয়াকে এগিয়ে দেয় নিশংস জল্লাদেরা নয়,এগিয়ে দেয় ভালো লোকেরা। তাই তিনি ছিলেন মানবতার কবি,প্রেমের কবি। তার গীতি কবিতায় তিনি বর্ননা দেন,সাসানিদের রাজা আনুশিরভান একবার শিকারের নেশায় অনুচরদের ফেলে অনেকটা এগিয়ে যান,সাথে থাকে শুধু তার এক উজির। দুজনে এসে পৌছলেন ছারখার হওয়া এক গ্রামে।

চারোদিক খা খা করছে,সমস্ত বাড়িঘর বিধবংশ,কোথাও কোন জীবিত লোক নেই। কেবল ভাঙ্গা বাড়ির দেয়ালে দুই বিকট দর্শন পেঁচা কি যেনো বলাবলি করছে। পেঁচাদের এই উচ্চকন্ঠে এই ডাক শুনে ভীত রাজা উজিরকে বললেন ওরা কি বলছে?কারন উজির আবার পাখির ভাষা বুঝতেন। উজির শুনে বললেন,এক পেঁচা আরেক পেঁচার কাছে মেয়ের বিয়েতে যৌতুক হিসাবে এরকম নরকের ন্যায় আরেকটি গ্রাম চাচ্ছে। তখন অন্য পেঁচাটি বলছে,কোন চিন্তা নেই,আনুশিরভান যতদিন বেচে আছে ততদিন এরকম আরো হাজার হাজার নরকের ন্যায় গ্রাম ও পাওয়া যাবে আর লোকেরাও তার ফকির ও গোলাম হয়ে থাকবে।

নিজামী সক্রোধে লিখেছিলেন,চুপ কর রে নিজামী,গল্প গেলো ছিড়ে,কলজে তোর অনেক দিনই রক্ত ঝরো ঝরো। তেমনি লাইলী-মজনু গীতিকবিতায় তার প্রতিভার সেরা বিকাশ দেখা যায়। আরেক কবি সাদী এর সুন্দর বর্ননা দেন-লাইলীর রুপের বর্ননা শুনে রাজা আগ্রহী হোন তাকে দেখতে। কিন্তু দেখার পর রাজা মন্তব্য করেন,এই তার সৌন্দর্য,আমার হেরেমের সবচেয়ে খারাপ বাঁদীও তো এর চেয়ে সুন্দর। নিজামী এ ক্ষেত্রে বলেন,যে যায় বলুক লাইলীকে দেখতে হবে মজনুর প্রেমকাতর চোখ দিয়ে,তবেই না তার সৌন্দর্য বুঝা যাবে।

লিখতে গেলে আরো অনেক কথা লেখা হয়ে যাবে। তাই তার সেরা গীতিকাব্যগুলোর নাম দিলামঃসাসানিদের রাজা খসরু ও আর্মেনিয়ার রাজকন্যা শিরিনকে নিয়ে তার একটি কাব্যগ্রন্থ আছে খসরু ও শিরিন নামে। এছাড়া লাইলী ও মজনু,এস্কান্দর নামা,হাফত পায়কর বা বাহরামনামা বা সপ্ত সৌন্দর্যও তার অনন্য কীর্তি। তবে তার সবচেয়ে বিখ্যাত গীতিকাব্য হলো পাঞ্জ গাঞ্জ বা পঞ্চ রত্ন। শিল্পীর তুলিতে লাইলী-মজনু আখ্যান।

গাঞ্জা নগরীতে নিজামী স্মৃতিসৌধ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।