আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সালমাদের লঙ্কা-জয়

সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা নামতেই লাল-নীল বাতি মায়াময় এক পরিবেশই তৈরি করেছিল। চা-বাগানের মাঝখানে দাঁড়ানো স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইটের উজ্জ্বল আলোয় আরও জ্বলজ্বলে লাগছিল বাংলাদেশের মেয়েদের। শ্রীলঙ্কাকে ৩ রানে হারিয়ে সালমাদের সব হতাশা বাষ্প হয়ে উড়ে গেল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়া প্রথম জয়ের মুহূর্ত তাই আনন্দে ভরিয়ে দিল গোটা বাংলাদেশ দলকেই।
ঢাকায় সুপার টেনে চারটি ম্যাচেই হার ছেলেদের।

মেয়েরা এই সিলেটে প্রথম তিন ম্যাচে উড়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড আর ভারতের কাছে। শেষ গ্রুপ ম্যাচটা ছিল হারের বৃত্ত থেকে বেরোনোর উপলক্ষ। যদিও এই জয়ে গ্রুপে নিজেদের অবস্থানে রকমফের হয়নি বাংলাদেশের। তাতে কী? ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে জয় একটা আনন্দময় মুহূর্তই তৈরি করল।
এত দিন অপেক্ষা ছিল এই মুহূর্তটির জন্যই।

কিন্তু তা ধরা দিচ্ছিল না। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সেটি ধরা গেল অবশেষে। শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশেরও একটি জয়, তিনটি হার। নেট রান রেটে বাংলাদেশ ‘বি’ গ্রুপে পঞ্চম, শ্রীলঙ্কা চারে। আগামীকাল এই সিলেট স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় নবম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ‘এ’ গ্রুপের পঞ্চম আয়ারল্যান্ড।


সেরা আটে থাকতে পারলে ভারতে অনুষ্ঠেয় ২০১৬ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার সুযোগ মিলত। এখন পর্যন্ত আইসিসির সিদ্ধান্ত, এই টুর্নামেন্টের সেরা আট খেলবে পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।
সেদিক থেকে অষ্টম হতে না পারার আক্ষেপ থাকছে বাংলাদেশের। এবার স্বাগতিক হিসেবেই মিলেছে বিশ্বকাপে খেলার ছাড়পত্র। সেটির শেষভাগে এসে অবশেষে ঘুম ভাঙল ব্যাটারদের।

টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে আগের তিন ম্যাচে ৭৯, ৫৮, ৭২-এর দুঃস্বপ্ন মুছল, বোর্ডে ১১৫ রান। ৪১ রান এবং এক উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা রুমানা। তবে অধিনায়নক সালমা চতুর্থ ওভারে টানা চারটি চার তুলে নিয়েছেন যেভাবে, এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে সেটিই সেরা মুহূর্ত। ডট বল এদিন অনেক কম, ৫৬। চারও বেশি, ১১।

শ্রীলঙ্কার ফিল্ডাররা গোটা তিনেক ক্যাচ ফেলেছেন, তবে এদিন আর ‘শিশুতোষ ব্যাটিং’ করেননি সালমারা।
বোলিংও সময়ের দাবি মেটাল। গোটা কয়েক ক্যাচ পড়লেও তিনটি রান আউট। নিজের প্রথম ও ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে হাসিনি পেরেরাকে বোল্ড করলেন ‘বার্থডে গার্ল’ পেসার জাহানারা আলম। ৩৯ রানে লতার দারুণ এক থ্রোতে রান আউট চামারি।

১৫তম ওভারে পেসার পান্না দুটি উইকেট তুলে নিলে শ্রীলঙ্কা ৮১/৫। শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৮ রান। বাধা হয়ে দাঁড়ানো লঙ্কান অধিনায়ক শশীকলা ১০৩ রানে মিড অনে ক্যাচ দিলেন। পান্নার শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৩ রান। শ্রীলঙ্কা নিতে পারল ৯।


জয়োল্লাসে মাতল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের আগের একমাত্র জয়ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই, ২০১২ গুয়াংজু টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপে। গুয়াংজুতেই ২০১০ এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের মেয়েরা জিতেছিল রুপা। কোনো জয়ের মাহাত্ম্য বেশি?
পেসার জাহানারা কালকেরটিই রাখলেন আগে, ‘আজকের জয়টাই বেশি বড়। ’ সঙ্গে সংযোজন, ‘মাঠে প্রথম বলেই উইকেট পেয়ে আমি আমার জম্মদিন (২১তম) উদ্যাপন করে ফেলেছি।

হোটেল ফিরে দলীয়ভাবে জয় উপভোগ করব আমরা। সামর্থ্য অনুযায়ী আজ খেলতে পেরেছি বলেই জয় এল। ’
আরেক প্রশ্নে বললেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে উন্নতি হয় না। আমাদের বেশি বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা দরকার। ’ হতাশ শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক শশীকলার কণ্ঠে বাংলাদেশের প্রশংসা, ‘ওরা ভালো বোলিং-ফিল্ডিং করেছে।

আমরা বাজে ব্যাটিং, ফিল্ডিং করে হেরেছি। ’
শশীকলা যাই বলুন, বাংলাদেশ যোগ্যতর দল হিসেবেই জয় তুলে সিলেটের ভরা গ্যালারি মাতিয়েছে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১১৫/৯ (রুমানা ৪১, সালমা ২২, শারমিন ১৮, ফাহিমা ১৪; গুনারত্নে ২/১৫, প্রাবোধানি ২/১৮ )
শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১১২/৯ (মেন্ডিস ৩৩, সিরিবর্ধনে ৩১, পান্না ৩/১৮, সালমা ১/১৪, রুমানা ১/২৩, জাহানারা ১/২৭)
ফল: বাংলাদেশ ৩ রানে জয়ী, ম্যান অব দ্য ম্যাচ : রুমানা আহমেদ

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।