নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জিন্দাপার্কের প্রতিষ্ঠাতা সংগঠন অগ্রপথিক পল্লী উন্নয়ন সমিতি, এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদী নেতাদের বাধার মুখে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অবশেষে রক্তপাত ও উচ্ছেদ অভিযান ছাড়াই সমঝোতার মাধ্যমে চারটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে পার্কটি দখলে নিয়েছে। তবে রাজউক সাইনবোর্ড লাগিয়ে পার্কটির দখলে নিলেও পার্ক পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে অগ্রপথিক পল্লী সমিতি।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত পার্ক উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে চলে টানটান উত্তেজনা। পরে এই সমঝোতা হয়। উচ্ছেদ অভিযানকে ঘিরে সকাল থেকে পার্কের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন পার্ক প্রতিষ্ঠাকারী সংগঠন, এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদী নেতারা।
অন্যদিকে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে রাজউক ও পুলিশের পক্ষ থেকে ৫০০ সদস্য প্রস্তুত রাখা হয়। সমঝোতার অংশ হিসেবে পার্কের সামনে একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়, যেখানে লেখা রয়েছে ‘রাজউকের অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি। পরিচালনায় অগ্রপথিক সমবায় সমিতি’। তবে এর আগে পার্কটির সামনে রাজউকের লাগানো একটি সাইন বোর্ড উপড়ে ফেলেন সমিতির সদস্য ও গ্রামের বিক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। যেখানে লেখা ছিল, ‘রাজউকের অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি।
সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ’।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, সকালে জিন্দাপার্ক উচ্ছেদে পুলিশের ৫০০ সদস্য সেখানে যান। তখন এ উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে অগ্রপথিক পল্লী উন্নয়ন সমিতির নেতৃত্বে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা পার্কের সড়কের সামনে বসে উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন পার্কের ভেতরে থাকা স্কুলের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম ও সহকারী পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) জীবন কান্তি সরকারের নেতৃত্বে পুলিশের ৫০০ সদস্য পার্কের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন। পার্ক রক্ষায় পরিবেশ আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের ভুইয়া, যুগ্ম সম্পাদক পঙ্কজ ভট্টাচার্য, পরিবেশ আন্দোলনের নেতা এম এইচ পল্টন, লানিক মোরন, অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ, মিহির বিশ্বাসের নেতৃত্বে অগ্রপথিক সমবায় সমিতির সদস্য ও বিপুলসংখ্যক গ্রামবাসী পার্কের সামনে অবস্থায় নেয়। ওই সময় স্থানীয় এলাকাবাসীর অনেকেই নিজেদের শরীরে পেট্রল ঢেলে আত্মাহুতির জন্য প্রস্তুত ছিল। ‘জান দেব, তবুও পার্ক দেব না’ বলে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পার্কটি উচ্ছেদের জন্য বেশ কয়েকবার পরিবেশ আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে রাজউকের কর্মকর্তাদের উত্তপ্ত বাদানুবাদ হয়।
কিন্তু আন্দোলনকারীদের অনড় অবস্থানের কারণে রাজউক কর্তৃপক্ষ পার্কটি উচ্ছেদে যেতে পারেনি। তা ছাড়া পুলিশও কোনো ধরনের রক্তক্ষয় ছাড়াই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পক্ষে ছিল। পরিবেশবাদী নেতারা উচ্ছেদের প্রতিবাদে রাজউক চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেন।
জিন্দাপার্ক রক্ষার কর্মসূচিতে উপস্থিত পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের ভুইয়া জানান, অন্যায়ভাবে রাজউক কর্তৃপক্ষ অগ্রপথিক সমিতির গড়ে তোলা জিন্দাপার্কটি দখলের পাঁয়তারা করে আসছে। এজন্য তারা বিপুল পরিমাণ পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে পার্কটি দখলের চেষ্টা করছে।
এলাকার মানুষ তিলে তিলে পার্কটি গড়ে তুলেছে।
রাজউকের পরিচালক সদস্য (উন্নয়ন) নাঈম আহমেদ বলেন, অগ্রপথিক পল্লী সমিতির সঙ্গে আপাতত একটি সমঝোতা হয়েছে। সমঝোতা অনুযায়ী পার্কটি রাজউকের অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি, তবে পার্কটির পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে অগ্রপথিক পল্লী সমিতি। তবে বিষয়টির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে রাজউকের নীতিনির্ধারকেরা।
পার্কের প্রতিষ্ঠাকারী তবারক হোসেন জানান, ‘হাইকোর্টে মামলা চললেও অবৈধভাবে রাজউক উচ্ছেদ অভিযান চালানোর চেষ্টা করেছিল।
তবে আমাদের আন্দোলনের মুখে আজ রাজউকের কর্মকর্তারা আমাদেরকে অবৈধ দখলদার বলে উচ্ছেদ করেনি। তারা আমাদের স্বীকৃতি দিয়ে বলেছে, রাজউক পার্কটির জমির মালিক হলেও আমরা পার্কটির প্রতিষ্ঠাতা। ’
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার সৈয়দ নূরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
জিন্দাপার্কের যাত্রা শুরু ১৯৮১ সালে। অগ্রপথিক পল্লী সমিতির প্রায় পাঁচ হাজার সদস্য ১০০ বিঘা জমির ওপর পার্কটি গড়ে তোলেন।
এর ভেতরে পাঁচটি জলাশয়, ৫০০ প্রজাতির বনজ, ফলদ ও ঔষধিসহ কয়েক লাখ গাছ রয়েছে। আছে স্কুল, মসজিদ, পাঠাগার, কটেজ ও অফিসসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনাও।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।