এইটা আমার ব্লগ। প্রায় দুই বছর ধরেই আমাদের ক্লাস ডিস্ট্রিবিউশন নিয়ে একটা লেখা মাথায় ঘুরছে। কিন্তু লেখা হয়নি। কিন্তু পিজ্জা হাটে অনন্ত জলিল এর মত একজন প্রপার বুর্জোয়া রিকশাওয়ালা ক্লাস বলে গালি খাওয়াতে মনে হইলো লেখাটা এখন লেখার সময় হইসে।
একজন বাম এর স্বপ্ন থাকে শ্রেণী বৈষম্য থেকে সমাজকে মুক্তি ।
কমিউনিস্টরা এই শ্রেণী বৈষম্য থেকে মুক্তির জন্য বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে শুধু মাত্র বিত্তভিত্তিক এই বিভাজন টা সরল রৈখিক। আমাদের দেশের শ্রেণীর বৈষম্য শুধু মাত্র, কার আছে কার নেই, ঐ লাইনে তৈরি হয়নি। টাকা পয়সার হিসেবের বাহিরে গিয়ে আমাদের বাঙালি মানসিকতায় কার সামাজিক অবস্থান উঁচু, কার নিচু এই নিয়ে একটা ব্যাপক বিভাজন সৃষ্টি হয়ে আছে অনাদি কাল থেকে।
ব্যবসা বাণিজ্য, এবং বিভিন্ন কাজে সমাজের বিভিন্ন স্তরের অনেক লোকের সাথে পরিচিত হয়েছি যারা বিত্ত ক্লাসিফিকেশনে আপার ক্লাস পর্যায়ে পড়ে যাবে কিন্তু আমাদের মধ্যবিত্ত লোকজন তাদের ড্রয়িং রুমেও বসতে দিবে না, বারান্দার দাড়িয়ে কথা বলবে ।
মধ্যবিত্ত পরিবারে পনের হাজার টাকার এন্ট্রি লেভেল চাকুরী এখনও সম্মানজনক, কিন্তু ঢাকার অনেক এলাকায় রিকশাওয়ালারা বিশ হাজারের উপরে কামায়।
অনন্ত জলিলকে পিজ্জা হাটে যে ইয়ো পোলাপান বাস্টার্ড আর রিকশাওয়ালা ক্লাস বলে গালি দিল তারাও এই চেতনা থেকে বলেছে । এই পোলাপান গুলো বেশির ভাগই বিত্ত হিসেব করলে, অনন্তের ধারে কাছে আসবেনা। অনন্ত একজন সি আই পি এবং একটা বড় গ্রুপের মালিক। ক্লাস উত্তরেনের জন্যই অনন্ত সিনেমা বানায় , কিন্তু রিকশাওয়ালাদের জন্যে সিনেমা বানিয়ে আপার ক্লাস থেকে আরও উপরে যাওয়ার বদলে না বুঝে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেণ আরও নিচের স্রেনিতে।
এই শ্রেণী বৈষম্য টাকে ভাঙ্গতে আমাদের স্বপ্নের ফেরিওয়ালাদের আগ্রহ কম। কারণ এই শ্রেণীর বিভাজনে তারা মোটামোটি সব চেয়ে উপরের সারিতে খুবই আরামদায়ক একটা স্থানে আছেন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, এই শ্রেণী গুলো নিয়ে আমি একটা ক্লাসিফিকেশন দাড় করিয়েছি । এই বিভাজনে অবশ্যই ইনকাম বা বিত্তের ভূমিকা আছে। কারণ অর্থনৈতিক সামর্থ্যের ভিতরেই এই বিভাজনের সীমানা নিহিত।
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আপনার দেখবেন বিত্তের সীমানা ভেঙ্গে, সোসিয়াল স্ট্যাটাস শ্রেণী বৈষম্যের সব চেয়ে বড় নির্ণায়ক হয়ে উঠেছে । ক্লাসিফিকেশন টা মোটামূটি এই রকম।
ক্ষেত ক্লাস।
সামাজিক মর্যাদা এবং আর্থিক অবস্থান দুই দিক থেকেই সব চেয়ে প্রান্তিক শ্রেণিকে প্রতিনিধিত্ত করে ক্ষেত ক্লাস। রিকশাওয়ালা,বাসার কাজের বুয়া, গ্রামের কৃষক,লেবার, বাসের কন্টাক্টর,ফকির, মিসকিন সবাই এই শ্রেনীতে পড়বেন।
ক্ষেত ক্লাস কে মাপার একটা সহজ নিয়ম আছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বাসায় যদি কখনো ক্ষেত ক্লাস দাওয়াত পান তো কখনোই তাদের এক টেবিলে খেতে দেওয়া হবে না। আর একটা ভাবে ক্ষেত ক্লাস কে চিহ্নিত করা যায়, মধ্যবিত্ত এবং তার উপরের ক্লাসেরা ক্ষেত ক্লাস কে তুমি করে ডাকে। এবং ক্ষেতে ক্লাস এইটা মেনে নিয়েছে।
এই শ্রেণিতে প্রফেশন ভেদে ইনকাম উঠা নামা করে।
কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দিনে এনে, দিনে খায়। ক্ষেত ক্লাসে সামাজিক মর্যাদা একে বারে কম থাকার কারণে, ক্লাস কনশাসনেন্স টাও কম। এবং সোশ্যাল স্ট্যাটাস মেইনটেইন এর খরচ একে বারে নেই বললেই চলে। রুটি রুজির ভাবনায় ক্ষেত ক্লাসকে এতই ব্যস্ত থাকতে হয় যে ক্লাস এর দিকে তাকানোর সময় থাকেনা। ক্ষেত ক্লাসে মধ্যে ধর্মীয় চেতনাও কম, কারণ ধর্ম শিক্ষা নিতে গেলেও যে সর্বনিম্ন বিত্ত থাকতে হয়, তা কখনই এই শ্রেণির কাছে থাকেনা।
ক্ষেত ক্লাস বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় সামাজিক শ্রেণি। কিন্তু দেশের সব স্তরে এদের প্রতিনিধিত্ব এত কম যে, অনেক সময় ক্ষেত ক্লাস এর উপস্থিতি বোঝাই যায়না। ক্ষেত ক্লাস কে আরও দুইটি ভাগে ভাগ করা সম্ভব ছিল এবং করলে হয়ত বিভাজন গুলো আরও পরিষ্কার হত। কিন্তু, মধ্যবিত্তের চোখে এই সেপারেসান গুলোর খুবই অস্পষ্ট। পুরো জনগোষ্ঠী তাদের কাছে অস্পৃশ্য-ক্ষেত ক্লাস।
ডিশ ক্লাস।
সেলফ এক্সপ্লেনেটরি, তাইনা ? এই ক্লাসের শুরু হয় এমন একটা বিত্তের সীমানায় যেখান থেকে বিদ্যুৎ এর লাইন নেয়া সম্ভব এবং ছয় সাত হাজার টাকা দিয়ে একটা সাদা কালো টিভি কিনে মাসে চারশত টাকা দিয়ে ডিস সংযোগ মেইনটেইন করা সম্ভব। অফিসের পিয়ন, গাড়ির ড্রাইভার, গার্মেন্টস এর ফ্লোর সুপারভাইজার, ইলেক্ট্রিশিয়ান, ছোট মুদির দোকানের মালিক এবং আরও অনেকেই ডিশ ক্লাসে পরবে। ডিশ ক্লাসের আয়, অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষেত ক্লাস থেকে কম। কিন্তু ডিশ ক্লাস ক্ষেত ক্লাস এর উপর একটা সুস্পষ্ট সামাজিক প্রাধান্য বজায় রেখে চলে।
ডিশ ক্লাসেরও সোশ্যাল স্ট্যাটাস মেইনটেইন এর দায় কম এবং ওই রিলেটেড খরচ কম। মনে করেন ফুফাতো বোনের বিয়েতে সামাজিক মর্যাদার জন্যে ডিনার সেট গিফট দেয়ার দায় এই শ্রেণিতে কম থাকে । বিত্তের দিক থেকে ডিশ ক্লাস এর অনেক প্রতিনিধি মধ্যবিত্তের সমকক্ষ এবং অনেক ক্ষেত্রেই মধ্যবিত্তের থেকে এগিয়ে আছে কিন্তু সামাজিক দিক থেকে এরা ক্ষেত শ্রেণী থেকে যত কাছে মধ্য বিত্ত শ্রেণী থেকে তত দুরে।
মধ্যবিত্তের এদের নিচু চোখে দেখে । অর্থনীতিক উত্তরণের পর, ডিশ ক্লাসের সব চেয়ে বড় স্ট্রাগল থাকে সামাজিক ভাবে মিডল ক্লাসের সম্মান শ্রেণিতে উত্তরণ।
মধ্যবিত্ত বা মিডল ক্লাস
মধ্যবিত্ত বা মিডল ক্লাস আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রচলিত বিভাগ। মিডল ক্লাসকে চিনতে কোন ডিস্টিংশন লাগেনা, এদের এমনেই চেনা যায়। । আর্থিক ভাবে এরা সবচেয়ে চিড়ে চাপা শ্রেণী । বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জীবন যাপন মিডল ক্লাস একটা আর্ট এর পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
কারণ তাদের যে আয়, তার থেকে প্রতি মাসেই তাদের খরচ বেশী। এই টা মিডল ক্লাস কেমনে মেইনটেইন করে, তা এরা নিজেরাও জানেনা।
মিডল ক্লাস এর রয়েছে একটা বিশাল শ্রেণী মেন্টেনেন্স খরচ। কোন উপায় না থাকলেও, এদেরকে মেয়ের বিয়েতে হল ভাড়া করে ৫০০ লোক খাওয়াতে হয় এবং এর দায় তারা চার পাঁচ বছর পর্যন্ত টেনে যায়।
ক্লাস মেইন্টেনেন্স এর এই প্রচণ্ড চাপ থাকার কারনে এরা প্রচণ্ড উন্নাসিক।
এরা ক্ষেত শ্রেণীর সাথে ব্রাহ্মণীয় দূরত্ব মেইনটেইন করে এবং ডিস ক্লাসকে তাচ্ছিল্যর সাথে দেখে । বিত্তের দিকে সমকক্ষ না হলেও সামাজিক মর্যাদায় মিডল ক্লাস, আপার ক্লাস এর সাথে তেমন কোন পার্থক্য করেনা। এবং প্রতিটা মুহূর্তে সতর্কে থাকে যে, আপার ক্লাসের লোকজনের সাথে যাতে তাদের কোন শ্রেণী পার্থক্য না করা যায়।
মিডল ক্লাসের সারাজীবনের লক্ষ্য থাকে একটা গাড়ি ও ফ্ল্যাট বাড়ি যে স্বপ্ন পূরণ হলে আপার ক্লাস এর সাথে তাদের পার্থক্য ঘুচে যায় এবং দিন যাপনে অনেক স্বাচ্ছন্দ্য আসে। ক্লাস মেইন্টেনেন্স এর চাপ আর আর্থিক দৈন্য- এই দুই দিক থেকেই মধ্যবিত্ত খুব কষ্টকর জীবন যাপন করে।
কিন্তু মিডল ক্লাস এর সব চেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল তারা এই নিয়ে কথা বলেনা এবং নিজের অবস্থা কাউ কে বুঝতে দেয়না।
আপার ক্লাস
আপার ক্লাস কে চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হল এরা বেনসন খায়। মানে সিগারেট যদি নাও খায় এদের ভাই ব্রাদার বেনসন খায়। এরা ইনহেরিটেন্স এ পাওয়া সম্পদের অধিকারী অথবা টেলকো বা ব্যাংকে বা প্রাইভেট বা সরকারি পর্যায়ে ভাল পদবীর ভাল সেলারির চাকুরী করে বা এরা কোন মধ্যম সাইজ এর ট্রেডিং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এর মালিক বা এস মি ই টাইপ এর শিল্পপতি বা টেকনিকাল প্রফেশনে জড়িত যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি ইত্যাদি।
এদের মধ্যে থেকে বড় অংশর উত্তরণ হয়েছে মিডল ক্লাস থেকে এক জেনারেশানেই।
এবং একটি গাড়ি কেনার মাধ্যমেই তাদের সেই উত্তরণ নিশ্চিত হয়। এবং পরে তারা আরও এগিয়ে যায়। এরা সুযোগ এর রাস্তা চিনে ফেলছে এমন একটা শ্রেণী। এবং এরা খুব তাড়াতাড়ি এগিয়ে যেতে থাকে।
মধ্যবিত্তের সাথে এদের ক্লাস কনসাসনেস এর তেমন কোন পার্থক্য নেই এরাও ক্ষেত শ্রেণীর সাথে এক টেবিলে বসে না, ডিশ ক্লাস কে ছোট চোখে দেখে ।
মধ্য বিত্তের সাথে এদের সামাজিক অবস্থান কি খুব কাছাকাছি। কিন্তু আর্থিক দিক থেকে এরা আরামে থাকে এবং ক্লাস মেইন্টেনেন্স এর খরচ টা এদের গায়ে লাগেনা। এইটাই মধ্যবিত্তের সাথে তাদের প্রধান পার্থক্য।
পাজেরো ক্লাস
বাংলাদেশে এইটা একটা দ্রুত বর্ধনশীল ক্লাস। এবং এদের আবির্ভাব গত বিশ বছরে।
এমন নয় যে এরা আগে ছিলনা। কিন্তু গত বিশ বছরে এরা কাতারে কাতারে বেড়েছে । এই ক্লাসে আছে বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক, শিল্পপতি, সরকারি দুর্নীতি বেনিফিশিয়ারি গোষ্ঠী- চাকুরীজীবী এবং টেন্ডার বাজ উভয়েই, টপ লেভেল কর্মকর্তা, পলিটিকাল লিডার, উচ্চ কমিশন ভোগী বেসরকারি কর্মচারী, বড় পারিবারিক সম্পদ ইনহেরিট করা গ্রুপ ইত্যাদি ইত্যাদি।
এদের বৈশিষ্ট্য হল এরা ব্যাপক বিত্ত ধারণ করে। টাকায় টাকা ।
এই দেশে লাক্সারি সহ বাচতে যত টুকু বিত্ত লাগে তার চেয়ে অনেক বেশি গুন তাদের আছে। যেটা ওরা এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখতে পারে। এরা কোরবানিতে বিশাল বড় গরু দেয়। রোজা এর সময় এদের বাসায় বিশাল লাইন পরে ,শাড়ি আর লুঙ্গি নেয়ার জন্য।
এদেরকে চেনার মিনিমাম বৈশিষ্ট্য হল ঘরের পতি এবং জায়া দুই জনের জন্যে দুইটা গাড়ি থাকে।
একটা গাড়ি ফ্যামিলি সাপোর্ট দেয়, আরেকটা গাড়ি কর্তা ব্যবহার করে। কর্তার টা সাধারণত এস এউ ভি। দুইটারই ড্রাইভার থাকে।
সামাজিক ভাবে , আপার ক্লাসের সাথে এদের তেমন পার্থক্য নেই। কিন্তু অর্থনৈতিক সাফল্যের কারণে অন্য সকল ক্লাস এর লোকেরা এদের সমঝে চলে।
পাজেরো ক্লাস এর আত্মীয় স্বজনের বেশির ভাগই মিডল ক্লাস গ্রুপের এবং তাদের প্রতি পাজেরো ক্লাসের মনোভাব থাকে আক্রমণাত্মক। এদের অনেক কেই এরা চাকুরী দেয়। এরা মনে করে, মধ্যবিত্তরা অলস এবং এই জন্যেই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর এই অবস্থা। এদের ছেলে পেলেরা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়লে হয় ইয়ো টাইপ আর বাংলা মিডিয়াম পড়লে হয় চরম এনারকিস্ট বামপন্থি টাইপ ।
কুল ক্লাস
সোশ্যাল ডায়নামিক্সে কুল ক্লাস টা খুব ইন্টারেস্টিং একটা ক্লাস।
এদের ইনকাম পাজেরো ক্লাস থেকে কম এবং অনেক ক্ষেত্রে মিডল ক্লাস এর সমান। কিন্তু তাদের কর্মের কারণে সমাজে তাদের একটা একটা মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান আছে যার কারনে তাদের সোশ্যাল স্ট্যাটাস পাজেরো ক্লাস থেকে উপরে থাকে। এই ক্লাসে থাকে সেলিব্রেটি, কলেজের প্রফেসার, রেডিও এর আর জে,কবি, টিভি স্টার,আতেল,ফেসবুকে ১০,০০০ এর উপর সাবসক্রাইবার, সিনেমার নায়ক, গিটার গড, কলাম্নিস্ট, পাড়ার সেলিব্রেটি সুন্দরি, পলিটিকাল লিডার, বিচারক, হিমালয় বিজয়ী, সব জান্তা টকশো মাস্টার, জাতীয় দলের ক্রিকেট খেলোয়াড় এবং আরও অনেকেই। এরা কুল। তাই, এরা কুল ক্লাস।
কুল ক্লাস মূলত আপার ক্লাস থেকে আসে। এদের মূল তৎপরতা থাকে, তাদের কুল সোশ্যাল স্ট্যাটাস টা ব্যবহার করে, অর্থনৈতিক ক্যাটাগরি আপার ক্লাস থেকে পাজেরো ক্লাস এ উত্তরণ। যদিও এইটা খুব কঠিন জার্নি কিন্তু তাদের কুল স্ট্যাটাস তাদের পথ মসৃণ করে দেয়। কুল সোশ্যাল স্ট্যাটাস টা ধরে রাখতে পারলে, এদের এই উত্তরণ হতে সাধারণত পাঁচ বছর বা এক সরকারের সমান সময় লাগে এভারেজে।
ইন্টেরিস্টিংলি, এরা সবচেয়ে বড় ক্লাস স্নব।
এরা সাধু এবং মাটির মানুষ ভাব নিয়ে চলে। কিন্তু একজন বিচারক যেমন তার গাড়িকে জ্যামে প্রাধান্য না দিলে ট্রাফিকের উপর রুল জারি করে তেমনি এদের ক্লাস সেনসিটিভটিতে হাত লাগলে এরা উন্মত্ত হয়ে উঠে।
এদের অর্থনীতিক উত্তরণের সব চেয়ে সহজ রাস্তা হল, পাজেরো ক্লাস এর সাথে বিবাহের মাধ্যমে সম্পর্ক। এই সম্পর্কে পাজেরো ক্লাস ও বিবাহের মাধ্যমে কুল ক্লাসে উন্নীত
হয় এবং কুল ক্লাসের ও অর্থনৈতিক ভাবে পাজেরো ক্লাসে উন্নয়নের মনোবাসনা পূর্ণ হয়। এইটা এমন একটা উইন উইন সম্পর্ক যা উপেক্ষা করা উভয় পক্ষের জন্যেই মুশকিল।
এলিট ক্লাস
এই ক্লাসের মাহাত্ম্য আর কি করিব বর্ণন। অর্থ বিত্তে,শানে শওকতে ইনারা এই দেশের মাথা। ইনারা আমাদের হর্তা কর্তা বিধাতা। এলিট ক্লাসকে আমরা এক নামে চিনি। যেমন মন্ত্রী মিনিস্টার- মওদুদ আহমেদ, সৈয়দ আশরাফ,ডক্টর কামাল, মাহি বি প্রমুখ।
লেখক -জাফর ইকবাল, আনিসুল হক, ইমদাদুল হক ইত্যাদি। এ লিস্ট সেলিব্রেটি যেমন জুয়েল আইচ,আফজাল, সারা যাকের, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, জেমস । এক নম্বর সাংবাদিক যেমন মতিউর রাহমান, আবেদ খান, নুরুল কবির। নোবেল বিজয়ী যেমন ডক্টর ইউনুস, শেখ হাসিনা । টপ লেবেলের সচিব, পুলিসের আইজি, আর্মির জেনারেল বা চিফ অফ স্টাফ।
বড় গ্রুপের মালিক যেমন পারটেক্সের চেয়ারম্যান হাশেম সাহেব, বসুন্ধরার চেয়ারম্যান আকবর সোবহান, দরবেশ বাবা । ব্যাংক এর মালিক যেমন আজম যে চৌধুরী, নুর আলী । ইন্টেলেক্টুয়াল যেমন সুলতানা কামাল, শাহরিয়ার কবির, আসিফ নজরুল, আনু মোহাম্মদ ইত্যাদি ইত্যাদি ।
ইনারা আমাদের ভাগ্য বিধাতা। আমাদের মেধা, মনন, আয় রোজগার সব ইনারা নির্ণয় করেন।
এখানে উল্লেখ্য অন্য কোন ক্লাসে ব্যক্তির নাম না নিয়ে এালিট ক্লাসে কেন নাম নিলাম। কারণ এই ক্লাসের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ইনাদের একনামে চেনা যায়।
এলিট ক্লাস নিয়ে তেমন কিছু বলার নাই। ইনারা মাসলোর এর মানবিক চাহিদা সোপানের একচুয়ালাইযেশন পর্যায়ে চলে গেছেন। ইনারা জাগতিক বিষয় নিয়ে চিন্তা না করে ইতিহাসে উনার অবস্থান কোথায় ঐটা নিয়ে চিন্তা করেন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইনারা ব্যাপক তোষামোদি পছন্দ করেন এবং আসে পাশে তোষামোদ কারি দিয়ে ভরে রাখেন যাতে তাদের আত্মশ্লাঘার তীব্র তৃষ্ণা টাকে সর্বক্ষণ ভাবে কেউ না কেউ সেচ দিতে থাকে। এলিট ক্লাস ক্ষেত ক্লাস এর প্রতি ব্যাপক ভাবে সহানুভূতিশীল থাকে। এবং প্রতি মুহূর্তে এইটা প্রকাশ করে থাকেন।
আজ তাই ,অনন্ত জলিলের যে সংকট তা তার সোশ্যিায়ল ক্লাসের সংকট। অনন্ত জলিল কিন্তু পাজেরো ক্লাসের লোক, সিনেমা বানিয়েছেন কুল ক্লাসে উত্তরণের জন্যে।
কিন্তু বেকুব অনন্ত জলিল রিক্সাওায়ালা টাইপ ক্ষেত ক্লাসের জন্যে ছবি বানিয়ে কুল ক্লাস এ ওঠার বদলে চলে গেছেন ডিশ ক্লাসে। তাই এমনকি মধ্যবিত্তরাও তাকে নিয়ে হাসা হাসি করে, আর আপার ক্লাসের পোলাপান তাকে ক্ষেত বলে গালি দেয়। যেখানে মিডল ক্লাস, আপার ক্লাস কেউই বিত্তের দিক থেকে অনন্ত জলিলের সমকক্ষ নয়।
এখন তাই ইনকাম আর সামাজিক শোষণ এর প্রধান নিয়ামক নয়। ইনকাম ডিভিশন যেইটা আছে, তার থেকে সোশ্যাল স্ট্যাটাস এর পার্থক্য অনেক বড় বিভাজন গড়ে তুলছে।
একজন বামপন্থির সব চেয়ে বড় স্বপ্ন , শ্রেণী বিভাজন এবং শ্রেণী শোষণ থেকে সমাজ কে মুক্তি দেয়া। ইনকাম ভিত্তিক বুর্জোয়া আর প্রলিতরিয়েত এর বিভাজন ভাঙ্গতে অনেক লড়াই চলছে । কিন্তু অনন্ত জলিলের মতো প্রপার বুর্জোয়াকে ক্ষেত ক্লাস হিসেবে
মার্ক করে রিকশাওয়ালা গালি দেওয়ার যে প্রবণতা আমাদের কালেকটিভ মাইন্ড সেটে আছে এবং এর মধ্যে শ্রেণী শোষণের যে পরিষ্কার লক্ষণ ফুটে ওঠে তাকে ঠিক করবে কে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।