আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রতিবন্ধিতা যেখানে পরাজিত

একজন জন্মান্ধ। আরেকজনের জন্ম থেকেই দুই হাতে ছয়টি আঙুল নেই। কিন্তু কোনো কিছুই দমাতে পারল না তাদের। অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে তারা দুজনই শারীরিক প্রতিবন্ধিতা জয় করে এগিয়ে চলেছে।  জন্মান্ধ মিফতাহুল জান্নাত ওরফে হিরা এবং ছয়টি আঙুলহীন উম্মে হাবিবা এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।

দুজনেরই বাড়ি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায়। হাবিবার স্বপ্ন ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে দরিদ্র মানুষের সেবা করা। আর মিফতাহুল স্বপ্ন দেখছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পড়াশোনা করার।
মনের আলোয় পৃথিবী দেখার স্বপ্ন: শিবগঞ্জের বিহার গ্রামের দরিদ্র কৃষক আবদুস সাত্তারের নয় ছেলেমেয়ের মধ্যে সবার ছোট মিফতাহুল। আরও দুই বোন রেশমা খাতুন ও লাভলী খাতুনও জন্মান্ধ।

সংসারে শত অভাব-অনটনের মধ্যেও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী তিন মেয়ের চিকিৎসা করানো হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি। সুযোগের অভাবে বড় বোন রেশমার লেখাপড়া হয়নি। লাভলী আর মিফতাহুলের পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ দেখে এগিয়ে আসে ‘অ্যাসিসট্যান্ট ফর ব্লাইন্ড চিলড্রেন—এবিসি’ নামের একটি বিদেশি সংস্থা।
মিফতাহুল জানায়, ২০০১ সালে তারা দুই বোন গাজীপুরের সালনায় ‘এবিসি’র অন্ধ স্কুলে ভর্তি হয়।

সেখানে ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়ালেখা শেখে। ২০১২ সালে সালনা নাসির উদ্দিন মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৪ নিয়ে এসএসসি পাস করে মিফতাহুল। এরপর সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে মানবিক শাখায় ভর্তি হয়।
মিফতাহুল জানায়, লাভলী উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর গাজীপুরে ‘প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি’ নামের একটি সংস্থায় চাকরি নেন। কিন্তু দুই বছর আগে সংস্থাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে তিনি বেকার সময় কাটাচ্ছেন।


সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের ছাত্রীরা এবার বগুড়া কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, একজন ‘শ্রুতলেখক’ সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে মিফতাহুল। শ্রুতলেখক শিবগঞ্জ উপজেলার বুড়িগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী মৌসুমী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পড়ার আগ্রহ প্রকাশ করে মিফতাহুল বলে, ‘চোখের আলোয় এই সুন্দর পৃথিবী দেখার সুযোগ হয়নি, তাই মনের আলোয় গোটা পৃথিবী জানতে চাই। এ জন্য আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পড়তে চাই।


সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সামস্-উল-আলম বলেন, অসম্ভব রকমের মেধা ও ইচ্ছাশক্তি দিয়েই মেয়েটা নিশ্চিত একদিন স্বপ্ন জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে।
‘চিকিৎসক হয়ে গরিবের সেবা করব’: শিবগঞ্জের কিচক গ্রামের শিক্ষানুরাগী গোলাম মোস্তফার মেয়ে উমেঞ্চ হাবিবা। জন্মগতভাবেই মেয়েটির দুই হাতের কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গুল ছাড়া বাকি ছয়টি আঙুল নেই। শুরুতে দুই আঙুলে কলম ধরতে কষ্ট হলেও এখন তা আয়ত্তে এসে গেছে।
হাবিবা সরকারি আজিজুল হক কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী।

সে বগুড়া শহরের বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ পেয়েছে। সরকারি শাহ সুলতান কলেজ তার এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র।
গতকাল ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, হাবিবার পরীক্ষা ভালো হচ্ছে। সে বলে, ‘ভালো রেজাল্ট করে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে চাই। চিকিৎসক হয়ে গরিব মানুষের সেবা করব।


সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ দীপকেন্দ্র নাথ দাস বলেন, ‘ইচ্ছাশক্তির জোরে মানুষ যে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে, একদিন স্বপ্নপূরণের মাধ্যমে হাবিবা সমাজে সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। ’

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।