মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী,
সম্পূর্ণ
যোগ্যতা থাকা সত্বেও নারায়ণগঞ্জ তানজিম
হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ
আমাকে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
অযোগ্যতার কারণ, আমি একজন শারীরিক
প্রতিবন্ধী! এক বুক হতাশা কিন্তু তার চেয়ে অধিক আশা নিয়ে আপনাকে লিখছি আমার
ব্যর্থ স্বপ্নের ইতিকথা জানাতে।
একটি শিশুর জন্ম যেমন তার পরিবারে খুশির
বন্যা বইয়ে দেয় তেমনি পৃথিবীতে আমার
আগমনে মা-বাবার মনে আনন্দের
বন্যা বয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাদের সেই আনন্দ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। দূরারোগ্য ও মারাত্মক
“মাস্কুলার ডিস্ট্রোফি”তে আক্রান্ত হবার
পরে তারা বুঝতে পারেন, যে সন্তানের নাম
তারা আদর করে রেখেছেন সুমাইয়া, সমাজ
তাকে বিদ্রুপ করছে “প্রতিবন্ধী” বলে।
এই রোগটি ধীরে ধীরে মানুষের মাংসপেশীকে দূর্বল করে চলাচলে অক্ষম
বানিয়ে দেয়। বর্তমানে আমার জীবন হুইলচেয়ারের
চাকায় নির্ভরশীল। ছোটবেলায় আমার
চিকিৎসা করাতে করাতে যখন মা-বাবা উভয়েই
আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশ তখন ঢাকা শিশু
হাসপাতালে আমার মানসিক যোগ্যতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে ওছ টেস্ট নেয়া হল। যেখানে অ-
প্রতিবন্ধী মানুষের ওছ ১১০-১২০ হয়,
সেখানে আমার ওছ পয়েন্ট আসে ১৩৪। ডাক্তার
আমার মেধা ও বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগানোর জন্য
বাবা মাকে উৎসাহ দিলেন।
লেখাপড়া করে মানুষের
মত মানুষ হবার উপদেশ দিলেন। আমাকে নিয়ে মা- বাবার মনে যে হতাশা ছিল তা নিমিষেই দূর
হয়ে গেল। সেদিন ছিল আমার জীবনের
সবচেয়ে খুশির দিন। আমি অনুভব করলাম
একমাত্র শিক্ষাই পারে আমাকে মুক্তি দিতে;
পরনির্ভরশীলতা, বিদ্রুপাচ্ছন্ন অন্ধকার
জগতের অপমান থেকে। সেদিন থেকে শুরু হল আমার যুদ্ধ, নিজের
শারীরিক সীমাবদ্ধতার সাথে, নিজের জীবনের
সাথে, ভাগ্যের সাথে আর সমাজে প্রচলিত
কুসংস্কারের সাথে।
বাবার ইচ্ছা ছিল আমি যেন বড়
হয়ে ডাক্তার হই। তাই যাতায়াতসহ আরো নানাবিধ
প্রতিকূলতা সত্তেও ডাক্তার হবার স্বপ্ন নিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে গেছি।
এক্ষেত্রে আমাকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করে
ছোট খালামণি। এমনকি দিনের পর দিন
তিনি আমাকে কোলে করে স্কুল ভবনের দোতলায়
উঠিয়েছেন ক্লাস করার জন্য।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা পাইনি।
স্কুল কর্তৃপক্ষ
শুধুমাত্র একজন শিক্ষার্থীর জন্য ক্লাস নিচ
তলায় সরাতেও রাজি হয়নি। ২০১১ সালে বিজ্ঞান
বিভাগ থেকে এস.এস.সি পাসের পর আমার শরীর
আরো বেশি ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে। শারীরিক
দুর্বলতা এবং নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত সুবিধার
অভাবে বাধ্য হয়ে ডাক্তার হবার স্বপ্ন
জলাঞ্জলি দিয়ে নারায়ণগঞ্জ কলেজে ব্যবসায়
শিক্ষা বিভাগে ভর্তি হই এবং এই বছর
এইচ.এস.সি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.২০
পেয়ে উত্তীর্ণ হই। কিন্তু এই বিভাগের বিষয়গুলো পড়ে আমার মন কখনোই আনন্দ
পায়নি। তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর
উদ্দেশ্যে ঠিক
করি হোমিওপ্যাথি নিয়ে পড়াশুনা করবো।
আমাদের এলাকায় “তানজিম হোমিওপ্যাথিক
মেডিকেল কলেজ” নামে মাত্র একটিই হোমিওপ্যথি কলেজ আছে। ভর্তির
উদ্দেশ্যে বাবা সহ সেখানে গিয়ে প্রচণ্ড অপমান
এবং হতাশা নিয়েই বাড়ি ফিরে আসতে হয়েছে।
ভালো ফলাফল এবং হোমিওপ্যাথি পড়ার স¤পূর্ণ
যোগ্যতা থাকা সত্বেও শারীরিক প্রতিবন্ধিতার
অজুহাতে ভর্তি করালেন না। আমি নাকি ঠিক মত পড়তে পারবো না। তারা শুধু আমার অক্ষমতাই
দেখেছেন।
আমার মেধার কি কোনো মূল্য নেই?
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাধ্যতামূলক করার
ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণারও
কি কোন মূল্য নেই তবে? স্বাবলম্বী হবার জন্য
হোমিওপ্যাথি পড়াটা আমার জন্যে খুব প্রয়োজন
ছিল। এটা আমার স্বপ্নও ছিলো। জানিনা এই
প্রতিযোগিতার যুগে আমি কতদূর
টিকে থাকতে পারবো! কতদূর
পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারবো! হয়তো বা কর্মজীবনেও আমাকে এমন তিক্ত
অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হবে,
অথবা আমি আদৌ চাকরির সে পরিবেশ
পাবো কিনা জানি না! আমারই চোখের
সামনে ছোট বোনটি শিক্ষা অর্জন করছে,
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করছে, অথচ আমি অনিশ্চয়তায় ভুগছি। আমাদের
দেশে প্রতিবন্ধী অধিকার আইন আছে, সবার
জন্য শিক্ষার কথা বলা হয়েছে কিন্তু এর কার্যকর
প্রয়োগ সচরাচর চোখে পড়ে না। আপনার নিকট
আমার বিনীত অনুরোধ, আমার মত আর
কোনো প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবহেলার শিকার না হয়
সে বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করার করুন।
কেননা একমাত্র শিক্ষাই পারে আমাদের “সমাজের
বোঝা” নামক অপবাদ থেকে মুক্তি দিতে।
বিনীত-
সুমাইয়া বিন্তে শফি, নারায়ণগঞ্জ।
---------------------
চিঠিটি ফেসবুকে আমার এই হতভাগা বন্ধুটি পোস্ট করেছেন । একরাশ কষ্ট আর ক্ষোভ নিয়ে তানজিম হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের কৃপক্ষের পিরতি ধিক্কার জানাচ্ছি ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।