এতটা দিন পেরিয়ে আজো মায়ের জন্য কাঁদি
কারণ আমার মা যে ছিল ভীষণ মিথ্যাবাদী।
বাবা যেদিন মারা গেল আমরা হলাম একা
সেদিন থেকেই বাঁক নিয়েছে মায়ের কপাল রেখা।
মা বলতো বাবা নাকি তারার ভিড়ে আছে
লেখাপড়া করি যদি নেমে আসবে কাছে।
তারায় তারায় বাবা খুঁজি তারার ছড়াছড়ি
আমার মায়ের মিথ্যে বলার প্রথম হাতে খড়ি।
পাড়া পড়শী বলল এসে এই বয়সেই রাঢ়ি!
একা একা এতটা পথ কেমনে দিবে পাড়ি?
ভাল একটা ছেলে দেখে বিয়ে কর আবার
মা বলল, ওসব শুনে ঘেন্না লাগে আমার।
একা কোথায় খোকন আছে, বিয়ের কী দরকার?
ওটা ছিল আমার মায়ের চরম মিথ্যাচার।
রাত্রি জেগে সেলাই মেশিন, চোখের কোণে কালি
নতুন জামায় ঘর ভরে যায় মায়ের জামায় তালি।
ঢুলু ঢুলু ঘুমের চোখে সুই ফুটে মা’র হাতে
আমি বলি, শোও তো এবার কী কাজ অত রাতে?
মা বলত ঘুম আসে না শুয়ে কী লাভ বল?
ওটা ছিল আমার মায়ের মিথ্যা কথার ছল।
স্কুল থেকে নিতে আসা গাড়ী ঘোড়ার চাপে
আমার জন্য দাঁড়ানো মা কড়া রোদের তাপে।
ঘামে মায়ের দম ফেটে যায়, দুচোখ ভরা ঝিম
ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে আমায় দিত আইসক্রিম।
মায়ের দিকে বাড়িয়ে ধরে বলতাম একটু নাও
মলিন হেসে মা বলত, খাও তো বাবা খাও।
আমার আবার গলা ব্যাথা, ঠান্ডা খাওয়া মানা
ওটা ছিল আমার মায়ের নিঠুর মিথ্যাপনা।
বড় হয়ে চাকুরী নিয়ে বড় শহর আসি
টুকটুকে বউ ঘরে আমার বউকে ভালবাসি।
পশ এলাকায় বাসা নিয়ে ডেকোরেটর ধরে
সাজিয়ে নিলাম মনের মত অত্যাধুনিক করে।
মা তখনো মফস্বলে কুশিয়ারার ঢালে
লোডশেডিং এর অন্ধকারে সন্ধ্যা বাতি জ্বালে।
নিয়ন বাতির ঢাকা শহর আলোয় ঝলমল
মাকে বলি গঞ্জ ছেড়ে এবার ঢাকা চল।
মা বলল এই তো ভাল খোলা মেলা হাওয়া
কেন আবার তোদের ওই ভিড়ের মধ্যে যাওয়া?
বদ্ধ ঘরে থাকলে আমার হাঁপানি ভাব হয়
ওটা ছিল আমার মায়ের মিথ্যা অভিনয়।
তারপর আমি আরো বড়, স্টেটাস এ অভিবাসী
বিশ্ব ব্যাংকের বিশেষজ্ঞ সুনাম রাশি রাশি।
দায়িত্বশীল পদে আমার কাজের অন্ত নাই
মায়ের খবর নিব এমন সময় কমই পাই।
মা বিছানায় একলা পড়া; খবর এল শেষে
এমন অসুখ হয়েছে যার চিকিৎসা নেই দেশে।
উড়ে গেলাম মায়ের কাছে অনেক দূরের পথ
পায়ে পড়ে বলি মাকে এবার ফিরাও মত
একা একা গঞ্জে পড়ে কী সুখ তোমার বল?
আমার সংগে এবার তুমি এমেরিকা চল।
এসব অসুখ এমেরিকায় কোন ব্যাপার নয়
সাত দিনের চিকিৎসাতেই সমূল নিরাময়।
কষ্ট হাসি মুখে এনে বলল আমার মা
প্লেনে আমার চড়া বারণ তুই কি জানিস না ?
আমার কিছু হয় নি তেমন ভাবছিস অযথা
ওটাই ছিল আমার মায়ের শেষ মিথ্যা কথা।
ক’দিন পরেই মারা গেল নিঠুর মিথ্যাবদী
মিথ্যাবাদী মায়ের জন্য আজো আমি কাঁদি।
বি.দ্র: কবিতাটা আমার লেখা নয়, কে লিখেছেন তাও জানি না।
ফেসবুকের একটা পেইজ থেকে কপি করে কম্পিউটারে ডকুমেন্ট হিসেবে সংরক্ষিত রেখেছিলাম, ওই পেইজেও কোন লেখকের নাম লেখা ছিল না। পরবর্তিতে গুগল সার্চ করেও কবিতাটি পাই, কিন্তু লেখকের নাম ছিল না! যে-ই লিখে থাকুক, কবিতাটা চমৎকার, আমাকে মুগ্ধ করেছে। কবিতার ভাবধারাটাও খুব সুন্দর। সত্য কথা বলতে গেলে মা-কে নিয়ে লেখা এমন সুন্দর ও আবেগঘন কবিতা আমি কম সংখ্যকই পড়েছি। ধন্যবাদ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।