ক্রিকেট খেলতে কম দেশ সফর করিনি। কিন্তু এবার বাংলাদেশ সফরটা আমার কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ঢাকা ছাড়ার আগে বেশ আবেগভরা কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা। রবিবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে টি-২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতকে ৬ উইকেট হারিয়ে লঙ্কানরা দেড় যুগ পর বিশ্বজয়ের হাসি হেসেছে। সাঙ্গাকারা বলেন, একটি দেশ বিশ্বজয়ের পর প্রাপ্তির আর কি থাকে।
দলে ছিলাম না কিন্তু ১৯৯৬ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কা বিশ্বচ্যাম্পিয়নের পর দেশবাসীর সঙ্গে পুরো উচ্ছ্বাসটা উপভোগ করেছি। বিশ্বাস করবেন না লাহোরে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর আবেগে আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। এবার কাঁদলাম বিশ্বজয়ের খেলোয়াড় হিসেবে। আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয় শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট ইতিহাসে বড় প্রাপ্তি কোনটি। আমি বলব ১৯৯৬ সালে বিশ্বজয়।
কারণ এই বিশ্বকাপের সঙ্গে অন্য কাপের তুলনা চলে না। টি-২০ ও বিশ্বকাপ। কিন্তু বিশ্বজয়ী হিসেবে একটি দেশকে সম্মান জানানো হয় ৫০ ওভারে বিশ্বকাপ জয়ের পরই। দেখেন ভারত আমাদের কাছে ফাইনালে হেরে গেছে। তারপর এখনো তারা আসল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।
তাহলে টি-২০ তে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর শ্রীলঙ্কায় এতটা উল্লাস কেন? সাঙ্গাকারা বলেন, ঢাকাতে বসে খবর পেলাম পুরো দেশ উল্লাসে ভাসছে। এতটা উল্লাস নাকি ১৯৯৬ সালেও দেখা যায়নি। বলতে পারেন কেন, দেখেন ফাইনালে হারতে হারতে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল শ্রীলঙ্কা যেন ফাইনালে হারতেই নামে। ২০০৭ ও ২০১১ সালে ৫০ ওভারে বিশ্বকাপ।
২০০৮ ও ২০১২ সালে টি-২০ বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠেও দেশকে শিরোপা উপহার দিতে পারেনি। এই ব্যর্থতা আমাদের মানসিকভাবে অস্থির করে তুলেছিল। এশিয়া কাপ ছাড়া শ্রীলঙ্কার ঘরে কোনো ট্রফি নেই। দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাই তারা প্রচণ্ড ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। আমাদের নিয়ে তেমন একটা তিরস্কার করেননি।
এবার আমাদের প্রতিজ্ঞায় ছিল ফাইনালে উঠলে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ব। বাংলাদেশের বিপক্ষে সব কটি সিরিজ জয় করেছি। ঢাকাতে এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়াতে পুরো দলের আত্দবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তা কাজে লাগিয়ে ফাইনালে চলে আসি। প্রতিপক্ষ ভারত হওয়াতে আমি কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তায় ছিলাম।
ফাইনালের উদ্দেশ্যে যখন হোটেল ছাড়লাম মালিঙ্গা আমাকে ও জয়বর্ধনকে বললেন, আজ তোমাদের বিদায়ের দিনে বড় একটা উপহার দেব। একজন ক্রিকেটারের বিদায়ী ম্যাচে জয়টা এমনিতেই স্মরণীয় হয়ে থাকে। তারপর তা যদি বিশ্বজয়ের শিরোপা হয় তাহলে জীবন ধন্য। সত্যিই আজ আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। বিদায়ে দিনে এমন একটা ট্রফি নিয়ে ঘরে ফিরব তা ভাবতেই পারিনি।
ম্যাচে আমি সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু আমি বলব এ জয়ের কৃতিত্ব সবারই। বিশেষ করে দলের বোলারদের প্রশংসা না করলে নয়। ভারতের মতো বিশ্ববিখ্যাত ব্যাটিং লাইন আপকে তারা ১৩০ রানেই বেঁধে দিয়েছিল তাও আবার বিরাট কোহেলি দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর। সত্যিই ধন্য হয়েই টি-২০ ক্যারিয়ার শেষ করলাম।
আমার ক্রিকেট জীবনীতে ঢাকার নামটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বার বার ব্যর্থতার পর ঢাকায় আমাদের সাফল্যের দ্বার খুলে দিয়েছে। যতদিন বেঁচে থাকব ঢাকার নাম আমার হৃদয়ে গেঁথে থাকবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।