তিন দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। অল্প কিছুকাল আগে সেখানে ক্ষমতায় আসে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। সেই দলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা সুষমা স্বরাজ। সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক। তবে অতীত বলে, তিনি বরাবর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পছন্দ করেন।
২৫ বছর বয়সে হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে সেই রাজ্যের তখনকার মুখ্যমন্ত্রী বনশীলালের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তাঁকে ধরাশায়ী করেন। নিযুক্ত হন রাজ্য সরকারের একজন মন্ত্রী। তেমনি ১৯৯৯ সালে কর্ণাটকের বেলাির লোকসভা আসনে সোনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে বিজেপি তাঁকেই মনোনয়ন দেয়। এই আসনটি ঐতিহ্যগতভাবে কংগ্রেসের। তুমুল লড়াই করেন সুষমা স্বরাজ।
হেরে যান মাত্র ৭ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে একক সফরে তিনি প্রথমেই বেছে নিয়েছেন বাংলাদেশকে। এর আগে অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে ভুটান সফর করেছেন। সুষমা স্বরাজের এই সফর সফল ও ফলপ্রসূ হোক, এটা উভয় দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ চায়। ভারতীয় পত্রপত্রিকার সংবাদদৃষ্টে জানা যায়, এই সফরে সুষমা স্বরাজ ১৯৭৪-এর স্থলসীমান্ত চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন আর তিস্তা চুক্তি সম্পাদনে প্রতিবন্ধকতা অপসারণে ইতিমধ্যে গৃহীত তাঁদের সরকারের পদক্ষেপ বাংলাদেশকে জানাবেন।
পাশাপাশি তিনি আসামসহ সাতটি ভারতীয় পার্বত্য রাজ্যের মধ্যে সড়ক, রেল ও নৌপথে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে চলাচলের অধিকতর সুবিধা প্রদানের অনুরোধ জানাতে পারেন। আমাদের বর্তমান অব্যবহৃত ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ ওই রাজ্যগুলোতে রপ্তানির একটি চুক্তিও এ সময়ে স্বাক্ষরিত হতে পারে। তা ছাড়া ভারতীয় ঋণ, বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা, সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধবিষয়ক আলোচনাও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে স্বাভাবিকভাবেই আলোচিত হবে। এসব বিষয় মীমাংসা কোনো জাদুর মন্ত্রে রাতারাতি হবে না, এটা সবাই বোঝেন। তবে বেশ কিছু সমস্যা আছে, যা সমাধানে শুধু আবশ্যক পক্ষ দুটির সদিচ্ছা।
ভারতের নতুন সরকারের এই মন্ত্রীর সফরকালে সেই সদিচ্ছার মনোভাব উভয় পক্ষের থাকুক, এ প্রত্যাশা সবার।
আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রাম, এমনকি তার অব্যবহিত-পরবর্তী সময়ে ভারত উদার সহায়তা করেছে। বাংলাদেশও সেই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সচেষ্ট ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক পরিবর্তন অনেক কিছুই উল্টে দেয়। সহযোগিতার ক্ষেত্রে পিছু চলার নীতি নেয় উভয় পক্ষ।
আমাদের দ্বিপক্ষীয় সমস্যাদিতে ভারত থাকে অনুদার। ক্ষেত্রবিশেষে নিস্পৃহ। তেমনি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদীর গোষ্ঠীসমূহ এ দেশের ভূমিসহ বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করতে থাকে। তারা লাভ করে তখনকার সরকারগুলোর সক্রিয় কিংবা নিষ্ক্রিয় সহযোগিতা। এর মাঝে ১৯৯৬-এ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হয়।
স্বাক্ষরিত হয় গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি। পাশাপাশি হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সঙ্গে পার্বত্য চুক্তি। ভারত থেকে ফিরে আসে বাস্তুত্যাগীরা। পরিস্থিতি আবারও পাল্টে যায় ২০০১ সাল থেকে। পুনরায় ২০০৯-এর সূচনায় মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে ভারতীয় জিঙ্গগোষ্ঠীগুলোর এ দেশে কার্যক্রম সম্ভাব্য সব উপায়ে নির্মূল করার ব্যবস্থা নেয়।
সীমিত আকারে ভারতকে দেওয়া হয় ট্রানজিট-সুবিধা। বৃহত্তর পরিসরে তা করার নীতিগত সিদ্ধান্তও উভয় পক্ষের রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রত্যাশা ছিল, অন্য অনেক অমীমাংসিত বিষয়ের মধ্যে অন্তত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হবে। বাস্তবায়িত হবে ছিটমহল বিনিময়সংক্রান্ত ১৯৭৪ সালের চুক্তিটি। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হয়নি।
এতে এ দেশের মানুষ স্বভাবতই ব্যথিত। তবে তারা আশাবাদী, এই জট খুলে যাবে।
ভারতে ৩০ বছর পর একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এসেছেন। সাম্প্রদায়িক সংঘাত প্রশ্নে তাঁর কিছু প্রশ্নবিদ্ধ অতীত রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে নির্বাচনী জনসভাগুলোতে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’-সম্পর্কিত তাঁর বক্তব্যও আমাদের দ্বিধান্বিত করেছে।
তবে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে সতর্ক পদক্ষেপ নিচ্ছেন মোদি। বলা আবশ্যক, গুজরাটকে অব্যাহতভাবে দৃশ্যমান উন্নয়নের দিকে পরিচালিত করতে তিনিই নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাস্তব মানুষ শুধু অতীতমুখী থাকতে পারেন না। এমনকি যে যুক্তরাষ্ট্র নরেন্দ্র মোদিকে ভিসা দিতে অপারগতা
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।