সরকারের মেয়াদ শেষ হতে আর কয়েক মাস বাকি। আগামী ২৫ জানুয়ারি মধ্যে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী অক্টোবরের শেষ নাগাদ নির্বাহী ক্ষমতায় কাট-ছাঁট করতে হবে ক্ষমতাসীনদের।
সংবিধানে সুস্পষ্ট কোনো পদ্ধতির কথা উল্লেখ না থাকায় নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে চলছে নানা বিতর্ক। নির্দলীয় নাকি দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে তা স্পষ্ট হতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে।
এমন অবস্থায় চার সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সরকার ও বিরোধী দলের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেয়ার সুযোগ না থাকলেও চার সিটিতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রধান দুই জোটের প্রার্থী। মূল ভোটযুদ্ধও তাদের মধ্যেই।
এদিকে, নির্বাচনকে ঘিরে চার সিটিতে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা। নাওয়া-খাওয়া ভুলে প্রচার-প্রচারণায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন প্রার্থীরা।
আর দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, উভয় জোট কষছে ভোটের নানা হিসাব।
তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সিটি নির্বাচনে ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে আলোচিত হেফাজতে ইসলাম। গত ৫ মে শাপলা অভিযান ঘিরে পুরো নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিতে চলেছে নিজেদের দাবিতে ধর্মীয় নেতাদের দিয়ে গঠিত এই অরাজনৈতিক সংগঠনটি। তাই হেফাজতকে পক্ষে টানতে ব্যস্ত দুই জোটের নেতারা।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে অবস্থান নেওয়া গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ইসলাম ও নবীকে (সা.) নিয়ে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে আত্মপ্রকাশ করে হেফাজতে ইসলাম।
এরপর তারা সরকারকে আলটিমেটাম দেয়। তারই অংশ হিসেবে ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি এবং সর্বশেষ শাপলা চত্বরে অভিযানের ঘটনা ঘটে। এরপর এ সংগঠনটির নেতাকর্মীরা সরকারের প্রতি অনেকটাই নাখোশ। সিটি নির্বাচনেও এর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রচারণায় গিয়ে হেফাজত ইস্যুতে মহাজোট প্রার্থীরা প্রায়ইশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন।
বিশেষ করে সিলেটে মহাজোট সমর্থিত প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান আর রাজশাহীতে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন হেফাজত ইস্যুতে চরম অস্বস্তিতে আছেন।
সিলেট মহানগরীর বেশ কিছু এলাকা কওমী মাদ্রাসা অধ্যুষিত হওয়ায় ওইসব এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে কামরানকে। তবে জানা গেছে, ভেতরে ভেতরে হেফাজত নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তিনি। নির্বাচনের আগেই হেফাজতে পক্ষে আনতে চান তিনি।
আর হেফাজত ইস্যুতে সবচেয়ে তুলকালাম ঘটে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে।
মহাজোট সমর্থিত প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে স্থানীয় হেফাজত নেতার বক্তব্যের বিষয়টি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে গড়িয়েছে।
এছাড়া বরিশাল ও খুলনায় হেফাজতে ইসলামের নেতারা প্রকাশ্যে কোনো প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান না নিলেও বিচ্ছিন্নভাবে কিছু নেতাকর্মী ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে, হেফাজতের ঢাকা অবরোধ এবং পরবর্তীতে শাপলা অভিযানের বিষয়টি পুরোপুরি কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থীরা। এজন্য হেফাজত নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।
রাজশাহীতে ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে সমর্থন জানালেও অন্য সিটিগুলোতে এমন ঘোষণা দেয়া হয়নি।
তবে হেফাজত নেতাকর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে ১৮ দল সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ শুরু করছে। মূলতঃ পুলিশি হয়রানি এড়াতে তারা এই কৌশল নিয়েছেন।
এছাড়া নিজেদের উদ্যোগে শাপলা অভিযানে হতাহতের ছবি সম্বলিত পোস্টার স্থানীয়ভাবে সাঁটানো হচ্ছে। হতাহতের রক্তাক্ত মরদেহের পোস্টার সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সৃষ্টি করতেই ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অবশ্য হেফাজতের এমন ভূমিকা ইতোমধ্যে সরকারের কাছে পৌঁছে গেছে।
এ কারণে ধর্মভিত্তিক সংগঠনের বিষয়েও কৌশল অবলম্বন করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। হেফাজতের মতো সংগঠন যাতে সরাসরি কোনো প্রার্থীকে সমর্থন না দেয় সেজন্য কৌশলে তাদের ওপর চাপ দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ১৮ দলীয় জোটের বিরুদ্ধে ধর্মভিত্তিক দল ও ধর্মীয় অনুভূতিকে নির্বাচনে ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছেন।
এমন প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চার সিটি নির্বাচনেই ভোট যুদ্ধের আসল ব্যবধান গড়ে দিবে এই হেফাজতে ইসলাম। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে তারা যেদিকে গড়বে, ফলাফল তাদের পক্ষেই যাবে বলে ধারণা করছেন তারা।
আরটিএনএন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।