আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিরোধীদলীয় সাংসদদের সংসদ অভিমুখী যাত্রা।

আমি একজন ছাএ সাংসদ সংসদে যাবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের দেশে তা ঘটছে না। বিরোধী দলের সাংসদেরা সাধারণত সংসদে যোগ দেন না। শোনা যাচ্ছে, সংসদের বাজেট অধিবেশনে বিরোধী দল যোগ দিতে পারে। এর পেছনে মূলত রয়েছে বিরোধী দলের সাংসদদের সদস্যপদ বহাল রাখার চেষ্টা—এটা বললে অত্যুক্তি হবে না।

কেননা একনাগাড়ে ৯০ কর্মদিবস সংসদ অধিবেশনে যোগ না দিলে সদস্যপদ চলে যায়। তাঁদের সে সময়সীমা নিকটবর্তী। সাংসদেরা নির্বাচিত হন সংসদে গিয়ে দেশের মানুষের দাবিদাওয়া ও সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরতে। অথচ বিরোধী দলে যাঁরা স্থান নেন, তাঁরা সেসব প্রত্যাশার বিপরীতে অবস্থান নিয়ে চলছেন দীর্ঘকাল ধরে। অথচ নির্বাচিত সাংসদের সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদা ভোগে তাঁদের মধ্যে নেই কোনো কুণ্ঠা।

সে ঐতিহ্য আমাদের জাতীয় সংসদকে অনেকটাই দুর্বল করে ফেলেছে—এটাকেও অতিশয়োক্তি বলা যাবে না। কিন্তু ভেবে বিস্মিত হতে হয় এ ধারাবাহিকতা থেকে কি তাঁরা বের হয়ে আসবেন না? অন্তত বর্তমানে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাকে কেন্দ্র করেও তো এখনকার বিরোধী দল তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছেন সংসদে গিয়ে তাঁদের বক্তব্য পেশ করতে। তাই তাঁরা শুধু সদস্যপদ রক্ষার খাতিরে নয়, তাঁদের দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরার যতটুকু সুযোগ সংসদে পাওয়া যায় তা পূর্ণ ব্যবহার করতে পারেন। এতে তাঁদের মৌলিক অবস্থানে ভাটা পড়বে এমনটা মনে করার কারণ নেই।

কেননা সংসদে যোগদান আর আন্দোলনও যুগপৎ চলতে পারে। গত কয়েক মাস আগামী নির্বাচনকালে নির্দলীয় সরকার কায়েমের জন্য বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট অবিরাম আন্দোলন করে যাচ্ছে। এর মধ্যে আবার প্রচলিত রাজনীতির সঙ্গে সংগতিবিহীন কতিপয় আন্দোলন পরিস্থিতিকে করেছে উত্তপ্ত। সময়ে সময়ে ঢিমেতালে চললেও মাঝেমধ্যেই আন্দোলন চাঙা হয়ে যায়। ঘটে হতাহতের ঘটনা।

প্রায়ই ডাক আসে হরতাল বা অবরোধের। এতে সৃষ্টি হয় জনদুর্ভোগ। ক্ষতি হয় অর্থনীতির। গত ৫ মে হেফাজতে ইসলাম নামের একটি সংগঠন পূর্বঘোষণা দিয়েই ঢাকা অবরোধ নামে একটি কর্মসূচি পালন করে। অতঃপর তারা ঘোষণা ব্যতিরেকেই অবস্থান নেয় মতিঝিলের শাপলা চত্বরে।

মনে হচ্ছিল অবস্থান থেকে সরে যাবে না তারা। তাদের প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়ান বিরোধীদলীয় জোটের পাশাপাশি শাসক মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিও। সে অবরোধ ও সমাবেশ সামনে রেখে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাদের দাবি মেনে নিতে ১৮-দলীয় জোটের পক্ষে বিরোধী দলের নেতা আলটিমেটাম দেন। যা-ই হোক, সরকার আইনি শক্তি প্রয়োগে হেফাজতের সমাবেশ ভেঙে দেয়। আর তখন যদি হেফাজতকে হটানো না যেত তাহলে তারা আরো বড় আকারের নাশকতা সৃষ্টি করত এতে কোন সন্দেহ নেই।

এরপর অন্তত এখনকার মতো বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন জোর হারিয়ে ফেলেছে। তবে এখন বিরোধীদলীয় জোট চাইছে সংলাপের জন্য সরকারের আহ্বান। আবার এর সঙ্গে শর্তও যুক্ত করছেন কেউ কেউ। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলকে সংসদে গিয়ে তাদের বক্তব্য পেশ করার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন। বিরোধী দল নির্দলীয় সরকারের অধীন ব্যতীত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না এমনটাই বলে আসছে।

জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সব দলের অংশগ্রহণে হোক—এটাই সবার প্রত্যাশা। এমন হলেই রাজনৈতিক অস্থিরতা অন্তত কিছুকালের জন্য হলেও কমবে। আমাদের সমস্যা তো জটিল কিছু নয়। তাহলে সমাধান হবে না কেন? মীমাংসা হয় ন্যায়নীতি ও যুক্তির ভিত্তিতে। ১৬ কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ জাতীয় নেতাদের হাতে।

জেদাজেদি করে তাঁদের চলার পথকে কণ্টকাকীর্ণ করা যথোচিত হবে না। জাতির অভিভাবক তাঁরাই। তাঁদের দূরদর্শী আর সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক হবে—এ প্রত্যাশা সবার। এর অন্যথা জাতিকে অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.