অদ্ভূত বিষয়গুলোতে বিস্ময়াভূত হওয়া একটি চমকপ্রদ ব্যাপার!!
একটি এ্যামিশ পরিবার
বর্তমান বিশ্বে অর্থনীতি ও প্রযুক্তিতে প্রথম স্থান অধিকারী দেশের নাম জানতে চাইলে সবাই এক কথায় বলবে ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা। প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে তাদের অবস্থান এবং উন্নতির ব্যাপারে কোথাও কোন সন্দেহ নেই। আলো ঝলমলে আমেরিকার প্রতিটি বালু কণাও ঝলমলে বলে দাবী করে অনেকেই। অর্থনৈতিক কিংবা প্রযুক্তি কোথাও তাদের আধুনিকতার বিন্দুমাত্র কমতি দেখা যায় না। যেমন তাঁর রাজধানী তেমনি তাঁর প্রতিটি অংগরাজ্য।
কিন্তু যদি বলি প্রযুক্তিতে আধুনিক বিশ্বে সবচেয়ে আলোকিত এই দেশটির ভিতরেই আছে অন্ধকার একটি অংশ?
এ্যামিশদের ক্ষেত-খামার
আধুনিক আমেরিকার-ই পেনসিলভানিয়া এলাকায় দেখা যায় ষোড়শ শতাব্দির এক অতি আদিম গোষ্ঠি এ্যামিশ। এরা ১৬০০ সালে ইউরোপ থেকে আমেরিকায় আসে। কিন্তু সবচেয়ে অদ্ভূত বিষয় হচ্ছে এ্যামিশ জাতির ঘড়ির কাঁটা যেন সেই ১৬০০ সালেই স্থীর হয়ে আছে। অবশ্য তাদের কোন ঘড়ি আছে কিনা তাতেও সন্দেহ। কেননা এই এ্যামিশ জাতি বিদ্যুত্, গ্যাস, গাড়ি, টি.ভি, কম্পিউটার-আধুনিক দুনিয়ার কোন কিছুই ব্যবহার করে না।
যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ঘোড়া, চাষবাসের ক্ষেত্রেও তাই। তবে তারা মোটর গাড়ি কিংবা বিমান ব্যাবহার করতে পারে কিন্তু এগুলোর মালিক হওয়া নিষিদ্ধ ওদের জন্য। অন্য কারো ছবি তোলা তো দূরে থাক নিজরাও নিজেদের ছবি তোলে না। কারণ তাদের কোন ক্যামেরাই নেই। ট্যাকনোলজির দিক দিয়ে এ্যামিশ জাতিরা একদম অনিচ্ছুক।
তারা মনে করে এতে করে তাদের ফ্যামিলি বাইন্ডিংস টা দূর্বল হয়ে পড়বে।
এ্যামিশদের একটি ছিমছাম গ্রাম
এ্যামিশদের সহজসরল জীবন দেখার জন্য অনেকেই তাদের গ্রামে যায়। একবার একটি দল গিয়েছিল তাদের কাছে। তাদের-ই একজন এ্যামিশদের জিজ্ঞেস করল, “তোমরা তো বাইবেল পড়, খ্রীষ্ট ধর্মেও বিশ্বাস কর, তাহলে তোমাদের সাথে আমাদের পার্থক্য কি?” একজন উত্তর দিল, “টি.ভি”। প্রশ্নকর্তা শুনে অবাক হয়।
তখন আরেকজন এ্যামিশ বলল, ”তোমরা কে কে টি.ভি না দেখে থাকতে পারবে? হাত তুলো। ” কেউ হাত তুলল না। তখন এ্যামিশটি বলল, “আমাদের গোষ্ঠিতে কোন টি.ভি ই নেই। আমরা টি.ভি দেখি না। ”
তবে যোগাযোগের জন্য এ্যামিশরা টেলিফোন ব্যাবহার করে।
কিন্তু নিজ নিজ বাড়িতে ওরা টেলিফোন রাখে না। কয়েকটা বাড়ি কিংবা পরিবার মিলে ওরা একটি টেলিফোন শেয়ার করে। টেলিফোনটা সাধারণত ওদের ফার্মে রাখা হয় সকলের সুবিধার জন্য।
এ্যামিশ নারীরা
এ্যামিশরা যে আধুনিকতার সাথে পরিচিত নয় তা কিন্তু না। ওরা ইচ্ছে করেই এগুলো গ্রহন করে না।
এমনই সহজসরল জীবনযাত্রা ধারণ করে বেঁচে আছে এ্যামিশরা। এরা কখনো বিশেষ পোষাক পড়ে না। এদের পোষাক হয় একেবারে সাদামাটা। এ্যামিশ পুরুষরা সাধারণত পড়ে থাকে সোজা-সাপ্টা স্যুট এবং কোট যার কোন কলার ও পকেট থাকে না, প্যান্ট পড়ে কোন কুচি ছাড়া আর কোমড়ে বেল্ট পড়া তো একেবারেই নিষিদ্ধ। এ্যামিশ নারীরা একেবারে সলিড কালারের পোষাক পড়ে।
তারা লম্বা হাতার জামা সাথে লম্বা স্কার্ট, মাথায় ক্যাপ পড়ে এবং এ সব কিছুর ওপর আবার লম্বা এপ্রোণ পড়ে। নারীরা কখনো চুল কাটে না, সাধারণত চুলে একটা বেনী করে কিংবা পিছন দিক থেকে বেধে রাখে, যা তাদের সাদা কিংবা কালো রঙের ক্যাপ দ্বরা ঢাকা থাকে। নারী পুরুষ উভয়ই কালো রঙের জুতো পড়ে। এ্যামিশ নারীদের জন্য জাকজমজপূর্ণ পোষাক ও গহণা একেবারে নিষিদ্ধ।
কোন প্রকার ইন্সুরেন্স করে না এমনকি কোন সরকরি সাহায্য নেয় না, ট্যাক্স দেয় না এই এ্যামিশ জাতি।
এদের কোন ব্যাক্তিগত সম্পত্তি নেই। এদের যা কিছু আছে সবই গোষ্টি মালিকানায়। এরা সৈন্যবাহিনী এড়িয়ে চলে, বাইরের লোকজনের সাথে মিশে না। কেবল নিজেরা নিজেদের পরিবার এবং র্গীজা নিয়ে ব্যাস্ত থাকে। এদের এখানে স্কুল আছে।
তবে সর্বচ্চ গ্রেড ক্লাস এইট। এই স্কুলের শিক্ষকরাও শুধুমাত্র অষ্টম শ্রেণী পাশ তাও সম্ভব হয়েছে মার্কিন অর্ডিন্যান্স ১৯৭২ এর আওতায়। লেখাপড়ার মধ্যে থাকে বেসিক রিডিং, রাইটিং, গণিত, ভূগোল এবং সাথে থাকে ভোক্যাশনাল ট্রেইনিং আর এ্যামিশ জীবনধারায় বেড়ে ওঠার নিয়ম কানুন। জীবন ধারণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে এরা।
এ্যমিশদের একটি বড় পরিবারে সন্তানের সংখ্যা থাকে সাত থেকে দশ জন।
কাজ কর্ম নারী-পুরুষ ভেদে ভাগ করা থাকে। পুরুষরা ক্ষেতে খামারে কাজ করে আর নারীরা কাপড় ধোঁয়া, রান্না বান্না, ঘোর দোর পরিস্কার রাখা সহ গৃস্থালীর সমস্ত কাজ করে। পরিবারে বাবাই থাকে মাথা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এখন প্রায় ২৩টি অঙ্গরাজ্যে এ্যামিশদের বসবাস। কানাডায় মাত্র ১টি প্রদেশে এ্যামিশ গোষ্ঠি রয়েছে।
এদের উত্পষত্তি ইউরোপে। ষোড়শ শতাব্দি অবধি ইউরোপে ছিল ক্যাথলিক র্গীজার দাপট। ক্যাথলিকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে একটি দল। শুরু হয় তুমুল আন্দোলন। ধীরে ধীরে পক্ষে বিপক্ষে অনেকগুলো দল গড়ে ওঠে।
ক্যাথলিকদের বিপক্ষের-ই একটি দল থেকেই উত্পেত্তি এ্যামিশ সম্প্রদায়ের। এ্যামিশ শব্দটি সুইস শব্দ। এর কোন অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় নি। তারা প্রথমে বসতি স্থাপন করে পেনসিলভানিয়ায় এবং ধীরে ধীরে নিউর্য়ক, ইলিময়, ইন্ডিয়ানা, আইওয়া, মিজৌরি ও ওহিও অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
গোঁফে যায় চেনা! এ্যামিশ বিবাহিত পুরুষরা
এ্যামিশরা খ্রীষ্ট ধর্মের মধ্যে ব্যাপ্টিস্টসমে বিশ্বাস করে।
ওদের উপাসনালয়ও র্গীজা তবে তা আধুনিকতার একদম বাইরে। এরা নিজেদের মধ্যেই বিয়ে করে। বাইরের কাউকে বিয়ে করা নিষেধ। ডিভোর্সও নিষিদ্ধ আর স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকা দেখাই যায় না। বিয়ের আগে ছেলেরা ক্লিন শেভড থাকে।
বিয়ের পর এ্যামিশ পুরুষরা দাড়ি রাখে কিন্তু গোঁফ রাখে না। বলা যায় গোঁফ একেবারে নিষিদ্ধ। বাচ্চা প্রসবে এরা এখনো ধাত্রীর উপর নির্ভরশীল। এ্যামিশদের এমন জীবনাচরণ থেকে এখনো বের করে আনতে পারেনি আধুনিক মার্কিন মুলুক। তবে এরা প্রায়ই এ্যামিশদের সম্পর্কে জানতে এ্যামিশ গোষ্ঠিতে যায়।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এ্যামিশদের সম্পর্কে একটি ওয়েবসাইটও আছে। ওয়েব সাইটটি সম্পূর্ণ সাদা-কালো। এ্যামিশদের সহজসরল অপ্রযুক্তিক সাদামাটা জীবনের প্রতীক হিসেবে ওয়েবসাইটটির রঙ সাদাকালো বলে জানায় তারা।
সম্প্রতি ন্যাশনাল জিওগ্রাফীর একটি এপিসডে দেখায় এ্যামিশ ছেলেমেয়েরা যারা এতদিন আধুনিক দুনিয়া থেকে পিছিয়ে ছিল, অন্ধকারে ছিল তাদের নিজস্ব জগতের ভিতরে। কিন্তু এখন তারা জীবনের কঠিনতম সীদ্ধান্ত নিতে পেরেছে যে তারা এ্যমিশ বিশ্বাস থেকে বেড়িয়ে আসবে, বাইরের দুনিয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহন করবে।
এ্যামিশ আধুনিক ছেলেদের মধ্যে গড়ে ওঠা আধুনিকতা ভালভাবে গ্রহন করে না এ্যামিশরা। তবে এই বাধাকেও যে তারা একদিন জয় করবে না, তা কিভাবে বলা যায়?
ছবিঃ গুগল থেকে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।