আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভ্রমণ : হাওর দ্বীপ অষ্টগ্রাম...

অষ্টগামের কথা জেনেছিলাম সামহোয়্যার ইন এর পয়গম্বর ভাই এর একটি ব্লগে। সেই থেকে ইচ্ছে একবার ঘুরে আসবো্। সময় সুযোগ হচ্ছিলো না। অবশেষে এবার বৌদ্ধ পূর্ণিমার বন্ধটা কাজে লাগালাম। একটা ইভেন্ট দিলাম বেড়াই বাংলাদেশ থেকে।

মোট কনফার্ম করলো ২৮ জন। কিন্তু ২৩ তারিখ সকালবেলা প্রবল বর্ষন শুরু হলে রাস্তায় পানি জমে যায়। ফলে ট্রেনে উঠতে পারে ২১ জন। আমি একটা কজে চট্টগ্রাম থাকাতে রাতের ট্রেন ভৈরব পৌছে ওদের জন্য অপেক্ষা করি। সকাল ৮.১৫ এ এগারসিন্দুর প্রভাতি ট্রেনটি ছাড়ে কমলাপুর থেকে।

বেশ খানিকটা লেট করে এটি ভৈরব পৌছায় ১২ টার সময়। আমি বাকী ২১ জনের সাথে মিট করলাম। দেখি ওরা হৈচৈ করে বেশ আনন্দে সময় পার করছে। সজীব ভাই বিরানী রান্না করে এনেছিরেন সবার জন্য। আমারটা আমি বুঝে নিলাম।

১০ মিনিট পর ট্রেন ছুটলো ইন্জিন ঘুরিয়ে কুলিয়ারচরের দিকে। সাড়ে ১২ টার দিকে পৌছালাম কুলিয়ারচর। ষ্টেশনে নেমেই কয়েকটা রিক্সা নিয়ে লঞ্চঘাট। সেখানে অপেক্ষা করছিলো আমাদের ট্রলার। ট্রলারে উঠে সবাই ভেতরে মালপত্র রেখে ছাদে জায়গা করে নিলাম।

হালকা বৃষ্টির মাঝে ট্রলার ছুটলো মেঘনা নদী দিয়ে। ট্রলার ছাড়ার সাথে সাথে সবাই সবার লাইফ জ্যাকেট বেধে নিল যা ছিলো এ ট্যুরের জন্য বাধ্যতামুলক। মেঘনার মাঝে আসার পরেই ঢেউ বাড়তে লাগলো। কিন্তু লাইফ জ্যাকেট থাকাতে কেউ ভয় পেলোনা বরং সবাই মনোযোগী হলো পানির সৌন্দর্য দর্শনে। ঘন্টাখানেক চলার পর শুরু হলো আসল মজা।

তখন নদী থেকে হাওরে চলে এসেছি আমরা। একটু পর পর ছোট্ট একেকটা দ্বিপের মতো। সেখানে অনেক বাড়িঘর। সেগুলো আবার বেশ শক্তপোক্ত এবং কালারফুল। বোঝা যায় এখানকার লোকজন বেশ অবস্থা সম্পন্ন ।

এসব দ্বীপে যাবার একমাত্র উপায় হলো নৌকা বা ট্রলার। কয়েকটিতে দেখলাম সাইক্লোন/বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র। একটু পরপরই এসব ছোট্ট দ্বীপ লোকারয় আসেত লাগলো আর আমরা ছবি তুলতে লাগলাম। হাওরে মাছ ধরার একটি পদ্ধতিও ভালো লাগলো। নৌকায় করে অনকে গাছের ডাল নিয়ে এসে এক জায়গায় জড়ো করা হয়।

তারপর সেখানে মাছ জমা হলে চারদিক জাল দিয়ে ঘিরে ফেলে মাছ ধরা হয়। বেশ কষ্টসাধ্য কিন্তু ফলদায়ক। এভাবে সাড়ে ৩ ঘন্টা চলার পর আমরা পৌছলাম অষ্টগ্রাম। চারদিকে হাওড় বেষ্টিত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন উপজেলা অষ্টগ্রামে আয়তন ৩৩৫ বর্গ কি:মি:। জানা যায় অষ্টগ্রাম,আসিয়া, দুবাই ভাটেরা,নরসিংহ পূর্ববাদ, খাসাল, বীরগাঁও, বত্রিশ গাঁও এবং বারেচর এই ৮ টি মৌজা নিয়ে গঠিত হওয়ায় এই জনপদের নাম অষ্টগ্রাম।

অষ্টগ্রাম পৌছেই নদীর ঠিক পাশেই অবস্থিত জেলা পরিষদের ডাক বাংলোতে উঠলাম। আগেই ফোনে বুকিং দেয়া ছিলো। ওঠার পর কেয়ারটেকার ইউএনও সাহেবকে ফোন করে কথা বলালেন। আমি সব বুঝিয়ে বলার পর উনি সেখানে থাকার অনুমতি দিলেন। দীর্ঘ জার্নিতে সবা ক্ষুধা লেগেছিলো চরম।

কেয়ারটেকার রন্জন দাকে আগেই খাবারের ব্যাবস্থা করত বলেছিলাম। উনি ভাত নদীর মাছ, ডিম, সবজি আর ডাল রান্না করে রেখেছিলেন। লাকরির চুলায় রান্না করা সেসব দারৃন খাবার খেলাম সবাই একসাথে বসে। দুপুরের খাবার খেতে খেতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এলো। তাড়াতারি সবাই বে হয়ে গেলাম।

গন্তব্য কুতুবশাহী মসজিদ। মাইল খানেক দুরে কুতিবশাহ মসজিদ । বাংলার স্থাপত্যের এক উৎকৃষ্ট নিদর্শন অষ্টগ্রামের পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট কুতুব শাহ মসজিদ। কিশোরগঞ্জের এ অঞ্চলেরই এক কামেল দরবেশ কুতুব শাহর নামানুসারে হয়েছে এই মসজিদটির নামকরণ। মসজিদের পশ্চিম পাশেই রয়েছে কুতুব শাহর সমাধি।

অসাধারন কারুকাজ করা মসজিদটি নির্মান কাল সপ্তদশ দশক। ৪০০ বছর পার হলেও এর সৌন্দর্য একটুও কমেনি। সেখান থেকে গেলাম বাজারে। আমাদের দল দেখে ভীড় হয়ে গেলো সেখানে। সবাই জানতে চায় কি জন্য এসেছি এখানে, এতদুরে।

যেই শুনে শুধু ভ্রমণে এসেছি এ এলাকা কিযে অবাক হয়। বলে- কি আছে এখানে দেখার পানি ছাড়া? আমরা বলি পানি দেখতেই এসেছি। তবে লোকজন খুব মিশুক এবং অতিথিপরায়ন। রাত ৯ টার দিকে নৌকা নিয়ে ভাসতে যাবো জলে এমন সময় লোকাল থানার ওসি খবর পাঠালেন থানায় যাবার জন্য। ও মোর জ্বালা।

গেলাম থানায় ৩ জন। একজন এস আই ভদ্রলোক নানান প্রশন করলেন। কেন এসেছি, কদিন থাকবো, কি করু এইসব। অ তিনিও অবাক হলেন এত মানুষ একসাথে শুধু ঘুরতে এসেছি শুনে। যাই হোক আর কিছু না বলে শুধু আমাদের নাম ঠিকানা লিখে যেত বল্লেন।

আর বল্লেন- আপনারা ভাই সুখী মানুষ। এরপর নৌকা নিয়ে চলে গেলাম নদীর মাঝে। তারপর চুপচাপ পূর্ণিমার সৌন্দর্য দর্শন। মাঝে মাঝে সজীব ভাইয়ের রবীন্দ্র সঙ্গীত সে সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিচ্ছিলো। তুহীন আপু, বনী আপুরা তাল দিচ্ছিলেন গানে।

সাড়ে ১০ টার দিকে চলে এলাম ডাক বাংলোতে। এবার রাতে খাওয়া। ভাত মুরগি ভুনা আর ডাল। তারপর আবার আড্ডা। কজন নেমে গেলো পুকুরে সাতার কাটতে সেই মাঝ রাতে।

১ টার দিকে ঘুম। পরদিন সকালে আবার বাজার এবং কাছের কিছু এলাকা ঘুরে দেখা। ৯ টার দিকে খিচুড়ী ডিম দিয়ে নাস্তা করে সাড়ে ১০ টায় ট্রলার ছেড়ে দিলাম। ফিরবো বাজিতপুর দিয়ে। বাজিতপুর যেতে লাগলো ৩ ঘন্টা।

এখানে নেমে একটা হোটেলে ভাত খেয়ে বিআরটিসির এসি বাস ধরলাম। রাত ৯ টার দিকে ঢাকা যেভাবে যাবেন : সবচে ভালো হলো ট্রেনে যাওয়া। প্রতিদিন সকাল ৮.১০ এ এগারসিন্দুর প্রভাতি (বুধবার বন্ধ) ছাড়ে কিশোরগন্জের উদ্দ্যেশ্যে। এতে উঠে কুলিয়ারচর নেমে পরুন। ভাড়া ১১০ টাকা।

কুলিয়ারচর নেমে। একটা রিক্সা নিয়ে চলে যান লঞ্চঘাট। এখান থেকে প্রতিদিন সকাল ৬ টা, ৮ টা, ৯ টা, ১১ টা এমনি করে ৩ টা পর্যন্ত লঞ্চ ছেড়ে যায় অষ্টগ্রাম। ভাড়া ৯০ টাকা। সময় লাগবে সাড়ে ৩ ঘন্টা।

গ্রুপ ট্যুরে গেলে আগে থেকে জানালে ট্রলার নিয়ে হাজির হবে। আমি নাম্বার দিয়ে দিলাম দুজনের : মাতু মিয়া : ০১৯-৩৭৯২৯৯১৪ সোহেল : ০১৯-৮৫৬৮৬০৬৬ যাওয়া আসা একসাথে ঠিক করে নেবেন। ভাড়া নেবে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার। কোথায় থাকবেন : একটাই জয়গা। জেলা পরিষদ ডাক বাংলো।

কেয়ারটেকার রন্জন ভাইয়ের সাথে আগে যোগাযোগ করে বুকিং দিয়ে রাখবেন। রান্নার ব্যবস্থাও উনি করবেন। ওনার ফোন নম্বর : ০১৭১-০২৯১২২৫ আসার সময় বাজিতপুর হয়ে আসতে পারেন। বিআরটিসির এসি বাস পাবেন সারাদিন। ভাড়া ১৮০ টাকা  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।