আমার লেখা পড়ে.................. সাভারে রানা প্লাজায় উদ্ধার কাজ চালছে । সবাই ক্লান্ত । হাড়-ভাঙ্গা পরিশ্রম । রক্ত, আর্তনাদ, চোখের পানি, অসহায় অপেক্ষায় কাকেরাও আজ বিষন্ন । বাতাসে বাতাসে ছড়িয়ে আছে কেমন যেন নিরবতা ।
ভাঙ্গা কংক্রীটের ছাদ ছোট ছোট টুকরো করে উঠানো হচ্ছে ক্রেন দিয়ে ।
সভ্যতার শুরু কুকুর দিয়ে । প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত ল্যাব্রাডা, শেফার্ড জাতের অভিজাত কুকুরেরা খুজছে লাশ । তাদের কর্ম দক্ষতা শত ভাগ নির্ভুল ।
কুকুরেরা তাদের নিজ দায়িত্বে সচেতন ।
অনেক দায়িত্ব তাদের, কোন ভাবেই ভুল করা যাবে না । তাদের যারা নিয়ন্ত্রক তারাও দক্ষ । তারাও কাজ করে যাচ্ছে নির্ভুল নিশ্চুপ ।
ল্যাব্রাডা জাতের টমি বারবার ল্যাজ নাড়াচ্ছে । বুঝতে একটু কষ্ট হচ্ছে ।
চার দিকে লাশের গন্ধ, মাংসের গন্ধ । কয়েকবার মৃতদেহের গন্ধ পেয়ে এগিয়ে গেলেও আবার ফিরে এসেছে । কাছাকাছি যাওয়ার পর মনে হলো পুরানো গন্ধ । সবারই প্রায় একই অবস্থা । টমি এ পালের বয়স্কদের একজন ।
সে ভুল করলে তার সম্মান থাকে না । তাছাড়া জুনিয়ররা শিখবে কি তার কাছ থেকে? এই চিন্তায় টমির লেজ নাড়া বেড়ে গেছে । খুন হওয়া মৃতদেহগুলো, যেগুলো এখনও ধ্বংস স্তুপের নিচে আছে দ্রুত বের করতে হবে, টমির মাথায় এ একই চিন্তা । প্রথম যখন টমি-কে এখানে আনা হয়, সেই মুহূর্তে টমি স্রষ্টাকে ধন্যবাদ দিয়েছিল তাকে মানুষ না বানানোর জন্য । পরে চারপাশের অবস্থা দেখে সে আবার ভাবলো, আসলে মানুষ মানুষই ।
একজন মানুষের অপরাধে এ ভয়াবহ অবস্থা, কিন্তু লাখ লাখ মানুষ আহতদের উদ্ধার করার জন্য নিজের প্রাণের ঝুকি নিয়েও ঝাপিয়ে পড়েছে । অচেনা, অজানা লোকদের জন্য এত ভালোবাসা!! শুধূ মানুষের পক্ষে সম্ভব । তাদের পালেও ২/১টা কুলাঙ্গার আছে । টমি তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখে, তাদের বোঝানোর চেষ্টা করে । এরপরও কেউ বদমায়শি করে তবে টমি তার ব্যাবস্থা করে ।
তার প্রতিবেশী রাফিয়ানকেও সে অন্যায় করার জন্য শাস্তি দিয়েছিল । রাফির সাথে টমির খুব ভালো বন্ধুত্ব । তবে রাফি একটু শয়তান টাইপের ছিল , যদিও রাফি টমির বন্ধু । সে দলের নেতা । দলকে নিয়ন্ত্রণ করতেই সে রাফিকে শায়েস্তা করেছিল ।
রাফিকে শাস্তি না দিলে রাফিরই আরও বিপদ হতো । কারণ অপরাধ করে পার পেয়ে গেলে সে আরও বড় কোন অপরাধ করতে পারতো । তখন তাকে শাস্তি দিতে মানুষ কমান্ডাররাই । সেটা আরও বেশী খারাপ হতো রাফির জন্য ।
টমির নাক হঠাৎ খাড়া হলো- মৃতদেহের গন্ধ আসি আসি করেও আসছেনা ।
রানা প্লাজার একটু সামনে কয়েকজন নেতা দাড়িয়ে সাক্ষ্যাৎকার দিচ্ছিল । অনেকগুলো দলের নেতারা আলাদা আলাদা করে দূর্ঘটনা কবলিত এলাকা দেখতে এসেছেন । এর ভিতর কয়েক জন দূর থেকে টমিদের দেখেছে । টমিদের আনা হয়েছিল প্লেনে করে । তারা রাস্তাঘাটের কখনওই ঘুরে বেড়ায়না ।
তাই বিশেষ সময় ছাড়া টমিদের দেখাও যায় না ।
কা- রানা শব্দটাই আমি জীবনে শুনি নাই । আর কেউ কেউ বলছে আমাদের দলীয় নেতা ।
একজন সাংবাদিক রানার একটা পোষ্টার নিয়ে এসে প্রশ্ন করলেন এখানে দেখা যাচ্ছে সে আপনাদের দলীয় নেতা । এ সম্বদ্ধে এখন কি বলবেন ।
কা- আমার এখন টাইম নাই । খবর পেলাম আমার বাসার বাথরুমের কমোড ধইরা মশারা টানাটানি করছে তাই টেংশনমে হ্যায় ।
নেতা আরও কয়েকজন পাতি নেতার সাথে আড্ডা শুরু করলেন ।
ব্যা- আমরা ক্ষমতায় গেলে নিহতদের একটি করে গার্মেন্টস থুক্কু আহতদের একটি করে গার্মেন্টস করে দিব । আর নিহত সকলের পরিবারকে আমরা আমেরিকা, কানাডা পাঠিয়ে দিব ।
এ সরকার জালিম সরকার ।
সাংবাদিক তাইলে আপনাদের সময়ের স্কেকট্রাম দুর্ঘটনা, মেঘনায় লঞ্চডুবতে ৭০০ এছাড়াও আরও কয়েক’শ লোক নিহত হয়েছিল তাদেরকে কিছু দেননি কেন । তখনতো ক্ষমতায় ছিলেন ।
ব্যা - আসলে তখন প্লেনে সিট ছিল না । এখন গলা শুকিয়ে গেছে, পরে কথা হবে ।
নেতা আরও কয়েকজন পাতি নেতার সাথে আড্ডা শুরু করলেন ।
টমির নাকের গন্ধ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে আসছে । টমির ঘাড়ের সব লোম দাড়িয়ে গেল । শান্ত শান্ত, ভুল করা যাবেনা । জিবীথ মানুষেরা মৃতদের জন্য, মৃতদেহের জন্য কষ্ট পাচ্ছে ।
টমি নিজেকে আবার বলল - শান্ত শান্ত ।
টমি চোখের ইশারায় রাফিকে ডাকলো । রাফিরি ঘাড়ের লোমও দাড়িয়ে গেছে । দু’জন মিলে তাদের অন্য সঙ্গীদের দিকে তাকালো । সবাই তাকিয়ে আছে টমির দিকে ।
ডগ স্কোয়াডে সবাই মৃতদেহের সিগন্যাল পেয়েছে । বাতাস যত তাদের দিকে আসছে , সিগন্যাল তত বাড়ছে । ডগ স্কোয়াড তাকিয়ে আছে টমির দিকে । টমি নিজেকে বলল- শান্ত শান্ত । টমি নেতা সে ভুল করলে বাকীলাও ভুল করবে ।
তাই টমি এখন অনেক সাবধান । সিগ্যনাল আসছে ২ জায়গা থেকে ।
টমির ট্রেনারও আজ এসেছে । ভদ্রলোক খুবই ভালো । খুব আদর করে, তবে ট্রেনিং-এর সময় খুবই কঠিন ।
তিনিও বুঝতে পারলেন টমিরা সিগন্যাল পাচ্ছে । টমি বুঝতে পারলো আশে, পাশেই মৃতদেহ আছে। কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করে টমি ছুটলো । সাথে সাথে পালের একটা অংশ । তারা ১০০% নির্ভুল সিগন্যাল পেয়েছে ।
মৃত্যুর মতই সত্য টমির পাওয়া সিগন্যাল । পালের বাকীরা অন্যদিকে খুজছে আহত, নিহত মানুষ ।
টমির ট্রেনার সরকারী কর্মচারী । তিনি দাড়িয়ে আছেন মন খারাপ করে । টমিদের চিৎকার শুরু হয়েছে ।
এর মানে তারা মৃতদেহ পেয়ে গেছে । তিনি ছুটতে ছুটতে দেখলেন সামরিক, আধা সামরিক, বেসামরিক অনেকই ছুটছে টমিদের ডাক লক্ষ করে । কয়েকজন চোখ মুছতে মুছতেই দৌড়াচ্ছেন । যার জন্য পানি ফেলছেন তিনি ক্রন্দনরত লোকটির কেউনা এ ব্যাপারে ট্রেনার মোটামুটি সিউর ।
ট্রেনার দূর থেকে দেখলেন টমি শুন্যে ডিগবাজি খাচ্ছে ।
তিনি আগেই সিউর ছিলেন, এখন আরও সিউর হলেন টমি মৃতদেহ পেয়েছে । তিনি আরও দ্রুত আগানোর চেষ্টা করলেন । ১ সে. আগে পৌছাতে পারলে সেটাই লাভ । স্বজনদেরতো ১ সে. আগে মরদেহ দেওয়া যাবে । তাছাড়া দেহতো আর দেহ নাই ।
পচে গলে শেষ । দ্রুত সৎকার করতে হবে ।
কাছাকাছি এসে সবাই দেখতে পেল কুকুরের বড় পাল কা, ব্যা ও তাদের অনুসারীদের ঘিরে দাড়িয়ে আছে । কুকুরেরা মিথ্যা বলে না, বলতে পারেনা । তাছাড়া তারা কাজও করে নির্ভুল ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।