গনজাগরনের মাধ্যেমে পরিবর্তন সম্ভব....মানুষের চিন্তার পরিবর্তন করাটা জরুরি ....বুদ্ধিবৃত্তিক পুনরজাগরনে বিশ্বাসী কঠোর গোপনীয়তায় কারাগার থেকে ছাড়া পেলেন রাজধানীর শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ কুমার বিশ্বাস (৪৬)। গতকাল শুক্রবার সকাল সোয়া আটটার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর-২ কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারা জানান, এ ধরনের সন্ত্রাসী কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার আগে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে জানানো হয়। বহু বছর ধরে এ রীতি মেনে চলা হচ্ছে। কিন্তু বিকাশের ক্ষেত্রে এটা মানা হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশনার কারণে নিম্ন আদালত থেকে বিকাশের জামিন, আদালত থেকে জামিনের কাগজ কারাগারে পৌঁছানো থেকে মুক্তি পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াই কঠোর গোপনীয়তায় সম্পন্ন হয়েছে। কয়েক দিন ধরেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে গুঞ্জন চলছিল, বিকাশকে বিশেষ ব্যবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হবে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াও ছিল।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কারা মহাপরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম খান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিকাশের মতো একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে কারাগার থেকে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশকে অবহিত করার কথা।
কিন্তু এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুরের পুলিশ সুপার আবদুল বাতেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নলেজে নেই। ’
১৫ বছর ধরে কারাবন্দী ছিলেন বিকাশ। কারাগারে বসেই মুঠোফোনের মাধ্যমে তিনি চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছিলেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ রয়েছে। ২০০৯ সালের ১৭ জুলাই কাশিমপুর কারাগার থেকে একবার মুক্তি পেয়েছিলেন বিকাশ। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ওই দিনই গাজীপুরের গোয়েন্দা পুলিশ তাঁকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় (অপরাধে জড়িত সন্দেহে) গ্রেপ্তার করে আবার কারাগারে পাঠায়।
পরে তেজগাঁও থানার একটি হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সেই মামলায় গত বৃহস্পতিবার তিনি ঢাকার বিশেষ দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন পান। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটায় বিকাশের জামিনের কাগজ কারাগারে পৌঁঁছায়। সকাল সোয়া আটটার দিকে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।
কারা সূত্র জানায়, দ্বিতীয় দফায় ২০০৯ সালে ১ নভেম্বর কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ বিকাশকে পাঠানো হয়।
তিনি দীর্ঘদিন কারাগারের কর্ণফুলী ভবনে বন্দী ছিলেন।
কাশিমপুর কারাগার-২-এর কারাধ্যক্ষ সুভাষ চন্দ্র ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, সকাল সোয়া আটটার দিকে বিকাশকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে মুক্তির পর তিনি কোথায় গেছেন, তা কারা কর্তৃপক্ষের জানার কথা নয়।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিকাশকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে কিছুদিন ধরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায় থেকে তৎপরতা চলছিল। একপর্যায়ে কারা কর্মকর্তাদের ডেকে বিকাশের মুক্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়।
কারা প্রশাসনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন পেলে তাঁদের মুক্তি দেওয়ার আগে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানোর নির্দেশনা রয়েছে। কারা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেভাবেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে থাকেন। কিন্তু উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা থাকায় কারা কর্তৃপক্ষ বিকাশের মুক্তির বিষয়ে নীরব ছিল।
কারাগার থেকে বের হওয়ার পর বিকাশের আর কোনো খোঁজ জানে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো।
গাজীপুর সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার কানিজ জাহান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে মুক্তি পেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর কথা।
কিন্তু বিকাশের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। ’
একটি সূত্র জানিয়েছে, গাজীপুর জেলা পুলিশের দুজন কর্মকর্তা বিকাশের মুক্তির সময় ওই কারাগারের আশপাশে ছিলেন। অন্য কোনো সংস্থা যেন বিকাশকে কারাফটক থেকে ধরে নিয়ে যেতে না পারে, সে জন্য এ দুই পুলিশ কর্মকর্তা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তিনি গতকাল সারা দিন মানিকগঞ্জে ছিলেন। এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
একই কথা বলেছেন এসপিও।
বিকাশ-কাহিনি: পুলিশের কাগজপত্র থেকে জানা গেছে, বিকাশের বাবার নাম বিমল চন্দ্র বিশ্বাস, বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার শিবনগরে। ঢাকার আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ বিশ্বাসের ভাই বিকাশ। ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার যে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা করেছিল, তাতে প্রকাশের নাম ছিল। এর আগে বিএনপি সরকারের সময়ে করা পুলিশের তালিকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে বিকাশের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল।
তালিকা প্রকাশের আগেই প্রকাশ দেশের বাইরে পালিয়ে যান বলে তথ্য রয়েছে।
সূত্র জানায়, নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাসী দল গড়ে উঠতে শুরু করে। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সুইডেন আসলাম, হারেসউদ্দীন, জোসেফ আহমেদ, প্রকাশ-বিকাশ, সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, টিক্কা, মুরগি মিলন, লিয়াকত হোসেন প্রমুখ। ঠিকাদারিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আধিপত্য নিয়ে সন্ত্রাসী দলগুলোর নিজেদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। প্রকাশ-বিকাশ প্রথমে বাসাবো এলাকায় কর্মকাণ্ড চালালেও পরে তাঁরা মিরপুর-আগারগাঁও এলাকায় আস্তানা গড়েন।
আগারগাঁওয়ে জোড়া খুন, এলজিইডি ভবনে খুনসহ আরও কয়েকটি খুনের দায়ে সরাসরি বিকাশকে আসামি করা হয়েছিল।
বিকাশকে ১৯৯৭ সালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের আলোচিত সহকারী কমিশনার (এসি) আকরাম হোসেন গ্রেপ্তার করেছিলেন। সেই সময়ে বিকাশের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগসহ ১২টি মামলা ছিল। এর মধ্যে ছয়টি মামলায় তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে তিনি জামিনে রয়েছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।