জামাত-শিবির দূরে গিয়া মর!
সারা রাত ভালো মত ঘুমাইতে পারি নাই, উত্তেজনায় না মশার কামড়ে। বোমা জালিয়েও কাজ হয় নাই। ওরে মশা, মশা রে! ফাও পাইলে ছাড়ে কেঠায়? রক্ত চুইষা আমারে টুইলাইটের হিরু বানায়া ফেলছিলো । যাই হোক ভোর সাড়ে দশটায় ঘুম থেকে উঠলাম। ন্যাচারের ভালবাসায় সাড়া দিলাম ।
ফ্রেশ হইলাম । খিচুরি খাইলাম । তারপর মনে পরল, হায়ল্লা! আমিতো দাতই বিরাশ করি নাই । তাড়াতাড়ি দাত ব্রাশ করলাম । তারপর রেডি সেডি হইয়া খিচ্চা দৌড় দিলাম।
রাস্তায় বাইরইয়া মিজাজ মোর খাটোমাটো হয়া গেল। আগে জানতাম গাও-গেরামের রাস্তা ক্যাদা আর পাকে ভরা থাকে, শহরের রাস্তা ফকফকা থাকে। ঢাকায় আইস্যা ভুল ভাঙিল। গিরার উপ্রে প্যান্ট উটায়া, বিসমিল্লা কইয়া দিলাম হাটা । যাই হোক কাদায় মাখা মাখি অইয়া এক রেষ্টুরেন্টের ওয়াশরুমে ঢুইক্কা ফেরেশ হইলাম ।
রিকশা না পাইয়া আবার হন্টন শুরু করলাম। এই সময় মেজাজ আবার খাটোমাটো হয়া গেলো । শীতের কারনে রাস্তার পাশে এক ছাগলকে টি-শার্ট পরাইয়ে রাখিছে (আশ্চর্য ঢাকায় ছাগল পালে ক্যাঠায়?)। তা পরাবি পরা, তাই বলে টিশার্টটা কি আমার টিশার্টের মতই হতে হবে? আজব!
১ম পাখিঃ
আমার প্রথম পাখির সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। তাও আবার আইলাভু কইতে।
কি গিফোট কেনা যায়? হলমার্কে ঢুকলাম এবং একখান কার্ড কিনলাম। রাস্তার পাশে এক দোকান থেইকা একখান গুলাব কিনলাম।
যাইতে যাইতে ভাবতেছিলাম তাহারও কথা। কি সুন্দর টানা টানা চোখ, স্মিতা হাসি, মুক্তোর মত দাত, দুধে আলতা রং, ঢেউ খেলানো চুল........
ভাবতে ভাবতে কখন যেন পৌছায়াও গেলাম। তো পাখিতো আমার দেরী দেইখা কিচির-মিচির শুরু কইরা দিলো।
আমি অনেক মাফটাফ চাইয়া কিচির-মিচির থামালাম। তারে এক বাটি চিকেন কর্ণ স্যুপ খাওয়াইলাম। এবং প্রপোজ করলাম । সে থ্যাংকু বইলা গিফট নিলো এবং স্যরি বইলা "না" কইরা দিলো। মুরুব্বিরা কহেন মাইয়াগো "না" মানেই হইলো "হ্যা"।
আমি পূর্ব অভিজ্ঞতার খাতিরে এই যুক্তি ধইরা আওগাইলাম না, আর গিফটও ফেরত চাই নাই।
আসলে মাইয়াই সুবিধার না। গরুর মতো চোখ, থ্যাবড়ানো হাসি, হলুদ হলুদ দাত, পচা ময়দা মার্কা গায়ের রং, জটা ধরা চুল......
একটু ঝিম মাইর বইসা রইলাম। পরাজয়ে ডরে না বীর। ওয়াশরুমে যাইয়া ফেরেশ হইয়া আবার ২ নম্বর পাখির কথা ভাবতে লাগলাম।
২য় পাখিঃ
এই পাখি ইংলিশ মিডিয়ামের ছাৎরি । যদিও এবার আমি আগে পৌছাইছি। সে লেট কইরা আইসা চরি বললো। আমিও "মেনশান নট" কইলাম (আমিও টুকটাক ইংলিশ কইতে পারি )। বার্গার খাওয়াইয়া তারে গিফট দিলাম (এই পাখির জন্যে ক্যাটবেরী আর বাবল গাম এনেছিলাম )।
পাখি গিফট পাইয়া গম্ভীর হইয়া গেলো । একটু চুপ কইরা রইলো। শুনেছি বড় ঝড়ের আগে আবহাওয়া থমকে যায়। আমার তো ভয়ে আত্মা শুকায়া গেলো । না জানি মাইয়া যদি আবার ভায়োলেন্ট হইয়া যায়!
নাহ, পাখি আমারে আস্তে আস্তে কইল, "আমি স্যরি, আমি এইসব ভাবি না।
প্রেম ভালবাসায় আমার কোন আগ্রহ নাই"
আমি আর কি কমু? পাখিরে খাচার দরজা খুইলা দিলাম। পাখি চইলা গেলো এবং ভদ্রভাবে আমারে বিদায় জানায়া গেলো।
এখন লাঞ্চব্রেক, বিকালে ৩য় জনকে প্রপোজ করতে হবে । আগারগাও চইলা গেলাম। বন্ধুর বাসায় খাইয়া দাইয়া রেষ্ট লইয়া বিকালে বারইলাম।
তবে এইবার দোস্ত আমার সফর সঙ্গী হইল।
৩য় পাখিঃ
আগের দুই পাখিরে খাওয়াইয়া আর গিফট দিয়া পকেট তো খালি, এখন কি করি? সিদ্ধান্ত নিলাম এই পাখিরে বেশি কিছু খাওয়ামু না । ফুসকার উপর দিয়ে কাম সাইরা দিমু । বিসিএস কম্পিউটার সিটির সামনে সে আইল । লে হালুয়া, আল্লার রহমতে এইবার কোন থাপ্পড় খাই নাই, কিন্তু তাইলে সবকিছু ডাবল ডাবল দেখি ক্যান?
ভুলটা বন্ধুই ভাঙাল।
কয় দেখছিস, "যমজ বোন, তুই তো লাকিরে ব্যাটা" । একজন লাল জামা আরেকজন নীল জামা পরা। নীল জামা পরা জনই আমার পাখি । যাইহোক ফুসকা পার্টি চললো, পাখিরে বেবি এলিসের একটা এ্যালবামের ডিভিডি গিফট করলাম। সে গিফট নিল।
এবং আমি আইলাভু কইলাম । (ওর ডুপ্লিকেট যমজ বোন তখন আমার দোস্তর সাথে একটু দূরে টেও টেও করতেছে )। পাখি আমারে কইল, সে নাকি বিয়ের আগে প্রেমে বিশ্বাসী না, বলল বাড়ি প্রস্তাব পাঠাও, ভাইবা দেখুমনে । হালায় কয় কি? আমার এখনও বিয়ার বয়সই হয় নাই। তবে প্রেম তো করতে পারিই , প্রেম তো আবার বয়স মানে না ।
যাই হোক পাখি আর যমজটারে গাড়ি পর্যন্ত আওগাইয়া দিলাম । মনে মনে ভাবলাম যমজ ডুপ্লিকেটটা অনেক বেশী সুন্দর । তারে এবার পটাইতে হইবে।
----------------------------------------------------------------------
আইডিবিতে ফাইজলামীঃ
দোস্ত কইল চল ভিতরে ঢুকি। আমারও তেমন কাজ নাই।
তাই রাজি হয়া গেলাম। ভিতরে ঢুকি আর ঘুইরা ঘুইরা দেখি। ক্যাননের ক্যামেরা গুলি অচাম । কিন্তু পকেটে তো টাকা নাই । দেখা ছাড়া কি করার আছে? দুই বন্ধু মিল্ল্যা লাটিমের মত ঘুরতে লাগলাম ।
এই শোরুমে যাই, ঐ শোরুমে যাই। সুন্দর সুন্দর আপুরা..... দেখতে ভালই লাগে । হঠাৎ ৩ তলায় দেখি সুন্দর একটা মেয়ে । স্নিগ্ধ চেহারা, পবিত্রতার ছাপ স্পষ্ট, হাটার ভঙ্গিমা, কথা বলার ধরন মন ছুয়ে যায় । সাদা জামা (ডিজুস না, লম্বা), কালো চাদর আর মাথায় ওড়না দিয়ে ঘোমটা দেয়া ।
সত্যি বলতে কি দেখেই মনটা ভরে গেল । খুব কথা বলতে ইচ্ছা করছিল । কিন্তু কেন জানি সাহস করতে পারছিলাম না। নিজেকেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। কেন আমি সাহস পাচ্ছি না? আসলে ভদ্র, শান্ত মেয়েদের সামনে আমি কথা বলতে পারি না।
কথা আটকে যায়। আমার বন্ধু চাইল কথা বলতে । আমি নিষেধ করলাম । জানি না কেনইবা নিষেধ করেছিলাম। চাইনি সে বিরক্ত হোক ।
বন্ধু কে বললাম আমি কথা বলি। অবশ্য তার সামনে গিয়েই নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম। কোন কথা বলতেই পারিনি।
: আসসালামু.......ওয়ালাই.......কু...ম।
: ওয়ালাইকুম আস সালাম।
( অত্যন্ত নরম গলা আর কথাও বলছে আস্তে আস্তে)
: আসলে.... আমি.... .... ( কিছু বলতেই পারছি না)
: কোন সমস্যা ভাইয়া?
: মানে... না থাক.... যাই (যেতেও পারছি না, পা টা যেন পাথর হয়ে গেছে)
: কিছু বলতে চান?
: আসলে আমার...... মানিব্যাগ......... (কথা জড়িয়ে গেল, মানিব্যাগ কেন বললাম নিজেও জানি না )
মেয়েটা আমাকে ২০০/- ধার দিলো এবং আমার মোবাইল নাম্বার নিলো। হয়ত মনে করেছে আমার কাছে টাকা নেই বা পকেট মার হয়েছে।
জীবনে অনেক মেয়ের সাথে ফাজলামো করেছি। অনেক মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে। কিন্তু এমন কাউকে দেখিনি।
ওর দেয়া ২০০/- এখনও আমার কাছে আছে। এক অন্য ধরনের দায় অনুভব করছি । টাকাটা ফেরত দিতে ইচ্ছে করছে । কিন্তু পরিচয় জানি না। নামও জানি না।
শুধু জানি কালো প্রাইভেটকারে চলে গেলো, আর বন্ধুকে ধন্যবাদ সে মোবাইলে ওর একটা ছবি তুলে রেখেছে ।
সে আমার মোবাইল নাম্বার নিয়েছে । অপেক্ষায় আছি কবে সে ফোন করবে... কারও কাছে দায়বদ্ধ থাকতে ভাল লাগে না।
প্রপোজ ইশটাইল ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।