সমাজ থেকে কল্পিত দ্বন্দগুলো দূর হোক। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামের রাজনৈতিক দলটি ধর্মকে পূঁজি করে সেই 1941 সাল থেকে রাজনীতি করে আসছে। যদিও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কর্মকান্ডের কারণে এই দলটিকে নিষিদ্ধ হতে হয়েছিল। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান প্রণিত মুসলিম পরিবার আইন অধ্যাদেশের বিরোধিতা করার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর কর্মকান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মওদুদী সহ ৬০ জন জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।
এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ১৩ জন জামায়াত নেতা ছিলেন। অধ্যাপক গোলাম আযম তাদের একজন। 1971 সালের পর ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ১৯৭১ সালের পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলে জামায়াত ও এর আওতায় পড়ে। ১৯৭৬ সালের আগস্টে জিয়াউর রহমান সরকার সকল ধরণের রাজনৈতিক দলের রাজনীতি উন্মুক্ত করে রাজনৈতিক দল অধ্যাদেশ ঘোষণা করেন।
এ সময় ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নামক একটি দলের সাথে জামায়াতে ইসলামী যুক্ত ছিল। পরে গোলাম আযম বাংলাদেশে ফিরে এলে ১৯৭৯ সালের মে মাসে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ গঠিত হয়। বর্তমানে জামায়ত ইসলামী বাংলাদেশের অঙ্গ সংগঠন ছাত্র-শিবির-এর কর্মকান্ডের কারণে জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গটি একটি বহুল আলোচিত প্রসঙ্গ। যদিও জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশের একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল তথাপি তাদের গঠনতন্ত্রে উল্লেখিত সংগঠনের মৌলিক বিশ্বাস, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। তাদের গঠনতন্ত্রের মৌলিক বিষয়গুলি যেমন-
1।
মানুষ আল্লাহ ব্যতীত আর কাহাকেও নিজোর পৃষ্ঠপোষক, কার্য সম্পাদনকারী, প্রয়োজন পূরণকারী, বিপদ দূরকারী, ফরিয়াদ শ্রাবণকারী ও গ্রহণকারী এবং সাহায্যদাতা ও রক্ষাকর্তা মনে করিবে না। কেননা তিনি ব্যতীত আর কাহারও নিকট কোন ক্ষমতা নাই।
২। আল্লাহ ব্যতীত আর কাহাকেও কল্যাণকারী মনে করিবে না, কাহারও সম্পর্কে অন্তরে ভীতি অনুভব করিবে না, কাহারও উপর ইনর্ভর করিবে না, কাহারও প্রতি কোন আশা পোষন করিবে না এবং এই কথা বিশ্বাস করিবে না যে, আল্লাহর অনুমোদন ব্যতীত কাহারও উপর কোন বিপদ-মুসীবত আপর্তিত হইতে পারে। কেননা সকল প্রকার ক্ষমতা ও ইখতিয়ার একমাত্র আল্লাহরই।
৫। আল্লাহ ব্যতীত অপর কাহাকেও বাদশাহ, রাজাধিরাজ ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মানিয়া লইবে না, কাহাকেও নিজস্বভাবে আদেশ ও নিষেধ করিবার অধিকারী মনে করিবে না, কাহাকেও স্বয়ংসম্পূর্ণ বিধানদাতা ও আইনপ্রণেতা মানিয়া লইবে না এবং আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁহার দেওয়া আইন পালনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নয় এমন সকল আনুগত্য মানিয়া লইতে অস্বীকার করিবে। কেননা স্বীয় সমগ্র রাজ্যের নিরঙ্কুশ মালিকানা ও সৃষ্টিলোকের সার্বভৌমত্বের অধিকার আল্লাহ ব্যতীত অপর কাহারও আসলেই না।
অথচ সার্বভৌম বিষয়ে বাংলাদেশের সংবিধানে উল্লেখ আছে-‘বাংলাদেশ একটি একক, স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র। যাহা “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” বাংলাদেশ নামে পরিচতি হইবে।
যে সংগঠনের গঠনতন্ত্র সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ সংবিধান বিরোধী তারা কিভাবে এদেশের রাজনীতিতে যুক্ত থাকতে পারে সেটা আমার বোধগোম্যতায় আসেনা। যে দলটির স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শপৎ নিয়েছিল এই বলে যে,-I shall bear true allegiance to the constitution of Pakistan as framed by law and shall defend Pakistan, if necessary, with my life." অর্থাৎ, "আমি আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের সংবিধানের প্রতি সত্যিকার আনুগত্য প্রদর্শন করব এবং জীবন দিয়ে হলেও পাকিস্তানকে রক্ষা করব।
অথচ এই রাজনৈতিক দলটির সাথে যাদের নেতৃত্বে এই দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে তারাই (বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ)রাজনৈতিক স্বার্থ হাছিল করার জন্য তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছিল। এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সাথে যে দলের প্রতিষ্ঠাতা একজন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন রাজনৈতকি জোট বেঁধে ক্ষমতায় গিয়ে তাদেরকে এই দেশের পতাকাবাহী গাড়ীতে চড়িয়েছে। ভাবতেও লজ্জা লাগে।
অথচ লজ্জা লাগেনি জামায়াত ইসলামীর যারা এদেশের স্বাধীনতা রুখতে কোরান ছূঁযে শপৎ নিয়েছিল, এই দেশের পরাধীনতার জন্য জীবন দিতে চেয়েছিল তারাই আবার সেই দেশেরে পতাকাবাহী গাড়ীতে চড়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। লজ্জা লাগেনি আওয়ামীলীগের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ত্বদানকারী দল হয়েও শুধু মাত্র রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে স্ব-ঘোষিত স্বাধীনতাবিরোধী দলের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতে। অবশ্যই ক্যান্টোন্টমেন্ট থেকে জন্মগ্রহণ করা জাতীয়তাবাদী দলের কথা নাইবা বললাম তাদের স্বার্থেই তারা এই দলটিকে নানান সময়ে নানান ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে।
এই দলটি সব সময় ধর্মকে কাজে লাগীয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চেয়েছে। নিচের এই লাইনগুলি পড়লেই তা ষ্পষ্ট বোঝা যায়।
জামাত ইসলামী বাংলাদেশের গঠনতনেত্রর 5ম অনুচ্ছেদে আছে-
‘আল্লাহ ব্যতীত অপর কাহাকেও বাদশাহ, রাজাধিরাজ ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মানিয়া লইবে না, কাহাকেও নিজস্বভাবে আদেশ ও নিষেধ করিবার অধিকারী মনে করিবে না, কাহাকেও স্বয়ংসম্পূর্ণ বিধানদাতা ও আইনপ্রণেতা মানিয়া লইবে না এবং আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁহার দেওয়া আইন পালনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত নয় এমন সকল আনুগত্য মানিয়া লইতে অস্বীকার করিবে। কেননা স্বীয় সমগ্র রাজ্যের নিরঙ্কুশ মালিকানা ও সৃষ্টিলোকের সার্বভৌমত্বের অধিকার আল্লাহ ব্যতীত অপর কাহারও আসলেই না’।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী- “7(1) প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ”
যা আমাদের সংবিধানের সাথে সম্পূর্র্ণরুপে সাংঘর্ষিক। আরও এমন অনেক কিছু আছে যা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের গঠনতন্ত্র বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। প্রকৃতপক্ষে এই দলটি কখনই কোনভাবেই এইদেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চায়না।
তারা ধর্মের চাদরে ঢেকে ইসলামী রাজতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যেটা হতে পারে বিগত সময়ে তালেবান সরকারের মতই।
আবার, এই দলকে যদি নিষিদ্ধও করা হয় তাহলে খুব বেশি ভয় থাকবে আত্মঘাতী বা চুরাগুপ্তা হামলার। যাতে ব্যবহৃত হতে পারে কাসাব বা রেজওয়ানের মতো কমোলমতী কিশোর। যারা ধর্ম বোঝার আগেই অধর্মীয় কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে পড়বে।
প্রকৃতপক্ষে 1979 সালে যে সম্প্রদায়িক শক্তির উদ্ভব হয়েছে তার শেষ কোথায় কেউ জানেনা। একবার যদি ধর্মীয় সাম্প্রদায়ীকতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে তা দশকের দশক, শতকের পর শতক চলতে থাকে এবং তার জন্য অনেক বেশী মূল্য দিতে হয়। সেটা আফগানীস্থান, পাকিস্থানের দিকে তাকালে বুঝতে সমস্যা হয় না। একটু পৃথীবির দিকে চোখ বুলিয়ে নেন দেখবেন ধর্মীয় চেতনাদ্ভুত সাম্প্রদায়িকতার জন্য এক জাতী অন্য জাতীকে হাজার হাজার বছর ধরে ঘৃণা করে আসছে।
একদিকে জামাত ইসলামী বাংলাদেশের রাজনীতির ক্রমবিকাশের ফলে হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সংঘাতের শঙ্কা অন্যদিকে রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ করা হলে চোরাগুপ্তা বা আত্মাঘাতী হামলার আশঙ্কা।
আরেকদিকে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর সীমাহীন নীতি বিবর্জিত রাজনৈতিক কর্মকান্ড, সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অন্ধতা, বামপন্থী দলগুলোর মানুষের কাছা-কাছি পেঁৗছানের চরম ব্যর্থতা ইত্যাদি বিষয় ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতিকে পরোক্ষভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।