আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিজেকে জানতে মনোবিজ্ঞানের ব্যবহার এবং ব্যক্তিত্বের সুপ্ত সম্ভাবনা ও আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলার উপায়

কখগ বিভিন্ন সময় বারবার প্রমাণিত হয়েছে যে, আত্মবিশ্বাস খুবই আকর্ষণীয় একটা গুন। আত্মবিশ্বাস যেমন আপনাকে কলিগের প্রশংসা যোগাবে তেমনি বন্ধুদের সম্মান এবং এমনকি আপনার প্রতি বিপরীত লিংগের আগ্রহের কারণও এই একটি ব্যপার। সত্যি কথা বলতে আত্মবিশ্বাস ছাড়া আর যত টেকনিকই অ্যাপ্লাই করুন না কেন তার কাজে লাগবার সম্ভাবনা একদম নেই বললেই চলে। আর আজকের পর্ব তাই আত্মবিশ্বাস। আমাদের মাঝে যোগ্য থেকে যোগ্যতর লোকের মাঝেও দেখা যায় আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি।

কষ্টকর অথবা জটিল ছোটবেলা, অসাবধান অবিভাবক, সমাজের দৃষ্টিকোণ থেকে অসুন্দর চেহারা বা দৈহিক গড়ণ, স্বল্প ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অথবা আশেপাশের লোকজনের নিজেকে অতিরিক্ত জাহির করা – এসব অসংখ্য কারণে সুযোগ্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী লোকও অনেক সময় আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে পারেন। এমনকি আত্মবিশ্বাসের অভাবে অনেক সুযোগ্য লোকও যে মেয়েদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে ভয় পায় এমনটা আমরা সবাই জানি। আর নারীর ব্রেইনের ডান পাশ তথা আবেগীয় অংশ পুরুষের তুলনায় বেশি কাজ করে যার ফলে তার ইন্টুইশন প্রকৃতিগত ভাবে একটু বেশি হয়ে থাকে। পুরুষের মাঝের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি তাই মনের অজান্তেই নারীর বুঝে ফেলবার একটা প্রবণতা লক্ষ করা যায়। তবে এই লেখাটি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে আত্মবিশ্বাস যোগানোর জন্যই লেখা।

সাইকোলজির কিছু বিশেষ টেকনিক ব্যবহার করে আমরা সবাই পারি নিজের মনের অবচেতন প্রক্রিয়াকে গাইড করতে আর শুধমাত্র তখনই এর সীমিত মনোভাব অথবা নেগেটিভ স্বৈরশাসন হতে নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হবো আমরা। আর অবচেতন মন যদি নেতিবাচক হয়ে থাকে তবে তাকে রিপ্রোগ্রাম করবার জন্য দরকার শুধু সচেতনতার সাথে নিজস্ব উপলব্ধি, দৃষ্টিভংগী এবং আবেগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া। হুনা- হাওয়াইন কাহুনা জাতির গুপ্ত জ্ঞান হুনাকে বিশ্বের সামনে সর্বপ্রথম তুলে ধরেন ম্যাক্স ফ্রিডম লং যার সাথে মনোবিজ্ঞানের তৎকালীন কিছু তত্ত্বের অদ্ভুত সাদৃশ্য লক্ষ্য করেন তিনি। ব্যক্তিগত ভাবে হুনার সাথে আমার পরিচয় হয় ভারতে পর্বতারোহণের ওপর প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে সেখানকার লাইব্রেরিতে। বিশ্বের সেরা পর্বতারোহী রেইনহোল্ড মেসনার তার কোন একটি লেখায় হুনাকে তার জীবনে বিশেষভাবে ছাপ ফেলে যাওয়া দর্শন বলে উল্লেখ করেন।

এর পরে হুনার ওপর আরো কিছু বই পড়বার পর মেডিটেশন থেকে শুরু করে মনের ওপর কতৃত্ব স্থাপন করবার আরোও অনেক টেকনিক খুঁজে পেলেও আজ প্রধানত এর মৌলিক নীতি গুলো কিভাবে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ক্ষেত্রে এবং জীবনকে অর্থবহ করবার জন্য ব্যবহার করা যায় সে ব্যপারে লেখবার এই চেষ্টা। হুনার সবচাইতে মৌলিক তত্ত্ব মতে আমরা প্রত্যেকে নিজস্ব বাস্তবতাকে নিয়ন্ত্রন করি আমাদের যার যার চিন্তা ও বিশ্বাস দিয়ে। "The most fundamental idea in Huna philosophy is that we each create our own personal experience of reality by our beliefs, interpretations, actions and reactions, thoughts and feelings." অর্থাৎ এই তত্ত্ব মতে আমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টিশীল উদ্ভাবনী ক্ষমতা অসীম। অন্য কথায়, প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব চিন্তাভাবনার ক্ষমতা অনুযায়ী যে কোন কিছু সৃষ্টি করতে সক্ষম। আর জীবনের যে কোন ক্ষেত্রে তাই আমাদের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা গুলো পজিটিভ বিশ্বাস দিয়ে প্রতিস্থাপন না করতে পারলে সত্যিকারের সাফল্য সম্ভব নয় বলেই আধুনিক মনোবিজ্ঞানীদের ধারণা।

আসুন জেনে নেয়া যাক হুনার প্রধাণ সাতটি নীতি। ১. প্রত্যেকের বাস্তবতা তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির ফসলঃ আমরা প্রত্যেকে নিজস্ব চিন্তাভাবনা, বিশ্বাস এবং দর্শন দিয়ে প্রতিনিয়ত আমাদের নিজস্ব বাস্তবতাকে গঠন এবং পরিবর্তন করে চলেছি। অর্থাৎ শুধুমাত্র আমাদের চিন্তার প্যাটার্ন পরিবর্তন করে আমরা নিজেদের বাস্তবতাকে পরিবর্তন করতে সক্ষম। ২. সীমা বলে কিছু নেইঃ এই তত্ত্ব মতে আমাদের মন এবং শরীরের মাঝে কোন বাঁধা বা সীমা যেমন নেই, তেমনি প্রকৃতির সাথেও মানুষের যোগাযোগের মাঝে কোন বাঁধা নেই, একমাত্র আমাদের নিজেদের তৈরি করা সীমিত সচেতনতা ছাড়া। ৩. মনোযোগ বা ফোকাসের স্থানেই আমাদের আধ্যাত্মিক এনার্জি বা শক্তি ক্ষয় হয়ঃ বিশেষ কিছু চিন্তার দিকে নিজস্ব মনোযোগ দিয়েই আমরা আমাদের জীবনের ঘটনাগুলো লিখে যাচ্ছি।

আমাদের পজিটিভ বা নেগেটিভ দৃষ্টিভংগীর জ্বালানী হলো গিয়ে ফোকাস অথবা মনোযোগ। প্রতিটি মানুষ যেভাবে তার জ্বালানী ব্যবহার করে সেই হিসাবে তার পরিণতি হবে। ৪. সকল ক্ষমতার উৎস বর্তমানঃ অতীত বা ভবিষ্যত বাদ দিয়ে আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ ক্ষমতার উৎস বর্তমানে এবং এর ব্যবহার শুধুমাত্র বর্তমানেই করা সম্ভব। কোন বিশেষ মুহুর্তের অপেক্ষায় না থেকে শুধুমাত্র বর্তমানেই নিজস্ব সীমিত চিন্তাভাবনা গুলো পরিবর্তন করে ভবিষ্যৎ কে পরিবর্তন করা সম্ভব। "As you change your mind at the present, you change your experience of future." ৫. একমাত্র ভালোবাসা দিয়েই প্রকৃত সুখ অর্জন করা সম্ভবঃ জীবনের যে কোন ক্ষেত্রে, যে কোন কাজে এবং যে কোন বিশ্বাসে ভালোবাসার ভিত্তি ছাড়া কোন প্রকার সুখী ফলাফল বা পরিণতি আশা করা যায়না।

৬. আমাদের সব ক্ষমতার উৎস আমরা নিজেরাইঃ আমাদের বাস্তবতাকে পরিবর্তন করতে চাইলে অবশ্যই কোন অলৌকিক ঘটনার ওপর নির্ভর করা যাবে না অথবা বাহ্যিক কোন ঘটনা অথবা ভাগ্যকে দোষারোপ করা যাবেনা। আমাদের বাস্তবতার জন্য অন্য কোন ব্যক্তি দায়বদ্ধ হতে পারে না, তাই নিজের বাস্তবতার ওপর অন্য কাউকে ওই ক্ষমতা দেবার দায়টিও আমাদের নিজস্ব। এর মানে হলো গিয়ে প্রত্যেকের নিজ নিজ অবস্থানের জন্য তার ভাগ্য, বন্ধুবান্ধব, পরিবার এবং সমাজকে কোনভাবেই দায়ী না করে নিজস্ব দায়দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। ৭. কার্যকারিতাই আসল সত্যের মাপকাঠিঃ দু-বন্ধুর তর্কের মাঝে যোগদান করুন এবং আপনি উপলব্ধি করবেন যে সত্যের অনেকগুলো ভার্শন থাকতে পারে। আর এই অসীম মহাবিশ্বের তুলনায় মানুষ এতই ক্ষুদ্র যে তার পক্ষে পরম সত্য খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়।

চরম সত্য না খুঁজে তাই কার্যকারিতার ভিত্তিতে নিজস্ব সত্য অনুযায়ী জীবনধারণ করা উচিৎ এবং অপরের সত্যকে সম্মান জানানো উচিৎ , যতক্ষণ তা আপনার অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরুপ না হয়ে দাঁড়ায়। নেতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং দৃষ্টিভংগীর কুফলঃ আত্মবিশ্বাস বাড়াবার জন্য ব্যক্তিত্বের মাঝের নেতিবাচক দৃষ্টিভংগী এবং তার প্রভাব চিনতে পারা অত্যন্ত জরূরী। সাধারণ ভাবে আধুনিক মনোবিজ্ঞান অনুযায়ী বলা যায় যে, নেতিবাচক মনোভাব থেকে তৈরি হয় নেতিবাচক মানসিক চাপ, মানসিক চাপ থেকে তৈরি হয় শারীরিক চাপ যা বিভিন্ন অঙ্গ এমনকি দেহকোষেরও ক্ষতি সাধন করে থাকে। নেতিবাচক মনোভাব যখন প্যাটার্ন হিসাবে মনস্তত্বে বাসা গেড়ে বসে তখন তার ক্ষতির পরিমাণ হতে পারে কল্পনার বাইরে। আর নেগেটিভ মনোভাবকে পরিবর্তন করবার সবথেকে ভাল উপায় হলো প্রতিটি নেগেটিভ মনোভাব সামনে আসার সাথে সাথে তার ব্যপারে অবহিত হওয়া এবং সচেতনভাবে তাকে পজিটিভ একটি বিবৃতিতে রুপান্তর করে ফেলা।

নেগেটিভঃ ভাগ্য বা অসৎ উপায় ছাড়া ধনী হওয়া সম্ভব নয়। পজিটিভ- আমি বিশ্বাস করি যে মাথা খাটিয়ে এবং নিজস্ব স্বপ্নকে অনুসরণ করে জীবনে সফলতা লাভ করা সম্ভব। অবচেতন মন অবচেতন মন নিয়ে সাধারণের বিভ্রান্তির কথা আগেই একটি পর্বে লিখেছিলাম Click This Link অর্থাৎ অনেকেই মনে করেন যে অবচেতন মনের ব্যপারে জানতে হলে আপনাকে যেতে হবে কাউন্সিলর অথবা মনোবিজ্ঞানীর কাছে। হুনা সাইকোলজির মতে আমরা নিজেরাই নিজের অবচেতনকে সবথেকে বেশি নিয়ন্ত্রন করে থাকি। এমনকি অবচেতন মন যে আমাদেরকে পুরো স্বৈরাচারী ভাবে শাসন করে এমনও নয়, বরং যখনই এই অবচেতন মন আপনার কোন একটা কমান্ড বা নির্দেশ মানতে অস্বীকৃতি জানায়, এর কারণ আসলে মূলত সে তাকে দেয়া আপনার পুরোনো নির্দেশ এখনো মেনে চলছে বলেই।

এর একটি ভাল উদাহরণ হতে পারে নিজের অবচেতনকে কোন একটি অভ্যাস বদলাবার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া। আমাদের মানসিক এবং শারীরিক অভ্যাসগুলো আসলে অবচেতনের মেমোরীতে রক্ষিত বিভিন্ন আবেগ অথবা উদ্দীপনার ব্যপারে প্রতিক্রিয়া মাত্র। আর একটি খারাপ অভ্যাসকে পরিবর্তন করবার সবচাইতে ভাল উপায় হলো উক্ত আবেগ অথবা উদ্দীপনাটির ব্যপারে অবচেতন মনকে আরো কার্যকরী একটি প্রতিক্রিয়া যোগানো। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে কথা বলার সময় তোতলানো অথবা বিরক্তিকর ভাবে “অ্যা ওঁ” ইত্যাদি শব্দ করা। মূলত জীবনের কোন একটা সময় উক্ত অভ্যাসটি আপনাকে সঠিক শব্দ নির্বাচন করবার জন্য অতিরিক্ত সময় দিয়েছিলো, তবে পুনরাবৃত্তির ফলে তা স্থায়ী অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায় আর হুনা সাইকোলজি অনুযায়ী এই অভ্যাসটি ত্যাগ করবার থেকে একে আরো কার্যকরী কোন অভ্যাস দ্বারা বদলে দেয়াটাই বেশি বাস্তবিক এবং ফলপ্রসূ হবে।

অর্থাৎ উক্ত অভ্যাসটি একবারে বন্ধ করবার চেষ্টা না করে আপনার কথাবার্তা বা বাক্যে সচেতন কালক্ষেপন যোগ করে অথবা প্রতিবার তোতলানো “অ্যা ওঁ” শব্দগুলো উচ্চারনের ইচ্ছা বা স্পন্দন তৈরি হবার সাথে সাথে আঙ্গুল দিয়ে কোথাও হাল্কা টোকা দেবার মাধ্যমে অবচেতনের অভ্যাসটিকে বদলানো সম্ভব। অথবা সিগারেট খেতে ইচ্ছে হলে শুধুমাত্র ত্যাগ না করে অন্য কোন অভ্যাস দ্বারা তাকে বদলাবার চেষ্টা করাটা অধিক যুক্তিসঙ্গত এবং কার্যকরী। অবচেতন মন স্মৃতিভান্ডার থেকে তথ্য নেয় তাই তাতে শূন্যস্থান না রেখে বরং নতুন কমান্ড দিয়ে তাকে প্রতিস্থাপন করাটা সার্থক হবার সম্ভাবনা বেশি। মনে রাখতে হবে যে আমাদের অবচেতন মনের প্রধাণ উদ্দেশ্য আমাদের জীবনকে আরো সহজতর করে তোলা। এজন্যই সে তাকে দেয়া ট্রেনিং মেমোরী তে জমা করে রাখে এবং সে অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

দুঃখজনক ভাবে অবচেতনকে দেয়া ট্রেনিংগুলোর ভিত্তি হতে পারে নেতিবাচক বিশ্বাসের ওপর। হুনা এবং আধুনিক সাইকোলজি অনুযায়ী আমরা অবচেতনের সাথে যোগাযোগ করে সহজেই নিজস্ব প্রেরণা অথবা মোটিভেশনগুলো খুঁজে পেতে পারি এবং নেগেটিভ চিন্তাভাবনাগুলোকে পজিটিভ মনোভাব দিয়ে প্রতিস্থাপন করে ফেলতে পারি। একইসাথে অবচেতনের সাথে যোগাযোগের বেশ কয়েকটি নিয়মও হুনাতে পাওয়া যায় যায় সাইকোলজির আরেকটি বিভাগ নিউরো-লিঙ্গুইস্টিক প্রোগ্রামিং এর বিজ্ঞানীরাও অনুসরণ করে থাকেন। অবচেতনের সাথে এই যোগাযোগের প্রথম ধাপে তাকে একটি নাম প্রদান করা হয় এবং তারপর দুটি ভিন্ন উপায়ে তার ডাটাবেস থেকে কোন বিশেষ স্মৃতি খোঁজা হয়। যার একটি হলো ট্রেজার হান্ট।

অবচেতনের সাথে ঠিক সেভাবে কথা বলতে হবে যেন সে আপনার বন্ধুস্থানীয় কেউ একজন এবং তাকে তার স্মৃতিভান্ডার থেকে একটি বিশেষ সুখস্মৃতি আনার নির্দেশ দিয়ে দেখুন। এবার খেয়াল করে দেখুন যে উক্ত স্মৃতিটি কতটা বিস্তারিত এবং তার উজ্জলতা কেমন। অথবা অবচেতনকে অনুরোধ করতে পারেন তার তথ্যভান্ডারের সবচাইতে সুন্দর স্মৃতিগুলো সচেতন মনের সামনে নিয়ে আসতে। খেয়াল করবেন যে এমন অনেক স্মৃতি সামনে আসবে যেগুলো হয়ত আপনি ভুলে গিয়েছিলেন এমনকি তার সাথে জড়িত আবেগও হাজির হবে। স্মৃতিভান্ডার থেকে তথ্য খোজার দ্বিতীয় উপায়টিকে বলা হয়েছে ট্র্যাশ কালেক্টিং অর্থাৎ আবর্জনা সংগ্রহ করা।

এ ক্ষেত্রে অবচেতনকে বলুন আপনার জীবনের সবচাইতে বাজে স্মৃতিগুলো আপনার সামনে তুলে ধরতে। যথেষ্টবার এটির পুনরাবৃত্তি করবার পর আপনি আপনার স্মৃতিগুলোর মাঝে কিছু প্যাটার্ন অথবা বিশেষ থিমের ক্লু খুঁজে পাবেন যাতে আপনার সীমিত অথবা নেগেটিভ চিন্তাধারার কিছু উদাহরণ থাকবে। সচেতনতার সাথে লক্ষ্য করলেই দেখবেন যে প্রায় প্রতিটা স্মৃতির সাথেই হয়ত আপনার কোন না কোন ছোটখাট অথবা বড় ধরণের ভয় জড়িত এবং এই ভয়গুলোকে পজিটিভ চিন্তা বা মনোভাব দিয়ে বদলে দিতে না পারলে সারাজীবন আপনার জীবনে এদের প্রভাব থাকবার সম্ভাবনা শতকরা ১০০%। কারণ প্রতিটা ছোট ভয় থেকেই তৈরি হয় বিশাল কোন ভয় এবং তারা নিয়মিত আমাদের অবচেতনকে স্যাবোটাজ করে চলেছে সচেতন মনের অজ্ঞাতেই। আবেগীয় স্বাধীনতাঃ হুনা তত্ত্বের খুব বড় একটি তালিম হলো অবচেতন শাসনের শিকার না হয়ে বরং একে দিক-নির্দেশনা এবং ট্রেনিং দেয়া।

আর এর একটি প্রধাণ উপায় হলো অবচেতনের কোন বিশেষ আবেগীয় প্রতিক্রিয়াকে মেনে না নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা। কোন কারণে আপনি খুব রেগে গেলেন। আপনি যদি নিজেকে বলেন যে “আমি খুব রাগ” তবে হয়তবা এই রাগটি থেকে মুক্তি পেতে আপনার বেশ বেগ পেতে হবে। বরং নিজেকে যদি আপনি প্রশ্ন করেন যে, “কেন এ মুহুর্তে আমি রেগে যাচ্ছি ? এই বিশেষ আবেগটির উৎস কোথায় ? এরকম আরো কিছু প্রশ্ন করে আপনি আপনার আবেগটির উৎস খুঁজে বের করতে পারেন সেইসাথে নিজেকে বিশ্লেষণের এই বিশেষ প্রক্রিয়াটি আপনার মানসিক এনার্জি বা ফোকাসকে ডাইভার্ট করে সচেতন চিন্তা প্রক্রিয়ায় স্থানান্তর করার ফলে সেই বিশেষ আবেগটি ধীরে ধীরে তার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। অবচেতন যে কোন নেতিবাচক চিন্তা প্রক্রিয়াকে সচেতনতার সাথে আপনার ততদিন দিক-নির্দেশনা দিয়ে যেতে হবে যতদিন না আপনার অবচেতন স্মৃতিভান্ডারে উক্ত প্রক্রিয়াটি জমা হয় এবং স্বয়ংক্রিয় ভাবেই সে পজিটিভ স্বিদ্ধান্ত নেয়া শুরু করে।

সচেতন মনঃ সঠিকভাবে সচেতন মনকে বুঝতে হলে আপনাকে জানতে হবে মানুষের অদম্য “ইচ্ছাশক্তি” এর ব্যপারে। সচেতনভাবে আপনার একমাত্র ক্ষমতা মূলত আপনার সচেতনতা তথা ফোকাসকে কোন একটি বিশেষ চিন্তা অথবা অভিজ্ঞতার দিকে নির্দেশ করা। আর এটাকেই বলা হয়ে থাকে মানুষের “Free will” । আপনি চাইলেই অপর একটি মানুষকে আপনাকে ভালোবাসতে বাধ্য করতে পারেন না, অথবা বসকে আপনার বেতন বাড়াতে রাজি করাতে পারেন না। আমরা যেটা করতে পারি তা হলো একটি বিশেষ অভিজ্ঞতাকে কোন দৃষ্টিতে দেখতে পারি তা পছন্দ বা বাছাই করা, এই মুহুর্তে নিজের এবং নিজের দৃষ্টিভংগী পরিবর্তনের মাধ্যমে কিভাবে ভবিষ্যতের অভিজ্ঞতা পরিবর্তন করা সম্ভব তা উপলব্ধি করতে পারা।

আর এই অবিচ্ছিন্ন এবং ক্রমাগত সচেতনতার সাথে ইচ্ছাশক্তিকে একটি নির্দিষ্ট দিকে গাইড করার মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব কোন ব্যক্তির সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য। অন্যদিকে ছোট ছোট প্রতিবন্ধক অথবা অসুবিধা সত্ত্বেও ক্রমাগত নতুন নতুন সিদ্ধান্ত এবং বিকল্প পথ খুঁজে কোথাও পৌছানোকে বলা যায় গোল অথবা লক্ষ্যে পৌছানো। অন্যভাবে বললে, একটি পদ্ধতি যদি কয়েকবারের চেষ্টায়ও সফল না হয় তবে একজন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ব্যক্তি চেষ্টা করেই যাবে যতক্ষণ না পর্যন্ত সে হয় অধিক কার্যকরী একটি পদ্ধতি আবিস্কার করে, দরকার হলে নিজেকে শুধরে নিয়েও সে এই সিদ্ধান্তে অটল থাকে। আর একজন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ব্যক্তি এবং দুর্বল চিত্তের অধিকারী ব্যক্তির মাঝে পার্থক্য গড়ে দেয় এই লড়ে যাবার ইচ্ছাশক্তিটুকু। প্রথম জন যেখানে লড়াই চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয় সেখানে দুর্বল চিত্তের ব্যক্তিটি বরং ভাগ্য অথবা বাহ্যিক কোন কারণকে দোষারোপ করে কাজে আব্যাহতি দেবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

“Failures and setbacks are fine. Deciding to quit is not.” লক্ষ্য এবং সর্বোচ্চ উদ্দেশ্যর মাঝে পার্থক্যঃ হুনা দর্শনে মানুষের লক্ষ্য এবং জীবনের সর্বোচ্চ উদ্দেশ্যের পার্থক্যকে চিহ্নিত করবার পথ দেখানো হয়েছে বিভিন্ন ভাবে। প্রতিটি মানুষের নিজের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জানতে পারার সাথে তার আত্মবিশ্বাস এবং প্রবল ইচ্ছাশক্তির সরাসরি যোগাযোগ আছে বলে এতে সুনির্দিষ্ট করে এই দুইয়ের মাঝে পার্থক্য চিহ্নিত করতে পারাটা আত্মোন্নয়নের পথে বিশেষভাবে জরুরী বলে ধরা হয়েছে। আর এ দর্শন অনুযায়ী জীবনের সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য বা গন্তব্য হলো এমন কিছু যা আপনার জীবনের পুরো সফরটিকে অর্থ প্রদান করতে সক্ষম। আর এই গন্তব্যে পৌছানোর জন্য ছোটখাট যেই গোলগুলো আমরা নিজেদের জন্য ঠিক করি সেগুলোই হলো লক্ষ্য। একটি লক্ষ্যে পৌছানো সম্ভব হলেও জীবনের সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য হলো সেটা যা একজন ব্যক্তিকে একটি পরিচয় প্রদান করে, একটি আইডেনটিটি দেয়।

আর সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য ছাড়া ছোট ছোট লক্ষ্যের কোন মূল্য নেই, যেখানে সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য বা গন্তব্য জানা থাকলে তা একজন ব্যক্তির ছোট ছোট লক্ষ্যগুলোকেউ অর্থবহ করে তুলতে পারে। সর্বোপরি, একমাত্র জীবনের উদ্দেশ্যকে জানার মাধ্যমেই একজন ব্যক্তির পক্ষে তার ব্যক্তিত্বের সর্বোচ্চ ইচ্ছাশক্তি আত্মবিশ্বাসের সাথে জীবনে প্রয়োগ করা সম্ভব বলে বলা হয় হুনা সাইকোলজিতে। "Look for the good in everything and, if you can't find any, figure out a way to put some in." https://www.facebook.com/DoctorXBD ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৯ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.