আমি সত্য জানতে চাই
অ্যাঞ্জেলিনা জোলিঃ একজন জনপ্রিয় মার্কিন অভিনেত্রী। প্রকৃত নাম অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ভট। তবে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি নামেই তিনি বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি তিনবার গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার, দুইবার স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কার এবং একবার একাডেমি পুরস্কার লাভ করেছেন। চলচ্চিত্র জগতের বাইরে ২০০১ সালে তিনি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার শুভেচ্ছাদূত মনোনীত হয়েছেন।
বিশ্বব্যাপী মানবতার প্রচার, এবং বিশেষ করে শরণার্থীদের জন্য কাজ করার জন্য জোলি বিশেষভাবে সমাদৃত। একাধিকবার তিনি ‘বিশ্বের সেরা সুন্দরী’ নির্বাচিত হয়েছেন। আজ অ্যাঞ্জেলিনা জোলির ৩৮তম জন্ম দিন। জন্মদিনে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা।
১৯৭৫ সালের ৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে জোলির জন্ম।
তার বাবা-মা'র নাম যথাক্রমে জন ভট ও মার্শেলিন বার্ট্রান্ড; মা-বাবা উভয়েই ছিলেন পেশাদার অভিনয়শিল্পী। বাবার দিক থেকে জোলি চেকোস্লোভাকীয় ও জার্মান বংশোদ্ভূত আর মায়ের দিক থেকে ফরাসি কানাডীয় বংশোদ্ভূত। জোলির জন্মের পরবর্তী বছর ১৯৭৬ সালে তার মা-বাবার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। বিচ্ছেদের পর জোলি ও তার ভাই উভয়েই তাদের মায়ের কাছে বেড়ে উঠতে থাকেন। বিচ্ছেদ-পরবর্তী এই প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দিতে তার মা নিজের অভিনয়ের উচ্চাশা বিসর্জন দেন, এবং সন্তানদের সাথে নিয়ে নিউ ইয়র্কের প্যালিসেডে চলে যান।
শৈশব থেকেই জোলি নিয়মিতভাবে ছবি দেখতেন ও ছবি দেখার পর মায়ের কাছে, অভিনয় করার ব্যাপারে তার আগ্রহ প্রকাশ করতেন। তবে কখনোই তার বাবার কারণে অভিনয়ের প্রতি আকৃষ্ট হননি। জোলির বয়স যখন এগারো, তখন তার পরিবার আবার লস অ্যাঞ্জেলেসে ফিরে আসে। লস অ্যাঞ্জেলেসে এসে এবার তিনি অভিনয় করার সিদ্ধান্ত নেন। এরই সূত্র ধরে তিনি লি স্ট্র্যাসবার্গ থিয়েটার ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন।
সেখানে তিনি দুই বছর ধরে অভিনয়ের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এই থিয়েটার ইনস্টিটিউটে থাকাকালীন সময়ে তিনি বেশ কিছু মঞ্চনাটকেও অভিনয় করেন।
একজন ফ্যাশন মডেল হিসেবে চৌদ্দ বছর বয়সে জোলির পেশাজীবন শুরু হয়। তিনি মডেলিং করতেন মূলত লস অ্যাঞ্জেলেস, নিউ ইয়র্ক ও লন্ডনে। সে সময়ে তৈরি বিভিন্ন মিউজিক ভিডিওতে তাকে দেখতে পাওয়া যায়।
১৯৮২ সালে লুকিন’ টু গেট আউট চলচ্চিত্রে বাবা জন ভটের সাথে একটি শিশু চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে জোলির আবির্ভাব হয়। যদিও জোলির সাথে তার বাবা জন ভটের সম্পর্ক অত্যন্ত শীতল ও দূরত্বপূর্ণ। তারা দুজন পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় এই দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই, ২০০২ সালের জুলাইয়ে জোলি তার নামের শেষাংশ থেকে আইনগতভাবে ‘ভট’ শব্দটি বাদ দিয়ে শুধু ‘অ্যাঞ্জেলিনা জোলি’ করার আবেদন করেন। দুই মাস পর, ২০০২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তার নাম আইনগতভাবে পরিবর্তিত হয়ে শুধু ‘অ্যাঞ্জেলিনা জোলি’ হয়।
জোলি পেশাদার চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে তাঁর অভিষেক ঘটে ১৯৯৩ সালে স্বল্প বাজেটের ছবি সাইবর্গ ২-এ অভিনয়ের মাধ্যমে। তাঁর অভিনীত প্রথম বড় মাপের ছবি হ্যাকারস (১৯৯৫)। এ ছবিতে তিনি নামভূমিকায় অভিনয় করেন। পরবর্তীতে তাঁকে জর্জ ওয়ালেস (১৯৯৭) ও জিয়া (১৯৯৮)-এর মতো সমালোচক-নন্দিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়। নাট্য চলচ্চিত্র গার্ল, ইন্টারাপ্টেড (১৯৯৯)-এ অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।
ভিডিও গেম নায়িকা লারা ক্রফ্ট চরিত্র নিয়ে লারা ক্রফ্ট: টুম্ব রেইডার (২০০১) চলচ্চিত্রে অভিনয় তাঁর তারকাখ্যাতি আরও বাড়িয়ে দেয়। লারা ক্রফ্ট: টুম্ব রেইডার চলচ্চিত্রে জোলি ও তার পিতা জন ভট একসঙ্গে বাবা-মেয়ের ভূমিকায় অভিনয়ও করেন। মূলত এরপর থেকেই জোলি হলিউডের অন্যতম ও সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক-প্রাপ্ত একজন অভিনেত্রী হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। তাঁর চলচ্চিত্র-জীবনের সর্বোচ্চ ব্যবসায়িক সাফল্য যে দুটি চলচ্চিত্র থেকে এসেছে সেগুলো হলো অ্যাকশন-কমেডিধর্মী মি. এন্ড মিসেস. স্মিথ (২০০৫) এবং অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র কুং ফু পান্ডা (২০০৮)।
(অভিনেতা ব্র্যাড পিট-এর সাথে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি)
কম্বোডিয়াতে যখন জোলি টুম্ব রেইডার চলচ্চিত্রে কাজ করছিলেন, তখন থেকেই জোলি ব্যক্তিগতভাবে মানবতার অভাবকে উপলব্ধি করতে শুরু করেন।
একপর্যায়ে এসে আন্তর্জাতিকভাবে পীড়িত ও দুঃস্থ অঞ্চলগুলো সম্পর্কে তথ্য জানার জন্য জোলি ইউএনএইচসিআর-এর দ্বারস্থ হন। মানবতার এই বিপর্যয়কে ভালোভাবে জানা ও বাস্তবতা উপলব্ধির জন্য তৎপরবর্তি কয়েক মাস জোলি বিশ্বের বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন। ফেব্রুয়ারি ২০০১-এ তাঁর প্রথম সফরে জোলি ১৮ দিনের জন্য সিয়েরা লিওন ও তানজানিয়া ভ্রমণ করেন। পরবর্তী মাসগুলোতে তিনি যেসকল স্থানে সফর করেন তার মধ্যে, দুই সপ্তাহের জন্য কম্বোডিয়া সফর ও পরবর্তীতে পাকিস্তানের আফগান শরণার্থী শিবির পরিদর্শন। ইউএএইচসিআর-এর জরুরি অনুদান প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে তিনি সেখানে আফগান শরণার্থীদের জন্য ১০ লক্ষ মার্কিন ডলার অনুদান দেন।
এসমস্ত ক্ষেত্রে তাঁর সকল সফরের ব্যয়ভার তিনি নিজেই বহন করেন। ২০০১ সালের ২৭ আগস্ট জেনেভায় অবস্থিত ইউএনএইচসিআর-এর সদরদপ্তরে জোলিকে ইউএনএইচসিআর শুভেচ্ছাদূত হিসেবে ভূষিত করা হয়
রূপালী পর্দার অন্তরালে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন প্রায় সময়ই গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার লাভ করেছে‘লারা ক্রফট্’ খ্যাত অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। অসম্ভব প্রতিভার মাধ্যমে তিনি যেমন পেশাগত দক্ষতা অর্জন করেছেন, তেমনি একসময় নিজেকে বিব্রতকরভাবে উপস্থাপনার কারণে প্রচুর সমালোচনারও সম্মুখিন হয়েছেন। ৩৮ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী টিনেজে মোটেও এমন ধীর-স্থীর প্রকৃতির ছিলেন না। বরং টিনেজার জোলি বন্য আচরণের কারণে একসময় সবার কাছে ব্যাডগার্ল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন।
‘ফক্সফায়ার’ ছবির সহঅভিনেত্রী জেনি সিমিজুর সাথে লেসবিয়ান সম্পর্কেও জড়িয়েছিলেন জোলি। সেইসাথে নিজের সমকামিতা নিয়ে খোলামেলা প্রচারণা আর মন্তব্যও করেছেন মিডিয়ার সামনে। অকপটে স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি জেনিকেই বিয়ে করতেন যদি তিনি বিবাহিত না হতেন। সেসময় জোলি তার প্রথম স্বামী জনি লি মিলারের ঘর করছিলেন। ২০০০ সালে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের মঞ্চে আপন ভাই অভিনেতা জেমস্ হেভেনকে আবেগের সাথে জোলির চুম্বন করা নিয়ে জল ঘোলাও হয়েছে অনেক।
অস্কার জয়ী সেই অ্যাঞ্জেলিনা জোলি এখন ছন্দময় জীবনের বাসিন্দা।
ব্যক্তিগত জীবনে জোলি দুইবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। প্রথমবার অভিনেতা জনি লি মিলার ও দ্বিতীয়বার বিলি বব থর্নটনের সাথে। পরবর্তীতে উভয়ের সাথেই তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। ২০০৫ সাল থেকে জোলি আরেক খ্যাতিমান মার্কিন অভিনেতা ব্র্যাড পিটের সাথে দাম্পত্যসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন।
যদিও দীর্ঘ কালব্যাপী এধরণের সম্পর্ক বজায় রাখাসত্বেও অদ্যাবধি তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হননি। জোলি-পিট যুগলের এধরণের বিবাহবহির্ভূত দাম্পত্য সম্পর্ক বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোতে বারংবার আলোচিত হয়েছে। প্রসঙ্গত, পালক এবং নিজের মিলিয়ে ছয় সন্তানের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ও তাঁর হবু বর ব্র্যাড পিট। বর্তমানে তাঁদের ছয় সন্তান; ম্যাডক্স (১২ বছর), প্যাক্স (৯ বছর), জাহারা (৮ বছর), শিলোহ (৭ বছর), নক্স (৫ বছর) এবং ভিভিয়েনস (৫ বছর)। ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে জানা গেছে ব্র্যাড পিট ও অ্যাঞ্জেলিনা জোলির ঘরে নতুন অতিথি আসছে।
তবে এখনই তিনি তার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবরটি জনসমক্ষে আনতে চান না। যত দিন সম্ভব বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন ‘ট্রু ওমেন’খ্যাত ৩৮ বছর বয়সী এ অভিনেত্রী। তিনি এই মুহূর্তে ছয় সন্তানের ওপরই তাঁর পুরো মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছেন, আর নতুন অতিথির আগমনকে ঘিরে তাদের প্রস্তুত করার চেষ্টা নিচ্ছেন।
অস্কার জয়ী ব্যাড গার্ল খ্যাত অ্যাঞ্জেলিনা জোলি এখন ছন্দময় জীবনের বাসিন্দা। বিভিন্ন সমাজসেবী প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়ে নিজের অন্ধকারাচ্ছ্বন্ন অতীতকে মুছে ফেলেছেন।
ডানপিটে মেয়েটিই এখন বেশ সংসারি হয়ে উঠেছেন। নিজেকে মা হিসেবে পরিচয় দিতে ভীষন স্বাচ্ছ্বন্দ্যবোধ করেন তিনি। খুব শিগগিরই সন্তানদের ইচ্ছেকে সম্মান জানাতে জোলি তার পার্টনার এবং সন্তানদের বাবা ব্র্যাড পিটকে নিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে যাচ্ছেন। এক সময়কার বিশ্বের সেরা সুন্দরী অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলির ৩৮তম জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।