কি জানি_______ আলী ইদ্রিস: ক্ষমতা নাকি মানুষকে অন্ধ করে দেয়। সে অন্ধত্বের অর্থ ছলে বলে কৌশলে অর্থাৎ যে কোন উপায়ে দৃষ্টিকে ঢেকে রেখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার এবং সীমাহীন অর্থ-বিত্ত কুক্ষিগত করার প্রচেষ্টা। আধুনিক একজন রাষ্ট্র্রপ্রধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দখলের সঙ্গে সঙ্গে সর্বাধিক বেতন ভাতা, শহরের সবচেয়ে বিলাসবহুল বাড়ি, সর্বাধুনিক আরাম ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ গাড়ি ইত্যাদি ভোগ করে থাকেন। দেশ-বিদেশের ব্যাংকে বিরাট অংকের ব্যালেন্স, সমুদ্র তীরে, পাহাড়ের চূড়ায় তার অবকাশ যাপনের জন্য চাকচিক্যময় বিলাসবহুল বাংলো, গাড়ি ও চাকর-বাকর মজুদ থাকে। নিজস্ব বিমানে তিনি পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে উড়ে বেড়ান।
গৃহহীন, ক্ষুধার্ত, শীতার্তদের দিকে ফিরে তাকানোর সময় বা সুযোগ তার থাকে না। কিন্তু উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট হোসে মুজিকা একজন ব্যতিক্রমী রাষ্ট্রনায়ক। প্রেসিডেন্ট হয়েও তার স্ত্রীর জরাজীর্ণ একটি বাড়িতে তিনি দিন কাটান। বাড়ির সামনের আঙিনায় ভেজা কাপড় শুকাতে দেয়া হয়, পুরো আঙিনা জুড়ে আগাছা। সে আঙিনায় আছে একটি পুরনো পানির কূপ, কূপ থেকে রশিবাঁধা পাত্র দিয়ে পানি তুলে সে পানি গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা হয়।
বাড়িটি রাজধানীর বাইরে একটি অখ্যাত রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে আছে। নিরাপত্তার জন্য তিনি মাত্র দুজন পুলিশ কর্মকর্তাকে পাহারায় রেখেছেন। তৃতীয় পাহারাদার তার তিন পাওয়ালা কুকুর ম্যানুয়েলা। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে যে রাষ্ট্রীয় বিলাসবহুল আধুনিক বাড়ি এবং সর্বাধুনিক গাড়ি দেয়া হয়, তিনি তা ব্যবহার করেননি। তিনি উঠেন স্ত্রীর নিজস্ব খামার বাড়িতে এবং চড়েন একটি পুরাতন ভক্সওয়াগন গাড়ি।
বাড়িতে কোন চাকর বাকর নেই। স্বামী-স্ত্রী নিজেই গৃহস্থালি কাজ করেন। এমনকি নিজেরাই আঙিনায় ফুল, ফল সবজির চাষ করেন। ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাতি হওয়ার আগে মুজিকা ১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দশকে উরুগুয়ের গেরিলা বাহিনী তুপামারোসের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। কিউবার বিপ্লবে অনুপ্রাণিত হয়ে বামপন্থী এ গেরিলা সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
গেরিলা জীবনে তিনি দু’বার গুলিবদ্ধ হন, ১৪ বছর কারাগারে কাটান। ১৯৮৫ সালে দেশে গণতন্ত্র ফিরে এলে তার কারা জীবনের অবসান ঘটে। প্রথম দিকে তিনি নিজের বাইক চালিয়ে পার্লামেন্টে আসা-যাওয়া করতেন। পরে তার ১৯৮৭ মডেলের ভক্সওয়াগন গাড়িটি চালিয়ে অফিস করেন। তার ব্যক্তিগত সম্পদের মধ্যে একটি গাড়িই শুধু আছে।
খামার বাড়ি তার স্ত্রীর মালিকানায়। তার মাসিক বেতন ১২,৫০০ মার্কিন ডলার থেকে ১২৫০ ডলার নিজের জন্য রেখে বাকি ৯০% দুঃস্থদের জন্য স্থানীয় এনজিও, দাতব্য সংস্থাগুলোর মাধ্যমে দরিদ্রদের মধ্যে বিলিয়ে দেন। তিনি বলেন, বিশ্বের মানুষ আমাকে দরিদ্রতম প্রেসিডেন্ট বললেও আমি দরিদ্র নই। যারা বেশি চায় কিন্তু পায় না, তারাই দরিদ্র। শীতকালে গৃহহীনরা যখন আশ্রয় পায় না তখন রাষ্ট্রের দেয়া প্রেসিডেন্ট হাউজটি তিনি তাদের বসবাসের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।
কি মহানুভবতা। তার স্ত্রীও একজন মহতী মহিলা। তিনি তার খামারের আয় দরিদ্রের কল্যাণে বিলিয়ে দেন। মুজিকা বলেন, দরিদ্র তারাই যারা ভোগ বিলাসের জন্য কাজ করেন এবং বলে বেড়ান আরও চাই আরও চাই। এটা ইচ্ছার ব্যাপার, আপনার অনেক সম্পদ না থাকলে তা রক্ষার জন্য আপনাকে জীবনভর ক্রীতদাসের মতো খাটতে হবে না, আপনি ভাল কাজ করার প্রচুর সময় পাবেন।
“অর্ধ পৃথিবী শাসন করেছ ধুলার তখতে বসি/ খর্জুর পাতার ছাউনি তোমার বার বার গেছে খসি” কবি নজরুল ইসলাম রচিত হযরত উমর (রা.) এর মহানুভবতার কাহিনী মুজিকা স্মরণ করিয়ে দেন। লম্বা ভাষণ দিয়ে মানুষ বড় হতে পারে না, কর্ম দিয়েই বড় হয়। মুজিকার পায়ের ধুলোর সমানও নন আজকালকার রাষ্ট্রনায়ক বা জন-প্রতিনিধিগণ। আরও চাই আরও চাই নামক দুরারোগ্য মনের পীড়া তাদেরকে দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, লুটেরাতে পরিণত করেছে। “রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি” বাক্যটি আজ তাদের বেলায় অধিক প্রযোজ্য।
মুজিকার মতো প্রেসিডেন্ট পেয়ে উরুগুয়েবাসী ধন্য, ওরা ভাগ্যবান। আমাদের কি সে ভাগ্য হবে। মুজিকার মতো দু’চার জন জননেতা বা রাষ্ট্রনায়ক আবির্ভূত হলে এদেশ উন্নতির শিখরে উঠে যেত। আমরা স্বপ্ন দেখতে পারি কিন্তু বাস্তবে পাবো বলে মনে হয় না
সুত্র মানব জমিন Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।