নো ওয়ান ক্যান মেক মি ফিল ইনফেরিওর উইদআউট মাই কনসেন্ট! আগামীকাল ইডেন গার্ডেনসে খেলতে নামছে টেন্ডুলকার, তবে পরিস্থিতি এবার ভীষন নাজুক। সম্ভবত তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময় কাটছে এখন; টানা অনেকগুলা টেস্টেই সে ব্যর্থ, সবাই আঙ্গুল তাক করে বলছে - ‘তুমি বুড়ো হয়ে গেছো’। আসলে এটাই মূল সমস্যা, তার বয়সটাও আর কামব্যাক করার উপযোগী অবস্থায় নাই। এছাড়া রিকি পন্টিং-এর সাম্প্রতিক অবসর গ্রহনের কারনেও তার উপর চাপ খুব বেড়ে গেছে। তাই ইডেনের টেস্টে যদি সে ব্যর্থ হয়, পরিস্থিতি এমনো হতে পারে যে, হয়তো সম্মানজনকভাবে অবসর গ্রহন করা আর সম্ভব না-ও হতে পারে! কিন্তু আমি সেটা চাই না, সম্ভবত তার শত্রুও সেটা চায় না; এত বড় মাপের একজন ব্যাটসম্যান যেন রানের মধ্যে থেকেই গর্বিত কন্ঠে অবসরে যাওয়ার ঘোষনা দিতে পারে, সেটাই সবার কাম্য।
কিন্তু টেন্ডুলকারের ব্যাট আর হাসছেই না, আর পাবলিকও নিশ্চয়ই অনন্তকাল ধরে অপেক্ষা করবে না। সুতরাং টেন্ডুলকারের জন্য পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে এমন - ‘হয় এখন, নয়তো কখনোই নয়’। তাই ইডেন গার্ডেনসে রানের দেখা তাকে পেতেই হবে, তা যতই পরিস্থিতি নাজুক হোক; একটা সেঞ্চুরী তাকে করতেই হবে, তা যতই চাপ থাকুক। তাই আমিসহ সারাবিশ্বের ক্রিকেটানুরাগীদের মনে এখন একটাই প্রশ্ন - টেন্ডুলকার কি পারবে?
ইডেন গার্ডেনসে টেন্ডুলকারের টেস্ট ব্যাটিং ইতিহাস কিন্তু অতটা সমৃদ্ধ নয় - ১১টি টেস্টে মাত্র ২টা সেঞ্চুরী; তন্মধ্যে ২০০২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরীটির কথাই উল্লেখ করার মতো। ১৩৯ রানে পিছিয়ে থেকে ভারত দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে এবং ৮৭ রানেই ৪ উইকেট (গাঙ্গুলী, দ্রাবিড়, শেওয়াগ সহ) খুইয়ে শুরুতেই বিপদে পড়ে যায়।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে শচীনের ভেঙ্গে পড়ার ইতিহাস বেশ কটুভাবেই লক্ষ্যনীয়, তাই ভারত ম্যাচ বাঁচাতে পারবে না দৃশ্যত তাই প্রতীয়মান হচ্ছিল। কিন্তু সবার ভুল ভেঙ্গে দিয়ে শচীন রুখে দাঁড়ায়, সাথে থাকে ইডেনের আরেক বরপুত্র ভিভিএস লক্ষন। শচীনের এই ১৭৬ রানের (২৯৮ বল) মাধ্যমে ভারত ম্যাচটিকে পরিশেষে ড্র করতে সক্ষম হয়। ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কারও তাকেই দেয়া হয়।
অবশ্য বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার মনে ভিন্ন আরেকটা প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি মারছেঃ ইডেন গার্ডেনস আসলে কি চায়?
প্রশ্নটা আপাত দৃষ্টিতে বেকুব টাইপের মনে হলেও এই পরিস্থিতিতে আমার মাথায় কেবল এই প্রশ্নটাই খেলা করছে! কেন সেটা বলতে গেলে টেনে আনতে হবে টেন্ডুলকারের সাবেক দুই সতীর্থের ইতিহাসঃ
'প্রিন্স অফ ক্যালকাট্টা' সৌরভ গাঙ্গুলীর কথাই ধরা যাক।
প্রথমেই চলে আসে ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই এপিক কাম-ব্যাকের গল্প। এটা ছিল গাঙ্গুলীর অধিনায়কত্বে ভারতের তৃতীয় টেস্ট সিরিজ। এর আগের দুইটি সিরিজ ছিল দূর্বল দলের বিরুদ্ধেঃ বাংলাদেশের বিপক্ষে এক টেস্টের সিরিজ (বাংলাদেশের ডেব্যু টেস্ট), এবং স্বদেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দুই টেস্টের সিরিজ। দুইটি সিরিজেই ভারত ১-০ ব্যবধানে জয়ী হলেও ভারতের পারফরমেন্স কিন্তু কনভিন্সিং ছিল না। উপরন্তু জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় টেস্টটি ড্র করতে সমর্থ হয় দ্বিতীয় ইনিংসে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের ডাবল সেঞ্চুরীর কল্যানে।
তাই প্রচন্ড শক্তিধর অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এই সিরিজটি ছিল গাঙ্গুলীর জন্যে চরম পরীক্ষা। কিন্তু প্রথম টেস্টেই ১০ উইকেটের পরাজয় তার অধিনায়কত্বকে সত্যিকার অর্থেই প্রশ্নের সম্মুখীন করে তোলে। তাই ইডেনে গাঙ্গুলীর অগ্নিপরীক্ষামূলক দ্বিতীয় টেস্টে ভারত যখন ফলো-অনে পড়ে, তখন অনেকের মনেই আশংকা জেগে উঠে যে, এই টেস্টে তো গো-হারা হারবেই, তৃতীয় টেস্টেও ভারত হেরে যাবে। আর এভাবে নিজ ভূমিতে হোয়াইট ওয়াশ হলে গাঙ্গুলীর উপর নির্বাচকগন আর আস্থা রাখবেন না এটা একপ্রকার সুনিশ্চিত।
কিন্তু ইডেন বলে কথা! লক্ষন (২৮১) ও দ্রাবিড়ের (১৮০) সেই অনবদ্য লড়াকু জুটিটি টেস্ট ইতিহাসে খুবই বিরল।
আর মজার ব্যাপার হচ্ছে, সবাই যখন নিশ্চিত যে ভারত টেস্টটি ড্র করতে সক্ষম হয়েছে, সে সময় হরভজন সিং-য়ের ভেলকিতে অস্ট্রেলিয়ার বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানরা ৭০ ওভারের মধ্যেই অলআউট! ইতিহাসে তৃতীয়বারের ন্যায় কোন দল ফলো-অন করেও ম্যাচ জিতে গেল। আরো উল্লেখ্য, এই পরাজয়ের ধারাবাহিকতায় তৃতীয় টেস্টেও অজিদের পরাজয় ঘটে, যদিও সিরিজের সবচেয়ে আকর্ষনীয় ও হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ হয়েছিল সেটি। মাত্র দুই উইকেটের ওই বিজয় গাঙ্গুলীকে একই সাথে দিয়েছিল সিরিজ এবং লঙ টার্ম ক্যাপ্টেনসি।
আর শুধু এখানেই শেষ নয়, ইডেনে গাঙ্গুলীর আরেকটি কাহিনী আছে। ২০০৭ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট।
ক্যাপ্টেনসি হারিয়েছে আগেই, উপরন্তু শেষ ৭টি টেস্টে মাত্র একটি হাফ-সেঞ্চুরীর কারনে একাদশে তার অন্তর্ভুক্তি প্রশ্নসাপেক্ষ। আবার এদিকে ইন-ফর্ম যুবরাজ সিং জায়গা পাচ্ছে না একাদশে, সেই চাপ-ও আছে। তাই এই টেস্টে ব্যর্থতার অর্থ হচ্ছে ‘গাঙ্গুলী আউট, যুবরাজ ইন’! দর্শকদের প্রবল উৎসাহ ও হর্ষোধ্বনির মধ্য দিয়ে গাঙ্গুলী যখন ব্যাট করছে, ইতিহাসও তার বিরুদ্ধে! কেননা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, নিজের এই প্রিয় হোমগ্রাউন্ডে তখনো পর্যন্ত সে কোন টেস্ট সেঞ্চুরীর দেখা পায় নি। কিন্তু সব ইতিহাস ও চাপ পেছনে ফেলে ইডেনে তার একমাত্র সেঞ্চুরীটি (১০২) করে সকল সমালোচনার অবসান ঘটায় গাঙ্গুলী। এই ঘটনাকেও আমি ইডেন গার্ডেনসের আশীর্বাদের আরেকটি নিদর্শন বলেই চিহ্নিত করে এসেছি সবসময়।
(বাকী অংশ কালকে দিবো ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।