শচীন টেন্ডুলকার ভারতীয়দের কাছে যে কী, সেটা একটা উদাহরণ দিলেই স্পষ্ট হবে।
এক আড্ডায় কথা হচ্ছিল ক্রিকেট নিয়ে। কথা প্রসঙ্গে এলো শোয়েব আখতারের কথা। এবং অবশ্যই কলকাতা টেস্টে তার বিখ্যাত ব্যাক টু ব্যাক ইয়র্কারে রাহুল দ্রাবিড় এবং টেন্ডুলকারের স্ট্...যাম্প এলোমেলো করে দেয়ার কথা।
এক ভারতীয় বন্ধু বলে উঠলো, "রাহুলেরটা জানিনা, তবে শচীন ইচ্ছে করেই আউট হয়েছিল।
"
আমার চোয়াল ঝুলে গেল। কয় কী ব্যাটা! ইচ্ছে করে কেউ গোল্ডেন ডাক পাড়ে নাকি?
"শচীন যে মানের ব্যাটসম্যান, ও ইচ্ছে না করলে ওকে শুন্য রানে আউট করা অসম্ভব। ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে ওকে আউট করাটাই অসম্ভব। ওতো সাধারণ ক্রিকেটার না, ও গড!"
কথাটা যদি মূর্খ কোন গ্রাম্য কবিরাজের মুখে শুনতাম, তাহলে অবাক হতাম না। আদিপ একজন সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার।
কম্পিউটারের জটিল জটিল প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ কোড সে মুখে মুখে বলে দিতে পারে। একটা সেমি কোলন পর্যন্ত বাদ যায় না।
এরা টেন্ডুলকারকে মহাভারতের ভীষ্ম পিতামহ বানিয়ে ছেড়েছে। ইচ্ছে ছাড়া যার মৃত্যু নেই!
আমি টেন্ডুলকারের পাড় সমর্থ্যক কখনই ছিলাম না। মূলত ভারতীয় ক্রিকেট দলেরই ভক্ত আমি নই।
তাছাড়া ও ছিল আমার প্রিয় ব্যাটসম্যান লারার সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী। শকুনের দোয়ায় গরু মরে না। আমার দোয়াতে মরলো। আমার দোয়ার জোরেই হয়তোবা টেন্ডুলকার বহুবার নার্ভাস নাইনটিজে আউট হয়েছে। আমি বাজি ধরতে পারি, ও শুন্য রানে আউট হলে, ওকে আউট করা বোলারের চেয়ে আমি আনন্দিত হতাম সবচেয়ে বেশি! ওকে দেখতে না পারার সবচেয়ে বড় কারনটাই ছিল তার ক্ষমতার প্রতি তীব্র ঈর্ষা! আমি দেখতাম কিভাবে নির্দয়, নিষ্ঠুরের মত আমার সব প্রিয় প্রিয় বোলারদের সে তুলোধুনো করতো! সাইদ আনোয়ার, মার্ক ওয়াহ, ব্রায়ান লারা, রিকি পন্টিং - তাঁর প্রতিযোগীরা একে একে ঝরে গেছে, কিন্তু সে টিকে রইলো মাথা উঁচু করে।
তাঁর একটা গুণ সবাইকে অবাক হতে বাধ্য করে। একটি দেশে দেবতার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েও এতো নিয়মানুবর্তি এবং পরিশ্রমী জীবন আমি কোন তারকার মধ্যে দেখিনি। কখনও তাঁকে প্র্যাকটিসে দেরী করে আসতে দেখা যায়না। ঘন্টার পর ঘন্টা প্র্যাকটিস পিচে ব্যাট চালিয়ে যায়। কথার বাড়াবাড়ি কোথাও নেই।
কারও প্রতি অশ্রদ্ধা নেই। চল্লিশ বছর বয়সেও শরীরকে ফিট রেখেছে তিরিশ বছর বয়সী এথলেটের মতো। ডেজার্ট ফক্স সেনানায়ক রোমেল যেমন তাঁর শত্রুদেরও শ্রদ্ধা আদায় করে নিতেন, টেন্ডুলকারও তাই। তাঁর শেষ ম্যাচে তাই মাঠে ছুটে যান লারা, ওয়াসিম আকরামের মতন চির শত্রুরা।
শেষবারের মতন একটা ম্যাজিক দেখার প্রত্যাশায় বুক বেঁধেছিলাম।
এই প্রথম টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরির জন্য দোয়া করেছিলাম। প্রমাণ পেলাম শকুনদের দোয়া সবসময়ে কবুল হয়না। সেটা কারও ভালোর জন্য হলেও। একটা অতি নিরীহ বলে খোঁচা দিতে গিয়ে আউট হয়ে গেলেন ক্রিকেট লেজেন্ড। প্রমাণ করে গেলেন, তিনি শচীন টেন্ডুলকার, ভীষ্ম পিতামহ নন।
তিনিও ভুল করেন। মানুষ বলেই সেটা করেন। এবং একারনেই তাঁকে অনেক উপরে স্থান দিতে হবে। মানুষ হবার পরেও দেবতাদের মত ক্ষমতা দেখিয়ে লড়ে গেছেন দীর্ঘ পঁচিশটা বছর!
লেখকের কলমের কালী একটা সময়ে ফুরিয়ে যায়। মহাকাব্যেরও সমাপ্তি ঘটে।
জোছনা ছড়ানো চাঁদকেও অস্ত যেতে হয়। শচীন টেন্ডুলকারকেও বিদায় তাই নিতে হচ্ছে। আমরা সৌভাগ্যবান যে, জ্ঞান হবার পর থেকে আমরা একজন লেজেন্ডকে তৈরী হতে দেখেছি। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে আমরা গর্বভরে বলতে পারবো যে, আমরা শচীন টেন্ডুলকারের খেলা দেখে বড় হয়েছি!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।