আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুক্তিযুদ্ধে ভারতের নিলজ্জ আচরন ও আগ্রাসনঃ এক মুক্তিযুদ্ধা (বীরপ্রতিকের) সত্য ইতিহাস উন্মোচন

মুক্তিযুদ্ধে ভারতের নিলজ্জ আচরন ও আগ্রাসনঃ এক মুক্তিযুদ্ধা (বীরপ্রতিকের) সত্য ইতিহাস উন্মোচন ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৩৩ | মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার এম হামিদুল্লাহ খান বীরপ্রতিকের সঙ্গে রেডিও তেহরান এর সাক্ষাৎকারটি উপস্থাপন করা হল। রেডিও তেহরান : তৎকালীন পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আপামর জনগণ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। তবে, যুদ্ধের শুরু থেকেই ভারত বিভিন্নভাবে বাংলাদেশকে সহায়তা করে এবং শেষ দিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিন ভারতের কাছেই পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পন করে। এ প্রেক্ষাপটে অনেকেই মনে করেন, পাকিস্তান ভাঙ্গার পেছনে ভারতের ইন্ধন ছিল এবং ভারত নিজের স্বার্থেই পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল।

এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন? এম. হামিদুল্লাহ খান : পাকিস্তান ভাঙার পেছনে এ রকম একটা বিষয় থাকা অস্বাভাবিক নয়। কারণ ভারত চিরকালই বলে এসেছে 'অখণ্ড ভারত মাতা'। আর সে কারণে ভারত বিভক্তির পর তাদের মধ্যে একটা সুপ্ত ক্ষোভ কাজ করছিল। বৃটিশ শাসন থেকে ভারত ভাগের সময় কংগ্রেস নেতা সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল বলেছিলেন, 'ভারতকে ব্রিটিশমুক্ত করার জন্য আমরা বিভক্তি মেনে নিচ্ছি। তবে পাকিস্তান নামক এই অবৈধ সন্তানটিকে গ্রাস করা আমাদের দশ মিনিটের কাজ।

' এর মাধ্যমে ভারতীয়দের ওই বক্তব্য বাস্তবায়নের একটা সুযোগও তৈরি হলো। পাকিস্তানীরা যখন আমাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করল তখন মানুষ ছুটাছুটি করে ভারতের দিকে পালাতে শুরু করল। আর ভারতীয়রা তাদেরকে আশ্রয় দিল এবং ভারত সরকার পুরোপুরি সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করল। তবে আমাদেরকে খুবই কষ্টের মধ্যে যুদ্ধ করতে হয়েছে। ভারতীয়রাও সেই সুযোগে আমাদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার করেছে এবং আমাদেরকে তা সহ্য করতে হয়েছে।

শুধু তাই নয়, শেষ দিকে আমাদেরকে সম্পূর্ণভাবে তাদের অধীন করে ফেলা হয়। তারপরও ভারতীয়রা সে সময় আমাদেরকে যে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে সে জন্য অবশ্যই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে। তবে, এ প্রসঙ্গে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কিছু আগে অর্থাৎ নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় ভারত একটি আদেশ জারি করে। সেই আদেশে বলা হয়, সমস্ত মুক্তিবাহিনী ভারতীয় বাহিনীর কমান্ডে থাকবে।

মুক্তিবাহিনী বলতে কোনো আলাদা বাহিনী থাকবে না। আর এটি ছিল ভারতের চাণক্য নীতির একটি অংশ। আমরা যে মুক্তিযুদ্ধে Participate করেছি এটাকে তারা পুরোপুরি সে সময় এবং আজ অবধি অস্বীকার করে আসছে। তারা ওই যুদ্ধকে বলে 'Indo-Pak War of 1971'. আমাদের যুদ্ধ করার ইতিহাস কোথাও উল্লেখ করা হয়নি, কোনো রেকর্ডে নেই। ফোর্ট উইলিয়ামে যে ছবি রাখা হয়েছে তাতে কোনো বাংলাদেশীর ছবি নেই।

কোথাও কোনো বাংলাদেশীর হাত দেখা গেলে তাও মুছে ফেলা হয়েছে। পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পনের দিন জেনারেল ওসমানী সাহেবকে ঢাকায় আসতে দেয়া হয়নি। সেকেন্ড ইন কমান্ড রব সাহেবকেও আসতে দেয়া হয়নি। সুতরাং এটাকে তারা তাদের সেই পলিসির অংশ হিসেবে নিয়েছে। এমনকি আজকাল যে যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেই যুদ্ধাপরাধীদের কিন্তু ভারতের পরামর্শে মাফ করে দেয়া হয়েছিল; শেখ সাহেবকে তাতে সই করতে হয়েছিল।

এছাড়া আরো একটি বিষয় আমি এখানে আনতে চাই। সেটি হচ্ছে, ৭ দফা গোলামীর যে চুক্তি সই করিয়েছিল ভারত- তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজ বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। বিডিআরকে শেষ করে দিয়ে, তাদের নাম নিশানা মুছে দিয়ে গর্বিত একটি বাহিনীকে আজ নাইট গার্ডে পরিণত করা হয়েছে। ১৯৯৬ সালে 'র' এর প্রধান ডি রাবন বলেছিলেন, 'বিডিআর একটি ভয়ংকর বাহিনী। আর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভয়ানক ক্ষতিকারক একটি ফোর্স।

এগুলোকে রেখে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে ভারত শান্তিপূর্ণভাবে তাদের শাসন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। ' রেডিও তেহরান : স্বাধীন বাংলাদেশের সাথে ভারত, পাকিস্তান এবং অন্যান্য মুসলিম দেশের সাথে বর্তমান সম্পর্ককে কিভাবে দেখছেন? এম. হামিদুল্লাহ খান : দেখুন, স্বাধীন বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তান এবং অন্যান্য মুসলিম দেশ বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে যে সম্পর্ক তা কিন্তু বিষ্মিত হওয়ার মত। সব শ্রেণীর মানুষের কাছে ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কতগুলো বিষয়ে মারাত্মক খটকা লেগে যাবে। এ প্রসঙ্গে আমি বলতে চাই- সরকার বাংলাদেশের সংবিধান থেকে যদি 'বিসমিল্লাহ' তুলে দিয়ে ভারত প্রীতির কারণে বা অন্য কোন বিশেষ কারণে ধর্মনিরপেক্ষতা এনে শাখা সিঁদুর ও উলুধ্বনি দেয়া এসব সংস্কৃতি বা নীতি আনতে চায় তাহলে দেশের সংখ্যাগুরু মুসলিম জনগোষ্ঠী সে বিষয়টি মেনে নেবে না। অথচ সে রকম একটা চেষ্টা করা হচ্ছে।

আমাদের নিজস্ব ধর্মীয় সংস্কৃতি- ঈমান আকিদা, শুক্রবারে জুমা নামাজ আদায় করা- সবার সাথে মেলামেশা বা মোলাকাত করা এসব ত্যাগ করে আমরা যদি তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদে ফিরে যাই-তাহলে সেটি কি ঠিক হবে আমাদের জন্য? আজ আমাদের এখানে যে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয় এবং ভারতীয় সংস্কৃতি প্রীতির কথা বলা হয়- সেক্ষেত্রে আমি বলব- ভারত নিজেও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র নয়। তারা এ কথাও বলে না যে আমরা ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র আবার এ কথাও বলে না যে, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। তবে তারা সব নাগরিকের সমান অধিকারের কথা বলে, আমরাও আমাদের দেশে সব নাগরিকের সমান অধিকারে বিশ্বাসী। তাহলে কেন এবং কাদের পরামর্শে এত চেঁচামেচি করে সংবিধান পরিবর্তন করে ধর্মনিরপেক্ষতা আনব এবং শাখা সিঁদুর পরাবো নিজেদের মেয়েদের ? ভারতীয় মেয়েদেরকে দিয়ে গভীর রাতে নাচানো- এসব আমাদের সংস্কৃতি নয়। তাছাড়া শহীদ মিনারে নাচের মহড়া দেয়া, থার্টি ফাস্ট নাইটে অশ্লীল কর্মকাণ্ড- এসবকে আমি সমর্থন করি না।

সুতরাং- আমি আমার দৃষ্টিকোণ থেকে মনে করি, ভারত চায় বাংলাদেশে একটা খোলামেলা সমাজ হোক-এখানে গোয়া বা ব্যাংককের মত অবস্থার সৃষ্টি হোক এবং সেটাই হচ্ছে। তবে আমি এটাকে ঠিক বলে মনে করি না। আমাদের মেয়েদেরকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা এবং ভারত কিংবা পশ্চিমাদের মত উলঙ্গ করা হবে- এটাকে সমর্থন করি না। কিন্তু বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ রকমই একটা চিত্র এবং নতজানু বিষয় দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে অন্যান্য মুসলিম দেশের সাথে সম্পর্ক প্রায় শুন্য অবস্থানে; বর্তমানে বিষয়টি বেশ জটিল ।

রেডিও তেহরান : স্বাধীনতার চেতনা বলে একটি কথা সব জায়গায়ই তোলা হচ্ছে। এই চেতনা বলতে একটি মহল ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ থেকে দূরে থাকাকেই বুঝাবার চেষ্টা করে। স্বাধীনতার চেতনা বলতে আপনি কি মনে করেন ? এম. হামিদুল্লাহ খান : দেখুন, স্বাধীনতার চেতনার প্রসঙ্গটি যখন আনলেন তখন এ সম্পর্কে আমি কি মনে করি সে কথা বলার আগে ওরা অর্থাৎ বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার কি মনে করে সে সম্পর্কে একটু আলোকপাত করতে চাই। তারা মনে করে স্বাধীনতার চেতনা বলতে আমরা ভারতভুক্ত হয়ে যাই। আর তা হলেই স্বাধীনতার চেতনা সফল।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের এমপি মোহায়মেন সাহেবের লেখা বই আছে, দিল্লি থেকে প্রকাশিত বসন্ত কুমার চ্যাটার্জীর 'The Inside Bangladesh Today' নামের বই আছে। সেখানে বাংলাদেশের অনেক তথাকথিত বুদ্ধিজীবী যারা বুদ্ধি বিক্রি করে খায়-তাদের ভাষ্যমতে, সংবিধানের ৩৭১ ধারায় একটি উপধারা সংযোজন করে বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গ করে ফেললেই তারা নিরাপদ বোধ করে। ওই বইয়ে ঠিক এভাবে লেখা আছে। তো আমরা যদি ভারতভুক্তির পক্ষে কথা বলি, ভারতের পক্ষে কথা বলি তাহলে আমরা ঠিক আছি এবং স্বাধীনতার চেতনার পক্ষে। ভারত পানি নিয়ে যাক আর আমরা পানি অভাবে মরে যাই; তারা টিপাইমুখে বাঁধ করুক, তিস্তার পানি নিয়ে যাক, চট্টগ্রাম পোর্ট; মংলা পোর্ট তাদের হয়ে যাক- সেটাও ঠিক আছে, বিনাশুল্কে করিডোর পেয়ে গেল- তাতেও কোন অসুবিধা নেই-তবে এসবের বিরুদ্ধে গেলেই তারা স্বাধীনতা বিরোধী এবং স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী।

দেখুন, আড়াই/তিনশ' বছর ধরে আমরা যুদ্ধ করেছি সংগ্রাম করেছি এ জন্যে নয় যে, ব্রাহ্মণ্যবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ব, আকণ্ঠ নিমিজ্জত হব। আমরা যুদ্ধ করেছি- আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি সভ্যতা, ধর্ম-কর্ম, ঈমান আকিদা, নীতি আদর্শকে বাস্তবায়ন করব বলে। আমাদের দেশের চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা দেশের নতুন প্রজন্মকে সৎ সুস্থ ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল। আমাদের মেয়েরা শাখা সিঁদুর ব্যবহার করবে, উলঙ্গপনা করবে এমনটি আমরা চাই না- আর এটিই হচ্ছে আমার স্বাধীনতার চেতনা। .।

.। .। .। .। .।

.। .। .। .। .।

.। .। .। .। .।

.। .। .। .। .।

.। .। .। .। .।

.। .। .। .। .।

.। .। .। .। শেষে বলতে চাই ১টা মেয়েকে (বাংলাদেশ) ১ ধর্ষকের (পাকিস্তান) হাত থেকে বাঁচিয়ে নায়ক বনে যাওয়া পুরুষটি (ভারত) যদি নিজেই পরে সেই ধর্ষণ করে তাহলে ফলাফল কি ? নিচের লিঙ্কে দেখেন আরও আছে ____ Click This Link   প্রসঙ্গঃ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চার নামে নির্লজ্জভাবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস বিকৃতকরণ ১৭ ই জুলাই, ২০১২ সকাল ৮:৩৪ | শেয়ারঃ 138 2 বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, ৫২'র ভাষা আন্দোলন, ৭১'এর মুক্তিযুদ্ধ সহ ৬৯ এর গনুভ্যুত্থান-৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ইত্যাদি জনযুদ্ধ ও জনমানুষের সংগ্রামে একটা বিষয় স্পষ্ট করে অনুধাবন করা অত্যাবশ্যক যে, আমরা যারা শাসক শ্রেনীর শোষন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এই জয়লাভ করেছিলাম, আমরা ক্ষমতা লাভের পরে ঠিক একই কাজটি যেন অন্যদের সাথে না করি।

৫২'র ভাষা আন্দোলনের যেই চেতনা প্রচার করা হয়, যে বাঙালির উপরে উর্দুভাষাভাষীদের আগ্রাসন, আমি এই ধারণার সাথে একমত নই। আমার চোখে ৫২ ভাষা আন্দোলন হচ্ছে পৃথিবীর সকল ভাষাভাষীর মাতৃভাষার অধিকারের আন্দোলন, মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ, জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার অধিকারের আন্দোলন। এটা শুধু বাঙালির সাথে পাকিস্তানীদের দ্বন্দ্ব নয়, এটা পৃথিবীর সকল ভাষাভাষীর জন্য একটি উদাহরণ। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যেই চেতনা প্রচার করা হয়, যে বাঙালির উপরে পাকিস্তানীদের শোষন-বঞ্চনা-অত্যাচার-জাতিগতবিদ্বেষ, আমি এই ধারণার সাথেও একমত নই। আমার কাছে ৭১ এর চেতনা হচ্ছে একদল নিপীড়িত শোষিত মানুষের উপরে একদল শোষকের অত্যাচার, এবং শোষিত মানুষের অস্ত্র হাতে নিজেদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম।

এই চেতনা শুধু বাঙালির নয়, স্পার্টাকার্স থেকে শুরু করে পৃথিবীর যত দেশে মানুষ যুগে যুগে নির্যাতিত হয়ে ফুঁসে উঠেছে, এটা মানব সভ্যতার সেই বিপ্লবী চেতনার বাঙলাদেশের চিত্র। এখানে সমস্যা হচ্ছে, ৫২, ৭১ এর চেতনা যখনই একটি জাতিগোষ্ঠীর সীমাবদ্ধ চেতনা হয়ে ওঠে, তখন সেই জাতিগোষ্ঠীটি হয়তো নিজেদের শাসনের অধিকার পায়, কিন্তু অধিকার পেয়েই তারা অন্যের সাথেও ঠিক একই কাজ করে, যা তাদের উপরে করা হয়েছিল। যেমন ৫২'র ভাষা আন্দোলন এবং ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের পরে আমাদের কর্তব্য ছিল ৫২,৭১ এর চেতনাকে সীমাবদ্ধ জাতিগত দৃষ্টিভঙ্গীতে না দেখে, ইতিহাসকে মনে রেখে, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে এদেশের আদিবাসীদের সাথে সেই আচরণ না করা যা আমাদের সাথে করা হয়েছিল। অথবা হিন্দুদের সহ সংখ্যালঘুদের সাথে একই আচরণ না করা যেটা পাকিস্তানী সরকার করেছিল। অথবা শাসক শ্রেনীর সেই ধরণের আচরণ না করা যা পাকিস্তানী শাসকেরা জনগনের সাথে করেছিল।

সত্যিকার অর্থে শাসক যখন নির্যাতকে পরিণত হয়, সেটা পাকিস্তানী হলেও সাধারণ জনগনের কিছু যায় আসে না, নিজের দেশের হলেও কিছু যায় আসে না। ৭১ এ বাঙলাদেশ স্বাধীন হবার পরে প্রথমত পাহাড়িদের বাঙালি হয়ে যাবার উপদেশ দিলেন খোদ শেখ মুজিব, যেটা ছিল সীমাহীন মুর্খতার পরিচয়। শত্রুসম্পত্তি আইনের পরিবর্তে করা হলো অর্পিত সম্পত্তি আইন এবং লুটপাট করা শুরু হলো হিন্দুদের জায়গা জমি। আজও "রাজধানী সুপার মার্কেট" সহ ওয়ারীর শত শত বাড়ি ঘর আওয়ামী লীগের অত্যাচারের প্রমাণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এবং এসবই করা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নাম দিয়ে।

মুক্তিযুদ্ধ কল্যান ট্রাস্টের নামে দখলে নেয়া হয়েছিল হিন্দুদের অসংখ্য বাড়িঘর, কলকারখানা। শুধু তাই নয়, পাকিস্তান সরকার মানুষের বাক-স্বাধীনতার উপরে এতটা হস্তক্ষেপ করেনি যতটা করেছিল শেখ মুজিব সরকার। কিছু চীনপন্থী বামের দোহাই দিয়ে বহু বামপন্থী মুক্তিযোদ্ধাকে এই সময়ে হত্যা করা হয়েছিল, কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর দেশের শান্তি শৃংখলা রক্ষা। রক্ষীবাহিনীকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল সীমাহীন লুটপাটের জন্য, তাদের আইন করে ইনডেমনিটিও দিয়ে দেয়া হয়েছিল, যে তাদের কোন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। কি নির্মম পরিহাস, একাত্তরের রাজাকার, আল বদর আল শামসদের "সাধারণ ক্ষমা"র ঘোষনা দেয়া হলো, অথচ শেখ মুজিব বললেন, "নকশাল দেখা মাত্রই গুলি কর"; ৭১ এর গনহত্যার অন্যতম নায়ক ভুট্টোকে ঢাকায় লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়ে গালে চুমু দিয়ে বরণ করলেন, আর বামপন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের খুন করে জনসভায় হুংকার করে বললেন, " ‘লাল ঘোড়া দাবড়িয়ে দেব!" সিরাজ সিকদারকে বিচার বহির্ভুতভাবে হত্যা করে চিৎকার করে বললেন, "কোথায় আজ সিরাজ সিকদার"; বামদের জন্য কোন বিচারের বালাই নেই, কার কি অপরাধ যাচাই বাছাইয়ের প্রয়োজন নেই, ধরো আর হত্যা করো!!! ৭১ এর গনহত্যার অন্যতম হোতা ভুট্টোকে ঢাকায় লাল গালিচা সংবর্ধনা দেন শেখ মুজিব সেসময়ে হোটেন ইন্টারকন্টিনেন্টালে আওয়ামী লীগ আর সদ্য আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়া ধনিক শ্রেনী নিয়মিত শরাবের আড্ডা বসাতো, অন্যদিকে দেশে চলছিল দুর্ভিক্ষ।

অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরী সেই সময়ে বলেছিলেন, "২২ পরিবারের বদলে ২২শ’ পরিবারের জন্ম দিয়েছে শেখ মুজিবের সরকার"; মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম "বঙ্গবন্ধু" উপাধি প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, "সংবাদপত্র বেতার টিভিতে বঙ্গবন্ধু কিংবা জাতির পিতা ইত্যাদি উপাধি ব্যবহার করা যাবে না"; তিনি ও মতিয়া চৌধুরী শেখ মুজিবকে দেয়া ডাকসুর আজীবন সদস্যপদও ছিঁড়ে কুটিকুটি করে ফেলেন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর নায়ক মেজর জলিল বলেছিলেন, "আমি তাকে জাতির পিতা বলতে ঘৃণা বোধ করি। " এসব শুনে ছাত্রলীগের নেতারা বলেছিল, "যেসব পত্রিকা বঙ্গবন্ধুর নামের পূর্ণ মর্যাদা দেবে না, সংগ্রামী জনতা বাংলার মাটিতে সেই পত্রিকার অস্তিত্ব রাখবে না। " বাঙলাদেশের প্রথম বিচারবহির্ভুত হত্যা, প্রথম মুক্তিযোদ্ধা হত্যা, হত্যা লুন্ঠনের প্রথম রক্ষীবাহিনীকে দেয়া ইনডেমনিটি আইন, প্রথম সংবাদপত্রের মুখ বন্ধ করে দেয়া, প্রথম ইতিহাস বিকৃতিকরণের মাধ্যমে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিব ছাড়া সকলের অংশগ্রহণকে তাচ্ছিল্যকরণ, সবকিছুর স্রষ্টাই ছিল স্বয়ং শেখ মুজিব এবং আওয়ামী লীগ। ঘৃণিত রক্ষীবাহিনীর কর্মকান্ডকে এখন অনেকেই জামাত শিবিরের মিথ্যা প্রপাগান্ডা বলে চালানোর চেষ্টা করছে, এবং মুজিব সরকারের অপকর্মের কথা তুললেই তাকে জামাত শিবির বানিয়ে ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করছে কিছু আওয়ামী পেইড দালাল বাহিনী।

কিন্তু জবাইয়ের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া সাইফুল ইসলামের জবানবন্দী এখনো ইতিহাসে আছে, অরুণা সেনের কথা এখনো ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা যায় নি। আর ঐ আওয়ামী সরকারের ব্যার্থ শাসনামলের ফলস্রুতিতে দ্বিতীয় প্রজন্মের আওয়ামী লীগ তথা বিএনপি একই কাজ আরো কুৎসিতভাবে করে দেখিয়েছিল। এই ধারাবাহিকতা চলেই আসছে। পাকিস্তান সরকার আমাদের উপরে লেলিয়ে দিয়েছিল তাদের সেনাবাহিনী, আমাদের নিজেদের দেশের নিজেদের নির্বাচিত সরকারই আমাদের উপরে লেলিয়ে দিয়েছিল একটা বাহিনীকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই জনগন যে মুক্তিযুদ্ধ এবং বাঙলাদেশের উপরে বীতশ্রদ্ধ হবে, সেটাই স্বাভাবিক। মূলত মুক্তিযুদ্ধ করেছিল এদেশের খেটে খাওয়া মানুষেরা।

তারা যেই অত্যাচার নিপীড়ণের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের পরে তারা দেখতে পেল একই জিনিস ঘুরে চলে এসেছে, আর এর সুযোগ খুব ভালভাবেই নিতে শুরু করেছিল কিছু সুযোগ সন্ধানী। তাই ইতিহাসকে নির্মোহ নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার করতে না পারলে আমাদের একবার বিএনপি-জামাতের বিকৃত ইতিহাস আরেকবার আওয়ামী লীগের বিকৃত ইতিহাসের চক্রেই ঘুরপাক খেতে হবে। কিন্তু ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনি, মুজিবকে তার অপকর্মের চরম মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে। আর ঐ সকল অপকর্মের ফাক ফোকর দিয়ে বেঁচে গেছে ধর্মান্ধ মৌলবাদী, যুদ্ধাপরাধীরা। আওয়ামী লীগ বিএনপির সমর্থক হওয়া অন্যায়ের না, তবে তাদের তৈরি বিকৃত ইতিহাসের চর্চা অবশ্যই ইতিহাসের সাথে অপরাধ।

নতুন প্রজন্মকে সরকারী অথবা জামাতি আর্থিক সুবিধা নিয়ে মিথ্যা ইতিহাস শেখানো অবশ্যই অপরাধ। বাঙলাদেশের মুক্তবুদ্ধির আন্দোলনের পথিকৃত এবং ব্যক্তিগতভাবে যাকে আমার গুরুজ্ঞান করি, শ্রদ্ধেয় মুরতাদ আহমদ শরীফের একটি লেখার অংশ বিশেষ এখানে আলোচিত হতে পারে, তার বয়ানে শেখ মুজিবর রহমান, তার আওয়ামীলীগ, তার ৭২-৭৫ এর শাসনামলঃ "শেখ মুজিবর রহমানকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় জড়ানোর ফলেই ক্ষুব্ধ ক্রুদ্ধ আওয়ামী লীগ, বাঙালী মাত্রই মুজিবের প্রতি সহানুভুতিশীল ও তার সমর্থক হয়ে উঠে। যদিও তখন সব আওয়ামী লীগারই দলছুট হয়ে যায়। বাকি থাকেন শিবরাত্রির সলতের মতো আমিনা বেগম আর আব্দুস সালাম খান। পরে সালাম খানও সরে পড়েন।

আমিনা বেগমই ধরে রাখেন আওয়ামী লীগ নামটা। কেন না আওয়ামী লীগ তখন নামসার। এভাবে ক্ষুব্ধ-ক্রুদ্ধ স্বাতন্ত্র্যকামী বাঙালীর স্বতস্ফুর্ত নেতৃত্বে বৃত হয় শেখ মুজিবর রহমান। তখন তিনিই বাঙালীর বল-ভরসার আকর ও ভিত্তি, প্রেরণার, প্রণোদনার, সংগ্রামের প্রবর্তনার উৎস। তাই নির্বাচন কালে দেশশুদ্ধ প্রায় সবাই আওয়ামী লীগপন্থী হয়ে উঠলো।

মুজিব হলেন বাঙালীর একচ্ছত্র অবিসংবাদিত নেতা ও নায়ক। নেতাসূলভ গুণের ও ব্যক্তিত্বের অভাব থাকা স্বত্ত্বেও শেখ মুজিবর রহমান অপ্রতিদন্দ্বী ও অবিসংবাদিত নেতৃপদে বাঙালীমাত্রেরই অন্তরে ও বাইরে স্বীকৃত ছিলেন, এবং অস্থিরচিত্ততা, চেলাপ্রীতি ও সিদ্ধান্তহীনতার জন্য নিন্দিতও। মুজিববাদী আঁতেলরা এমন বেহায়া চাটুকার যে কোন মিথ্যাভাষণে তাদের কোন লজ্জা-শরম নেই। তাঁরা জানেন মুজিবের পাকিস্তান ভাঙার কোনো স্বপ্ন বা সাধ ছিলো না, তিনি ছিলেন সোহরাওয়ার্দীর চেলা এবং মুসলিম লীগার ও হিন্দুবিদ্বেষী। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছিলো তাঁকে ১৯৭০ সালের নির্বাচন।

কেননা আগরতলা মামলা তাঁকে অপমানিত , ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ বাঙালীর হিরো বানিয়ে দিয়েছি। শেখ মুজিব ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ অবধি প্রধানমন্ত্রীত্বের জন্য দর কষাকষি করেছিলেন, যদিও যে লক্ষ্যে ছাত্রনেতাদের পরামর্শে তিনি ৭ই মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার ও মুক্তির সংগ্রামের কথা উচ্চারণ করেছিলেন তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বপ্রাপ্তি ত্বরাণ্বিত করার লক্ষ্যেই। প্রমাণঃ তিনি ঐ সভার পরেই দ্রোহী হন নি, ছাত্ররাও ধরে নি অস্ত্র। তিনি স্বাধীনতা চান নি। তরুণেরা তারুণ্যের আবেগ বশবর্তী হয়ে স্বাধীনতার দাবি ও সঙ্কল্প তাঁকে দিয়ে জোর করে তাঁর মুখে উচ্চারণ করিয়েছিলো তাঁর আপত্তি ও পরিব্যক্ত অনীহা সত্ত্বেও।

তাঁর বাড়ীতেও ওরাই স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়েছিলো তাঁর হাতেই। মানুষের বিশেষ করে বাঙালীর স্বভাব হচ্ছে হুজুগে তাই তারা কাক-শিয়ালের মতো বুঝে না বুঝে শেখ মুজিবকে স্বাধীনতা সংগ্রামী বলে মেনে নিলো। সেভাবেই তাঁর প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা ও আনুগত্য নিবেদন করলো। ২৫শে মার্চে পাকিস্তান সরকারই বাঙালীকে প্রতারিত করে হত্যাকান্ড চালাতে থাকে। বিপন্ন ও অস্ত্রচ্যুত বাঙালী সেনানীরা, পুলিশেরা এবং ক্ষুব্ধ-ক্রুদ্ধ তরুণেরা অনন্যপায় হয়ে অস্ত্রধারণ করে, তাদের সাথে জুটে যায় আওয়ামী লীগারেরা, এবং ক্ষুব্ধ-ক্রুদ্ধ স্বাধীনতাকামী জনগণ গাঁ গঞ্জ থেকে শিক্ষিত- অশিক্ষিত নির্বিশেষে।

শেখ মুজিব যে মুক্তি বা স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেরণা-প্রণোদনা প্রবর্তনা দাতা তা কেউ অস্বীকার করে না। যদিও সবটা তাৎক্ষণিক এবং অবস্থায় ও অবস্থানের পরিণাম, পরিকল্পিত নয়, উদ্বিষ্ট ছিলো না বলেই। শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধুর মর্যাদা এবং জাতির পিতার পরিচিতি নিয়ে ১০ই জানুয়ারী ১৯৭২ সনে ঢাকায় আসেন । শেখ মুজিব কিন্তু তাঁর দলের লোকদের নিয়ন্ত্রণে ও শাসনে অনুগত রাখতে পারলেন না। তাঁর রক্ষীবাহিনীর, তাঁর অনুচর, সহচর, সহযোগীর লুণ্ঠনে, পীড়ন নির্যাতনে, অত্যাচারে, শাসনে- শোষণে দেশে দেখা দিলো দুর্ভিক্ষ, মরল লক্ষাধিক মানুষ।

১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সনের আগস্ট মাস অবধি মুজিব শাসন হচ্ছে ত্রাসের হত্যার কারার-মারার, জোর-জুলুমের, স্বৈরাচারের, দুর্ভিক্ষের, পীড়ণের, শোষণের, জবরদখল ও জবরদস্তির হৃৎকাঁপানো বীভৎস রূপের। সম্ভবত শেখ মনিই ভাবিশত্রু তাজউদ্দীনকে মুজিবের প্রতিদন্দ্বী বলে মুজিবের কান-মন ভারী করে তাঁকে পদচ্যুত করিয়েছিলো। রাজত্বটাও প্রায় পারিবারিক হয়ে উঠেছিলো- সৈয়দ হোসেন, সারনিয়াবাদ, শেখ মনি, কামাল- জামাল তখন সর্বশক্তির আধার কার্যত। এ সুযোগে উচ্চাশী মোশতাক ও অন্যরা হলো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। অস্থিরচিত্ত ও অনভিজ্ঞ রাজনৈতিক নীতি আদর্শেও হলেও অস্থির।

ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইঙ্গিতে তাঁর মুক্তিযোদ্ধ আওয়ামী লীগের একটি উচ্চাশী ক্ষুদ্র দল তাঁকে সপরিবার পরিজনে হত্যা করলো। মুজিবকে যারা হত্যা করলো, তারা গোড়ায় সবাই মুজিবের অনুগতই ছিল। শেখ মুজিবের সাড়ে তিন বছরের দুঃশাসন কিন্তু হত্যা-লুণ্ঠনের বিভীষিকা মুজিবকে গণশত্রুতে পরিণত করেছিলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার আন্তর্জাতিক রাজনীতির স্বার্থে সে সুযোগে তাকে হত্যা করায় সপরিবার। কৃতজ্ঞতাঃ রাসেল পারভেজ।

" শেখ মুজিব সম্পর্কে তিনি তার মূল্যায়ন বলেছেন, আহমদ শরীফের মত বিশাল ব্যক্তিত্ব শেখ মুজিব সম্পর্কে এত চাইতে ভাল কিছু বলবেন না, সেটা সহজেই অনুমেয়। তবে তারপরেও আমি শেখ মুজিবকে বাতিল করে দেবার পক্ষপাতি নই। আমি শেখ মুজিবেরও গুনমুগ্ধ ছিলাম এবং থাকবো। শেখ মুজিব বাঙলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা, তার ৭ মার্চের ভাষণ পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট ভাষণ, তাকে সপরিবারে হত্যা করা বাঙলাদেশের ইতিহাসে সবচাইতে কালো এবং শোকবহ অধ্যায়, এই নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তারপরেও, শেখ মুজিবের বস্তুনিষ্ট সমালোচনা জরুরী, তার মুল্যায়ন জরুরী, তার অবস্থান নির্নয় জরুরী, আমাদের জাতির স্বার্থেই।

যেই মূল্যায়ন তাকে আকাশে তুলবে না, পাতালেও পাঠাবে না, শুধু ইতিহাসে তার অবস্থান চিহ্নিত করবে। কিন্তু শেখ মুজিব আর আওয়ামী লীগের সমালোচনা করার কারণে আওয়ামী চাটুকার আর পেইড দালালরা যদি আহমদ শরীফকে ছাগু বা জামাত শিবির বানাবার পায়তারা করে, যেটা তারা সর্বদাই করে থাকে, তাহলে তাদের আহাম্মকি শুধু বিনোদনই জোগাবে। ইতিপুর্বে আওয়ামী পেইড দালালগন যত্রতত্র যাকে তাকে ছাগু ট্যাগ দিয়ে এবং মাসিক মাসোহারা হালাল করে নিজেদের পায়েই কুড়াল মেরেছে। এর সাথে এটাও ঠিক যে, ৭৫ এর পর থেকে আমাদের দেশে শেখ মুজিবের নাম নিশানা মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। জনগনও ৭২-৭৫ এর শাসনামলে আওয়ামী লীগের প্রতি বীতশ্রদ্ধ ছিল, যার সুযোগ গ্রহণ করেছিল ৭৫ এর ঘাতকরা।

উল্লেখ্য, শেখ মুজিবের হত্যাকারী সকলেই শেখ মুজিবেরই অনুচর ছিলো। এরপরে ৯৬ তে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে শুরু হয় সমস্ত কিছুকে বঙ্গবন্ধুকরণ। শেখ মুজিবের নাম মুছে ফেলার চেষ্টাটা যেমন হটকারী ছিল, সর্বত্র শেখ মুজিবকে ঢুকানোও ছিল একটি হটকারী সিদ্ধান্ত। আওয়ামী লীগ দুই দফায় দেশের আনাচ কানাচ সর্বত্র শেখ মুজিব করণ করতে শুরু করলো, এবং জনগনকে আবারো শেখ মুজিবের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তোলার আত্মঘাতি পরিকল্পনা করতে লাগলো। ৭১ এ যেই শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশ ছোঁয়া, সেই শেখ মুজিবের কন্যাকে কেন হিজাব পরে কান্নাকাটি করে হাতে পায়ে ধরে ভোট ভিক্ষা করতে হয়, কেন জামাতের সাথে এক টেবিলে বসতে হয়, কেন স্বৈরাচারকে সাথে নিতে হয়, কেন ফতোয়াবাজদের মত ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের সাথে সমঝোতা করতে হয়, সেটার সাক্ষ্য ইতিহাস দেবে।

আওয়ামী লীগের ৭২-৭৫ এর শাসনামল ছিল বিভীষিকাময়, রক্ষীবাহিনীর লুটতরাজ এবং শেখ মুজিব সরকারের রক্ষীবাহিনীকে দেয়া ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ রক্ষীবাহিনীর সকল অপকর্মকে বিচারের আওতার বাইরে নিয়ে গিয়েছিল। ইনডেমনিটির মত কালো আইন আওয়ামী লীগেরি করা, ক্রশ ফায়ার সংস্কৃতির সুচনা আওয়ামী লীগেরই হাতে, বাক-স্বাধীনতা হরন, মুক্তিযোদ্ধা নিধন, ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শের মানুষদের হত্যা করা, সংখ্যালঘুদের জায়গাজমি দখল করা, পাহাড়িদের তৃতীয় শ্রেনীর নাগরিকে পরিণত করা, এসবই আওয়ামী সরকারের শাসনামলের কালো দিক। এগুলো অবশ্যই সমালোচনার যোগ্য। মাওলানা মওদুদীর সাথে শেখ মুজিব। শেখ হাসিনা এবং নিজামীর সমঝোতা আলোচনা জামায়াত সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর উপর হামলার পর হাসপাতালে তাকে দেখতে আওয়ামীলীগ নেতা শেখ সেলিম ।

(১৯৯১) জলিল(শেখ হাসিনার নির্দেশে) এবং ফতোয়াবাজ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আবদুর রব ইউসুফী বাঙলাদেশকে তালেবানী রাষ্ট্র বানাবার নীল নক্সা, সেই কুখ্যাত ফতোয়া চুক্তি আওয়ামীলীগ নেতা মহিউদ্দিন আহমদের সাথে জামায়াতের গোলাম আযম (১১ ফেব্রুয়ারী ১৯৯২) বিএনপি আওয়ামী লীগের দেখানো পথ ধরে জামাতের সাথে ঘষাঘষিতে সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়ে জামাতের অঙ্গসংগঠনে পরিণত হয়েছে। প্রাচীনকালে রাজাবাদশাদের, তাদের সন্তানাদির সমালোচনা করা ছিল নিষিদ্ধ। রাজার সমালোচনা করলেই গর্দান যেত। বৃটিশ আমল, পাকিস্তান আমলেও সরকারের সমালোচনা করে বহু বিপ্লবী নির্যাতন নিপীড়ণের শিকার হয়েছেন। স্বাধীন বাঙলাদেশে আমার দেশের সংবিধান আমার বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত করে।

স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে আমি যে কোন মত প্রকাশ করতে পারি, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমার মতামত দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হয়ে দেখা দিবে। আমি রাজনৈতিক দলসমুহ এবং তাদের নেতাদের সমালোচনার অধিকার রাখি, সরকারের, পুলিশের, ধর্মীয় সংগঠনের এমনকি বিচার বিভাগেরও যেকোন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করতে পারি। আমার এই অধিকার কারো দয়া দাক্ষিন্য নয়, এমন নয় যে এই নির্বাচিত সরকারটি আমাকে করুনাবশত একটু আধটু সমালোচনা করতে দিচ্ছে। এটা আমার নাগরিক ও সাংবিধানিক অধিকার, সংবিধান আমার এই অধিকারের রক্ষক। এমনকি, এই সংবিধান আমাকে এই সংবিধানের সমালোচনা করার অধিকারও সংরক্ষন করে।

আমি বলতে পারি সংবিধানের বিসমিল্লা একটি প্রতিক্রিয়াশীল শব্দ, যা আমার দেশের অমুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিকের মানসিকতা বিকাশে সহায়ক। আমি বিচার বিভাগের কোন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে দ্বিমত পোষন করতে পারি, আমি নির্বাচিত এই সরকারের সর্বোচ্চ পদের মানুষটিরও সমালোচনার অধিকার রাখি। কারণ আমি(আমরা) একজন নাগরিক, এবং আমিই(আমরা) এই রাষ্ট্রের মালিক। এমনকি আমরা এই দেশের জাতীয় নেতা, তাদের শাসনামলের সমালোচনাও করতে পারি। এই সমালোচনা ঠিক হতে পারে, বা ভুল-সেটা যুক্তিতর্ক, তথ্যপ্রমাণের উপরে নির্ভরশীল।

কে তার সপক্ষে কতটুকু যুক্তি তুলে ধরতে পারছে, সেটাই হবে সমালোচনার শুদ্ধতার মাপকাঠি। কিন্তু শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের সমালোচনা করা যাবে না, বা সমালোচনা করলেই হৈ হৈ রৈ রৈ করে কল্লা ফেলে দেবার জন্য দৌড় ঝাঁপ শুরু করে দেয়া কোনভাবেই সভ্য সংস্কৃতি হতে পারে না। এটা পুরোপুরি মোল্লাতান্ত্রিক-সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতা। আর আওয়ামী লীগ সর্বদাই এই কাজে বিশেষভাবে পারদর্শী। সালমান রুশদীর একটি কথা সব সময় বলি, "The moment you declare a set of ideas to be immune from criticism, satire, derision, contempt, Freedom of thought becomes impossible. নীরেন্দ্রনাথও বলেছিলেন, "বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখ দ্বিতীয় বিদ্যায়।

বরং বিক্ষত হও প্রশ্নের পাথরে। বরং বুদ্ধির নখে শান দাও, প্রতিবাদ করো। অন্তত আর যাই করো, সমস্ত কথায় অনায়াসে সম্মতি দিও না। কেননা, সমস্ত কথা যারা অনায়াসে মেনে নেয়, তারা আর কিছুই করে না, তারা আত্মবিনাশের পথ পরিস্কার করে। " মুক্তচিন্তা ও প্রগতিশীলতার দাবীদার(আসলে ছদ্ম প্রগতিশীল) আমাদের প্রজন্ম এই কথাগুলোকে সম্ভবত শুধুমাত্র নিজেদের মতাদর্শের স্বার্থেই ব্যবহার করতে ইচ্ছুক।

কিন্তু ইতিহাস চর্চার নামে ইতিহাস বিকৃতি, ইতিহাসকে দলীয় ও রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার আওয়ামী লীগ এবং শেখ মুজিবকে শুধু ঐতিহাসিকভাবে আরো বেশি ভিলেনে যেন পরিণত না করে, তার জন্য অনলাইন পেইড দালাল লীগের বিকৃত ইতিহাস চর্চাকে ঘৃণা জানাবার এবং আস্তাকুড়েতে নিক্ষেপের সময় এসে গেছে। ইতিহাস চর্চা জামাত করলেও বিকৃতি, আওয়ামী লীগ করলেও বিকৃতিই থাকে, জামাতের দোহাই দিয়ে আওয়ামী বিকৃত ইতিহাস সত্য হয়ে যায় না।   ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.