কিছু দেশ দেখার সুযোগ হয়েছে এই জীবনে। ভ্রমণ আমার ভাল লাগে্ তাই সবার মাঝে তা জানাতে চাই। সবার উপরে ভালোবাসি বাংলাদেশ । ধন্যবাদ ইরাক যুদ্ধে যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত। বেদনার্ত এর মানুষ গুলো।
সভ্যতার এই পীঠস্থানের মানুষগুলোর গর্বিত চেহারা, হাসিখুশী জীবন যাত্রা এখন। অনেকটা স্থবির হয়ে গেছে। ইরাকের ইতিহাস সবার জানা তবুও একটা দেশের পরিচিতির জন্য এর ইতিহাস সম্বন্ধে কিছুটা ধারনা না দিলে তা পূর্ণতা পায় না। ইরাকের সরকারী ভাষা আরবী ও কুর্দি। বেশির ভাগ লোকজন আরবীতে কথা বলে ।
উত্তরের কুর্দিস্থান অঞ্চলের ভাষা কুর্দি,তবে তারা আরবী বুঝে ও বলতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য ভাষাভাষী কিছু মানুষজনও ইরাকে বসবাস করে।
রিপাবলিক অব ইরাক ১৯৩২ সালে বৃটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। বর্তমানে প্রায় তিন কোটির বেশী লোক ইরাকে বসবাস করে। ইউফ্রেতিস ও টাইগ্রিস নদী বিধৌত ইরাক মানব সভ্যতার অন্যতম একটা পীঠস্থান।
ইরাকের বর্তমান অবস্থান প্রাচীন মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে। মধ্যযুগে ইরাক ইসলামিক সাম্রাজ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। ১৩শ সালের বর্বর মোঙ্গলদের আক্রমনে এটা বিধ্বস্থ হয়ে এর গুরুত্ব কিছুটা হারিয়ে ফেলে। ১৫শ সাল থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এটা অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীন ছিল। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে অটোম্যানদের পরাজয়ে ইরাক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আওতায় আসে।
ব্রিটিশরা ইরাকে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৫৮ সালে ব্রিটিশ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত রাজতন্ত্রের পতন হয় এবং ১৯৬৮ সালে বাথ পার্টি ক্যু এর মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে। তেলের কারনে ইরাক অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করে। ১৯৭৯ সালে সাদ্দাম হোসেন যখন ইরাকের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয় তখন ইরাকের বৈদেশিক মুদ্রার শতকরা ৯৫ ভাগ পেট্রোলিয়াম রপ্তানী থেকে আসত । রিপাবলিক অব ইরাকের আয়তন প্রায় চারলক্ষ সাইত্রিশ হাজার বর্গ মাইল এবং এটা পৃথিবীর বৃহত্তম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ৫৮ তম।
ইরাক মূলত মরুভূমি অঞ্চল, তবে ইউফ্রেটিশ ও তাইগ্রিস নদী সংলগ্ন এলাকা গুলো উর্বর ও সমতল। ইরাকের উত্তরে পার্বত্য অঞ্চল। শীতকালে ইরাকে হালকা শীত পড়ে তাছাড়া আবহাওয়া উষ্ণ ও শুষ্ক। উত্তরে বিশেষত কুর্দিস্থান অঞ্চলে শীতকালে বেশ বরফ পড়ে। দেশটির উত্তরে রয়েছে জাগরোস পর্বতমালা।
ইরাক, সিরিয়ার মরুভূমির পূর্ব পার্শ্বে এবং এরাবিয়ান মরুভূমির উত্তরাংশে অবস্থিত। ইরাকের পশ্চিমে জর্ডান,উত্তর পশ্চিমে সিরিয়া, উত্তরে তুরস্ক, পূর্ব দিকে ইরান এবং দক্ষিণে কুয়েত ও সৌদি আরব পরিবেষ্টিত। পারস্য উপসাগরের সাথে ইরাকের ৫৮ কিলোমিটার জলসীমা আছে এছাড়া প্রায় পুরো দেশটাই ভূমিবেষ্ঠিত।
ইরাকে সর্বমোট ১৮টি গভর্নরেট আছে। এগুলো হলো ,বাগদাদ, সালাদিন,দিয়ালা ওয়াসিত, মাইসান,আলবাশরা, আলআনবার,বাবিল,কারবালা, নাজাফ, নিনেভা, কিরকুক,আলকাদিসিয়া,ধিকার, আলমুথানা এবং কুর্দিস্থানের ৩টি প্রদেশ।
ইরাকে অবস্থানকালে প্রায় ৯টা প্রদেশ দেখা হয়েছিল কিংবা এর উপর দিয়ে অন্যান্য প্রদেশে যেতে হয়েছিল। ইরাকে ৭০-৮০% লোক আরব। সংখ্যাগরিষ্ট মাইনরিটি গ্র“প হলো কুর্দি এরা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫-২০% এছাড়াও অ্যাসিরিয়ান ও ইরাকী তুর্কমেন সম্প্রদায় রয়েছে প্রায় ৫% । কিছু আর্মেনিয়ান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনও আরাকে বাস করে। ইরাকে শতকরা ৯৭ ভাগ লোক মুসলমান, খৃষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা বাকী ৩%।
মুসলমানদের মধ্যে শিয়া ৬৫% সুন্নী ৩৫% তবে নির্মম পরিহাস, বহু বছর ধরে ইরাক শাসন করে আসছিল সুন্নী শাসকবর্গ। উপেক্ষিত সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আর্তনাদেই হয়তবা ইরাকের আজ এই দুর্ভোগ। ইতিহাসই বলে দেবে এর শেষ কোথায়।
১৯৮০-৮৮ সালের নিষ্ফল ইরাক- ইরান যুদ্ধ এবং ১৯৯১ সালের গলফ্্ ওয়ার এবং পরবর্তীতে ইরাকের উপর আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ ইরাকের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণ পঙ্গু করে দেয় এবং জনগনের জীবনযাত্রা মানবেতর পর্যায়ে নেমে আসে। ২০০৩ সালের আমেরিকা কর্তৃক ইরাক আক্রমন এর অর্থনীতিকে পুরোপুরি পঙ্গু করে দেয়।
এককালের সভ্যতার পীঠস্থান তার হৃত গৌরব কবে ফিরে পাবে তা এখন অজানা । এ সমস্ত সংঘাতের সময় ইরাকের উত্তরের কুর্দিস্থানের কুর্দিরা স্বায়ত্ব শাসন দাবী করে এবং কেন্দ্র থেকে আলাদা হয়ে যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।