আশা নিয়ে আছি কিছু হবে অদ্ভূত সোনালি রোদের আকাশ। কিন্তু লালচে আভা। লালচে আভাটা এমন একটি গোলযোগ থেকে হয়েছে যা মূলত পিশাচদের জন্য আনন্দের। পৈশাচিক অধিকার রক্ষা কমিটি সভা আহবান করেছে। এর পূর্বে কখনো দিবালোকে পৈশাচিক সভা-সমাবেশ হয়নি।
অতি প্রয়োজনে এবার দিবালোকেই সভা ডাকা হয়েছে। তাছাড়া ঝুকির বেশি কিছু নেই। কারণ মানবজাতি আজ হাহাকারে ব্যস্ত। পৈশাচিক কাজকর্মে ধ্যান দেয়ার কোন সুযোগ নেই। গোরস্থানেই সভার স্থান।
সভার আহ্বানকারীরা হচ্ছে ভূত-প্রেত এবং পিশাচ। শিমুল গাছের শীর্ষ ডালে জৈষ্ঠ পিশাচ সর্দারের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যরা একে একে শেওরা, কেওরা, তাল, হিজলের ডালে বসবে। সকল আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। জৈষ্ঠ পিশাচ সর্দারের পায়ে অঞ্জলি দেবার জন্য সদ্য মৃত ১৬ বছর বয়সী লাশের কলিজা এবং পেয় হিসেবে রক্তের আয়োজন করা হয়েছে।
উপহার আয়োজন যতই হোক, আজ ভূত-প্রেত এবং পিশাচেরা একটা বড় সমস্যা নিয়ে এখানে হাজির হয়েছে। অস্তিত্ব যখন সীমাহীন বিলোপের পথে তখন এর একটা বিহিত করতেই হবে। তরুণ ভূত-প্রেত এবং পিশাচদল কানাকানি করছে যে আজ একটা রফাদফা হয়ে যাবে। উদীয়মানদের টেম্পার একটু বেশিই থাকে। সেইসাথে সবাই অপেক্ষায় আছে।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর কাটল। সূর্য তখন ঠিক মাথার উপর। মানুষের ছায়া যখন খুবই ছোট্ট, ঠিক তখন পিশাচনেতা শিমুলের শীর্ষ ডালে এসে আসন গ্রহণ করলেন। বসতে না বসতেই সবার মধ্য থেকে সমস্বরে শ্লোগান আসে
“মানিনা, মানবনা।
আমার ঘামে, আমার শ্রমে
পুরস্কার অন্য কে নেবে?
আমার পুরস্কার অন্য কেউ নেবেনা, নিতে দেবনা”।
পিশাচ সর্দার সবাইকে শান্ত করলেন। আজকের মিটিং আসলে পিশাচ অস্কার নিয়ে। এ পুরস্কারের নিয়ম হচ্ছে প্রতিবছর যে সবচেয়ে নিষ্ঠুর প্রক্রিয়ায় কাজের প্রমাণ দিতে পারে তাকে একটি অস্কারে ভূষিত করা হয়। ভূত-প্রেত এবং পিশাচদের জনসংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। তার উপর তাদের কাজের ক্ষেত্র ক্রমেই দূর্জয় হয়ে পড়ছে।
তার মধ্যে তাদের যথাকাজের পুরস্কার যদি যায় অন্যের হাতে, তবে তাদের ক্ষোভ হবে এটাই স্বাভাবিক। এ পুরস্কার পাওয়ার জন্য পিশাচদল অনেক ঝুকি নিয়ে কত কষ্টে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে ঘাড় মটকানো, রাতে ভয় দেখিয়ে, তাল গাছে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করতে হয়। তাছাড়া এখন এই প্রযুক্তির যুগে হিলিয়াম বাতির আলোয় তাদের কাজ আরো কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। তারমধ্যে এত কষ্টে মানুষ হত্যা করে অস্কার প্রতিযোগিতায় নিজের অবস্থান করতে হয়। কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়।
আজকাল প্রায় প্রতিবছরই অস্কার আর এদের কেউ পাচ্ছেনা। তাদের সাংবিধানিক রীতি অনুসারে যে সবচেয়ে নিষ্ঠুর প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে নিষ্ঠুর কাজটি করতে পারবে পুরস্কার সেই পাবে। আর সে যদি পিশাচ না হয় তবে তার উদ্দেশ্যে একটি পিশাচ শাবক অঞ্জলি দেয়া হয়। আজকাল এ পুরস্কার বেশির ভাগই পায় মানবজাতি। ফলে এমনিতেই তাদের জনসংখ্যা হ্রাসমান তার উপর প্রায়ই তাদের শাবক অঞ্জলি দিতে হয়।
অন্যদিকে শত শ্রম দিয়েও অস্কার হারাতে হয়। এ নিয়েই আজকের সভা এবং তাদের মধ্যে এত ক্ষোভ।
আসা মাত্রই পিশাচদল প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। পিশাচনেতাও জুরি বোর্ড ও প্রমাণ-শাবুদ নিয়ে তাদের মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত। তারা প্রশ্ন করল- “মানবজাতি কি এমন কাজ করতে পারে যে আমাদের চেয়ে বেশি নিষ্ঠুরতার প্রমাণ রাখে” ?
জুরি বোর্ড- “তোমরা বহু চেষ্টা করে, আড়ালে-আবডালে থেকে তাল গাছে, পুকুরে, শিমুল গাছে মানুষ মারতে পার মাত্র একজন।
আর মানবজাতি একবার আগুন লাগিয়ে দিয়ে মানুষ মারতে পারে শত শত জন। শুনা যায় তারা শুধুমাত্র টাকার লোভে এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে। তোমরা তা করতে পেরেছ ?
এ ঘটনা শুধু একবার নয়, বারবার হচ্ছে। কেউ এ ব্যাপারে কিছু সংস্কারের আদেশ দিলে তারা তা শিকেয় তুলে রাখে। এবং তারা বারবার এমন মৃত্যুর ঘটনা দেখে এনজয় করে।
তোমরা কি তা করতে পেরেছ ?
এমন নির্মম ঘটনা ঘটার পরও একজন মানুষের জীবনের দাম ১০০০০০ টাকা দিয়ে সেরে ফেলে। এভাবে মৃতের পরিবারের উপর আবার একটা পৈশাচিক অবস্থা তৈরি করে। শুধু তাই নয়, শুনলে অবাক হবে যে ক্ষতিপূরণ যেন কম দিতে হয় সেজন্য তারা মৃতের লাশ পর্যন্ত সরিয়ে ফেলে। তোমরা যে লাশের কলিজা এবং রক্ত উপহার হিসেবে এনেছ তা সরিয়ে ফেলা একটি লাশের। তোমরা এগুলো করতে পেরেছ ?
তাছাড়া তোমাদের কস্মিনকালেও সাহস হবেনা যে পিশাচ হয়ে একটা পিশাচকে হত্যা করবে।
কিন্তু তারা তা অনায়েসে করতে পারে। এমনকি মানুষ দেখছে যে সে নিশ্চিত মরছে এমন অবস্থাও তৈরি করতে পারে। তোমরা কি এত বড় নিষ্ঠুর এবং বেহায়া হতে পারবে ?
আর তোমরা জনসংখ্যা নিয়ে ভাবছ ? ভাবনার কিছু নেই। মানুষ নিজেরাই পিশাচের বৈশিষ্ট্য নিয়ে নিচ্ছে। তাছাড়া আমাদের পরবর্তী পরিকল্পনা হচ্ছে মানুষের মাঝে আমাদের বৈশিষ্ট্য ঢুকিয়ে দেয়া।
এতে করে আমাদের ঝুকি কমে যাবে অথচ আমাদের কাজ ঠিকই হবে।
তোমরা তো আর মানুষের সাহিত্য কি তা বুঝনা। আমরা জেনেছি মানুষের মাঝে আবুল হাসান নামে একজন কবি একদম খাটি সত্য একটি কথা বহু পূর্বেই বলেছেন যে-
“বাড়ছে দাম চালের, ডালের, তেলের, নুনের
শুধু বাড়ছেনা দাম মানুষের”।
পিশাচ জুরি বোর্ডের অকাট্য যুক্তি শুনে শেষে পিশাচদল বুঝতে পারল যে কেন বারবার তাদের অস্কার মানবজাতির কাছে যায়। অবশেষে তারা এ সিদ্ধান্ত মেনে পিশাচনেতাকে কুর্নিশ করে চলে যায়।
এভাবেই সভার সমাপ্তি হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।