আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার ভেতরে পশুর রাজত্ব আর আমা্দের পৈশাচিক আনন্দ

সত্যের কাছে মিথ্যে চিরকালই পরাজিত

সবেমাত্র এস,এস,সি পরীক্ষা দিয়েছি, বড় খালুর সাথে বেড়াতে গেলাম তাদের বাড়িতে, আগেই শর্ত দিয়েছি যে পরেরদিন আমাকে ঢাকায় দিয়ে যেতে হবে। কিন্তু পরদিন দুপুর পার হয়ে যাচ্ছে খালুকে বললাম ঢাকা যাবো, উনি বললেন কালকে, কিন্তু আমার আজকেই যেতে হবে। জীবনে এর আগে কখন ও একা ঢাকার বাইরে যাইনি বা আসিওনি। এবার দূর্দান্ত আমি, তাই খালা-খালুর নিষেধ অমান্য করে বেরিয়ে পড়লাম এবং ঠিকই ঢাকা চলে এলাম। কি এমন জরুরী ব্যাপার ছিলো যে আমাকে ঢাকা আসতেই হবে? ডব্লিওডব্লিওএফ এর রেসলিং খেলার বিরাট ভক্ত তখন, আর ঐ দিন একটা স্পেশাল খেলা ছিলো।

এসে ভালোই করেছিলাম! অনেক মজা পেয়েছিলাম, কারন ঐ খেলায় ট্রিপল-এইচ এবং ম্যানকাইন্ড ভয়াবহ খেলেছিলো! নেটের ভিতরে খেলা ছিলো, একপর্যায়ে নেটের উপর থেকে নেট ছিঁড়ে নিচে পড়ে গিয়েছিল ম্যানকাইন্ড। সেকি মজা? একজন মানুষ আরেকজনকে নির্মম ভাবে মারছে আর আমি মজা পাচ্ছি, যে খেলায় একজন আরেকজন কে রক্তাক্ত করছে তাতে মজা আর আগ্রহ আরো বেশি। নির্মমতা যত বেশি ভালোলাগা তত বেশি! আমার ভেতরের পশুটা তত বেশি প্রানচঞ্চল হয়! কিন্তু আমার ভেতরের এই পশুটাকে আমি কেন আটকাতে পারিনা, কেন আমার ভেতরের মানুষটা হেরে যায় বারবার? উত্তর জানা নেই আমার! প্রত্যয়ন পত্র আর আবেদন পত্র নিয়ে কথা বলতে আমি প্রায়ই শ্রদ্ধেয় কবির স্যারের কাছে তখন ঘন ঘন যাতায়াত করি। যেদিন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসি কার্যকর হল তার পরেরদিন স্যারের রুমে গেলাম, কথা প্রসঙ্গে স্যার বলে উঠলেন "কালকে যে মানুষ গুলোকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে তাতে আমার খুব খারাপ লেগেছে, হ্যাঁ এইটা ঠিক এরা অনেক বড় খারাপ করেছে আর এ জন্য এই শাস্তি তাদের প্রাপ্য, তবুও তারা মানুষ তাই তাদের ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা খারাপ লেগেছে। " আমি তৎক্ষনাত স্যারকে বললাম "আমার মনে হয় যারা অন্যায় করেছে তারা শাস্তি পাবেই সেইটা আপনাকে কষ্ট দেয়ার কথা না।

আসলে কষ্ট দিয়েছে এদের মৃত্যুর যে আয়োজন তা দেখে। একেক চ্যানেল এ ব্রেকিং নিউজ দেখানো হচ্ছে কোন গাছের তৈরি দড়ি, কোন দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে, কোন জল্লাদ কে আনা হয়েছে, মঞ্চ কোথায়, সেটাও ভিডিও করে নিউজ হিসেবে দেখানো হয়েছে। পারলে হয়তো ফাঁসির ঘটনা টাও লাইফ দেখিয়ে দিত! আর এসব হয়তো আপনাকে কষ্ট দিয়েছে। " স্যার ব্যাপারটাকে স্বীকার করলেন। স্যারের রুম থেকে বেরিয়ে ভাবছিলাম, আমিওতো অনেক চ্যানেল ঘুরে ঘুরে এই নিউজগুলো দেখেছি, তাহলে চ্যানেলগুলার তো কোন দোষ নাই! আসলে আমার ভেতরের পশুটা যে সবসময় নির্মমতায় আনন্দ খুঁজে, পৈশাচিকতা যে আমার সত্তায় মিশে গেছে!! কেন আমি এমন হলাম, আমার ভেতরে কি কোন মানুষ সত্ত্বা আদৌ আছে? আবার ও উত্তর খুঁজি....... পত্রিকায়, চ্যানেলে জানতে পারলাম অনেক জায়গায় মিষ্টি বিতরন হয়েছে, অনেকে বিজয় উল্লাস করেছে! মানুষের মৃত্যু ও তাহলে মানুষকে আনন্দে ভাসিয়ে দিতে পারে! এমনটা তো হওয়ার কথা নয়! যে অন্যায় করেছে সে তার অন্যায়ের শাস্তি পেয়েছে আর আমরা কখনোই এমন অন্যায় করতে চাই না তাহলে এভাবেই শাস্তি পেতে হবে ভেবে নিজেকে শুধরে নেয়ার চেষ্টা করাই তো বিচারের মূল উদ্দেশ্য তাই নয় কি? এভাবেই জীবনের সবকিছুতেই আমি প্রাধান্য দিয়েছি আমার পশুসত্ত্বা কে।

নির্দয়, নির্মম, পাশবিক, পৈশাচিক শব্দগুলো এখন এমনভাবে ব্যবহার হয় তাতে করে এগুলো এখন পজিটিভ ভাবেই ভাবা হয়! ভালোবাসা হয় নির্মম, আনন্দ হয় পৈশাচিক! আর কতটা হারালে আমি নিজের ভেতরের মানুষ সত্ত্বাকে খুঁজতে চাইবো? নাকি চাইব সে হারিয়েই যাক, আমার ভেতরে বসত করুক একক (পশু) সত্ত্বা!!


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।