আমার কোন ভাষা জ্ঞান নাই! গণমানুষের ভাষায় কথা কই। কেনা কাটার শখ টা আমার বরাবরই বেশী বেশী । জীবনে যে ধারনের পোশাক বেশী পরেছি সেগুলু জিন্স আর টিসার্ট বৈকি। আমাদের হলের খুব কাছে নিউ মার্কেট, ঢাকা কলেজ আর বঙ্গ বাজার ও বেশী দূরে ছিলনা। এত সস্তায় এত ভালো ভালো জামা কাপড় পাওয়া গেলে আপনি কেনইবা কিনবেন না? এবার যে গুলো কিনতাম বা এখনো কিনছি, পরছি সেই জিন্স টিসার্ট গুলো কেমন ছিল তা একটু বলি।
এদের বেশির ভাগের ই নাম পরিচয় ছিলনা। সংগত কারণে সেগুলোর ব্র্যান্ড ইষ্টিকার যত্ন করে কেটে ফেলে দেওয়া হতো। এটা হয়তো অনেকেই জানবেন যে, আমাদের রপ্তানির উদ্দেশ্যে তৈরি হওয়া গার্মেন্টস পণ্যের অতিরিক্ত অংশ, মান নিয়ন্ত্রণ পক্রিয়ায় বাদ হওয়া কিংবা রপ্তানি পক্রিয়ায় ত্রুটির জন্য অনেক পণ্য গার্মেন্টস মালিকেরা লোকাল মার্কেটে বিক্রি করে দেন। আমদানিকারকের কঠোর নির্দেশ বা বিবিধ নিয়মের কারণেই এ গুলো বিক্রির আগেই ব্র্যান্ড ইষ্টিকার কেটে ফেলা হয়। আর সেই জিন্স টিশার্ট আমরা একটু সস্তায় কিনতে পারি।
স্টক লট নামে পরিচিত এসব পণ্যের ইদানীং ভারত, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মার্কেটে এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় আমাদের এখানেও দাম বাড়তে শুরু করেছে।
এবার ১১১ লাশের গল্প, যার বেশীর ভাগের নাম পরিচয় নাই, শনাক্ত করা যায়নি। আশুলিয়ায় আগুনে এদের প্রাণহানি ঘটে। এরা সেইসব মানুষ যারা আপনার আমার পরনের বাহারি জিন্স আর টিসার্টটি তৈরি করেন। জুরাইন গোরস্থানে এরা নাম পরিচয় হীন ভাবেই সমাধিস্থ হয় ।
কিন্তু এদের আর্তনাদ মিশে থাকে আমার পোশাকে, শরীরে, মগজে । আমি বয়ে বেড়াচ্ছি ১১১ লাশ, এ যন্ত্রণা দুর্বিষহ।
আমি নিশিত করেই বলতে পারি, আশুলিয়ার সেই গার্মেন্টস এর অক্ষত পণ্য গুলোর রপ্তানি বাতিল হবে। অতি যত্ন করে বাচাই করা হবে, স্টক লটে পরিনত হবে তীব্র যন্ত্রণা মাখা, আর্তনাদের বাষ্পে জড়ানো, লাশের গন্ধ বয়ে বেড়ানো সেই সব অক্ষত পণ্য। ব্র্যান্ড ইষ্টিকার কেটে ফেলা হবে, আর তার পর লোকাল মার্কেটে বিক্রি করা হবে।
বেশ কিছু দিন পর আমি, তুমি, আমরা সেই পণ্য কিনে নিব সস্তায়। নিজেদের শরীরে বয়ে বেড়াব ১১১ টি লাশ। এ যন্ত্রণা দুর্বিষহ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।