আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশ এখন ॥ সাফল্যগাথা

০ দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের জিডিপির হার বেশি ০ রিজার্ভ এ বছর ১৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে ০ শুধু অর্থনীতিতে নয়, মানব উন্নয়নেও এগিয়ে রফিকুল ইসলাম ঃঃঃঃঃঃঃ-॥ ------ বাংলাদেশ এখন এক সাফল্যের গল্প। এ সাফল্য শুধু অর্থনীতিতেই নয়, মানব উন্নয়নেও আসন গেড়ে বসেছে। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছে। এ কারণেই দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশটির এ অগ্রগতির সাফল্য এখন আর বিদেশীদের চোখও এড়াচ্ছে না।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সাপ্তাহিক ইকোনমিস্টের চোখে ধরা পড়ে বাংলাদেশের এ অগ্রগতির গল্প। ঠিক তার পর পরই বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে আসল এ অগ্রগতির স্বীকৃতি। শুধু তাই নয়, বিশ্বব্যাংক এও স্বীকার করেছে, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে বৈশ্বিক অঙ্গনে যে নেতিবাচক ধারণা ছিল তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। স্বাধীনতার পর পশ্চিমা বিশ্বের অনেকের মধ্যেই বাংলাদেশকে নিয়ে একটি ভ্রান্ত ধারণা ছিল। কারও কারও মধ্যে এমন ধারণা ছিল, বাংলাদেশ বেশি দিন টিকবে না।

তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলতেও দ্বিধা করেননি সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার। তবে পশ্চিমা বিশ্বের সেই ভুল ভাংতে বেশি সময় নেয়নি বাংলাদেশ। সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও বাংলাদেশ খুব দ্রুতই উন্নয়নের ‘গতিপথে’ উঠে আসে। তারই সাফল্য এখন আসতে শুরু করেছে। এ অগ্রগতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হলে প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।

আর রাজনীতিবিদদেরই এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশের এ স্বীকৃতি ‘ওভারডিউ’ ছিল। এটা আরও আগে আসা উচিত ছিল। তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির ভিত এমনভাবে দাঁড়িয়েছে যে, বাংলাদেশের সাফল্যের স্বীকৃতি আসতে থাকবে। তবে এ অগ্রগতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হলে দেশে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ জরুরী।

আর রাজনীতিবিদদের সেটা অনুধাবন করতে হবে। বিশ্বব্যাংক গত মঙ্গলবার প্রকাশিত তার বিশ্ব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০১৩-এ বলেছে, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে যে অল্প কয়েকটি দেশ মানব উন্নয়ন সূচকের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ‘ভাল করেছে’ তাদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। দুরবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশের মানুষ বাড়তি পরিশ্রম করায় এবং চাকরির সুবাদে নারীরা সন্তান লালন-পালনে বেশি অর্থ ব্যয় করতে পারায় দারিদ্র্য কমেছে। নিজেদের কাজ আরও ভালভাবে করতে করতে শ্রমিকদের দক্ষতা বেড়েছে। বেশি বেশি উৎপাদনমুখী চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়ে কম উৎপাদনমুখী কাজগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়াতেও দক্ষতা বেড়েছে।

কৃষি খাতে আধুনিকায়ন, কম দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিকের কাজের সুযোগ দেয়া শিল্প খাত এবং এগুলোর সমর্থনে নেয়া বিভিন্ন সামাজিক নীতির কারণে এ সফলতা এসেছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক এ দাতা সংস্থা বলছে, ২০২১ সাল নাগাদ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। স্বাধীনতার পর সত্তরের দশকে বাংলাদেশকে ধরা হয়েছিল ‘উন্নয়নের টেস্ট কেস’ হিসেবে। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে এক সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে। স্বাধীনতা পাওয়ার পর পরই বাংলাদেশ বিপুল জনসংখ্যা, সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদ, অনুন্নত অবকাঠামো, ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হওয়ায় অর্থনীতি নিয়ে এই নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয় পশ্চিমা দেশগুলোর মাঝে।

কিন্তু সাম্প্রতিক দশকগুলোতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত রাখায় বৈশ্বিক উন্নয়নের ধারায় বাংলাদেশ সম্পর্কে ওই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এখন আশার সঞ্চার হয়েছে। বাংলাদেশ শুধু ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে না, বাংলাদেশের মানবিক উন্নয়ন সূচকও বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এখন সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের। ব্রিকস জোটের দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলো যেখানে পাঁচ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ গত এক দশক ধরে ছয় শতাংশের ওপর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাবে, গত ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি ছয় দশমিক তিন শতাংশের স্থলে ছয় দশমিক চার শতাংশে দাঁড়াচ্ছে।

আর চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ছয় শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটা অব্যাহত রাখা সম্ভব হচ্ছে মূলত স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি খাতের প্রতি সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপের কারণে। এ খাতগুলোতে সরকারী-বেসরকারী খাত অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে যে অবদান রাখছে, তার কারণেই দেশে অব্যাহতভাবে ছয় শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জনের একটি ভিত তৈরি হয়েছে। তার সঙ্গে ভূমিকা রাখছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও তৈরি পোশাক খাতের উত্তরোত্তর উন্নতি। এ প্রসঙ্গে টাইম ম্যাগাজিন বলছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক যে অর্থনৈতিক উত্থান তা মূলত তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর ভর করেই।

২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তৈরি পোশাক শিল্পের চাঙ্গাভাবের কারণেই এ সময়ে বাংলাদেশ ছয় দশমিক তিন শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছে। যে কারণে আন্তর্জাতিক রেটিং কোম্পানি গোল্ডম্যান সস বাংলাদেশকে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীনের পর পরবর্তী ১১ উদীয়মান দেশের একটি হিসাবে উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আরও একটি বড় অবদান রাখছে প্রবাসী আয়। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৫০ লাখ কর্মী বিদেশে কাজ করছে। এই কর্মীদের বেশিরভাগই অবস্থান করছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাজ্যে।

বিদেশ অবস্থানরত এই বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী ২০১১ সালে ১২শ’ কোটি কোটি ডলার পাঠিয়েছে দেশে। ফলে বাংলাদেশ দশ হাজার কোটি ডলারের অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর বলেন, এক্ষেত্রে সরকারের কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। বিশেষ করে সরকারের ডিজিটাইজেশন নীতি, পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনায় ইনক্লোসিভ প্রবৃদ্ধির পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত এবং কৃষি ও এসএমই খাতের প্রতি গুরুত্বারোপ বাংলাদেশকে উন্নয়নের ‘গতিপথে’ এনে দাঁড় করিয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের এ নীতি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কৃষকদের কাছে ঋণ পৌঁছে দিয়েছে। আর ১০ টাকার হিসাব খোলার মাধ্যমে দুর্নীতিমুক্তভাবে দেশের অসহায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা পৌঁছে দিচ্ছে। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিকে একটি ‘পুনর্জাগরণের’ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের এ অগ্রগতির কারণগুলো তুলে ধরতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতির পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে প্রবাসী আয়। এ বছর এ প্রবাসী আয় ১৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

প্রবাসী আয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো সরকার বিদেশী জনশক্তি রফতানি বাড়িয়েছে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন দেশে রেমিট্যান্স হাউস খুলে তাদের কষ্টার্জিত আয় দেশের আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘শুরু থেকেই সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক পরিকল্পনা করে একসঙ্গে কাজ করছে। যে কারণে দেশে ‘কোয়ালিটি গ্রোথ’ নিশ্চিত হয়েছে। অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

’ তিনি বলেন, ব্যাপক কৃষি ঋণ বিতরণের ফলে দেশ খাদ্য উৎপাদনে প্রায় স্বায়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে। ফলে বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হচ্ছে না। এতে সরকারের প্রায় ২০০ কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা বেঁচে যাচ্ছে। এটা অর্থনীতিকে বড় স্বস্তিতে রেখে ভাল অবস্থানের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে। গবর্নর বলেন, ‘জিডিপিতে শিল্প ও কৃষি খাতের যে অবদান তা দেশের পরিশ্রমী উদ্যোক্তা ও কৃষকের কল্যাণেই।

ফলে অর্থনীতি বিকশিত হচ্ছে, যা বিদেশীদের চোখ এড়াচ্ছে না। বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প এখন বিদেশীদের চোখেও ধরা পড়ছে। ’ এর আগে চলতি মাসের গোড়ার দিকে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সাপ্তাহিক ইকোনমিস্টের ‘আউট অব বাস্কেট’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়ে, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মডেল। দেশটির এই সাফল্য অনেকের জন্যই শিক্ষণীয়। গত ২০ বছরে মানব কল্যাণের প্রায় প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি ব্যতিক্রমধর্মী।

সময়ের পরীক্ষায় বাংলাদেশ উত্তীর্ণ এবং দেশটি এমন এক জায়গায় পৌঁছেছে যে, এটা অন্যের জন্য অনুকরণীয়। বাংলাদেশের গড় আয় ভারতের চেয়ে চার বছর বেশি। নারী শিক্ষার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ওপরে। নবজাতক, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার ব্যাপকহারে কমেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ার পরও দেশটি সাফল্য অর্জন করেতে পেরেছে।

দেশের মানুষের আয় বাড়ছে পরিমিতভাবে। এর আগে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু বাধার পরও দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এদেশের প্রবৃদ্ধির গতি বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় গতিশীল। দিন দিন বাড়ছে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা। সেই সঙ্গে বাড়ছে উৎপাদনও।

ক্রমান্বয়ে এই বাড়তি উৎপাদন এবং চাহিদাই অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। এভাবে প্রতি দশকে অর্থনীতির আকার দ্বিগুণ হচ্ছে। এ অবস্থায় শীঘ্রই ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ক্লাবে জায়গা করে নেয়ার সুযোগ হাতছানি দিয়ে ডাকছে বাংলাদেশকে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির পথে বড় বাধাগুলো হলো- অপর্যাপ্ত বিদ্যুত সরবরাহ, পরিবহন ও দুর্বল অবকাঠামো খাত, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্নীতি, দক্ষ জনশক্তির অভাব এবং বিদেশী বিনিয়োগের প্রতি চ্যালেঞ্জ। আন্তর্জাতিক মিডিয়ার এসব প্রতিবেদনই প্রমাণ করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

বিশেষ করে গত দুই দশকে আর্থ-সামাজিক খাতে বাংলাদেশের উন্নয়ন বেশ লক্ষণীয়। দ্রুত নগরায়ন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোতে শিল্পায়ন বাড়তে থাকায় জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান প্রায় ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ১৯৯০ সালেও ২০ শতাংশ ছিল। তৈরি পোশাক খাতের কল্যাণে ১৯৯০ সালের তুলনায় ২০১০ সালে জিডিপিতে রফতানি আয়ের অবদান তিনগুণ হয়েছে। বর্তমানে এই খাতে প্রায় ৩০ লাখ নারী কাজ করছে। এ অবকাঠামোগত পরিবর্তনের পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনে অগ্রগতি আসায় মানুষের জীবনযাত্রার মানের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।

গত দুই দশকে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হয়েছে। ১৯৯২ সালে ৭০ শতাংশ মানুষ সোয়া এক ডলারের কম ব্যয়ে দিন পার করলেও, ২০১০ সালে এ হার ৪৩ শতাংশে নেমে এসেছে। কৃষি থেকে বেরিয়ে আসা অনেক গ্রামীণ মানুষের জন্য নির্মাণ খাত কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একটি বড় সুযোগ করে দিয়েছে এবং বিদেশ থেকে কম দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিকের পাঠানো রেমিট্যান্স বছরে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। বিশ্বব্যাংক তার উন্নয়ন প্রতিবেদনে বলছে, চাকরি ও শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়ায় সমাজে তাদের অবস্থান আগের চেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে। সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে দরিদ্র, তরুণ ও নারীবান্ধব কর্মসূচী গ্রহণও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখছে।

এ সবের কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমার পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে আরও কার্যকর বিনিয়োগে উৎসাহ আসছে। তবে বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতার কথা বলতে গিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে দুর্নীতি প্রসঙ্গ। তাতে বলা হয়েছে, ‘দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা। বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয়ও অনেক বেশি। তবে বিদ্যুত সঙ্কট অনেকটাই নিয়মিত।

অনেক রাস্তার অবস্থাই ভাল নয়, যেগুলোর অবস্থা ভাল সেগুলোতে যানজট দেখা দেয়। ’ home sitemap rss জরুরি সংবাদ ❖ রেকর্ড ❖ বাংলাদেশ এখন ॥ সাফল্যগাথা ❖ তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ ॥ সদরঘাট রণক্ষেত্র ❖ ক্ষমতায় যেতে বেগম জিয়ার আকুতি নিয়ে নানা প্রশ্ন ❖ চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়স ৬০ বছরে উন্নীত ❖ অবশেষে কাসাবের ফাঁসি কার্যকর ❖ মোবা০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তৈরি পোশাক শিল্পের চাঙ্গাভাবের কারণেই এ সময়ে বাংলাদেশ ছয় দশমিক তিন শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছে। যে কারণে আন্তর্জাতিক রেটিং কোম্পানি গোল্ডম্যান সস বাংলাদেশকে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীনের পর পরবর্তী ১১ উদীয়মান দেশের একটি হিসাবে উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আরও একটি বড় অবদান রাখছে প্রবাসী আয়। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৫০ লাখ কর্মী বিদেশে কাজ করছে।

এই কর্মীদের বেশিরভাগই অবস্থান করছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাজ্যে। বিদেশ অবস্থানরত এই বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী ২০১১ সালে ১২শ’ কোটি কোটি ডলার পাঠিয়েছে দেশে। ফলে বাংলাদেশ দশ হাজার কোটি ডলারের অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর বলেন, এক্ষেত্রে সরকারের কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। বিশেষ করে সরকারের ডিজিটাইজেশন নীতি, পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনায় ইনক্লোসিভ প্রবৃদ্ধির পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত এবং কৃষি ও এসএমই খাতের প্রতি গুরুত্বারোপ বাংলাদেশকে উন্নয়নের ‘গতিপথে’ এনে দাঁড় করিয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারের এ নীতি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কৃষকদের কাছে ঋণ পৌঁছে দিয়েছে। আর ১০ টাকার হিসাব খোলার মাধ্যমে দুর্নীতিমুক্তভাবে দেশের অসহায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা পৌঁছে দিচ্ছে। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিকে একটি ‘পুনর্জাগরণের’ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের এ অগ্রগতির কারণগুলো তুলে ধরতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতির পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে প্রবাসী আয়।

এ বছর এ প্রবাসী আয় ১৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। প্রবাসী আয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো সরকার বিদেশী জনশক্তি রফতানি বাড়িয়েছে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন দেশে রেমিট্যান্স হাউস খুলে তাদের কষ্টার্জিত আয় দেশের আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘শুরু থেকেই সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক পরিকল্পনা করে একসঙ্গে কাজ করছে। যে কারণে দেশে ‘কোয়ালিটি গ্রোথ’ নিশ্চিত হয়েছে।

অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে এসেছে। ’ তিনি বলেন, ব্যাপক কৃষি ঋণ বিতরণের ফলে দেশ খাদ্য উৎপাদনে প্রায় স্বায়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে। ফলে বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হচ্ছে না। এতে সরকারের প্রায় ২০০ কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা বেঁচে যাচ্ছে। এটা অর্থনীতিকে বড় স্বস্তিতে রেখে ভাল অবস্থানের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে।

গবর্নর বলেন, ‘জিডিপিতে শিল্প ও কৃষি খাতের যে অবদান তা দেশের পরিশ্রমী উদ্যোক্তা ও কৃষকের কল্যাণেই। ফলে অর্থনীতি বিকশিত হচ্ছে, যা বিদেশীদের চোখ এড়াচ্ছে না। বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প এখন বিদেশীদের চোখেও ধরা পড়ছে। ’ এর আগে চলতি মাসের গোড়ার দিকে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সাপ্তাহিক ইকোনমিস্টের ‘আউট অব বাস্কেট’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়ে, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মডেল। দেশটির এই সাফল্য অনেকের জন্যই শিক্ষণীয়।

গত ২০ বছরে মানব কল্যাণের প্রায় প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি ব্যতিক্রমধর্মী। সময়ের পরীক্ষায় বাংলাদেশ উত্তীর্ণ এবং দেশটি এমন এক জায়গায় পৌঁছেছে যে, এটা অন্যের জন্য অনুকরণীয়। বাংলাদেশের গড় আয় ভারতের চেয়ে চার বছর বেশি। নারী শিক্ষার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ওপরে। নবজাতক, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার ব্যাপকহারে কমেছে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ার পরও দেশটি সাফল্য অর্জন করেতে পেরেছে। দেশের মানুষের আয় বাড়ছে পরিমিতভাবে। এর আগে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু বাধার পরও দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এদেশের প্রবৃদ্ধির গতি বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় গতিশীল। দিন দিন বাড়ছে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা।

সেই সঙ্গে বাড়ছে উৎপাদনও। ক্রমান্বয়ে এই বাড়তি উৎপাদন এবং চাহিদাই অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে। এভাবে প্রতি দশকে অর্থনীতির আকার দ্বিগুণ হচ্ছে। এ অবস্থায় শীঘ্রই ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ক্লাবে জায়গা করে নেয়ার সুযোগ হাতছানি দিয়ে ডাকছে বাংলাদেশকে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধির পথে বড় বাধাগুলো হলো- অপর্যাপ্ত বিদ্যুত সরবরাহ, পরিবহন ও দুর্বল অবকাঠামো খাত, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্নীতি, দক্ষ জনশক্তির অভাব এবং বিদেশী বিনিয়োগের প্রতি চ্যালেঞ্জ।

আন্তর্জাতিক মিডিয়ার এসব প্রতিবেদনই প্রমাণ করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গত দুই দশকে আর্থ-সামাজিক খাতে বাংলাদেশের উন্নয়ন বেশ লক্ষণীয়। দ্রুত নগরায়ন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোতে শিল্পায়ন বাড়তে থাকায় জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান প্রায় ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ১৯৯০ সালেও ২০ শতাংশ ছিল। তৈরি পোশাক খাতের কল্যাণে ১৯৯০ সালের তুলনায় ২০১০ সালে জিডিপিতে রফতানি আয়ের অবদান তিনগুণ হয়েছে। বর্তমানে এই খাতে প্রায় ৩০ লাখ নারী কাজ করছে।

এ অবকাঠামোগত পরিবর্তনের পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনে অগ্রগতি আসায় মানুষের জীবনযাত্রার মানের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। গত দুই দশকে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ হয়েছে। ১৯৯২ সালে ৭০ শতাংশ মানুষ সোয়া এক ডলারের কম ব্যয়ে দিন পার করলেও, ২০১০ সালে এ হার ৪৩ শতাংশে নেমে এসেছে। কৃষি থেকে বেরিয়ে আসা অনেক গ্রামীণ মানুষের জন্য নির্মাণ খাত কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একটি বড় সুযোগ করে দিয়েছে এবং বিদেশ থেকে কম দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিকের পাঠানো রেমিট্যান্স বছরে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। বিশ্বব্যাংক তার উন্নয়ন প্রতিবেদনে বলছে, চাকরি ও শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়ায় সমাজে তাদের অবস্থান আগের চেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে।

সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে দরিদ্র, তরুণ ও নারীবান্ধব কর্মসূচী গ্রহণও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখছে। এ সবের কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমার পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে আরও কার্যকর বিনিয়োগে উৎসাহ আসছে। তবে বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতার কথা বলতে গিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে দুর্নীতি প্রসঙ্গ। তাতে বলা হয়েছে, ‘দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা। বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয়ও অনেক বেশি।

তবে বিদ্যুত সঙ্কট অনেকটাই নিয়মিত। অনেক রাস্তার অবস্থাই ভাল নয়, যেগুলোর অবস্থা ভাল সেগুলোতে যানজট দেখা দেয়। ’ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.