(....আমি বা দিকে তাকিয়ে দেখি ঐ পাগল হাতে ইয়া মোটা এক লোহার পাইপ নিয়ে এই দিকেই তেড়ে আসছে। আমি এই দৃশ্য দেখেই দিলাম দৌড়। পাগলটা গিয়ে ধরল ক্যানভাসারকে, ‘আমি পাগল? ঐ, আমি পাগল?...)
একদিন ডি.আই.টি-তে গিয়েছিলাম ডাক্তার দেখাতে। ডাক্তার আসবে চারটায়, আমি চলে গিয়েছিলাম এক ঘন্টা আগে। এই এক ঘন্টা কী করব ভাবতে ভাবতে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে পাঁচ টাকার বাদাম কিনলাম।
অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই বাদাম শেষ হয়ে গেল। পাশেই ছোলা বিক্রি হচ্ছে। আরও পাঁচ টাকার ছোলা কিনলাম। ছোলাও কিছুক্ষণের মধ্যে শেষ হয়ে গেল। মার্কেটের পাশে একটা খালি জায়গায় একটা ক্যানভাসারকে ঘিরে মানুষজন ভিড় করে আছে।
আমি গিয়ে সেখানে উকি দিলাম। হ্যাংলা-পাতলা একজন লোক নানান মোশন নিয়ে কথা বলে যাচ্ছে। তার পাশে কিছু জিনিসপত্র। জিনিসপত্রের মধ্যে আছে ব্রিফকেসের মত একটা কেস। কেসের উপরের গ্লাসের ভিতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে নানা রঙের, লাল, নীল, সবুজ রঙের পাথর।
তার পাশে তোয়ালে দিয়ে উপরের অংশ ঢাকা একটা পুরনো আমলের বিশাল সাইজের ক্যাসেট প্লেয়ার। ক্যানভাসার ক্যাসেট প্লেয়ারকে সাউন্ড বক্স হিসেবে ব্যবহার করে হাতে ধরা মাইক্রোফোন দিয়ে কথা বলছে, ‘ ....এই মূল্যবান পাথর আপনেকে শনির গ্রাস, রাহুর গ্রাস থেকে রক্ষা করবে। ....অতি মূল্যবান পাথর, যার হাতে বসবে সে হবে মহারাজ। এই যে আমার হাতে দেখতাছেন পাথর গুলা, এগুলিরে আমি যতœ করি, সম্মান করি আর আমারেও ভালবাইস্যা এরা কিছু ক্ষমতা দিছে....কী চলতাছে কার মনের ভিতরে...সেইটা জানার ক্ষমতা দিছে আমারে....এই যে ছোট ভাইয়া ( ক্যানভাসার ভিড়ের ভিতর থেকে কম বয়সী একটা ছেলেকে বের করে তার সামনে নিয়ে আসল), ছোট ভাইয়া বাড়ি থেইকা রাগ কইরা বাইর হইয়া আসছে। এখন তার ভিতরে চলতাছে নানান চিন্তার ঝড়।
সে এখন কী করব, কীভাবে ফিরব বাড়িতে, কী করতাছে তার মা-বাপে....। কি ভাইয়া, ঠিক বলছি কি-না বলেন?’
ছেলেটি মাথা নিচু করে ফেলে, মাথা নাড়ল। চারদিকে সমানে হাততালি পড়ল।
ঠিক এই সময় কোথা থেকে যেন একটা পাগলাটে ধরনের লোক, তার গায়ে ময়লা, মলিন পোশাক, চেহারা উদভ্রান্ত, ভিড় ঠেলে ভিতরে ঢুকে গরম হয়ে বলল, ‘ ঐ কী শুরু করছস এইখানে? বন্ধ কর। ’ বলে কিছুক্ষণ হুমহাম করে ভিড় ঠেলে বের হয়ে কোথায় যেন চলে গেল।
পাগলের কারনে ক্যানভাসারের কার্যক্রম কিছুক্ষণের জন্য বাধা পড়েছিল। সে আবার শুরু করল। বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন অজানা কথা বলে আবার আসর জমিয়ে ফেলল।
ঠিক তখন সেই পাগলাটে লোকটা আবার এসে হাজির। লোকজনের ভিড় ঠেলে ভিতরে ঢুকে গিয়ে ক্যানভাসারের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘যাস নাই এহনও? ঐ......’।
এবার মনে হয় ক্যানভাসারের রাগ হল। সে বলল, ‘ এই কী চাস তুই? চিনস আমারে? চিনস? পাগলামি করনের জায়গা পাছ না? হু? তুই যে কেমনে পাগল হইলি সেইটা কী আমি জানি না? কমু? কমু সকল ভাইসবরে?’
লোকজন বলতে শুরু করল, ‘বলেন ভাই, বলেন, বলেন। ’
‘ অয় পাগল হইছে অর ভাই-বইনের কারণে। অর ভাই-বোন অর সকল সম্পত্তি আত্মসাৎ করছে। অরে কিছু দেয় নাই।
সেই দুঃখে অয় আজকা পাগল হইয়া রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে। ’
আমি লক্ষ্য করছিলাম পাগলটাকে। সে হঠাৎ যেন ঠান্ডা মেরে গেল। মাথাও কিছুটা নিচু করে ফেলেছে। এক ফাকে আস্তে করে ভিড় গলে চোরের মত মাথা নিচু করে বের হয়ে সরে পড়ল।
ব্যাপারটা আমি বুঝতে পারলাম না। ঘটনা কী? ক্যানভাসারের কথা কি সত্য? পাগলটা এমন করল কেন?
কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ দেখি ভিড় করা লোকজন ‘আ আ’ করে চিৎকার দিয়ে এদিক সেদিক ছুটে পালাচ্ছে। ব্যাপার কী? আমি বা দিকে তাকিয়ে দেখি ঐ পাগল হাতে ইয়া মোটা এক লোহার পাইপ নিয়ে এই দিকেই তেড়ে আসছে। আমি এই দৃশ্য দেখেই দিলাম দৌড়। পাগলটা গিয়ে ধরল ক্যানভাসারকে, ‘আমি পাগল? ঐ, আমি পাগল? আমার ভাই-বইনে আমার সম্পত্তি মাইরা দিছে? তুই জানলি কেমনে? হ্যা? ....তরে আমি আজকা মাইরালামু.....ইয়া......।
’
আমার আর সেখানে থাকার সাহস হল না। পাগল মানুষ, কার রাগ শেষে কার উপর ঝাড়ে। আমি গিয়ে সোজা ডাক্তারের চেম্বারে ুঢকে পড়লাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।