সদ্য পাস করে যারা এখন চাকরির বাজারে প্রবেশ করছেন তারা মূলত বাস্তব জগতে পা রাখতে যাচ্ছেন। এটি মূলত নিজস্ব ক্যারিয়ার গঠনের সময়। এটি একটি পিচ্ছিল রাস্তা। অসাবধানতার কারণে যে কেউ পা পিছলে পড়ে যেতে পারে আর তাতে ক্যারিয়ারে নামতে পারে বড় ধরনের ধস। যে কোনো প্রতিষ্ঠানে মেধাবী ও চ্যালেঞ্জিং প্রফেশনালদের চাহিদা ব্যাপক।
এখন প্রশ্ন হতে পারে কিভাবে নিজেকে চাহিদাসম্পন্ন কর্মী হিসেবে গড়ে তুলবেন। এর উত্তর একটাই- সেটা হলো কৌশল। এই কৌশলই বিশ্বের সফল ব্যক্তিদের বড় বড় সাফল্যের কারণ। তাই যারা চাকরির বাজারে প্রবেশ করেছেন তাদের নিম্নোক্ত কৌশলগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে—
কৌশল-১ : শিক্ষা জীবন শেষ হওয়ার আগেই প্রত্যেকের যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। প্রত্যেকেই যখন তার ক্যারিয়ার নির্ধারণ করতে চাইবে তখন তার নিজস্ব যোগ্যতা, দুর্বলতা, পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি নিয়ে ভাবতে হবে।
যার যে বিষয়ে বিশেষ পছন্দ আছে সে বিষয় সম্পর্কে আগেই খোঁজ-খবর নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। নিজ নিজ পছন্দ এবং যোগ্যতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রকাশ করতে হবে।
কৌশল-২ : দ্রুত চাকরি তারাই পান যারা তাদের মেধা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে সঠিকক্ষেত্রে সঠিকমাত্রায় প্রয়োগ বা উপস্থাপন করতে পারেন। এই প্রয়োগ করার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে যত বেশি উদ্যোগ গ্রহণ করবেন আপনার মেধা ব্যবহারের ক্ষমতা ও কৌশল ততো বেশি বৃদ্ধি পাবে।
কৌশল-৩ : যেখানেই চাকরির দরখাস্ত করুন না কেন অবশ্যই সংশ্লিষ্ট পেশা বা চাকরি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় খোঁজ খবর রাখবেন।
সবচেয়ে বিবেচ্য বিষয় হলো সেটা আপনার জন্য কতটা উপযোগী তা যাচাই করবেন। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর প্রার্থী বাছাইয়ের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আপনার দক্ষতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটাতে হবে।
কৌশল-৪ : চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আর একটি বিষয় হলো নেটওয়ার্কিং। নিজস্ব কোনো সুপ্ত মেধা থাকলে তার বিকাশ ঘটিয়ে, বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে যারা আগে চাকরি পেয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগ করে, নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাহচর্য এবং প্রতিবেশী, যারা চাকরিজীবী তাদের সাহচর্যে যেতে হবে। যদি নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকে তাদের তা জানাতে হবে।
আর তা না থাকলে তাদের কাছে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়ে রাখতে হবে।
কৌশল-৫ : যতদূর সম্ভব সুন্দর এবং যুগপোযোগী পোশাক পরিধান করতে হবে। পোশাক পরিচ্ছদে মানুষের ব্যক্তিত্ব যেমন ফুটে ওঠে তেমনি স্মার্টনেসও বৃদ্ধি পায়। জীবনবৃত্তান্তে প্রদত্ত ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি সঠিক হওয়া বাঞ্ছনীয়। চাকরি প্রাপ্তিতে প্রাথীকে অবশ্যই পেশাগতভাবে দক্ষ হতে হবে।
কেননা চাকরি প্রদানকারী কতৃপক্ষ পুরোপুরি ফ্রেস প্রার্থীদের চেয়ে অভিজ্ঞ প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।
কৌশল-৬ : হতাশ হওয়া যাবে না কোনো অবস্থাতেই। কারণ বাস্তব জগৎ যেমন কঠিন তেমনি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। দু একবার ব্যর্থ হয়ে হতাশ হলে চাকরি কপালে জুটবে না। তবে চাওয়া এবং পাওয়ার মধ্যে ব্যবধানটা অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে।
এক্ষেত্রে প্রথমেই বাস্তব-সম্মত প্রত্যাশা থাকা উচিত। আকাশ কুসুম কল্পনা যেমন সম্ভব নয় তেমনি তা করাও উচিত নয়। প্রথমেই ফুল টাইম চাকরি না পেলে পার্ট টাইম চাকরি পেলেও করতে হবে। এক্ষেত্রে যে সুবিধা সেটা হলো হতাশা কিছুটা কাটবে। তবে তার চেয়েও বড় কথা অভিজ্ঞতা অর্জিত হবে, যা একজন প্রার্থীর চাকরির জন্য বিশেষ প্রয়োজন।
তবে লক্ষ্য রাখতে হবে প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞতা কতটুকু কাজে দিবে। যদি তা ভিন্ন ধরনের হয় তাহলে গভীর চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
কৌশল-৭ : সুযোগ চিনে নেওয়ার ক্ষমতাও (ability to recognize opportunity) চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় বিচক্ষণতা। যারা এক্ষেত্রে দ্রুত এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে তারাই ভালো ভালো অফারগুলো গ্রহণ করে। বলাবাহুল্য সিদ্ধান্তহীনতায় অনেক সুযোগ নষ্ট হয়।
সিদ্ধান্ত গ্রহণের এই অক্ষমতা (inability of decison making) কারো কারো ক্রমেই অভ্যাসে পরিণত হয়।
কৌশল-৮ : সুযোগ চিনে নিতে হলে চ্যালেঞ্জিং-এর মানসিকতা থাকতে হয়। সংশ্লিষ্ট চাকরি বা পেশার বিভিন্ন দিক বিচার-বিবেচনা করে ঝুঁকি নিতে হয়। চাকরিতে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে ঝুঁকি নেয়ার জন্য আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ অনেকসময় মানসিক দৃঢ়তা ও সাহস বড় বড় সাফল্য এনে দেয়।
সর্বোপরি বলা যায়, সমসাময়িক বিশ্ব পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিকতার সাথে তাল মিলিয়ে চাকরির বাজারেও আপনাকে নিতে হবে নতুন নতুন কৌশলের আশ্রয়। প্রতিনিয়ত সনাতনি চিন্তাধারার বিলুপ্তি ঘটছে। আসছে নতুন চিন্তা, নতুন চেতনা। আপনার নিজের যোগ্যতা, চাকরির বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি, চাকরিদাতাদের চাহিদা ও মনোভাব ইত্যাদি বিষয়গুলো সঠিক সমন্বয় সাধনের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখতে হবে। চাকরি দাতাদের কাছে আপনার সঠিক উপস্থাপনটা যতো কৌশলের সাথে তথা ভালোভাবে করতে পারবেন আপনার চাকরিও তত দ্রুত হওয়ার পথ সুগম হবে।
সংগ্রহীত ... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।