জামায়াত শিবির হিটলিস্ট তৈরি করেছে। মন্ত্রী, এমপি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, বিচারক, শিক্ষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব আছেন তালিকায়। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বিশেষ করে বঙ্গভবন, গণভবন, মন্ত্রিপাড়া, রেডিও-টেলিভিশন স্টেশন, বিদ্যুত, গ্যাস, ওয়াসাসহ স্পর্শকাতর স্থানে নাশকতা কর্মকা- চালানোর নীলনকশা তৈরি করেছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করতে এ ধরনের নানামুখী কৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছে জামায়াত শিবির। এই ধরনের নীলনকশার অংশ অনুযায়ী আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের গাড়ি বহরসহ কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা ও পুলিশের গাড়িসহ যানবাহনে আগুন দেয়ার ঘটনায় শতাধিক জামায়াত শিবির কর্মী-ক্যাডারকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে।
গোয়েন্দা সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
গত ১৩ নবেম্বর রাজধানীর কাওরান বাজারের সার্কফোয়ারা মোড়ে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের গাড়িবহরে হামলাসহ পুলিশের ওপর জামায়াত-শিবির ক্যাডারদের হামলার ঘটনায় আটক ২৬ জনের প্রত্যেককে ১০ দিন করে রিমান্ড এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর আগে গত ৫ নবেম্বর থেকে গত ১৩ নবেম্বরের আগ পর্যন্ত প্রায় ১ সপ্তাহকাল ধরে রাজধানী ঢাকায় জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালানোর ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশ ৭৪ জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এক সপ্তাহ কাল ধরে জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাসের তা-বলীলা চলে দেশব্যাপী। তাদের হাতে আইনমন্ত্রীর গাড়িবহরে হামলা ছাড়াও গত এক সপ্তাহে ২ শতাধিক পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছে।
তারা হঠাৎ করে এত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কেন সে ব্যাপারে গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধানে এই ধরনের তথ্য পেয়েছে তদন্তকারীরা।
বিজয়ের মাস আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ দু’এক জনের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় ঘোষণার আগেই বিচার প্রক্রিয়া বানচাল করার জন্য নীলনকশা তৈরি করেছে। পরিকল্পনাকারীরা ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতা চালানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। এজন্য জামায়াত-শিবির বিশেষ কমিটি ও ছোট ছোট গ্রুপ গঠন করেছে।
নাশকতা চালাতে সারাদেশের জামায়াত শিবির কর্মী-ক্যাডারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও মেসে অবস্থান নিয়েছে ক্যাডাররা। ক্যাডারদের মূল টার্গেট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, পথচারী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও নিজ দলীয় কর্মী। দেশী ও বিদেশী জঙ্গী সংগঠনগুলোকে সংগঠিত করে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা দেশে নাশকতা, খুন, বোমাবাজি, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়েছে। টার্গেটকৃতদের ওপর চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।
আগামী ডিসেম্বরের হামলার প্রস্তুতি হিসেবে জামায়াতের স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রতিব্যাচ করে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। পিস্তল, রিভলবার, গ্রেনেড, বোমা ও বিস্ফোরক দ্রব্যের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে তাদের। পার্বত্য চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও সিলেটের দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলের গহীন অরণ্যে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প পরিচালনা করা হচ্ছে। দেশী-বিদেশী এনজিওদের অর্থের অনুদানে জঙ্গী প্রশিক্ষণের এসব ক্যাম্প পরিচালিত হচ্ছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে গ্রেফতারকৃতরা। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবি, হুজি, হিজবুত তাহরীরসহ জঙ্গী সংগঠনগুলোকে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালাতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনার জন্য জিহাদী বই, অডিও, ভিডিও ক্যাসেট সরবরাহ করা হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির জন্য সভা, সমাবেশ, সিডি, লিফলেটের মাধ্যমে প্রচার চালানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রেনেড-বোমা হামলা চালানোর অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জেএমবি, হুজি বা জঙ্গী সংগঠনগুলোর আদলে নিজেরাই বোমা তৈরি করছে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের ক্যাডাররা। এজন্য শিবিরের মধ্যে প্রশিক্ষিত আলাদা একটি ‘উইং’ আছে। তাদের কাজ হলো বিস্ফোরক সম্পর্কে ধারণা বোমা তৈরি তৈরি করা।
শিবিরের মধ্যে যারা অস্ত্র বিস্ফোরক সম্পর্কিত কাজ-কর্মে পারদর্শী তাদের সংগঠন থেকে ‘ইনসেনটিভ’ বা সুবিধাও দেয়া হচ্ছে।
জামায়াতের সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের তাদের প্রস্তুতির বিষয়ে প্রায় দেড় বছর আগেই হুঁশিয়ার ও সতর্ক করে দিয়েছে সরকারকে। জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের তখনই দম্বোক্তি করে বলেছেন, ‘জামায়াত-শিবিরের শক্তি এমনিতেই আছে। সময় হলে এই শক্তি সরকারের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হবে। যথাসময়ে যথাযথ ব্যক্তির ওপর আমরা আমাদের শক্তি প্রয়োগ করব।
যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার আগে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী এটিএম আজাহারুল ইসলাম পল্টন ময়দানে এক প্রতিবাদ সভায় বলেছেন, ‘‘প্রয়োজনে শহীদ হব, জেলে যাব, তবু রাজপথ ছাড়ব না’।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেছেন, গোয়েন্দা সংস্থার দফতরে জামায়াত নেতাদের এসব বক্তব্য রেকর্ড করা আছে। এসব বক্তব্যের বাস্তবায়ন ঘটাতেই গত এক সপ্তাহে রাজধানী ঢাকায় আইনমন্ত্রীর গাড়ি বহর ও পুলিশের ওপর আক্রমণ, গাড়িতে আগুন, নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত শতাধিক জামায়াত শিবির ক্যাডারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও এই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। পূর্বপরিকল্পিত নীলনকশা অনুযায়ী গত ১৩ নবেম্বর রাজধানীর কাওরান বাজারে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের গাড়িবহরসহ পুলিশ স্কট, কর্তব্যরত পুলিশের ওপর আক্রমন, পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয়াসহ সারাদেশে এই ধরনের সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালানোর ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে।
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের গাড়িতে হামলা ও রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা পৃথক ৪টি মামলায় আটক ২৬ জনের প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যাদের রিমান্ডে দেয়া হয়েছে তাঁরা হচ্ছেন, নূর আলম ওরফে নূর ইসলাম, আফজাল হোসেন, শরিফুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির, গিয়াস উদ্দিন, আক্তার হোসেন, মেহেদী হাসান, ইসরাফিল মুকিত, আল মাহদী, আব্দুল ওয়াদুদ, শিহাবুল ইসলাম, আলাউদ্দিন, মোঃ হোসেন, আব্দুল কাদের ভুঁইয়া, রফিকুল ইসলাম, ইয়াহিয়া ওরফে মশিউর, অলিউল্লাহ, শহিদুর রহমান পলাশ, সাদেক আহম্মেদ, আজিজ মুন্সী, রুহুল আমিন, সুরুজ মিয়া, ইসমাইল হোসেন, নুর হোসেন, মঈনুল ইসলাম ও কেরামত বিন আহম্মেদ। আসামিদের মধ্যে ১২ জনকে দ্রুত বিচার আইনের দুই মামলায় রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। তথ্যসূত্র: জনকণ্ঠ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।