১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী ছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর প্রধান মিত্র। জামায়াতের সার্বিক সহযোগিতা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া তখন বাংলাদেশে এত ভয়াবহ গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটন সম্ভব হতো না। ’৭১-এ ইসলামের দোহাই দিয়ে যাবতীয় গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসযজ্ঞকে বৈধতা দিয়েছে জামায়াত।
মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার ধর্মের নামে গণহত্যার পুনরাবৃত্তি রোধ এবং ধর্মের পবিত্রতা রক্ষার জন্য বাংলাদেশে জামায়াতের রাজনীতি অর্থাৎ ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। ’৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য বঙ্গবন্ধুর সরকার ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকা-ের পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দেন এবং সংবিধান সংশোধন করে ধর্মনিরপেক্ষতা খারিজ করে জামায়াত এবং সমচরিত্রের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক দলসমূহকে ধর্মের নামে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন। তখন থেকে জামায়াতের যে সহিংস রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করছি আজও তা অব্যাহত রয়েছে, বরং আরও শক্তিশালী হয়েছে। এই শক্তি প্রদর্শন করতে গিয়ে জামায়াত কখনও সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও এথনিক সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করে, কখনও মুক্তচিন্তার বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীদের হত্যা ও নির্যাতন করে এবং কখনও ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে অথবা বিচ্ছিন্নভাবে হত্যা ও সন্ত্রাস চালায়। ইসলামের নামে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও লুণ্ঠন হচ্ছে জামায়াতের রাজনীতির প্রধান অভিব্যক্তি।
বাংলদেশে সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও এথনিক সম্প্রদায়ের ওপর যাবতীয় নির্যাতন, বৈষম্য, পিতৃপুরুষের ভিটেমাটি থেকে উৎখাত, দেশত্যাগে বাধ্য করা প্রভৃতির ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে জামায়াতে ইসলামী ও সমচরিত্রের মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল ও সংগঠনসমূহ।
তাদের রাজনৈতিক দর্শন অমুসলিমদের হত্যা ও নির্যাতনে উৎসাহিত করে। তারা মনে করে এতে পরকালে তাদের বেহেশত এবং ইহকালে বৈষয়িক প্রাপ্তি ঘটবে। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ চলাকালে যে সব হিন্দু পরিবার ব্যবসা-বাণিজ্য-জমিজমা-সম্পদ ফেলে জীবনের নিরাপত্তার প্রয়োজনে ভারতে চলে গিয়েছিল রাষ্ট্র সেগুলো শত্রু সম্পত্তি ঘোষণা করে আইন তৈরি করে অধিগ্রহণ করেছিল।
’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে মুসলিম ও অমুসলিম নির্বিশেষে এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালী জাতীয়তাবাদকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হলেও পাকিস্তান আমলের সাম্প্রদায়িক বৈষম্যমূলক কালো আইনটি নাম পরিবর্তন করে বহাল রাখা হলো।
শত্রুসম্পত্তির পরিবর্তে বলা হলো অর্পিত সম্পত্তি। কোন হিন্দু পরিবারের এক ভাই ভারতে চলে গেছে, অপর ভাই বাংলাদেশে থেকে গেছে-এমন বহু পরিবারের ঘরবাড়ি ও জমিজমা সরকার অর্পিত সম্পত্তি গণ্য করে অধিগ্রহণ করেছে। অধ্যাপক আবুল বারকাতের গবেষণা থেকে আমরা জানতে পারি, এসব সম্পত্তির সিংহভাগ বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কিতরা ভোগদখল করলেও আওয়ামী লীগও সুযোগ মতো দখল করেছে। ২০০৯ সালে প্রকাশিত অধ্যাপক আবুল বারকাতের গবেষণা থেকে আমরা জেনেছি–এ পর্যন্ত অর্পিত সম্পত্তির নামে হিন্দুদের ২.৬ মিলিয়ন একর জমি এবং ১.২ মিলিয়ন ঘরবাড়ি রাষ্ট্র দখল করেছে। ২০০৬ সালের জরিপ থেকে আমরা জেনেছি, এর ভেতর ৬৭.৩% দখলে নিয়েছে বিএনপির লোকজন, ১৩.৯% আওয়ামী লীগ, ৯% জামায়াতে ইসলামী, ৭% জাতীয় পার্টি এবং অবশিষ্ট জমি ও ঘরবাড়ি অন্যান্য ধর্মভিত্তিক দলের লোকজনের দখলে রয়েছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে অর্পিত সম্পত্তির নামে হিন্দুদের জমিজমা ঘরবাড়ি অধিগ্রহণ বন্ধ করলেও বেআইনীভাবে যাদের সম্পদ কেড়ে নেয়া হয়েছে তারা আজও তা ফেরত পায়নি।
একইভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী আদিবাসীদের ওপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস শুরু হয়েছে পাকিস্তান আমলে। কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের সময় লক্ষাধিক চাকমা গৃহহীন ও জীবিকাহীন হয়েছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করবার জন্য সমতলের বাঙালীদের নিয়ে বসতি স্থাপনের উদ্যোগ পাকিস্তান আমলেই নেয়া হয়েছিল, যা স্বাধীন বাংলাদেশেও অব্যাহত ছিল। সেটেলার বাঙালী ও সামরিক বাহিনীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে চাকমারা এক পর্যায়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছিল।
১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে সংক্ষুব্ধ পাহাড়ীদের শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও বিএনপি ও জামায়াতের প্রবল প্রতিরোধের কারণে এই চুক্তি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগোষ্ঠীর ওপর সেটেলার বাঙালী ও সামরিক বাহিনীর নির্যাতন ও বৈষম্যমূলক আচরণের এখনও অবসান ঘটেনি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভাস্বর সংবিধান ও আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও মর্যাদা প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও এথনিক সম্প্রদায়ের মতো আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ও জামায়াতে ইসলামীর ধারাবাহিক হামলা ও নির্যাতনের শিকার। পাকিস্তানের মতো জামায়াত বাংলাদেশে আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করতে না পারলেও যখনই রাজনৈতিকভাবে তারা কোণঠাসা হয়েছে তখনই নিরীহ আহমদিয়াদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের তল্পিবাহক মৌলবাদী সংগঠনগুলো যখনই সুযোগ পেয়েছে তখনই আহমদিয়া মসজিদে বোমা হামলা করেছে, মসজিদে বোমা মেরে মুসল্লিদের হত্যা করেছে, কোরান ও অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থ আগুনে পুড়িয়েছে, ঘরবাড়ি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। এসব হামলা থেকে নারী ও শিশুরাও রেহাই পায়নি।
আহমদিয়াদের ওপর সর্বশেষ হামলার ঘটনা ঘটেছে গত ৭ নবেম্বর ২০১২ রংপুরের তারাগঞ্জে। জামায়াতের সন্ত্রাসীরা আহমদিয়াদের নির্মিয়মাণ মসজিদে হামলা করে এটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। স্থানীয় আহমদিয়াদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, শারীরিক নির্যাতন সবই করে।
এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা সম্পর্কে ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন আহমদিয়া সম্প্রদায় ও নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ। হামলাকারী জামায়াতের প্রধান মিত্র বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আক্রান্ত আহমদিয়াদের প্রতি সহানুভূতি জানাতে গিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মুসলমানরাও নিরাপদ নয়। অথচ খালেদা জিয়ার শাসনামলেই খুলনায় আহমদিয়া মসজিদে জামায়াতীরা বোমা মেরে নামাজরত মুসল্লীদের হত্যা করেছে। খালেদা জিয়ার সরকারই বাংলাদেশে আহমদিয়া প্রকাশনী নিষিদ্ধ করেছিল। বিএনপির আশ্রয়-প্রশ্রয় ছাড়া জামায়াতের পক্ষে কখনও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর ধারাবাহিকভাবে এসব হামলা, হত্যা, নির্যাতন, ভাঙচুর, লুণ্ঠন ও ভিটেছাড়া করা সম্ভব হতো না।
স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে অভ্যুদয়ের পর বাংলাদেশ অধিকাংশ সময় শাসিত হয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক ও পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বারা। এসব দল যখন ক্ষমতায় থাকে সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও এথনিক সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন বৃদ্ধি পায়। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বপ্রদানকারী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সাম্প্রদায়িক নির্যাতন বন্ধ হয় বটে, কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকজনও সংখ্যালঘু নির্যাতনে অংশগ্রহণ করে। অতি সম্প্রতি কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর নৃশংস হামলার সময় মূল পরিকল্পনা ও হামলাকারী জামায়াত স্থানীয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের একটি অংশকেও ব্যবহার করেছে।
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুধু বাংলাদেশ, ভারত বা পাকিস্তানের সমস্যা নয়।
ধর্ম, বর্ণ, জাতীয়তাবাদ, ভাষা ও আঞ্চলিকতার নামে সংখ্যালঘুর ওপর সংখ্যাগুরুর নির্যাতন ও বৈষম্য আজ বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী সহযোগীরা যে উদ্দেশ্যে হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধদের ওপর হামলা চালায় তা অন্য ধর্মের মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে অনুরূপ অপরাধে উৎসাহিত করে। সকল ধর্মের মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির স্বার্থ অভিন্ন, পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। ভারতে হিন্দু মৌলবাদীরা একটি বাবরি মসজিদ ভাঙলে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মুসলিম মৌলবাদীরা সেই অজুহাতে হিন্দুদের শত শত মন্দির ভাঙে। তবে ভারতের হিন্দু মৌলবাদীদের সঙ্গে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মুসলিম মৌলবাদীদের একটি পার্থক্য হচ্ছে এই যে, ভারতের বিজেপি বা সংঘ পরিবারের কোন আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক নেই।
বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর মদদদাতা হিসেবে দেশের ভেতরে বিএনপি; দেশের বাইরে পাকিস্তানের আইএসআই, সৌদি আরবের বাদশাহ ও মধ্যপ্রাচ্যের শেখরা এবং রাবেতা আল ইসলামের মতো বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম এনজিওগুলো রয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীকে আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট মনে করে ‘মডারেট ইসলামী দল’। আমেরিকা ও ন্যাটোর দেশগুলো তালেবান-আল কায়দা দমনের নামে পাকিস্তানে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। এসব হামলায় দশজন আল কায়দা বা তালেবান নিহত হলে এর দুই বা তিন গুণ সাধারণ মানুষ নিহত হচ্ছে। যার ফলে পাকিস্তানে ড্রোন হামলা ভুক্তভোগীরা দিন দিন আমেরিকাবিরোধী এবং তালেবান-আল কায়দার সমর্থক হচ্ছে।
বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী আমেরিকার কাছ থেকে ‘মডারেট ইসলামী দলে’র সনদ পেয়ে আরও উৎসাহের সঙ্গে সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও এথনিক সম্প্রদায় এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তির ওপর হামলা করছে। হরকাত-উল জেহাদ, জামা’আতুল মুজাহিদীন ও জইশে মোহাম্মদের মতো মৌলবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন নিষিদ্ধ হলে তাবৎ জঙ্গী মৌলবাদীদের গডফাদার জামায়াতে ইসলামী কেন নিষিদ্ধ হবে না? জামায়াতের মতো গণতন্ত্রের মুখোশধারী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক দল তালেবান-আল কায়দার চেয়ে ঢের বেশি ভয়ঙ্কর ও ক্ষতিকর। আমেরিকা ও ন্যাটোর সদস্যরা যদি সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে আন্তরিক হয় তাদের উচিত অবিলম্বে জামায়াতে ইসলামীকে মডারেট ইসলামী দল গণ্য না করে সন্ত্রাসী দলের তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা। তালেবান-আল কায়দা থাকবে না অথচ জামায়াত থাকবে, এমন আত্মঘাতী চিন্তা শুধু আমেরিকা নয়, ন্যাটোর সদস্যদেরও পরিত্যাগ করতে হবে। এতে আমাদের যেমন মঙ্গল, একইভাবে পশ্চিমেরও মঙ্গল।
এ কথা আমরা বহুবার বলেছি বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করা না হলে জঙ্গী মৌলবাদ নির্মূল হবে না, সংখ্যালঘু ধর্মীয় ও এথনিক সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনও বন্ধ হবে না। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে জামায়াত নিষিদ্ধ করা যায়। জামায়াতের গঠনতন্ত্র বাংলাদেশের সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। জামায়াত বিশ্বাস করে আল্লাহর সার্বভৌমত্বে, জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতায় নয়। জামায়াত মনে করে কোরান হবে আমাদের সংবিধান, মানবরচিত সংবিধান তারা মানে না।
জামায়াত মুসলমান ও অমুসলমান নাগরিকদের সমান অধিকার ও মর্যাদায় বিশ্বাস করে না। এমনকি আহমদিয়া মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতায়ও তারা বিশ্বাস করে না।
বাংলাদেশে ’৭১-এর গণহত্যাকারী, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। এ পর্যন্ত জামায়াতের ৮ নেতাকে এসব অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এই ট্রাইব্যুনালে শুধু ব্যক্তির বিচার হবে, কোন সংগঠনের নয়।
আমরা বলছি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত নূরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে প্রথম দফায় ২৪ জন নাৎসী নেতার বিচারের পাশাপাশি নাৎসী পার্টির হাই কমান্ডসহ ছয়টি সংগঠনের বিচার হয়েছিল। বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী দল হিসেবে ’৭১-এর গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধকে ধর্মের নামে বৈধতা দিয়েছে। জামায়াতের দলীয় দর্শন, যা মওদুদীবাদ নামে পরিচিত, ধর্মের নামে এই দলের ঘাতক বাহিনীর সদস্যদের যাবতীয় হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন ও ধ্বংসযজ্ঞে উৎসাহিত করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামী, রাজাকার, আলবদর, আলশামস প্রভৃতি সংগঠনের বিচার না হলে ভবিষ্যতে ’৭১-এর মতো গণহত্যার পুনরাবৃত্তি রোধ করা কঠিন হবে। জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাস প্রতিরোধের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর পরই আঞ্চলিক টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন।
আমাদের কোনও কোনও প্রতিবেশী এই উদ্যোগের প্রতি আগ্রহ প্রদর্শন করেনি। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার প্রস্তাব নিয়ে আর অগ্রসর হননি। জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাস দমনের জন্য শুধু আঞ্চলিক নয়, গ্লোবাল টাস্কফোর্স গঠন প্রয়োজন। একই সঙ্গে দেশে দেশে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির বিকাশের জন্য পশ্চিমের উন্নত ও গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলদেশ গড়তে হলে, ধর্মের নামে হানাহানি, সন্ত্রাস, নির্যাতন বন্ধ করতে হলে জঙ্গী মৌলবাদ নির্মূল করতে হলে, জাতি, ধর্ম, ভাষা, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সব মানুষের জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা, সমান অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হলে এবং গণতন্ত্র ও আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রা নির্বিঘœ করতে হলে ধর্মের নামে রাজনৈতিক দল গঠন এবং ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
প্রত্যেক নাগরিকের নিজ নিজ ধর্ম পালন ও প্রচারের সমান অধিকার যেমন নিশ্চিত করতে হবে, সংখ্যাগুরু-লঘু নির্বিশেষে সকল ধর্ম থেকে সরকার ও রাষ্ট্র বিযুক্ত থাকতে হবে। এই বোধ যদি রাজনৈতিক নেতৃত্বের না থাকে সে দেশ কখনও বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারবে না। তথ্যসূত্র: জনকণ্ঠ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।