আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বের সবচেয়ে গরিব রাষ্ট্রপ্রধান

[img|http://ciu.somewherein.net/ciu/image/58536/small/?token_id=ddfe550c4756e5e0d84ee6a72382ed32 রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে একজন প্রেসিডেন্টের জীবন ধারা কেমন হতে পারে, তা সবারই জানা। প্রথাগত এসব ঠাটবাটের বালাই নেই লাতিন আমেরিকার দেশ উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট হোসে মুজিকার। জীর্ণ খামার নিয়ে খুব সাধারণ এক মানুষের মতো দিন গুজরান করছেন তিনি। আরাম-আয়েশের সরকারি সব সুযোগ দূরে ঠেলে বেছে নিয়েছেন সাধারণ মানুষের জীবন। সরকার প্রেসিডেন্ট হোসে মুজিকার জন্য বিলাসবহুল সরকারি বাসভবন বরাদ্দ করেছিল।

তবে তিনি সেই বাড়িতে যাননি। প্রেসিডেন্ট হলেও তিনি থাকেন রাজধানী মন্টেভিডিও থেকে বেশ দূরে স্ত্রীর খামারবাড়িতে। স্ত্রীর সঙ্গে ফুলের চাষ করেন। আয়ের বেশির ভাগ অংশই ব্যয় করেন দাতব্য কাজে। মুজিকার বাড়ির বাইরে কাপড় কাচার ঘর।

মাঠের এক কূপ থেকে পানি তোলা হয়। কূপের চারপাশটা আগাছায় ভরা। প্রেসিডেন্টর এই বাসভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে মাত্র দুজন পুলিশ। আর রয়েছে তিন পেয়ে কুকুর ম্যানুয়েলা। ২০১০ সালে প্রেসিডেন্ট হোসে মুজিকা তাঁর সম্পদের বিবরণ দেন।

এতে দেখা যায়, তাঁর সম্পদের পরিমাণ মাত্র এক হাজার ৮০০ ডলার। এ বছর তিনি তাঁর স্ত্রীর অর্ধেক সম্পদও এই বিবরণে যোগ করেন। এতে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় দুই লাখ ১৫ হাজার মার্কিন ডলার। তবে তাঁর এই সম্পদ দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট দালিনো অ্যাস্ত্রোরির ঘোষিত সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ। আর মুজিকার পূর্বসূরি প্রেসিডেন্টের সম্পদের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ।

মুজিকা তাঁর মাসিক আয়ের ৯০ শতাংশই দাতব্য কাজে দেন। এর মূল্যমান প্রায় ১২ হাজার মার্কিন ডলার। খামারবাড়ির বাগানে রাখা পুরোনো চেয়ারে বসে পছন্দের কুকুরটিকে আদর করতে করতে মুজিকা বলছিলেন, ‘আমি এভাবেই আমার জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছি। আমার যা আছে, তা নিয়ে আমি চলতে পারি। ’ মুজিকা ষাট ও সত্তরের দশকে উরুগুয়ের গেরিলা সংগঠন তুপামারোসের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

কিউবার বিপ্লবে অনুপ্রাণিত হয়ে উরুগুয়ের বামপন্থীরা এই গেরিলা সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। গেরিলা জীবনে তিনি ছয়বার গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এবং ১৪ বছর কারাভোগ করেছেন। কঠোর শর্ত আর একাকিত্বের মধ্যেই বন্দিজীবন কাটাতে হয়েছে তাঁকে। দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরলে ১৯৮৫ সালে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে বন্দিজীবন তাঁকে এমন জীবনদর্শন শিখিয়েছে বলে জানালেন প্রেসিডেন্ট মুজিকা।

তিনি বলেন, ‘আমাকে বিশ্বের সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট বলা হয়। আমার তা মনে হয় না। যারা শুধু ব্যয়বহুল জীবনযাপনের জন্য কাজ করে, সব সময় আরও বেশি বেশি চায়; তারাই গরিব। ’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেক বেশি বিত্তবৈভব না থাকলে সারাজীবন শুধু দাসের মতো কাজ করার কোনো দরকার নেই; বরং ওই সময়টা নিজেকে দিন। আমাকে পাগল বা পালগাটে বৃদ্ধ মনে হতে পারে।

কিন্তু এটা আমার নিজের পছন্দ। ’ এ বছরের জুনে রিও সম্মেলনেও উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট নিজের দর্শন তুলে ধরেন। টেকসই উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বে যে পরিমাণ সম্পদ আছে তা দিয়ে কি ৭০০-৮০০ কোটি মানুষ একইভাবে ভোগ ও অপচয় করতে পারবে, যেটা উন্নত বিশ্ব করছে? এ ধরনের উচ্চ ভোগবাদ পৃথিবীর ক্ষতি করছে। ভোগবাদের প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশ্বনেতারা অন্ধ বলে তিনি তাঁদের সমালোচনা করেন। উরুগুয়ের জরিপ প্রতিষ্ঠানের ইগনাসিও জুয়াসনাবার বলেন, এমন জীবন যাপনের জন্য সাধারণ মানুষ প্রেসিডেন্টের প্রতি সহানুভূতিশীল।

তবে সরকারের ভুল কাজের সমালোচনা করতে তারা পিছপা হয় না। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় বিরোধীরা মুজিকার সমালোচনায় মুখর। ২০০৯ সালের নির্বাচনের পর এবার প্রথমবারের মতো তাঁর জনপ্রিয়তা ৫০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। তবে জনপ্রিয়তা রেটিং নিয়ে তেমন চিন্তিত নন মুজিকা। কারণ, আইন অনুযায়ী ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারবেন না।

৭৭ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব শেষে রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন বলে জানালেন। View this link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.