আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুক্ত সূর্য্য

এলাহাবাদ থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে ফুলপুরের এই স্কুলটায় চাকরি নিয়ে আসার পর সুচরিতা স্কুলের দ্বরোয়ান সুখবিন্দারকে বলেছিল দিন-রাতের কাজের জন্য তাকে একজন বিশ্বস্ত লোক খুঁজে দিতে আর তার তিন-চার দিনের মাথায় রুকমনিকে সঙ্গে করে নিয়ে এসে সুখবিন্দার তাকে সেলাম জানিয়ে বলেছিল, দিদিমণি, রুকি আমাদের গাঁয়ের মেয়ে, দেখবেন ও একদম নিজের মতো করে আপনার সব কাজ করে দেবে, কোনো অসুবিধা হবে না আপনার। আমি তো দিন-রাতের লোক খুঁজছি, রুকমনির সিঁথিতে লেগে থাকা সিঁদুরের আবছা রঙটার দিকে তাকিয়ে সুচরিতা কথাগুলি বলে উঠেছিল। উত্তরে সুখবিন্দার তাকে অভয় দিয়ে জানায় যে বছর দুয়েক আগে রুকমনির স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে, তাই রাতের বেলাতে রুকমনির তার কাছে থাকতে কোনো অসুবিধা হবে না। সুচরিতার একাকী সংসারটাকে সত্যিই রুকমনি নিজের মত করে ভালবেসে ফেলে, দিদিমণির কখন কি দরকার, দিদিমণি কি খেতে ভালবাসে, দিদিমণি কোন কথাটা কতখানি বলা পছিন্দ করে, সবকিছুই কিছুদিনের মধ্যে মেয়েটার জানা হয়ে যায়, সুচরিতাও কখন জানি নিজের অজান্তেই মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলে, স্কুলে যাওয়া, ক্লাস করানো আর স্কুল থেকে ফিরে আসা, এটুকুই যেন সুচরিতার নিজস্ব জীবন এখন, বাকি জীবনটুকুর সব কিছুরই মালিকানা যেন আজ রুকমনির হাতে............... না, রুকমনির বরের মতো তমাল তাকে ত্যাগ করে চলে যায়নি, কিন্তু তবু কেন জানি সুচরিতার মনে হয় রুকমনি আর সে বুকের অলিন্দে একই অনুভূতি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, মেয়েটার সঙ্গে তার অনেক মিল, নিজের নেওয়ার নির্দিষ্ট ক্লাস শেষ করে সে যেমন অনুপস্থিত দিদিমণিদের ক্লাস খুঁজে পড়াতে থাকে, রুকমনিও তেমনি মাজা বাসনগুলোকে তাক থেকে নামিয়ে আবার তা মাজতে বসে যায়, কলেজ থেকে ফিরে সুচরিতা ব্যলকনির চেয়ারে বসে দূরের আকাশটার দিকে তাকিয়ে থাকে, দিনের কাজের শেষে বারান্দার সিঁড়িতে বসে রুকমনিও কৃষ্ণচূড়ার পাতার ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে থাকে। স্নান সেরে ‘মুক্ত সুর্যের’ ভালো থাকা চেয়ে মনে-মনে সুচরিতা যখন সিঁথির আলপথে সিঁদুর ছোঁওয়ায়, রুকমনিও তখন দিনের শেষে মুখে পাউডার লাগিয়ে চিরুনির মাথাটা দিয়ে সিঁথিটা ভরিয়ে দেয় মেটে রঙা সিঁদুরে।

স্বপ্নরা ঘুমের মধ্যেই কেন হারিয়ে যায় না, অচেতন মনের সীমা পার করে তা কেন আবার মনের পর্দায় ভেসে ওঠে, না, ঘুম, আজ আর আসবে না, রাত আজ, কবিতার ঝুলি নিয়ে পাশে এসে বসবে। তারপর, সব কথা - সব কবিতা শেষ হলে, দুজনা তারা প্রতীক্ষা করবে - একটা ‘মুক্ত সুর্যের’ সুর্যোদয়ের। এই রাত গুলোয় সুচরিতা ঘরের বড় লাইটটা জ্বালিয়ে রকিং চেয়ারে বসে কবিতার বই হাতে করে কাটিয়ে দেয়, কখনও বা আলমারির পাল্লা খুলে তমালের চিঠি ভরা ফাইলটা বের করে নেয়। রাতের আঁধারে চিঠির অক্ষরগুলি যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে, সুচরিতার চোখ বেয়ে তারা ধীরে-ধীরে তার শরীরের কোনায়-কোনায় ছড়িয়ে পরতে থাকে, শব্দের সেই পথ চলায় সুচরিতার শরীরে এক অজানা উত্তাপের জন্ম হয়, একা-একাই সে পুড়তে থাকে তার ‘মুক্ত সুর্যের’ কথা ভেবে। ‘বালিশের পাশে বই খুলে প্রায় বালকের মতো ঘুমিয়েছে একদা প্রেমিক মুখ একটু খোলা, মাথা বেঁকে আছে পাশে - কে বলবে দিনের বেলা তার অমন দাপট! এখন সত্যিই যদি জোরে একটা হাওয়া আসে পাতার পোশাক তো কিছু আটকাতে পারবে না!’ মাঝের দরজার ফাঁক দিয়ে আলোর যে টুকরো ছটা হলঘরে গিয়ে পৌঁছেছে তাতে কখন জানি রুকমনির ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে, আড়মোড়া ভেঙ্গে সে ধুমায়িত কফির পেয়ালা হাতে নিয়ে এসে দাঁড়ায়।

‘দিদি, আবার যদি কফি খেতে ইচ্ছে করে তাহলে আমায় ডেকো কিন্তু, নিজে নিজে আবার বানাতে যেও না। মেয়েটা বড় ভালোবাসে তাকে, বড় যত্ন করে, একদম যেন মায়ের মতো, কখনো বা বোনের মতো......... আজ আর কবিতা পড়তে ভালো লাগছে না, চেয়ারে শরীরটাকে ছেড়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে সুচরিতা, নিজের অজান্তেই স্বপ্নটা কখন যেন আবার ফিরে আসে, একটা ছোট্ট ঘর, বাইরে থেকে তালা দেওয়া, ঘরটার একদিকের দেওয়ালে একটা জানলা, জানলার লোহার জালিগুলি এত ঘন যে তার ফাঁক দিয়ে একটা আঙুলও গলানো যায় না আর জালির পিছনে মোটা কালো কাঁচের দেওয়াল, যার মধ্যে দিয়ে ভিতর থেকে বাইরের সব কিছু দেখা গেলেও বাইরের কেউ তাকে দেখতে পায় না। ডাক পিওনটা দরজায় তালা দেখে ফিরে যাচ্ছিল, কিন্তু কি ভেবে, সে আবার ফিরে আসে, সাইকেলটাকে গাছে হেলান দিয়ে রেখে খামের মুখ খুলে খোলা চিঠিটা জানলার কাঁচে সেঁটে দিয়ে যায়। তবে কি পিওনটা জানে যে সুচরিতা এই ঘরে বন্দী? তোমাকে কি এই টিলাটার কথা আগে কখনো বলেছি সুচরিতা? মাঝে-মাঝে বেলা শেষে তিন কোনা এই টিলাটার মাথায় এসে দাঁড়াই......... সাইকেলের প্যাডেলে পিওনের পা, এলোমেলো ভাবে বইতে থাকা হাওয়ায় জানলার কাঁচে লেগে থাকা চিঠিটা যে কোনো সময় উড়ে যাবে, সুচরিতা তাই তাড়াতাড়ি করে লাইনগুলো পড়তে থাকে ............মনে পড়ে তোমার, তিরতির করে বয়ে যাওয়া নদীটার জলে পা ডুবিয়ে তুমি আমার হাতটা ধরে বলে উঠেছিলে............ বাকি টুকু আর পড়া হয় না, দমকা হাওয়ায় চিঠিটা জানলার কাঁচ থেকে এক সময় .................. সুচরিতা চিৎকার করে পিওনটাকে ডাকতে থাকে, কিন্তু পুরু কাঁচের দেওয়াল ভেদ করে ............... গাছ তলায় পড়ে থাকা শুকনো পাতার বুকে রাতের বাতাস শব্দ তোলে, চোখ মেলে তাকায় সুচরিতা, ফাইল থেকে তমালের চিঠিটা তুলে নিয়ে হাত বোলায়, ভাজ করা কাগজটা নাকের কাছে মেলে ধরে, জোরে একটা শ্বাস নেয়, আচ্ছা, স্বপ্নে কেন সে চিঠিটা পুরোটা পড়তে পারে না......... সুচরিতা, তোমাকে কি এই টিলাটার কথা আগে কখনো বলেছি? জানো তো যখন আর কিছু ভালো লাগে না, যখন এই মনটা দুরত্বের সীমাটাকে ভুল বলে প্রমান করতে চায় তখন বেলা শেষে তিন কোনা এই টিলাটার মাথায় এসে দাঁড়াই...... চেয়ে থাকি দিগন্তরেখার ওপারে সুর্যের হারিয়ে যাওয়ার দিকে......... মনে পরে বহুদিন আগের সেই সুর্যাস্তের কথা......... ঘাটশিলার সেই বিকেলে কলেজের আর সবাই যখন বিভূতিভূষণের বাড়ি দেখতে গিয়েছিল, তুমি আর আমি ওদেরকে লুকিয়ে চলে এসেছিলাম সুবর্নরেখার পার ধরে অনেক দূরে। তিরতির করে বয়ে যাওয়া নদীটার জলে পা ডুবিয়ে তুমি সেদিন আমার হাতটা ধরে বলে উঠেছিলে আচ্ছা তমাল বলো তো 'নদী কেন সুর্যাস্তের আলোয় আকাশের মতো ভেসে যায় না?' আমাকে ঘন-ঘন সিগারেটে টান দিতে দেখে নিজেই তারপর খিলখিলিয়ে হেসে উঠে বলেছিলে জানতাম, পারবে না।

কবিদের করা প্রশ্নের উত্তর কখনো কি খুঁজে পাওয়া যায়? সুচরিতা, এখনও কি রোজ রাতে তুমি কবিতার বই বুকে নিয়ে ঘুমোও ............ এখনও কি মন কেমন করা কবিতার কোনো লাইন পড়লে তা সযত্নে মনের কোঠায় তুলে রেখে দাও আমায় জিজ্ঞাসা করবে বলে? আমাদের ক্যাম্পটা কাল বা পরশু এখান থেকে উঠে আরো দূরের কোনো নির্জন জায়গায় চলে যাবে। জায়গাটা এখনও আমরা জানি না। কৌশিকদাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কিন্তু কৌশিকদা-ও বলতে পারলেন না। আসলে যে সমাজটাকে বদলে দেব বলে আমাদের এই সংগ্রাম, সেই সমাজের বিশ্বাসভঙ্গের রোগটা কিন্তু আমাদের মধ্যেও আজ জন্ম নিয়েছে। গত তিন মাসের মধ্যে দুবার পুলিশ এনকাউন্টার হওয়ার পরে আমরাও তাই আজ আর অনেকে-অনেককে বিশ্বাস করতে পারছি না।

যাইহোক, সন্ধ্যা হয়ে আসছে, দূরের গাঁয়ের যে ছেলেটা আমাদের ক্যাম্পের ডাক হরকরার কাজ করে তার আসার সময় হয়ে গিয়েছে আর ও ফিরে গেলে চিঠিটা হয়তো আর কোনদিন তোমাকে পাঠানোই হবে না, তাই, আজকের মতো এই টুকুই, ভালো থেকো, ফিরে এলে যে ‘মুক্ত সুর্যটা’ আমায় উপহার দেবে বলে নিজের বুকে ধরে রেখেছ, তার উষ্ণতা নিও প্রান ভরে, তমাল লম্বা ঝুলের পাঞ্জাবী, কালো ফ্রেমের চশমা, এক মাথা এলোমেলো চুল, তমালের সেকেন্ড ইয়ার, সুচরিতার ফার্স্ট ইয়ার, প্রথম দেখা কলেজ ক্যানটিনে, টেবিল বাজিয়ে তমাল গাইছিল যারা কাফেতে মোড়েতে বসে আছ আমি তোমাদের ছেড়ে চললাম, তোমরা হতাশ পেয়ালা ভরে নিলে আমি রক্ত ঝড়িয়ে কাঁদলাম চারমিনারের ধোঁয়াতে জীবনে পেয়ালা জমাট কুয়াশা ফ্লোরোসেন্ট আলোর মোড়ে-মোড়ে ঘোরে তৃষিত মুক্তি পিপাসা আজ ভেঙ্গে যাব, কাল জুড়ে যাব তবু ভাঙ্গতে জুড়তে চলেছি কালবোশেখিটা তোমাদের দেব খুঁজে আনতে চলেছি। চেনা মুখ তার অচেনা দৃষ্টি নিয়ে, চায়ের গ্লাস হাতে ক্যান্টিনের এলোমেলো আড্ডার ফাঁকে, সুচরিতার বুকে ঝড় তুললো, বাড়ির বাধা-নিষেধের গণ্ডি পার করে সেই ঝড়ে সে তখন তমালের সঙ্গে কখনো আউট্রাম ঘাটে – কখনো রেড রোডের প্যাসেজ রোড ধরে চিনে বাদামের খোসা ছাড়ানোর মাঝে – আবার কখনো বা নতুন কবিতার বইয়ের খোঁজে বই পাড়ার এ মাথা থেকে সে মাথায় এলোপাথাড়ি ঘুরে বেড়ায় - বাঁধন হীন উচ্ছ্বল এক জল তরঙ্গের মত জীবন যেন তখন ভেসে চলছিল এক অচেনা ভাটিয়ালী সুরে......... তারপর সেদিন, তমালের সারা শরীর জুড়ে সেদিন জ্বর, খুঁজে খুঁজে সুচরিতা এলো তার মেস বাড়ির চিলে কোঠার ঘরে। ফাঁকা মেস বাড়িতে তমালের উষ্ণ শরীরে সেদিন সুচরিতা পুড়ে গিয়েছিল যেভাবে মোমবাতি নিজেকে পুড়িয়ে ফেলে............ আর তার ঠিক সাতদিনের মাথায় মাঝ রাতে পুলিশের দলটা এসে কড়া নেড়েছিল তাদের বাড়ির দরজায়। বাবা দরজা খুললে ওনারা সেদিন বাবাকে দিয়ে সুচরিতাকে ডাকিয়ে নিয়ে আসে তাদের বসার ঘরে। তমালের ফটো দেখিয়ে পুলিশরা দু ঘন্টার মতো সেদিন তাকে এবং তার বাড়ির সবাইকে হাজারো জিজ্ঞাসা করেছিল।

সুচরিতা আগেই জানত, বাবা-মা সেদিন-ই জানলেন যে তমাল প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আর পুলিশের মুখ থেকে সুচরিতা জানল যে সেদিন সন্ধ্যায় পুলিশের একটা দল যখন তমালকে অ্যারেস্ট করবে বলে তার মেসবাড়িতে হানা দিয়েছিল তখন তমাল নাকি ছাদের রেন ওয়াটার পাইপ বেয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। এরপর মাস তিনেক অনেক চেষ্টা করেও তমালের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়ে ওঠেনি আর তারপরই আচানক একদিন দুপুরে ডাক পিওনটা এসে তাকে দিয়ে গিয়েছিল তমালের একটা চিঠি। ‘...পুলিশের তাড়া খেয়ে আমি এবং আমাদের দলের আরো তিন জন এখন অন্ধ্র আর উড়িষ্যার বর্ডারে ... খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোমায় সু, জানি তোমারও আমাকে... আর কটাদিন ......... প্লিজ আর কটাদিন অপেক্ষা করো সু, দেখবে, আমি আবার ঠিক ফিরে আসব তোমার কাছে...’ কিন্তু না, তমাল ফিরে আসে না, সুচরিতার অপেক্ষাকে অন্তহীন করে এর মাঝে এক-এককরে অনেক কিছু ঘটে যায়......... সুচরিতার কলেজের পড়া শেষ হয় ......... তারপর কোলকাতার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে দিদিমণির চাকরি পাওয়া ............... বাবা-মা দুজনার একে-একে মারা যাওয়া ............... এক একটা দিন ধরে বয়সের সাথে এগিয়ে চলা .................. হাঁপিয়ে উঠেছিল ক্রমশ সুচরিতা ............ কোলকাতা শহরটা আর ভালো লাগছিল না............... ফুলপুরের এই রেসিডেন্সিয়াল স্কুলটায় তাই অ্যাসিস্টান্ট হেড মিসট্রেসের চাকরিটা পাওয়ার পর দ্বিতীয়বার আর সে ভাবেনি। ফুলপুরে আসার পর তার চিঠির উত্তরে তমাল লিখেছিল ‘শহরটা এতদিন শুধু আমার একার ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিল, এবার তাকে আমাদের দুজনার জন্য প্রতীক্ষা করতে হবে সু......... না তমাল, তুমি পারলে না...... পারলে না ফিরতে তোমার শহরের কাছে............পারলে না বলতে আমাকে সেদিনের জিজ্ঞাসা করা সে প্রশ্নের উত্তর............ মনে আছে তমাল, তোমার চিঠির উত্তরে তোমায় আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম............ আচ্ছা তমাল সত্যি করে বলো তো, তুমি কি আজো বিশ্বাস করো যে বন্দুকের নল-ই ক্ষমতার একমাত্র উৎস, মৃত্যু-ই কি একটা মৃত্যুর এক এবং একমাত্র প্রত্যুত্ত্বর?’ রাতের অন্ধকারটা ফিকে হয়ে আসছে, রুকমনি কখন যেন কফির জল গরম করতে বসিয়ে দিয়েছিল, সুচরিতা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়।

কফির কাপ হাতে ব্যলকনির রেলিংয়ে কনুই ঠেকিয়ে সে আকাশের দিকে তাকায়। রাতের অন্ধকারটা খুব দ্রুত মুছে সেখানে ভোরের আলো ফুটে উঠছে............ তমাল তার শেষ চিঠিতে লিখেছিল প্রতিদিনের নিয়ম মেনে চলা সুর্যটাকে নাকি তার আর ভালো লাগে না, সুচরিতা জানে না তমালের সে চিঠির উত্তরে লেখা সুচরিতার কথাগুলি তমালের কাছে পৌঁছেছিল কি না শেষ অবধি........... ভালো লাগছে না, তমাল ......... তোমাকে ছাড়া আর একটুও ভালো লাগছে না............ তাড়াতাড়ি করে ফিরে এস প্লিজ......... জানো তমাল, তুমি লিখেছ না যে প্রতিদিনের নিয়মে বাঁধা সুর্য্য আর তোমার ভালো লাগে না, তাই দেখো, তোমায় একটা ‘মুক্ত সুর্য’ উপহার দেব বলে সেই কবের থেকে নিজের বুকে তাকে ধরে রেখেছি, কিন্তু বড় উত্তাপ তার, আমি একা-একা আর সেই উত্তাপ সহ্য করতে পারছি না, তমাল, প্লিজ ফিরে এস, চলো, মুক্ত সুর্য্যের উত্তাপ-টুকু আমরা দুজনা ভাগ করে নেই............ তমাল আর কোনোদিন ফিরবে না, যেদিন ওদের ক্যাম্পটার আরো দূরের কোনো জঙ্গলে শিফট হওয়ার কথা ছিল সেই দিন ভোর রাতে পুলিশ এসে আবার হানা দিয়েছিল তাদের উপর। গুলির বদলা গুলি - হত্যার বদলা হত্যা, ভোরবেলাটাকে সেদিন নারকীয় করে তুলেছিল। ঘটনার বেশ কিছুদিন পরে কৌশিকদার চিঠিতে সুচরিতা সব কিছু জানে। পুলিশের একটা গুলি তার বুকে ধরে রাখা সুর্যটা আসলে যে মুক্ত নয়, সে-ও যে পরাধীন, তা প্রমান করে দিয়েছিল সেদিন।

রুকমনি এসে দাঁড়িয়েছে, ‘দিদি, টিফিনে আজ চাপাটি আর আলু-মটরের সবজী দিয়ে দেব?’ সুচরিতা মাথা নাড়ে। আকাশকে সুর্যাস্তের শেষ জ্বলনটুকু বুকে নিয়ে রাতের অন্ধকারে একা-একা জ্বলতে হয়। সুচরিতা, তবু নদী হতে চায় না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.