আমি কখনো যায়নি জলে,কখনো ভাসিনি নীলে,কখনো রাখিনি চোখ ডানা মেলা গাঙচিলে
সিনেমা বা রুপালী জগৎ আমাদের অনেকেরই বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম। একসময় যখন ছোট ছিলাম তখন প্রায়ই ভিসিআর এ হিন্দি সিনেমা দেখার চল ছিলো। এমনও হয়েছে পাশের বাসায় ক্যাসেট আনসে আমরা বাচ্চা পার্টি হাজির.............। আর একটা বিনোদন ছিলো-শুক্রবার বিকাল ৩ টার বাংলা সিনেমা গুলো। কত ছোট ছোট আবেগ তখন নিজেদের মধ্যে ঢুকে যেত.ভিলেন নায়ককে পিছন থেকে মারতে আসলে চিৎকার-পিছনে দেখ ,পিছনে দেখ।
আবার শেষ দৃশ্যে নায়ক নায়িকা মারা গেলে কেমন জানি দুঃখ দুঃখ ভাব।
সে সময় আরও একটা বিষয় আমাদের মজ্জা গত হয়ে যায় আর তা হলো নায়ক নায়িকার ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হওয়া বা নায়ক নায়িকার ব্লাড ক্যান্সার হওয়া। প্রায় সিনেমা তেই কারো না কারো ব্রেন টিউমার বা ব্লাড ক্যান্সার হচ্ছে। এখন বুঝি ব্যাপার গুলো অতটা রোমান্টিক না বেশ ভয়াবহ ব্যাপার । ব্লাড ক্যান্সারের নায়িকা কেমোথেরাপী পেয়ে চুল ছড়িয়ে মাঠে ঘাটে গান গেয়ে বেড়াচ্ছে বাস্তবে এটা সম্ভব না।
২য় ঘটনা - প্রায়ই নায়ক গাড়ী চালাতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করে মাথায় আঘাত পেয়ে সব ভুলে যায়,পরে আবার সেই একই জায়গায় আঘাত পেয়ে সব কিছু মনে আসে..............। কি ভয়াবহ ব্যাপার । হেড ইনজুরী তে বেশীর ভাগ রোগীর জ্ঞান থাকেনা..। আর কয়েক দিন পর যদি জ্ঞান ফিরে তাহলে সাধারনত সব কিছু মনে করতে পারে। হয়ত বিছ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ভুলে যেতে পারে কিন্তু কখনও দেখিনি বাড়ী সুদ্ধ সবাই কে চিনছে না।
আর এমন ব্যাপার ত নেই ই যে সে জায়গায় আঘাত লাগলে স্মৃতি ফেরৎ আসবে।
৩য় ঘটনা- নায়কের বাবার ২টা কিডনীই নষ্ট হয়ে গেছে। আকাশ জুড়ে বিদ্যুৎ চমক কারন তখনই কিডনী না দিলে বাবাকে বাচানো যাবেনা ।
বিশ্বাস করুন এখনও যদি কাউকে সি আর এফ বুঝাতে যাই তাহলে শুনতে হয় ওনার কি ২টা কিডনী ই নস্ট? আমি বলি হ্যা কারন ১ টা কিডনী কখনও ফেল করেনা .............। রেনাল ফেইলর মানেই ২ টা কিডনী নস্ট আর সি আর এফ যদি ও দুরারোগ্য রোগ কিন্তু ডায়ালাইসিস বা ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে মানুষ ভালো ভাবে বেচে থাকে(সি আর এফ নিয়ে বিস্তারিত পোস্ট দিবো)
আরও অনেক বাস্তব বিবর্জিত ঘটনা দেখা যায় যেমন এক ভাই অসুস্হ আরেক ভাই রক্ত দিবে..।
পাশাপাশি বেড এ ২ জন শুয়ে একজনের শরীর থেকে আরেক জনের শরীরে স্যালাইন ব্যাগের মাধ্যমে রক্ত চলে যাচ্ছে......। বাস্তবে এটা কখনও ই সম্ভব না । ব্লাড ট্রান্সফিউশনের বেশ কিছু স্টেপ আছে গ্রুপিং,ক্রস ম্যাচিং তার পর স্ক্রিনিং তার পর ট্রান্সফিউশন। যারা নিয়মিত রক্ত দান করেন তারা জানেন সিনেমাটিক ব্লাড ট্রান্সফিউশন আসলে বাস্তবে সম্ভব না ।
৫ম ঘটনা - সিনেমার সাইড নায়ক নায়িকা বা ভিলেন বা বা গুলি খেয়ে বা বিষ খেয়ে তৎক্ষনাৎ মারা যান কিন্তু তার আগে বিশাল বয়ান দিয়ে নায়ক নায়িকার বিয়ে দিয়ে যান ।
এখানে কয়েকটা অবাস্তব ঘটনা ঘটে যেমন হার্টে বা ব্রেনে গুলি না খেলে মৃত্যু তৎক্ষনাৎ হয়না,বিষ খেলে ত নয়ই. আবার মৃত্যুর আগে কোন মানুষ ই এভাবে কথা বলেনা---- আর কিছু রোগে বললেও সেটা হয় অসংলগ্ন।
আবার দেখা যায় হাসপাতালে স্যালাইন চলছে বা মাস্কে অক্সিজেন চলছে ভিলেন এসে স্যালাইন বা মাস্ক খুলে দিলো আর রোগী মারা গেল আসলে এটাও সম্ভব না ।
আসলে সিনেমা একটা বিশাল মাধ্যম আর আমরা আমরা ছোট থেকে এর মাধ্যমে কতই না ভুল ধারনা নিয়ে বড় হই..................। কোন বিষয়ে ধারনা না থাকা ভালো কিন্তু এত দিনের ভুল ধারনা গুলো লালন করা আসলেই ঝুকিপূর্ন আর তাও যদি স্বাস্থ্যগত বিষয়ে হয়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।