বই আমি যতৈ খুলি....মন আমার উঢ়ে চলে ফরিং এর মত ঘটনা-
ময়নাকে আজ কতদিন হল বিয়ের জন্য দেখতে আসে। মেয়েটা হাতের কাজ ঘরের কাজ সব পারে। ময়নার বাবা মাকে সবাই বলে এ যেনো মেয়ে না হীরার টুকরা। কিন্তু এত ভাল মেয়েটার বিয়ে হয়না। কারণ তার গায়ের রং যে কালো।
পাত্র পক্ষ যদি আগায়ো তবু তাদের চাওয়াটা থাকে বড় বেশিই। আর ময়নার বাবারো এত দেয়ার তো ক্ষ্মতা নেই। একসময় আদরের মেয়েটাকে মনে হতে থাকে বোঝা। ময়নার মা ও আজকাল মেয়েকে খোটা দেন। কিই বা করবেন উনি পাড়া পড়শিদের কথার জন্য তারো মন খারাপ থাকে,তার উপর আরও একটা মেয়ে আছে বিয়ে দেয়ার।
তাই সব রাগ যেয়ে পড়ে মেয়েটার উপর,যেন সব দোষ যেন তার। এক সময় অনেক টাকা যৌতুক দিয়ে কাশেমের সাথে বিয়ে হয় ময়নার। তেমন কিছু করেনা কাশেম,রাজমিস্ত্রীর কাজ জানে। যখন যা পায় করে। অভাব লেগেই থাকে আর তাই বারে যৌতুকের চাহিদা।
ময়নাকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে বলে যখন তখন। তার উপর আছে গায়ের রং নিয়ে খোটা। ঘরের বউ কাজ করবে তবে ঘরের কাজ করবে কে,তাই ময়নাকেও কাজ করতে দেয়নি তার স্বামী। নির্যাতন সইতে না পেরে গায়ে একদিন আগুন দেয় ময়না।
অথচ ঘটনাটি এমনও হতে পারত…
ময়না আজ পড়াশুনা শেষ করলো।
ভাল একটি চাকরিও হয়ে গেছে তার। ময়নার বাবা মার আজ অনেক গর্ব ময়নাকে নিয়ে। একের পর এক বিয়ের ভাল ভাল সম্বোন্ধও আসছে তার। অনেক দেখে শুনে বিনা যৌতুকে বিয়ে দিলেন তারা ময়নাকে। ময়না আজ নিজে চাকরি করে।
সংসার চালায়,বাবা মাকেও দেয়। সুখের সংসার তার। লেখাপড়া করে আজ সে বাবা মার গৌরব বোঝা নয়। তার গায়ের রঙ তার বাধা হয়ে দাড়াতে পারেনি।
পরিশেষ, আজও আমাদের দেশে ময়নারা তাদের গায়ের রঙ দিয়েই পরিচিত হয়।
আজও আমাদের কাছে গায়ের সাদা রঙই সুন্দর। তাই আজও আমরা একটা মেয়ের যোগ্যতা তার গায়ের রঙ দিয়ে মাপি। তাই সমাজের দেওয়া কষ্ট নিয়ে মরছে ময়নারা,কখনও হতাশায় বা কখন শশুরবাড়ীতে। অথচ একটা মানুষ ভাল না খারাপ তার উপর নির্ভ্র করে সংসারের সুখ। একটা ফর্সা মেয়ে কিন্তু সে খারাপ মানুশ তাহলে সে সংসারে কোন্দিন সুখ আসবে না।
আবার একটা ভাল মেয়ে সে যতই কাল হোক বয়ে আনতে পারে সংসারে সুখ শান্তি। গায়ের রঙ এ কারও মেধা কমে না। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,পররাষ্ট্রমন্ত্রি,সাবেক সরাষ্ট্রমন্ত্রি,বর্তমান স্পিকার সবী নারীই। ভোট দেয়ার সময় কি ভাবেন যে উনি নারী বা উনার গায়ের রঙ কালো তাই ভোট দিবেন না?ভাবেন না। তাই চেষ্টা করুন সমাজের বাকি মেয়েগুলোদেরও তাদের কাজ দিয়ে মাপতে,গায়ের রং দিয়ে নয়।
সমস্যা সমাধানে আপনার-আমার কি কর্তব্য---
গায়ের রং নিয়ে মাতামাতি বাংলার সমাজের এক অতি পুরা্নো ব্যধি। এ মনমানসিকতার কারণে প্রতিদিন নির্যাতিত হচ্ছে হাজার হাজার নারী। সমাজের এই অবস্থা পরিবর্তনে এগিয়ে আসতে হবে আপনাকেও। আপনি যা যা করতে পারেন তা হল-
১. নিজে বুঝতে চেষ্টা করুন। গায়ের রঙ উপরওয়ালার দান।
এ কোন অপরাধ না। এতে কেউ কম হয়ে গেল না। কাল মেয়েও সুন্দর একবার তাকিয়ে দেখুন। মানুষের রুপ তার মনে,শরীরের চামড়াতে না।
২. মেয়েকে শিক্ষিত করে তুলুন,এই মেয়েই আপনার ও এদেশের মুখ একদিন উজ্জল করবে।
৩. আপনার ছেলে শিশুটিকে মেয়েদের সন্মান করতে শেখান ছোটো থেকেই। বুজতে দিন গায়ের রঙ কোন ব্যাপার না।
৪. শিক্ষা শুরু হয় নিজের ঘর থেকেই। নিজে অন্যকে সন্মান করুন। আপনাকে দেখেই আপনার ছোটরা শিখবে।
৫. আপনার মেয়েটিক শেখান সে কার থেকে কম না। হতাশা তার ধারে কাছেও আসবে না।
৬. অন্য কেউ কোন কালো মেয়েটিকে খোটা দিলে তার প্রতিবাদ করুন,তাকে বুঝান যে সে ভুল। না পারলে দয়া করে তার সাথে তাল দিবেন না।
৭. আপনার ঘরের মেয়েটিকে রঙ ফর্সাকারী ক্রিম বর্জনে উতসাহিত করুন।
এতে সে বুজতে পারবে সে যা তাতেই পরিপুর্ণ।
যদি আজ আপনি নিজে সচেতন হোন তবে আপনার দেখাদেখি আর কেউ হবে। তাকে দেখে আর কেউ। এতে নারী নির্যাতন যেমন কমবে তেমনি দেশ ও এগুবে। আর সমৃদ্ধিতেই শান্তি।
আপনার আমার সবার রক্তই লাল,গায়ের রঙ এ তা বদলায় না। সবই এক বিধাতার সৃষ্টি,তা আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন বা ছেলে কিংবা মেয়েই হোন না কেন। একটা ছেলের যেখানে রঙ কোন ব্যাপার না,তার কর্মই আসল,তে্মনি এ্কটা মেয়ের ক্ষেত্রেও তাই হোক। তার সঠিক মূল্যায়ন শুরু হক আপনার আমার থেকেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।