আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পারা গেলনা ... সত্যিই পারা গেলনা ....

নিজের সম্পর্কে লেখার কিছু নেই । সাদামাটা । সহ-ব্লগার মেঘবালিকার আজকের একটি পোষ্টে মন্তব্য করতে গিয়ে দেখি বড় হয়ে যাবে । তাই মন্তব্যটিতে যা লিখতাম হবহু তাই ই এখানে তুলে দিলাম সচতেনতার দিকটি বিবেচনা করে । মেঘবালিকা...... প্রথমে ইচ্ছে হয়নি এই "অনন্ত জলিল" সংক্রান্ত নোংরামীতে কিছু বলতে বা মন্তব্য করতে।

এখন কেন বলছি বা করছি ? কারনটা হলো এই - বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের টেকনিক্যাল দৈন্যদশা আর নিম্নমানের কারনে অনেকদিন হলো বাংলা ছবি দেখিনা । না আছে এর প্রিন্ট কোয়ালিটি, না আছে দৃশ্যকল্প, না আছে ফটোগ্রাফিক ফ্রেমিং ইত্যাকার হাযারো "নেই" । সর্বোপরি এক কথায় এর কোন্ও মানই নেই । এই মান যে উন্নত হবে এমোন আলামতও দেখতে পাইনি। হতশ্রী, দরিদ্র এক-একখানা ছবি ।

কিন্তু হঠাৎ করে একদিন টিভির চ্যানেল ঘুরাতে গিয়ে দেখি, একটি নাচের দৃশ্য । মনগ্রাহী ফটোগ্রাফি । ঝকঝকে । ভাবলাম বাংলাদেশের টিভিতে বম্বের সিনেমা দেখাচ্ছে । অবাক হলাম ।

বম্বেতে তো এরকম চেহারার কোনও নায়ক নায়িকা দেখিনি ! আরো অবাক হলাম যখন শুনলাম গানটি বাংলায় হচ্ছে । নড়েচড়ে বসলাম । পরে দেখি সোহেল রানাকে দেখাচ্ছে । বুঝলাম বাংলাদেশেরই ছবি । বাংলাদেশ এরকম টেকনিক্যালি উন্নত ছবি বানায় ? স্থুল দেহের ভূড়ি সর্বস্ব নায়িকার কোমড় দোলানো নেই ।

সিনেমাটোগ্রাফির সব কটি ক্ষেত্রে বেশ মুন্সিয়ানার পরিচয় ষ্পষ্ট । এ্যাকশন দৃশ্যগুলো হলিউডের মতোই অনেকটা । পরিচিত ঢিসুম ঢুসুম মার্কা নয় । বুকটা ভরে উঠলো গর্বে । নায়ককে আগে কখোন্ও দেখিনি ।

অভিনয়ে পারঙ্গমতা না থাকলেও "আলু আলু" মার্কা চেহারা না থাকায় ভালো লাগলো, ম্যানলি । ছবির নামটি বলতে পারবোনা কারন মাঝপথ থেকে দেখেছি । হঠাৎ মনে হলো ব্লগে "অনন্ত" নামের এক চিত্রনায়ককে নিয়ে বিদ্রুপ পোষ্টের বন্যা দেখেছি । সেখান থেকেই জেনেছি অনন্ত সাহেব নিজেই নাকি এর প্রযোজক । সে নয়তো ? তার উচ্চারন জড়তা নিয়ে বিদ্রুপের সুনামী ব্লগেই তো দেখছি ।

এখানে তার কিছু দেখা মিললো । বুঝলাম "অনন্ত" সাহেবই এখানে । বাকী পুরোটাই দেখলাম । মনে হ’লো "অনন্ত" তো প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য কাজটিই করেছে । বাংলা সিনেমার প্রতি নাক সিটকানো আমার মতো একজন দর্শককে ছোটপর্দাটিতে আটকে রাখতে পেরেছে ।

অথচ লোকে তাকে নিয়ে এ কোন আত্মঘাতী খেলায় নেমেছে ? তখন নিজের দিকে তাকালাম । আমি যে বাঙালী । আর একজনকে টেনে মাটিতে শুইয়ে দেয়াই যে আমার কাজ । আমি যা পারছিনে বা পারবোনা, তা অন্য একজনে করে ফেলবে তা কি কখোনও হয় ? হতে দেয়া যায় ? আজ সকালে বৈশাখী টিভিতে খবর দেখবো বলে সামুর পাশাপাশি টিভি ছেড়ে বসেছি । দেখি “দ্য স্পীড” ছবিটি দেখাচ্ছে ।

নামটি শুনেছি ব্লগারদের উৎসাহে (?) দেয়া পোষ্ট থেকে । আমার দেখা আগের ছবিটির মতোই পরিচ্ছন্ন । সিনেমার ভাষায় পরিচ্ছন্ন বলতে যা বোঝায় । টেকনিক্যাল দিকগুলো, চিত্রায়ন, ডেভেলপিং ইত্যাদি । ( বলে রাখি, আমি সিনেমা বোদ্ধা নই ) ভালো লাগলো ।

ব্লগে ঢুকেই আপনার পোষ্ট দেখলাম । নিজেকে সামলানো গেলোনা – এই নোংরামীর প্রতিবাদ করতেই হলো সচেতন একজন ব্লগারের দায়িত্ববোধ থেকে। সিনেমা যদি বিনোদন হয় তবে অনন্ত জলিল সাহেব তাকে ধংশের হাত থেকে টেনে তুলেছেন । আমরা আঁতেলরা ভাবি যে, সিনেমার আমরাই হাতে গোনা দর্শক । আমরা হুমায়ুন আহমেদের ছবি দেখবো, তবেই না আমরা “আঁতেল” ! কিন্তু আমাদের বাইরে যে বিপুল সাধারন মানুষ আছেন তাদের তো বিনোদন বলতে একমাত্র সিনেমাই ।

তারা সেটা বসুন্ধরা সিটিতে দেখেননা । হয়তো দিন তিনেক আগে, রাতের এক টক-শো জাতীয় সাক্ষাতকারে অনন্ত জলিল সাহেবকে প্রথম দেখলাম । বেশ সহজ সরল বলে মনে হ’লো । আঁতেলদের মতো আচরন ছিলোনা তার । উনি যে সিনেমা জগতের মহাপন্ডিত একজন, এমোন ভাবও করেননি ।

বলছিলেন- নিজের চেষ্টায়, নিজের উদ্যমে, নিজের ব্যবসায়ের টাকা খাটিয়ে উনি সিনেমাকে বিনোদন এর স্থানে নিয়ে যেতে চান । অনন্ত জলিল সাহেবের চেয়ে হাযারগুন বিত্তবান অনেক আছেন দেশে । তারা ক’জন এগিয়ে এসেছেন সিনেমাকে বাঁচাতে ? সিনেমার খোল-নলচে পাল্টে কে এগিয়ে এসেছেন “ দ্যাখো দ্যাখো এই ছবিটি আমার দেশে তৈরী ..” এমোন কথা বলতে পারা যায় , তেমন একটা আবহাওয়া, একটা বিশ্বাসের স্থান তৈরী করতে ? অথচ, এই ভদ্রলোকটিকে নিয়ে টানাটানির শেষ নেই । কারা করছেন ? আমরা শিক্ষিত সম্প্রদায়ের লোকেরাই । পরের কুৎসা গাওয়া সংস্কৃতি থেকে আমরা আজও বেরুতে পারলামনা, ভেবে দুঃখ হয় ।

নিজেদের কিছু করার যোগ্যতা যাদের নেই তারাই কিন্তু পালে হাওয়া দিয়ে যাচ্ছেন । ভাবছেন, কিছু একটা পান্ডিত্য করা হ’লো ! এটা কোনও শুভবুদ্ধির পরিচয় বহন করেনা । যারা করছেন তারা পরশ্রীকাতরতার উর্দ্ধে উঠতে পারেন নি । মেঘবালিকা আপনার কথার সূত্র ধরে বলতে চাই – “বাংলা সিনেমার একজন নবাগত নায়ককে বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোটতে যে ভয়ংকর ভাবে বিব্রত করা হচেছ তা কী কোনো ভদ্রতা ও সভ্যতার মাঝে পড়ে ? আমরা কেনো সীমার বাইরে চলে যাই?” আশা করি আপনার এই চাওয়াটুকু আমরা যেন বুঝে উঠতে পারি । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।