তুই থেকে তুমি, অতঃপর আরোদুটি ভগ্নহৃদয়ে ক্লান্তপ্রাণ । সময়টা কোন এক আগস্টের মাঝামাঝি । সন্ধ্যে ৭টা।
ঋতু পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় বর্ষার শেষ সময় হওয়ার কথা। কিন্তু চারপাশ শীত-বর্ষা মেশানো ।
অর্ক সব কিছুতেই কিছুটা নির্লিপ্ততা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। এখন প্রায় কথার উত্তরে- না হলে, মৃদু স্বরে ‘না’, হ্যা হলে সজাসুজি চোখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি ফিরিয়ে দিয়েই হ্যা সুচক পলোক ফেলে কথা শেষ করে।
দিহান জানে,কেন এমন হচ্ছে জিজ্ঞেস করলে, অর্ক বলবে, কই নাতো, সবি তো ঠিক আছে, তোমার কিছু হয়েছে বলে ভুল মনে হচ্ছে। দিহানের মনে পড়ছে, বাবা বলতেন, প্রত্যেক সম্পর্কে কৌতুহল মিশ্রিত আগ্রহ নিবৃত হওয়ার পর সাথে থাকার ধারাবাহিকতাই রক্ষা করা হয়। সব কৌতুহল সব আগ্রহ নিবৃত্ত করতে নেই, তাই বলে অত-অত ভাবতেও নেই।
অর্ক তার রুমে। তাই কিছুটা উচ্চস্বরে দিহান,“ফরেনসিক রিপোর্ট-এ কি আসছে?অর্ক”।
অর্ক কাপড় ছাড়েনি, রুম থেকে বেরিয়ে আসে, দিহানের মুখমুখি চেয়ারে বসে খানিকটা ঝুকে জুতোর নট দেখে নিচ্ছে। আবার বেরুবে, তার তাড়াহুডুর মধ্যেও নির্লিপ্ততার নীল ।
“আঙ্কেলের কন্ঠে কাঁচের টুকরোটি কী বাহির থেকেই ঢুকেছিলো?”
অর্কের রুমের উডেন ফ্লোরে একটা কাচেঁর গ্লাস পড়ার শব্দ হয়।
শব্দে অর্ক মাথা তুলে বলে, “ফ্রিক আউট করার কিছু নেই, গ্লাসটা আমি ওয়ারড্রোভের কিনারায় রেখেছিলাম। পড়ে গেছে,শব্দ শুনেই বুঝছ, বেশি টুকরো হয়নি। আমি ফিরেই উঠায় নেবো”।
‘আর হ্যা। ভদ্রলোকের গলায় যে কাঁচের টুকরো পাওয়া গেছে ওটা বাহির থেকে যতটা ছোট মনে হচ্ছিলো, ততটা ছোটনা।
ওটা কন্ঠকেটে ভেতর থেকেই বেরিয়েছিল। ইনভেস্টিগেশানে হয়তো সব জানা যাবে। মনে হচ্ছে তুমি খুব দুঃশ্চিন্তা করছো?ফিরে এলে না হয় সব জেনো,এখুনি বেরুতে হচ্ছে”।
অর্ক এতগুলো কথা একসাথে বলেছে দেখে দিহানের ভালো লাগে,ভেতরে অবাক হয়, “নাহ, ভদ্রলোক এতোদিন পাশের ফ্লেটে ছিলেন,তাছাড়া আমি উনাকে কাল সন্ধ্যায় ক্যাথলিক চার্চের পাশের কবরস্থান থেকে দুজন পাহারাদার আর উনার বাসায় মাঝেমাঝে স্কুল থেকে ফেরার পথে যে মেয়েটা আসে তাকে দেখেছিলাম। জানোইতো খুব বৃষ্টি ছিলো।
আমি রাস্তার ওপাশে তোমার জন্যে অপেক্ষা করছিলাম। আর একি রাতেই কিনা, এ জন্যে…”।
“তুমি সিউর তো, উনাকে আর ওই মেয়েটাকেই দেখেছিলে?
“হুম“
“ফিরে কথা হবে,বেরুচ্ছি, এ ব্যাপারে কথা আছে তোমার সাথে”। অর্ক উঠে দাঁড়ায়।
“অর্ক শোন!”
“কী?”
“আমি বাবার বাসায় যাচ্ছি, ফ্রিজে খাবার আছে,গরম করে খেয়ে নিও।
কাল বিকেলেই ফিরে আসব”। অর্ক বেরিয়ে যায়।
দিহান খানিকটা গা এলিয়ে দিয়ে হাল্কা চোখ বুজে ডিভানে আধশোয়া হয়। সেল ফোনে টেক্সট আসার ভাইভ্র-টোন হয়। অর্কের টেক্সট।
খুব অবাক হলে, চোখ বড় হওয়ার কথা। দিহানে কপাল কুচকায়। টেক্সটে তাড়াহুড়ায় ভুল বানানে লিখা
“kaj sere amo sorasari tamader okhanei jubo.
amar duto jama o sathe niyo.
will catch u over there.”
বৃষ্টি শুরু হয়েছে বাইরে। কবে থেকে হচ্ছে খেয়াল করা হয়নি। গত দু হপ্তা ঠান্ডাও বেশ।
দিহান গায়ে চাদর জড়িইয়ে নেয়, বাকি চাদর বাম কাধের উপর দিয়ে পেছনে ফেলে দেয়।
বাইরে কেউ এলে বেল বাজেনোর কথা। দরজায় দুর্বল নক পড়ে, কেউ একজন বাইরে।
“কে?”
কোন উত্তর আসে না।
“দরজা খোলাই আছে,নব ঘুরিইয়ে ধাক্কা দিন”।
আবারো নক।
দিহান উঠে দরজা খুলে দেখে সেই মেয়েটা।
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এইটুকুন মেয়েরা কাজল আঁকেনা এখন আর। চোখে কাজল একেছিলো।
বৃষ্টিতে ভেজায় এক গাল কালচে হয়ে গেছে। স্কুল ড্রেস ভিজে গায় লেগে আছে। মেয়েটাকে দূর্বল দেখাচ্ছে খুব…
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।