সূত্র হতে পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।
কিছুদিন ধরে ধরণীর ওপর বয়ে যাওয়া কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের নামগুলো । বেশিরভাগের নাম রাখা হয়েছে নারীর নামে। যেমন রিটা, ক্যাটরিনা, নার্গিস, সিডর, রেশমী, বিজলী।
আমেরিকায় যে প্রলয়ঙ্করী ঝড় আঘাত হানলো, সেই স্যান্ডি নামও নারীর।
আবার ভারতের তামিলনাডুতে যে ঘূর্ণিঝড় বুধবার আঘাত হানার কথা তার নাম নীলম সেটিও একজন নারীর নামে। তাহলে প্রশ্ন জাগতে পারে, মেয়েরা কি এতই বিধ্বংসী? নাকি ইচ্ছা করেই এমন নাম দেয়া হচ্ছে? তার আগে দেখা যাক, সাইক্লোন বা হারিকেন নামে ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি কেন হয়?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সাগরের জলরাশির ঠিক উপরিভাগের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা কোনো কারণে যদি বেড়ে যায়, তাহলে হালকা গরম বাতাস দ্রুতগতিতে উপরে উঠে যায় এবং ওই শূন্যস্থানটির বায়ুচাপ কমে যায়। তখন চারপাশ থেকে অপেক্ষাকৃত শীতল ও ভারি বাতাস এসে জায়গাটি পূরণ করে। এই বাতাস কুণ্ডলী পাকিয়ে ঘুরতে ঘুরতে ওই শূন্য স্থানে আসে। ভারি বাতাসের নিচের দিকের এ গতিপ্রবাহকে নিম্নচাপ বলে।
এ নিম্নচাপ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শক্তি সঞ্চয় করে। ক্রমান্বয়ে তা ভয়ঙ্কর শক্তি পেয়ে কোনো একদিকে চলতে শুরু করে। সাইক্লোনের বাতাস উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে চক্রাকারে কেন্দ্রের চারদিকে প্রবাহিত হয়।
এখন আসা যাক, এসব ঝড় কেন নারীর নামে? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকান সেনা, বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনীর আবহাওয়াবিদরা গ্রীষ্ণম-লীয় ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিতে শুরু করেন মেয়েদের নামে। তবে এ নামকরণ আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাপার ছিল না।
১৯৫০ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত সময়ে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের সাইক্লোনের নাম দেয়া হয় ফোনেটিক হরফ ব্যবহার করে। যেমন এবেল, বেকার, চার্লি ইত্যাদি। আমেরিকান বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনীর সদস্যরা তাদের স্ত্রী এবং বান্ধবীদের নামেও এই ঝড়গুলোর নামকরণ করতেন। অবশ্য পরে আমেরিকান আবহাওয়াবিদরা পুরুষের নামেও কিছু ঘুর্ণিঝড়ের নামকরণ করেছিলেন।
বিংশ শতাব্দীতে এক অস্ট্রেলিয়ান আবহাওয়াবিদ সাইক্লোনের নামকরণ করতেন তার অপছন্দের রাজনীতিবিদদের নামে।
বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, ১৯৪৫ সাল থেকে উত্তর পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সৃষ্ট ঝড়ের নামকরণ শুরু হয় নারীর নামে। তবে বাদ পড়েনি পুরুষরাও। তাদের নামে ঝড়ের নামকরণ শুরু হয় ১৯৭৯ সাল থেকে। এরপর বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা বা ডাবিস্নউএমও ঝড়ের নামকরণ একটু ভিন্ন ধারায় করতে শুরু করে। এই নামগুলো বেশিরভাগ ফুল, পশু-পাখি, গাছ এবং খাবারের নামে দেয়া হয়।
কিন্তু মানুষের মনে দাগ কেটে যায়, নারীর নামে রাখা ঝড়গুলোই। প্রসঙ্গত, সাইক্লোন শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ কুকলস থেকে। এর অর্থ ‘কুণ্ডলী পাকানো সাপ’।
বৃটিশ আমলের দক্ষিণ উপমহাদেশীয় আবহাওয়া বিভাগের পরিচালক ড. হেনরি পিডিংটনের লেখা ১৮৪৮ সালে প্রকাশিত ‘দি সেইলরস হর্ন বুক ফর দি ল অব স্টর্মস’ বইতে প্রথম সাইক্লোন শব্দটি ব্যবহার করা হয়। উল্লেখ্য, যখন বঙ্গোপসাগরে উৎপত্তি হয়ে বাতাস ঘূর্ণায়মান অবস্থায় ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়, তখন তা ‘সাইক্লোন’ বা ঘূর্ণিবাত্যা নামে আখ্যায়িত হয়।
আর এ সাইক্লোন বা ঘূর্ণিবাত্যাই আটলান্টিক মহাসাগরে ‘হারিকেন’ নামে পরিচিত। তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট, উইকিপিডিয়া ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।