আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘুড়ে এলাম "ঘেটু পুত্র কমলা" সিনেমার শ্যুটিংস্পট : হরিপুর রাজবাড়ি

আমরা শুধু আপন মানুষ খুঁজি, আপন মানুষদের খুঁজতে হয় না, তারা পাশেই থাকে !! দাদাবাড়ির খুব কাছেই হরিপুর রাজবাড়ি। ভাংগা পোরা বাড়িটাতে কত গিয়েছি। দাদির মুখে শোনা কত কাল্পনিক আর আজগুবী গল্প গুলা বিশ্বাস করতাম। দাদাবাড়িতে গেলেই লুকিয়ে ঐ রাজবাড়িতে চলে যেতাম। আজ সবকিছুই অতীত।

আম্মার কবর জিয়ারত করতে বলি বলি করেও বাসা থেকে বের হচ্ছি না। ঈদের ছুটিতে ক্যাম্পাস থেকে বাসায় এসে একেবারে মেয়েদের মতো বাসায় শিকড় গেড়েছি। দাদী গ্রাম থেকে বাসায় চলে এসেছে আমার জন্য। আন্টি এসেছেন নানাবাড়ি থেকে। এক উছিলায় ঘর থেকে বের হলাম।

আম্মার কবর থেকে কাছেই হরিপুর রাজবাড়ি। কয়েকবছর আগে আমাদের হূমায়ূন আহমেদ আলিচিত "ঘেটু পুত্র কমলা" সিনেমার শ্যুটিং করেছেন । চলুন ঘুরে আসি। সেই কবে থেকেই দেখে আসছি বাড়িটাতে উদ্ধাস্তুরা বাস করে। বাড়িতেই ঢুকতেই চোখে পরল এরকমম একটি ছবি।

এটা রাজবাড়ির পেছনের দেয়াল এ হল সম্মুখ ভাগ। ঘেটু পুত্র কমলা সিনেমাতে কলাগাছ গুলো ছোট ছোট ছিল। এখন গাছ গুলো বড় হয়ে গেছে আরেক পার্শ্বে সম্মুখভাগ। বাড়িটা যখন জমিদার রাজা বাস করতেন তখন নিশ্চই আরো সুন্দর ছিল। হুমায়ূন শ্যুটিং এর সময় বাড়িটিকে নতুন করে রং করে ছিলেন।

রাজবাড়ির সামনে পোজ দিচ্ছে পর্যটক দল। আমার ছোট বোন শশী আমার কোলে, পাশে আমার আদরের ছোট ভাই রাহিম। রাহিমের আরেকটি পরিচয় হল আমার দেখা হুমায়ুনের সবচেয়ে বড় ভক্ত ও হুমায়ুন চর্চাকারী। সান বাধাঁনো পুকুর ঘাটে আমাদের ছবি তোলা দেখে সবাই চলে এসেছে। নিচ থেকে আমার চাচাতো ভাই মুক্তার, রেজিয়া আন্টি, শশী, আমি, রাহিম , আমার খালাতো ভাই তারিম মোল্লা, আর আমাদের সুইট দাদী আমরা বাড়ির ভেতর ঢুকছি, সামনে আমার ছোট ভাই সৈকত।

কেমন জানি গুহা গুহা লাগছে না?? সামনে দাড়িয়ে পোজ দিচ্ছে হুমায়ূন বিশারদ রাহিম। এ জায়গাটা চিনেছেন? কমলার মা ও বোন কমলার সাথে দেখা করতে জমিদার বাড়িতে এসেছিলেন। কমলার বাপ এ জায়গায়ই বিশাল ধমক দিয়া বিদায় করেছেন। এটা বাড়ির ভেতরের ছবি। এখানে সাপ খেলা, বাসন মাজা সহ বিভিন্ন দৃশ্যগুলো চিত্রায়িত হয়েছে।

এটা উপরের একটা জায়গা। পিলার গুলা দারুন না? কেমন জানি রাজকীয় রাজকীয় ভাব। ছাদের উপরে পোজ দিচ্ছে আমার দুই ভাই। এখান থেকেই কমলাকে ফেলে দিতে চেয়েছিলেন এবং ফাইনালি ফেলে দিয়েছেন রাজ বান্দি। সিনেমায় শিশু শিল্পী মামুন ছাদের রেলিং ধরে এভাবেই হাটতো।

আমিও ঘেটু পুত্রের মতো পোজ দিলাম। ভয় ভয় একটু লাগছিল। যদি পরে যাই। এটা বাড়ির ছাদ থেকে সম্মুখ দিকের ছবি। দারুন কারুকাজ, আজো কতো সুন্দর লাগছে।

ছাদে রাহিম বসে আছে। ক্যামেরাতে তুলে নিলাম। এখানে জমিদার কন্যা পুতুল খেলেছিলেন, মনে পরেছে?? চিলে কোঠার সামনে আমরা তিন ভাই । সিনেমার অনেক শ্যুটিং এখানে হয়েছে। বলেন তো এখানে কি কি দৃশ্য হয়েছে?? আরো ওপরে উঠতে হলে ভয়ংকর সিড়ি গুলো এভাবে পাড়ি দিতে হবে।

আমি আর আমার সুইট দাদি। দাদির গল্প শুনে শুনে বড় হয়েছি আমরা। ছাদ থেকে হাওরের পানি। টলমল টলমল মিঠা পানি। আহা কি অপরুপ।

হাওরের পানি এখন দেখতে সুন্দর লাগলেও এ অঞ্চলে আগে হাওরে পানি উঠলে কমলার মতো অনেক ঘেটুকে মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন করতো। পেটের দায়ে মানুষ কি না করতো। বাড়ি থেকে নেমে গেলাম আমরা। যাওয়ার সময় মঠগুলোর সামনে একটা ছবি তোলার লোভ টা সামলাতে পারলাম না। হাওরের বুকে পশ্চিম আকাশে সুর্য ডুবছে।

আমরা রাজবাড়ি থেকে বিদায় নিলাম প্রিয় ব্লগার বন্ধুরা কেমন লাগল? একটা কথা। হরিপুর রাজবাড়ি সহ বাংলাদেশের এরকম অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা আজ ধ্বংসের মুখে। কতকগুলো ভূমিদস্যুদের পেটে , কতক আবার রক্ষনা-বেক্ষনের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরকার, এমন কি সচেতন নাগরিক সকলের উচিৎ আমাদের এ স্থাপনা গুলা রক্ষা করা। যাতে হুমায়ূন আহমেদরা ঘেটু পুত্র কমলার মতো সিনেমা বানাতে পারে  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।