আমি মানুষ হতে চাই। সৃষ্টির শুরুতে সরকারি চাকুরি ছিল কিনা আমার জানা নেই তবে আমার বুদ্ধি হবার পর থেকেই শুনে আসছি সরকারি চাকুরি মানে হলো সোনার হরিণ। ছোট বেলাই বুঝতাম না সোনার হরিণের মূল্য কতো আর এ হরিণের কার্যকারিতাই বা কি??
আজ যখন ২৭ শেষ করতে দিতে যাচ্ছি তখন এর মর্মার্থ আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। না, ---আমি কোন বেকার যুবক নই। কাজ করি মানুষের জন্য আর আমার পেটের জন্য!! তবে সরকারি চাকুরি করিনা।
সরকারি চাকুরি না করার ফলে আমার যে বিষয়গুলি প্রতিনিয়ত ফেস করতে হয় তা নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। এর মধ্য দিয়ে সরকারি চাকুরি বিষয়ে আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হয়ে উঠবে বলে আশা করছি।
ছুটিতে বাড়িতে ফিরলে: পাড়ার প্রতিবেশি ও আত্মীয় স্বজন জিজ্ঞেস করে , “বাবা আগের চাকুরিতেই আছো নাকি পরিবর্তন করেছো? আমি বলি, আছি আগের টাতেই। ” তারা আবার বলে, “দ্যাখো এত পড়াশোনা করে সরকারি চাকুরি না পেলে কি আর হয়! যাই বলো সরকারি চাকুরি তো সরকারি চাকুরিই! ঝড় ঝাপ্টা হলেও বেতন ঠিকিই পাবে। তাছাড়া পরিশ্রমও তো কম।
---” আমি মনে মনে বলি, বাহ! আমার জন্য পাড়ার মানুষ এতো চিন্তা করে? !! নাকি আমার স্বাভাবিক জীবন যাপনে একটু লবণ ছিঁটানোর চেষ্টা!!
মোবাইলে সরকারি চাকুরে বন্ধুর ফোন: বন্ধু বলে, “দোস্ত, বিয়ে শাদি কবে করবা?” আমি বলি, “আর বিয়ে! আমাকে মেয়ে কে দিবে দোস্ত। ” দোস্ত বলে, “আরে আমি মহা ঝামেলায় পড়েছি। এক মেয়ের বাবা-মা আমাদের বাড়ির মাটি দাবিয়ে ফেলছে। একটা মেয়ে মাস্টার্স করছে, আমাদের রাবি তেই পড়ে, ইংরেজীতে। --- আমি তো আর একটু কচি খুঁজছিলাম! আমি না করেছি।
বুঝছো? তা তুমি দেখোতো ভালো সুন্দরী মেয়ে পাও কিনা? বয়স কিন্তু কম হতে হবে! আর চাকুরিজীবী মেয়ে দরকার নাই। বউ চাকুরি করলে স্বামী সেবা করবে কখন!”
বাড়ির কোন অনুষ্ঠানে: কাছের সব মানুষগুলো আমার অফিসের বিষয়ে শুনতে আগ্রহ দেখায়না। আমি কোথায় কাজ করি? কি কাজ করি? তারা কিছু জানতে চায়না। তাদের ধারনা সরকারি অফিসগুলোতে সব কাজ হয়! আমার কাজের ব্যপারে আগ্রহ না দেখিয়ে আমার বেতন শুনতে তারা আগ্রহ দেখায়। কেউ কেউ শুনে বলে এত কম বেতনে চাকুরি করে কি লাভ? (উল্লেখ্য: আমি সরকারি প্রথম শ্রেনী কর্মকর্তার চেয়ে বেশিই বেতন পাই)! খুব কাছের দুই একজন আত্মীয় আমার সামনে আমার পরিচিত অথবা বন্ধু মহলের কথা বলে যারা সরকারি চাকুরি করছে।
তাদের বিয়ের বিষয়ে বলে। আবার আমাকে বলে “তোমার কোন সরকারি বিসিএস ক্যাডার বন্ধু থাকলে বলিও একটা ভালো পরিবারের সুন্দরী মেয়ে আছে বিয়ের জন্য। মেয়ের বাবা ছেলেকে অনেক কিছু দিবেন তবে শর্ত একটাই যে, ছেলে বিসিএস ক্যাডার (পুলিশ/অ্যাডমিন)হতে হবে। ”---
যাই হোক, সরকারি চাকুরি নামক সোনার হরিণ স্বেচ্ছায় গ্রহণ না করা মানুষ হিসেবে আমি বিষয়গুলোকে দারুণ উপভোগ করি। তবে মাঝে মাঝে মনের গহীনে কিসের যেন সুর শুনতে পাই ..
আমি জানিনা এ সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কবে পরিবর্তন হবে! তবে এটুকু বলতে পারি যে আমাদের আরও একটি বিপ্লব দরকার।
আর সে বিপ্লব হলো মানসিক পরিবর্তনের বিপ্লব, সে বিপ্লব হলো মনুষ্যত্বের বিপ্লব। সুদিনের অপেক্ষায় রইলাম----
(বি:দ্র: গল্পের আমি চরিত্রটি আসলে আমি না! এটি বাংলাদেশের বেসরকারি চাকুরিরত সকল যুবক) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।