আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নীলাকাশে বিলীন নীললোহিত

Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience ফুলে ফুলে কবিকে বিদায় হঠাৎ যেন বাতাস মেঘ রৌদ্র বৃষ্টি এবং গলির মোড়ের ওই বাড়িটা, একটি দুটি পাখি চলতি ট্রামের অচেনা চোখ, প্রশাসনের নত মুখের শোভা সমস্বরে ডেকে বলল, তোমায় চিরকালের বিদায় দিলাম, চিরকালের বিদায় দিলাম, বিদায়; চতুর্দিকে প্রতিধ্বনি বিদায়, বিদায়, বিদায়। স্নিগ্ধ শারদ সকাল। সকাল হতেই আলিপুরে সাহিত্য আকাদেমির সামনে হাজারো জনতা। হাতে নানা ফুল। সবাই এসেছেন প্রিয় কবিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সুনীলের মরদেহ পিস হেভেনের হিমঘর থেকে বের করে আনা হয় আধুনিক বাংলা সাহিত্যের কৃত্তিবাস সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নিথর দেহ। ইট, কাঠ, কংক্রিটের পৃথিবীকে ছেড়ে নীল দিগন্তের পথে রওনা দিলেন নীললোহিত। এদিন সকাল ৯টায় পিস হেভেন এসে উপস্থিত হন কবিপুত্র সৌভিক, কবি শ্রীজাত, কবি সৌমিত্র মিত্র। তাকে শেষবার দেখার জন্য পিস হেভেনের সামনে ফুল, মালা হাতে জড়ো হয়েছিলেন অগণিত ভক্ত, পাঠক। অশ্র“সজল চোখে হাজার হাজার সুনীলপ্রেমী বিদায় জানালেন তাদের প্রিয় সাহিত্যিককে।

এরপর তার মরদেহ ১০টা ৪৫ মিনিটে নিয়ে যাওয়া হয় তার কর্মত্রে আনন্দবাজার পত্রিকার কার্যালয়ে। আনন্দবাজার পত্রিকা দপ্তরে পুষ্পস্তবক দিয়ে কবিকে শেষ শ্রদ্ধা জানান আনন্দবাজার পত্রিকার প্রধান সম্পাদক অভীক সরকার, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, শংকর প্রমুখ। সেখান থেকে সুনীলের মরদেহ সকাল ১১টায় রবীন্দ্রসদনে নেওয়া হয়। তখন লাখো সাহিত্য অনুরাগী সারিবদ্ধভাবে অপো করছিলেন। রবীন্দ্রসদনের বারান্দায় মরদেহ শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য রাখা হয়।

রবীন্দ্রসদনে প্রথম থেকেই ছিল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জনগণের কবিকে সাধারণের মধ্যে রাখার দায়িত্ব নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রবীন্দ্রসদন চত্বরে কবি অনুরাগীদের ভিড়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দিতে সাধারণের মাঝে কবির দেহ রাখার সিদ্ধন্ত নিলেন তিনি। নিজেই মাইক হাতে সবাইকে অনুরোধ জানালেন যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয় কবির শেষযাত্রায়। পরবর্তী সূচি অনুযায়ী তার দেহ সাহিত্য আকাদেমিতে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে কবিকে শেষ শ্রদ্ধা জানান আকাদেমির পরিচালক মৃণাল সেন। এরপর একে একে তাকে শ্রদ্ধা জানান অভিনতা দীপঙ্কর দে, মনোজ মিত্র, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, কবি শঙ্খ ঘোষ, শ্রীজাত, কৃষ্ণা বসু, জয় গোস্বামী প্রমুখ। পশ্চিমবঙ্গের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি, পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখার্জিও শ্রদ্ধা জানান। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বাম ফ্রন্ট সভাপতি বিমান বসু ও বিরোধীদলীয় নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র কবির মরদেহে শ্রদ্ধার্পণ করেন। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির প থেকে শ্রদ্ধা জানান উপ-হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির পে লক্ষ্মী চক্রবর্তী। সবশেষে দুপুর ১২টায় শ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এরপর শুরু হয় শোকমিছিল। শোকমিছিলে আবৃত্তিকারের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় তার জনপ্রিয় কবিতাসহ শোককবিতা। শোকমিছিল শেষে ২টায় আলিপুরে সাহিত্য অ্যাকাদেমি হয়ে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে।

সড়কের ধারে অগণিত মানুষ সুনীলের ওই শেষযাত্রার সাী রইল। সেখনে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় ২টা ২০ মিনিটে। সুনীলকে মনে রাখা বাংলা কবিতা ও বাংলা ভাষার অধিকার। অনেক রহস্যভেদ না করেই ছোটদের কাকাবাবু চলে গেলেন। নীরার চোখে রেখে গেলেন জলের দাগ।

বাকি রয়ে গেল সুনীলের শেষ ইচ্ছা ছোটদের মহাভারত লেখার কাজটাও। বাঙালির শারদোৎসবের অবসান বিসজ্জিত প্রতিমা আর শ্রেষ্ঠ কবি সুনীল প্রয়াণ একাকার হয়ে গেল যেন।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.