বাস্তবতার ভার্শন ২.৭.১২ এ আছি। নিয়মিত আপডেট হচ্ছি। কে জানে হয়তো বা আজই তার সাথে জীবিত অবস্থায় শেষ দেখা। অপারেশনের পর মানুষটি আর বেঁচে ফিরবে কি না জানি না। আল্লাহ কোন অসীম রহমত দান না করলে বেঁচে ফেরাটা অসম্ভব।
এবারের অপারেশনে বেঁচে ফিরতে পারলেও পরে আছে আরো দুইটা। একটাতে না একটাতে আটকে যাবেই বলে ধারণা করছেন ডাক্তাররা। তবুও মানুষ খড়কুটো ধরে বাঁচার চেষ্টা করে।
আমার ছোট খালার সাথে দেখা করতে আবারো ময়মনসিংহ যেতে হচ্ছে। ভাস্তে-ভাগ্নেদের মধ্যে আমাকে অসম্ভব রকমের আদর ও স্নেহ করতেন তিনি।
যে কথাগুলো শৈশবে কখনো কারোর কাছেই শেয়ার করতে পারিনি, তিনি সেই কথাগুলো পড়ে নিতেন আমার মুখের চাহুনী দেখে। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল হওয়ার পরেও আমার জন্য তিনি কখনো খালি হাতে আসেননি। ২০১১ এর সেপ্টেম্বরে আমি নিজেই যখন আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, তখন তিনি ধরেই নিয়েছিলেন আমি মারা যাচ্ছি। মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় হুলস্থূল কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন ফোনের ওপাশ থেকে। বেঁচে ফিরবার সময় বুঝতে পেরেছিলাম আমার জন্য এই পৃথিবীতে ভালোবাসার মানুষের অভাব নেই।
আজ সেই ছোট খালা ওভারীর ক্যান্সারে আক্রান্ত। জায়গা জমি যা ছিল সব বিক্রি হয়ে গেছে। এখন মাথার উপরে শুধু পুরাতন আমলের একটা বাড়ির ছাদই আছে। আমরা আত্মীয় স্বজনরা যে যেভাবে পারি সাহায্য করছি। কিন্তু রোগের ধারা আর অপারেশনের বর্ণনা এবং সেই সাথে টাকার পরিমাণটা গগণচুম্বী।
আমাদের পরিবার তেমন কোন বিখ্যাত পরিবার না, কোন মন্ত্রী এমপি, সাংসদ সদস্যদের পরিবার না। কোন বিখ্যাত টিভি বা পত্রিকা সেলিব্রেটিরও না যে আমাদের পরিবার থেকে কেউ এক ডাক দিলেই সারা বাংলাদেশে তোলপাড় পড়ে যাবে। সামান্য মধ্যবিত্ত পরিবারে বাঁচতে চাওয়াটা আমাদের অনেকটা গরীবের ঘোড়া রোগের মতো। পুরো দেশ যখন আস্তিক-নাস্তিক, যুদ্ধাপরাধী-বামপন্থীর লড়াই নিয়ে মশগুল, তখন কি দরকার এসব টিপিক্যাল বাঙালির সস্তা টাইপের রোগ নিয়ে মাতামাতি করার? ছোটখাট ব্যাপার নিয়ে যদি দেশ-দেশের মানুষজন ভাবতোই তাহলে এত সব বড় বড় পলিটিক্যাল ইস্যু নিয়ে মাথা ঘামাবে কে?
আমার ব্যক্তিগত দিক থেকে বললেও বলবো না যে আমি কোন বিখ্যাত লেখক। কারণ সে যোগ্যতা আমার নেই।
আমার যোগ্যতা নেই একজন ফেসবুক সেলিব্রেটি হওয়ারও; যেখানে আমার পোস্ট আপডেট হলে সাথে সাথেই সাহায্যের/দানের হাত বাড়িয়ে দিবে কেউ।
ভদ্র সমাজের লোকেরা ভিক্ষা করেন না, তারা সাহায্য চান। কারণ দান আর সাহায্যের মাঝে পার্থক্য আছে। যারা সাহায্য বা দান করেন, তাঁদের উপর খেয়াল করেই সাহায্য বা দান চাওয়া হয়। মানুষ দান করে পুণ্যের আশায়, আর সাহায্য করে বিনিময়ের আশায়।
তবে আজকাল কেউ পুন্যও চান না, বিনিময়ও আশা করেন না। দিন দিন মানুষ নিজেদের খুব সুন্দর করে গুছিয়ে নিতে শিখে যাচ্ছে। ধার করার ক্ষেত্রেও আরো ঝক্কি-ঝামেলা আছে। কেউ আজকাল কাউকে বিশ্বাস করে না। এটাও অবশ্য অমূলক না।
যে দেশের অনেক কিছুই নিয়মের বাইরে, সেখানে দেনাদার পাওনাদারের সামনে নিয়ম মোতাবেক হাজির হতে পারেন না। এটাই নিয়ম। মানুষের অসহায়ত্ব দেখে অনেকেই মজা করতে ভালোবাসেন। সে মজার মাঝে প্রাঞ্জলতা নেই, আছে সূক্ষ্ম অহং বোধ।
আমাদের শুধু উপরওয়ালার কাছে সাহায্য চাওয়া ছাড়া কোন পথই নেই।
এই মুহুর্তে সেটাই দরকার। টাকা দিয়ে শুধু শুধু করণা লাভ হবে কেন?
শেষ মুহুর্তে আমার খালার চোখে গতবার গিয়ে দেখেছিলাম, আমাকে হাত ধরে বলেছিলেন, "আমি কি বাঁচবো না সার্জিল!" আমি বলেছিলাম, "কেন বাঁচবে না অবশ্যই বাঁচবে। আমরা আছি না। "
ছোটখালামনি, আমি ভুল বলেছিলাম, আমরা ছিলাম না, আমরা কখনোই ছিলাম না। থাকলে তোমাকে এভাবে আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়তে হতো না।
মিথ্যা কথা বলার জন্য ক্ষমা করো। সবার কাছ থেকে আমাকে ক্ষমা করো আল্লাহ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।