ইন্টারমিডিইয়েট পর থেকে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুবাদে এবং পরবর্তী কালে চাকরীর প্রয়োজনে ঢাকাতেই কম বেশি থাকা শুধু শেষ বছরটুকু ছাড়া, ওই সময় টুকু চিটাগাং ছিলাম । যার জন্য আস্তে আস্তে আমাদের বন্ধু বান্দব সবাই কম বেশি এলাকা থেকে অনেক দূরে সরে গেছি । আমরা সবাই এখন দুটি ঈদ এ আসি মজা করি আর বলি আহা আমার প্রিয় শহরটা কত বদলে যাচ্ছে । যদিও আমরা বেশিদিন থাকি না, আবার ও চলে যাই যার যার কর্মস্থলে । অনেক পরিবর্তনের মাঝে একটি পরিবর্তন বলি আর সময়ের আশীর্বাদই বলি তা আপনাদের সাথে শেয়ার করি ।
আমাদের বাসাটা শহরের একেবারে মাঝখানে, যদিও অনেকটা সময় পর্যন্ত বাসার চারপাশের এলাকা নিরব ছিল কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় চারপাশের উঁচুতল ভবনের ভিড়ে আমাদের ছোট বাসা গুলো হারিয়ে যাচ্ছে। আগে বাসার চারপাশে অনেক খোলা জায়গা ছিল কিন্তু এখন আর নেই । যার জন্য প্রায়ই দেখি অপরিচিত মানুষজন ছোট ছোট ছেলেপেলে সিগারেট খাওয়ার জন্য অথবা গল্প করার জন্য। একবার হল কি বাইরে থেকে বাসায় ফিরছি থখন দেখলাম গলির মাঝে কিছু ছোট্ট ছেলেপেলে সিগারেট খাচ্ছে যারা বড়োজোর ক্লাস সিক্সে পরে। আমি গিয়ে ওদের ঠিকানা জিজ্ঞেস করায় ওরা তড়িঘড়ি করে চলে গেল ।
বাসায় আসার পর আমার আম্মু বলল যে ওদেরকে এভাবে জিজ্ঞেস করা ঠিক হয় নাই আমি বললাম কেন ? আম্মু যে উত্তর দিল আমি তা শুনে ভড়কে গেলাম । আমার আব্বু নাকি কোন একদিন কিছু ছেলেদেরকে জিজ্ঞেস করেছিল এই গলিতে তারা কি করে তা এটা শুনে ওই সব ছেলেপেলে আব্বুর সাথে মুখে মুখে তর্ক করেছে যার রেষ সরূপ পরবর্তীতে অন্য একদিন আমাদের বাসায় এসে গেইটে লাথি দিয়ে,কলিংবেল ভেঙ্গে রেখে চলে গেছে। বাসায় আম্মু একা তাই উনি বাসা থেকে আর বের হন নাই সেই সময়। আমি তো এই ঘটনা শুনে হতবম্ব কিন্তু আরও বড় কিছু শুনার থখন ও যে বাকি ছিল ।
আমার এক বন্ধুর কাছে আমার বাসার এই ঘটনাটি বলার পরে ও বলল তোদের কপাল ভাল অল্পতে পার পেয়েছিস আমি বললাম মানে কি ? ও বলল আমাদের জিলা স্কুলের কোন এক ছাত্রকে শিক্ষক শাস্তি দেওয়ার অপরাধে ওই ছেলের বাবা ওই স্রদ্দেয় শিক্ষককে বান্দরবন বদলি করে দিয়েছেন।
ওই ছাত্রের বাবার কে যেন উপর মহলে পরিচিত আছেন তাকে দিয়ে বদলি করে দিয়েছেন। শুনে যার পরনাই অবাক হলাম আর ভাবলাম বাহ ২০১২ সালে এসে অনেক উন্নতি হয়েছে আমাদের।
এবার আমাদের ও আগের কথা বলি যা আমাদের বাবা,চাচদের মুখে শুনেছি ওই সময়ের শিক্ষকরা ছেলেদের কি করা শাসনে রাখতো । যে স্কুলের ঘটনা বললাম সেই স্কুলেই এমন এক হেডমাস্টার ছিলেন যিনি হাতে একটা বেত নিয়ে স্কুলের বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করতেন যার জন্য ছাত্র তো পরের কথা অন্য স্যাররা পর্যন্ত ভয়ে ভয়ে থাকতেন । আমরাও আমাদের সময়টুকুতে শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান করার চেষ্টা করতাম, তাই বলে কেও কেও যে স্যারদের সাথে খারাপ আচরণ করত না তা না কিন্তু তারও একটা রকমফের ছিল।
এমন অনেকবার দেখেছি ছাত্রদের স্যারদের রুমের সামনে নিলডাওন করিয়ে শাস্তি দিতে। আমরা নিজেরাও কি স্কুল কি কোচিং সব জায়গাতেই কম বেশি বেদম শন্ধি বেতের মার খেয়েছি ।
মনেপড়ে বাসায় যত স্যার আমাকে পড়িয়েছে তাদের সবাইকেই আম্মু বলে দিত পড়ার জন্য মার দিতে । আর এখন মনে হয় স্যাররা ছাত্রদের শাসন করতেও ভয় পান । জানি সব বদলে যায় যাবে তাই বলে কি আমাদের শিক্ষা, স্রদ্দাবোধ, এই গুলো বদলে ফেলতে হবে ? আমরা জানি যে পায়ে ধরে মাথা ঝুকিয়ে সালাম করা ইসলামে নেই তার পরেও এখন ও নানুবাড়ি কিংবা দাদুবাড়ি গেলে মুরুব্বীদের যথাসম্ভব নিয়ম মেনে পায়ে ধরে সালাম করি তা শুধু আমাদের শিক্ষার জন্যই যা আমাদের বাবা, মা আমাদের শিখিয়েছেন ।
আমাদের ভাবতে হবে কোন জিনিস গুলো আমাদের বদলাতে হবে আর কোন জিনিস গুলো চারপাশের সব বদলে গেলেও একইরকম রাখতে হবে।
২৫,১০,২০১২.
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।