আমি একাই পৃথিবী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম http://www.facebook.com/kalponikvalo বর্তমান সময়ে ল্যাপটপ আমাদের জীবনে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকাতে নাম লিখিয়েছে। একসময় ল্যাপটপ হয়ত একটি বিলাসিতার পন্য ছিল, কিন্তু সময়ের আবর্তনে ল্যাপটপ দৈন্দদিন ব্যবহার্য জিনিসে পরিনত হয়েছে। বহন করার সুবিধা, নানা রকম ব্যবহার, মর্ডান টেকনোলজী, ইত্যাদি কারনে ল্যাপটপ এখন অনেক জনপ্রিয়। এখন সবাই ডেস্কটপ পিসির চাইতে ল্যাপটপের দিকেই বেশি ঝুঁকছেন।
ল্যাপটপ কিনতে গিয়ে অনেকেই অনেক বিড়ম্বনার স্বীকার হোন বা কিছুটা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন। আজকে পোষ্টে ল্যাপটপ কেনার ব্যাপারে একটা গাইড লাইন দেয়ার চেষ্টা করা হবে। তথ্যগুলো ইন্টারনেট এবং ল্যাপটপ যারা ইম্পোট করেন তাদের সাথে কথা বলে সংগ্রহ করেছি। আশা করি তথ্যগুলো আপনাদের কাজে লাগবে।
ল্যাপটপ কেনার প্রথমেই আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আপনি কি ধরনের ব্যবহারের জন্য ল্যাপটপটি কিনছেন।
সেটার উপর ভিত্তি করে আপনার ল্যাপটপের সাইজ ঠিক করতে হবে। এমন যদি হয় আপনি ল্যাপটপটি মূলত বাড়িতেই ব্যবহার করবেন, এবং মাঝে মাঝে এই রুম থেকে সেই রুমে যাবেন বা মাঝে মাঝে হয়ত বাইরে নিয়ে যাবেন তাহলে আপনার জন্য ১৫'' ডিসপ্লে বিশিষ্ট ল্যাপটপই যথেষ্ট। এই ধরনের স্ক্রীন সাইজের ল্যাপটপগুলোর ওজন সাধারনত ২.৫ কেজি থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের বাজারে সাধারনত এই ধরনের ল্যাপটপের চাহিদা বেশি। সাধারন ব্যবহারকারীরা এই সাইজের ল্যাপটপগুলোই বেশি কিনে।
তবে আপনাকে যদি ল্যাপটপ নিয়ে হরহামেশাই বাইরে ঘোরাফেরা করতে হয়, যেমন অফিসের কাজে বা ক্লাসে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেখানোর জন্য, তাহলে ১৩" বা ১৪ " সাইজ বিশিষ্ট ল্যাপটপ কেনাই উত্তম। কারন এইগুলোর ওজন কম ফলে বহনে তেমন সমস্যা হয় না এবং ব্যাটারীর চার্জ তুলনামূলকভাবে বেশিক্ষন থাকে। উপরের দুই ক্যাটাগরির ল্যাপটপের মধ্যে নিচের ব্যান্ড গুলো উদহারন হিসেবে বেশ উল্লেখ্যযোগ্য।
Lenovo ThinkPad T530
HP Pavilion g6t-2000 ,
Acer Aspire V5-571
আর যদি আপনি যদি খুবই হাই ডেফিনেশন গেমস খেলতে চান, কিংবা গ্রাফিক্সের কাজ করতে চান তাহলে, বড় স্ক্রীন (যেমন ১৭'') বিশিষ্ট কোন ল্যাপটপ আপনাকে বেছে নিতে হবে। তবে এই গুলো নিয়ে সবসময় ঘোরাফেরা করাটা বেশ ঝামেলাজনক।
তবে এইখানে উল্লেখ্য যে, গ্রাফিক্স এর জন্য ল্যাপটপ ব্যবহার না করাই উত্তম। বিশেষ করে প্রিণ্ট মিডিয়ার জন্য গ্রাফিক্সের জন্য সিআরটি মনিটর সহ ডেস্কটপ ব্যবহার করা উচিত। এতে ডিসপ্লে কালার এবং প্রিণ্ট কালারের মধ্যে পার্থক্য কম হয়। সবচেয়ে ভালো হয় ম্যাক ব্যবহার করতে পারলে।
এরপর অবশ্যই যে ব্যাপারটি আসে তা হলো বাজেট।
যে কোন পর্যায়ের কেনাকাটার জন্য বাজেট অন্যতম গুরুত্বপূর্ন বিষয়। অনেকে দরকার ছাড়াই অপ্রয়োজনীয় খরচ করেন। সেই অপ্রয়োজনীয় খরচ দিয়ে হয়ত আপনি প্রয়োজনীয় অন্য কিছু কিনতে পারেন। তাই আমি অনুরোধ করব, আপনার কাজের এবং ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে আপনি আপনার বাজেট ঠিক করবেন। আমি কয়েকটি রেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করব।
আশা করি এই রেঞ্জের মধ্য থেকেই আপনি আপনার বাজেট সর্ম্পকে একটি ভালো ধারনা করতে পারবেন।
৪০,০০০/- - ৫০,০০০/- বর্তমানে এই রেঞ্জের মধ্যে আপনি সহজেই ভালো মানের একটি ল্যাপটপ পাবেন যা দিয়ে মোটামুটি সব কাজই করতে পারবেন। এই রেঞ্জের মধ্যেই আপনি ডুয়েল কোর ইন্টেল কোর থ্রী-আই অথবা, এমডি এ-সিক্স প্রসেসর, ৪ গিগাবাইট র্যাম এবং নূন্যতম ৩২০ জিবি হার্ড ডিস্ক এর একটা বেশ ভালো কনফিগারেশন পাবেন। আমার মনে হয় এই কনফিগারেশন সাধারন কাজগুলো যেমন, নেট ব্রাউজিং, ফেসবুক, মুভি দেখা, ছোটখাটো ছবি এডিট বা ডিজাইনের কাজও, সাধারন গেমস ইত্যাদির জন্য যথেষ্ট। নিচের মডেল গুলো এই রেঞ্জের মধ্যে উদহারন হিসেবে দেখতে পারেন।
Toshiba Satellite P845-S4200
HP Pavilion g6t-2000
Acer Aspire V5-571-6869
Dell Inspiron 15R 5520
৫০,০০০/- ৮০,০০০/- আপনি যখনই পঞ্চাশ হাজারের উপরে যাবেন, তখনই আপনি ল্যাপটপের কিছু প্রিমিয়াম ডিজাইন পাবেন যেমন, মেটাল আউটলুক, স্লীম ইত্যাদি। তবে মনে রাখবেন যত দামী ল্যাপটপের দিকে যাবেন এর ফিচার বাড়তে থাকে। যেমন, সাউন্ড কোয়ালিটি, ব্যাকলিট কী-বোর্ড ইত্যাদি। এই বাজেটে আপনি সেকেন্ড জেনারেশন কোর আই-ফাইভ প্রসেসর থেকে নিয়ে কোর আই-সেভেন প্রসেসর, ৫০০ জিবি হার্ডডিস্ক, ৪/৬ জিবি র্যাম, এএমডি বা নিভিডিয়ার ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড এর মত একটি কনফিগারেশন আসা করতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে আপনি সামান্য কিছু বাজেট বাড়ালে ব্লু রে ড্রাইভও পেতে পারেন।
যেমনঃ
Sony VAIO S Series 13 (SVS13112FXW)
Acer Aspire S3
ASUS UL30A
৮০,০০০/- এর উপর যে ল্যাপটপ গুলো পাবেন, সেগুলো মূলত হাই পারফ্যারম্যান্সের জন্যই। এখানে আপনি নিশ্চিন্তে ভালো মানের গেমস, গ্রাফিক্স এবং মাল্টিমিডিয়া সংক্রান্ত কাজগুলো ভালোভাবে করতে পারবেন। এই ধরনের ল্যাপটপ গুলো মূলত প্রফেশনালদের জন্যই। স্ক্রীন রেজুলেশনও চমৎকার। এ্যাপলের ম্যাকবুক গুলো এই ক্যাটাগরীতে পড়বে।
সেই ক্ষেত্রে নূন্যতম ১,৫০,০০০ এর উপরে আপনাকে বাজেট করতে হবে। নিচে উদহারন গুলো দেখতে পারেন।
Apple MacBook Air
Sony VAIO Duo 11
Dell Latitude E5530
HP Envy Spectre
Sony VAIO Tap 20
এরপর আসা যাক, আরামদায়ক ব্যবহারের বিষয়টি বা যাকে আমরা ইউজার ফ্রেন্ডলীনেসও বলতে পারি। অনেক দামী মডেলের ল্যাপটপও ব্যবহার করে আরাম পাওয়া যায় না। অনেক সময় কী বোর্ডের কী গুলোর স্পেস একটা গুরুত্বপূর্ন ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়।
সাধারনত একটু ফাঁকা এবং হালকা শক্ত কী ইউজারদের মোটামুটি পছন্দ। তাই ল্যাপটপ কেনার সময় এই বিষয়টি বুঝে কিনবেন।
ব্যাটারীর লাইফ টাইম আরেকটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। ব্যাটারী স্থায়িত্ব সর্ম্পকে ভালো করে জেনে তারপর ল্যাপটপ কেনা ভালো। নতুন ল্যাপটপের ক্ষেত্রে ব্যাটারী নূন্যতম ১২ ঘন্টা চার্জ দিয়ে নিতে হবে।
আরো একটি বিষয়, তা হলো, LaptopBatteryExpress.com এর বিশেষজ্ঞদের মতে নতুন কেনা ল্যাপটপের ব্যাটারী অবশ্যই নূন্যতম ৫ বার পুরো চার্জ এবং ডিসচার্জ করতে হবে। এতে ল্যাপটপের ব্যাটারীর স্থায়িত্ব বাড়বে এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে। এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে এই প্রতিষ্ঠানটির ওয়েব সাইটে যেতে পারেন।
এই ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় বলতে চাই, তা হলো ওয়ারেন্টির বিষয়টি। যে ব্রান্ডের ল্যাপটপ কিনছেন তারা কি কি ওয়ারেণ্টি দিবে সেটা জেনে নিবেন।
সেদিন থেকে কিনবেন, সেদিন থেকেই যেন ওয়ারেন্টির তারিখ দেয়া থাকে, সে ব্যাপারটা খেয়াল রাখবেন
এবার আসুন জেনে নেই ইউজার রেটিং উপর ভিত্তি করে কয়েকটি সেরা ব্রান্ডের ল্যাপটপের নাম।
১. Apple MacBook Air
২.HP Pavilion g6t-2000
৩.Asus Zenbook UX31A
৪. Apple MacBook Pro 15-inch with Retina Display
৫.Best Gaming Laptop: Alienware M17 x
৬.Best Business Laptop: Lenovo ThinkPad X1 Carbo
৭. Best Multimedia Laptop: Dell XPS 15
৮. Best Small Business Notebook: Lenovo ThinkPad Edge E430
৯. Best Mainstream Laptop: Lenovo IdeaPad Z580
১০. Best Business Notebook: Lenovo ThinkPad T430
সামুর সমস্যার কারনে সবগুলো লিংক দিতে পারলাম না, পরবর্তী সময়ে লিংকগুলো আপডেট করা হবে।
আশা করি ল্যাপটপ কেনার ব্যাপারে এই তথ্যগুলো আপনাদের কাজে দিবে। নিজের প্রয়োজনমত সাধ এবং সাধ্যের বাস্তবসম্মত প্রয়োগ ঘটিয়ে আপনারা ভালো একটি ল্যাপটপ কিনতে পারবেন। সেই কামনাই রইল।
আগেও উল্লেখ্য করেছি, তথ্যগুলো আমি মূলত ইন্টারনেট এবং ঢাকার দু'একটি কম্পিউটার মার্কেট ঘুরে সংগ্রহ করেছি। আপনাদের যদি কাজে লাগে তাহলেই আমার এই কষ্ট সার্থক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।