আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতো বিশ্ব ব্যাংকও মনে করছে, সামর্থ্য থাকলেও চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের বেশি হবে না। বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, সরকার বাজেটে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশার কথা বললেও ইউরো জোনের অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং বাংলাদেশের ভেতরে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় সেই লক্ষ্য পূরণ হওয়ার নয়।
অবশ্য দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনৈতিক পূর্বাভাসের সঙ্গে তুলনা করে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকেও বাংলাদেশের জন্য ‘স্বাস্থ্যকর’ বলছেন এ সংস্থার জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন।
গতকাল রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে বাংলদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আইএমএফ যে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক প্রকাশ করেছে, তাতে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের দিক দিয়ে বিশ্বের ১৫০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫তম।
জাহিদ হোসেন জানান, পূর্বাভাস অনুযায়ী পাকিস্তান এবার ৩ দশমিক ৩, নেপাল ৩ দশমিক ৬, মালয়েশিয়া ৪ দশমিক ৭, ভিয়েতনাম ৫ দশমিক ৯, ভারত ৬, শ্রীলঙ্কা ৬ দশমিক ৭ ও চীন ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে।
মূলত দুটি কারণে বাজেটে ঘোষিত ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়Ñ মন্তব্য করে জাহিদ হোসেন বলেন, ইউরো জোনের অর্থনৈতিক সঙ্কট রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ওভেন পোশাক রপ্তানি বাড়লেও নিট পোশাক রপ্তানি ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। ইউরোপের বাজারে পোশাক রপ্তানির অর্ডার কমছে।
অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ সমস্যা কাটছে না। গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অন্যান্য অবকাঠামো সমস্যার কারণে বিনিয়োগ বাড়ছে না, যোগ করেন তিনি।
এর আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৬ শতাংশ এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ৬ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয় বাংলাদেশের জন্য। গত ২০১১-১২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে।
স্বাস্থ্যকর প্রবৃদ্ধি
বাংলাদেশের অর্থনীতির ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে জাহিদ হোসেন বলেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারও মোটামুটি স্থিতিশীল। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহের গতি খুবই ভালো।
অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রাজস্ব আদায় পরিস্থিতিও ভালো।
এসব তথ্যে প্রতীয়মান হয় যে ইদানীং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আর এ কারণেই বিশ্ব অর্থনীতিতে নানা সঙ্কটের মধ্যেও ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে বিশ্ব ব্যাংক ‘স্বাস্থ্যকর’ প্রবৃদ্ধি মনে করছে। বিশ্ব ব্যাংক মনে করে গত কয়েক বছরের ভালো প্রবৃদ্ধির ধারা চলতি অর্থবছরেও অব্যাহত থাকবে।
গ্যাস সঙ্কট
গ্যাস সঙ্কট পরিস্থিতি নিয়ে সরকারকে সতর্ক করে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ বলেন, আমাদের কাছে (বিশ্ব ব্যাংক) তথ্য আছে, ৪০ থেকে ৪২টি নতুন পোশাক কারখানা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে বসে আছে। এমনকি অর্ডারও নিয়েছে। কিন্তু গ্যাস সঙ্কটের কারণে উৎপাদনে যেতে পারছে না। এসব কারখানা উৎপাদনে গেলে প্রবৃদ্ধি আরো বাড়ত বলেও মন্তব্য করেন জাহিদ হোসেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় ৯ শতাংশ অথবা ডাবল ডিজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন করা খুবই কঠিন।
কিন্তু অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর সমাধান হলে ৭-৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। ৯ শতাংশ বা তার বেশি প্রবৃদ্ধি চাইলে ‘আন্তর্জাতিক অনেক কিছুর’ ওপর নির্ভর করতে হবে বলে মন্তব্য করেন জাহিদ হোসেন।
বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ডস্টেইন সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।