আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও আমরা

রাজনীতি ও অর্থনীতি এই দুই সাপ পরস্পর পরস্পরকে লেজের দিক থেকে অনবরত খেয়ে যাচ্ছে

বিএনপি আর আওয়ামী লীগ প্রায় নির্বাসনে। রাজনীতিতে নাকি সংস্কার করতে হবে। এই সংস্কার কথাগুলো কিন্তু দাতাদের দেওয়া। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতো বহুজাতিক দাতা সংস্থাগুলোই এতদিন সংস্কার করো সংস্কার করো বলে নানা ভাবে শর্ত দিয়ে এসেছে, আর সেসব শর্ত পূরণে দিয়েছে চাপ। একসময় ছিলো বিশ্বব্যাংকের কাঠামোগত সংস্কার কর্মসূচী।

তার বদলে এখন বিশ্বব্যাংক দেয় দারিদ্র্য বিমোচন কৌশল পত্র (পিআরএসপি) বাস্তবায়ন কর্মসূচী ঋণ। বলে রাখি ভারতকে যখন পিআরএসপি তৈরির কথা বলা হয়েছিল, ভারত বলে দিয়েছিল যে তাদের আছে পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনা, বিশ্বব্যাংক সেটাকেই পিআরএসপি বলে ধরে নিতে পারে। নতুন করে তাদের পে কিছু করা সম্ভব নয়। বিশ্বব্যাংক আর আইএমএফ এখন কাজের ধারা নিজেরাই ঠিক করে নিয়েছে। আইএমএফ দেখবে সামষ্টিক বা ম্যাক্রো অর্থনীতির সূচকগুলো, আর বাকি সব দাতা সেটাই মেনে নিবে।

ফলে সাহায্য পেতে আইএমএফ-এর সার্টিফিকেট এখন অনেক দামি। আইএমএফ বাংলাদেশকে দেয় দারিদ্র্য বিমোচন প্রবৃদ্ধি সহায়তা (পিআরজিএফ) ঋণ। ৪৯ কোটি ডলার তারা দিচ্ছে ৬ মাস পর পর সাত কিস্তিতে। শর্তগুলো পূরণ হলেই কেবল কিস্তি দেওয়া হয়। ২০০৩ সাল থেকে এই কিস্তি দেওয়া শুরু।

৬টা কিস্তি দেওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু দিচ্ছে না শেষ কিস্তির অর্থ। কেন জানেন? উদাহরণ দিয়ে বলি। ২০০৪-০৫ অর্থবছরের পাকিস্তানের সেসময়ের অর্থমন্ত্রী, এখনকার প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজ তার বাজেট বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে বাজেটের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে বলেছিলেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) 'গুড বাই' জানানোর মধ্য দিয়ে বাজেটে অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তিনি তার বক্তৃতায় এর কারণ হিসাবে পিআরজিএফ কর্মসূচী শেষ হওয়াকেই কারণ বলে উল্লেখ করেছিলেন।

সমস্যাটাই এখানেই। পিআরজিএফ ঋণের মধ্যে থাকা মানেই নিজের কোনো নীতি স্বাধীনতা নেই। আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক যা বলবে সেটাই শুনতে হবে। আর একারণেই তো ভরা বোরো মৌসুমে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ে এবং মূল্যস্ফীতির বড় ধরণের চাপ থাকলেও আবারও তেলের দাম বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। পাট খাত থেকে বিদায় নিচ্ছে ১৬ হাজার শ্রমিক।

আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের এতই প্রতাপ যে এখন শোনা যাচ্ছে এসব সিদ্ধান্তের কথা প্রধান উপদেষ্টাও জানেন না। এই যদি সরকারের মধ্যে সমন্বয়ের হাল তাহলে দেশের আরো খবর আছে। আইএমএফ এখন শেষ কিস্তি দিচ্ছে না। তারা আবার এ ধরণের নতুন এক কর্মসূচীতে আরো ঋণ দেওয়া টোপ ফেলেছে। অর্থাত সামনের বছর গুলোতে দেশেল অর্থনীতির নীতিগুলো তারাই ঠিক করে দেবে।

সাইফুর রহমানের সময় যেমন দিয়েছে তেমনিই। মনে আছে তো ২০০৬ সালে বাজেট দেওয়ার দেড় মাসের মধ্যে সাইফুর রহমান আমদানি শুল্ক কাঠামো পুরো বদলে ফেলেছিলেন। এবারের বাজেটেও কিন্তু শুল্ক কাঠামোর বড় পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ তালায় ছোট্ট একটা রুমে আইএমএফ বিনা ভাড়ায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর। তারাই তো দেখি সব নীতি এখনো ঠিক করে দিচ্ছে।

তাহলে তো দেখছি সংস্কারেরও সংস্কার লাগবে। বলে রাখি প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টা দুজনেই বিশ্বব্যাংকে চাকরি করতেন। বাড়তি তথ্য হচ্ছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজ, ভারতের মনমোহন সিং এবং আফগানিস্তানের হামিদ কারজাই-তিনজনেই চাকরি করতেন বিশ্বব্যাংকে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.